আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্ত স্বনামধন্য বিভিন্ন লেখকের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পড়েছি।এসব বই ঐ সময়কার নিরপেক্ষ চিএ আমাদের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে না পারলেও বিবেক আর বুদ্ধি দিয়ে ঐ সময়ের একটা চিএ মনের মধ্যে এঁকে নিয়েছি।আমার এই অঙ্কিত চিএ কতটুকু সত্য সে ব্যখ্যায় আমি যাবনা এবং এটা যে সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে সে বিশ্বাস থেকেও এই চিএ আঁকা নয়।শুধুমাএ নিজের মনের সন্তুষ্টির জন্যই এই কাজ করা।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে বিপক্ষে আমি এই লেখায় কোনো লেখকের উক্তি বা বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করবনা।৯০ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশের মানবতার কাঠগডায় দাড়িয়ে একজন মুসলিম নাগরিকের দৃষ্টিকোন থেকে এর বিশ্লেষন করার চেষ্টা করব।
খুবই সহজ ভাষায় যারা বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন জীবন যাপন, কাজ কর্মের চেতনাকে হত্যা করতে চেয়েছে, এ দেশের লাখো মানুষের জীবন নির্মমভাবে কেড়ে নিয়েছে পাশাপাশি নারীদের সম্ভ্রমকে তাদের ঘৃণ্য চাহিদা পূরনের হাতিয়ার বানিয়ে গণধর্ষন চালিয়েছে তাদের আমরা যুদ্ধাপরাধী বলে থাকি।‘জঘন্য’ ও ‘হিংস্র’ শব্দদ্বয় আমরা সাধারনত মানুষ আর পশুর জন্য ব্যবহার করে থাকি।মানুষরূপী যুদ্ধাপরাধীরা পশুর সাথেও তুলনীয় নয় তাই তাদের ব্যাপারে এই শব্দ দুটি ব্যবহার করে তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু চরিএের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলার পক্ষেও আমি নই।
স্বাধীনতার ৪২বছর পর আজ আমাদের দেশে যুদ্বাপরাধীর বিচারের দাবীতে যে প্রতিবাদ আর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার সচ্ছতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল ছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রশ্ন জাগলেও তা উপেক্ষা করে একজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হল আর বাকিদের বিচার প্রক্রিয়াধীন।কিন্ত প্রশ্ন হল আজ বাংলাদেশে কোন অপরাধটা ঘটছেনা তন্মধ্যে কয়টি বিচারের আওতায় আনা হয়েছে বা হচ্ছে?আজ ৪/৫ বছরের শিশু হতে শুরু করে শত শত তরুনী ধর্ষিত হচ্ছে,ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে,প্রতিবাদ করলে এসিড ছুড়ে মারছে,বাবা-ভাইকে খুন করছে,শেয়ার ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা হারিয়ে আত্ন্যহত্যার পথ বেছে নিয়েছে, নিরাপরাধ মানুষকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হয় গুম করে ফেলছে অথবা মেরে ফেলছে,ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে,সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে।দেশ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং যুদ্বাপরাধীদের বিচারের দাবীতে যারা সোচ্চার তাদের চোখে কি এসব পড়েনা?
শাহবাগে যেসব তরুন তরুনী যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবী করেছে তাদের কেউই এবং তাদের পাশে দাড়িয়ে অনুপ্রেরনা দানকারী সুশীল সমাজের অনেকেই মুক্তযুদ্ধ দেখেননি অথবা দেখে থাকলেও যে কারনেই হোক অংশগ্রহন করেননি কিন্তু তারাতো আজ এই দেশের মানুষের পাপকর্মগুলো স্বচক্ষে দেখছেন।আপনাদের আন্দোলনে স্বচক্ষে দেখা অপরাধের শাস্তির দাবি গুরুত্ব না পেয়ে অদেখা অপরাধের শাস্তির দাবি গুরুত্ব পায় কিভাবে?যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবী যদি একান্তই করতে হয় পাশাপাশি কি এসব অপরাধীদের শাস্তির দাবী করা যায়না?নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন শত শত মানুষ মেরে ফেলেছে,সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে মহিলা আইনজীবীদের অত্যাচার করা হয়েছে তখন এসবের বিরুদ্ধে শাহবাগীদের আন্দোলনরত অবস্থায় রাস্তায় দেখা যায়নি কেন?নাকি এই সময়ের ঘৃণ্য অপরাধগুলো নিজের পরিবারের কারো সাথে ঘঠছেনা বলে?আন্দোলনের পাশাপাশি শাহবাগেও দিন রাত কত জঘন্য পাপ কার্য চলেছে তাতো সবাই জানে।এই নোংরা আন্দোলনে অংশগ্রহনকারীদের মন-মানসিকতা আর তাদের পরিবার নিয়ে সচেতন মানুষের প্রশ্ন আছেই,তাদেরকে যারা সমর্থন করে তাদের নিয়েও সন্দেহ আছে।
৪২ বছর আগের হত্যা,লুটপাট আর গণধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে আজ দেশে কত হাজার হাজার হত্যা,লুটপাট আর গণধর্ষণ চলছে,কত হাজার অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে তার হিসাব আমাদের না থাকলেও দেশ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি গণমাধ্যম আর নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীরা কিছুটা হলেও জানে।কিন্তু আজ গণমাধ্যম, নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীরাও সত্যকে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার দালালী করছে। যৌনকর্মীদের মত আজ গণমাধ্যমও টাকার বিনিময়ে সরকার পক্ষের সাথে সহবাস করছে।আর রাষ্ট্রপ্রধান হয় সত্যটা জেনে তৃতীয় পক্ষকে সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মিথ্যার পক্ষ নিচ্ছে নতুবা তার চারপাশে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে যা ঊনাকে সত্য জানা থেকে অনেক দূরত্বে রেখে দিয়েছে।
(চলবে …)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৫২