ছোট বেলায় আমাদের বাসায় একটা পোষ্টার ছিল যেখানে একটা রক্তাক্ত বাচ্চা তার রক্তমাখা হাতের একটা আংগুল মুখে দিয়ে বসে আছে। পাশে একটা শ্লোক লেখা ছিল-“আমাদের যদি এভাবে আহত করা হয় কিংবা নিহত হয় দানবীর অত্যাচারে আমাদের রবের কসম প্রতীক্ষায় থাকি বিপ্লবের …………।“
বাসার বড়দের থেকে জানতে পেরেছিলাম এই ছবি আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনি বাচ্চাদের যেখানে ঈসরাইল সবসময় হামলা চালিয়ে শত শত শিশুকে মেরে ফেলে অথবা আহত করে। তখন ব্যাপারগুলো নিয়ে খুব বেশি ভাবতাম না। আস্তে আস্তে বড় হতে হতে ব্যাপারগুলো অন্তরে নাড়া দিতে লাগল। এসব যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের, দেশের বাচ্চাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে লাগলাম কিন্তু তাদের জন্য কিছুই করতে পারতাম না। আজ এত বছর পরেও সে একই যুদ্ধ,ধবংস,মৃত্যু অন্তর কে বিধবস্ত করছে কিন্তু সে একই অপারগতা।
আমরা না হই অপরাগ কিন্তু প্রতিদিন ফিলিস্তিনে শত শত নারী,শিশুর নির্মম মৃত্যু ঘটছে প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ (মুসলিম/অমুসলিম) চোখের জল ফেলছে, বিক্ষোভ করছে কিন্ত আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা নিরব কেন? তাদেরতো অপারগতার কারন নেই। একটা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে গেলে আল্লাহ মনে হয় তার/তাদের অন্তর থেকে মানবতাবোধ, দয়া-মায়া সব উঠিয়ে নেন, তাদেরকে নির্দয় করে দেন।
জানি, ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ছবিকে প্রোপাইল পিক বানিয়ে অথবা তাদের শোকার্থে দু/চারটা কথা লিখলে তাদের এতটুকু উপকারে আসবে না। ঈসরাইলী পণ্য বর্জন করলে হয়ত ঈসরাইলের কিছুটা ক্ষতি হবে কিন্তু ফিলিস্তিনীদের মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরাতে পারবনা। ফিলিস্তিনীদের পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করার শক্তি, সাহস, সামর্থ্য কোনটাই আমাদের না থাকলেও পুরো বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান বা বাংলাদেশের লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহকে একবার অন্তর থেকে ডাকলে আল্লাহ এতগুলো মানুষের ফরিয়াদকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়াগুলো পূর্ণ করার জন্য আল্লাহর কাছে যেভাবে ফরিয়াদ জানাই, এটাকেও আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়ার অংশ বানিয়ে প্রতিদিন নামাজে, ইফতারের পূর্বে আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ অবশ্যই সাড়া দিবেন।
কোরানে পড়েছি “কেয়ামতের দিন আল্লাহ মানুষকে তিনটি দলে ভাগ করে নিবেন - একটা হল অগ্রবর্তী, একটা ডা্নবর্তী আরেকটা বামবর্তী।বামবর্তীরা হবে জাহান্নামী, ডানবর্তীদের বেশিরভাগ হবে পূর্ববর্তীদের থেকে আর কিছু অংশ হবে পরবর্তীদের থেকে”। আমার মনে হয়না আমাদের মত মুসলমানেরা এই পরবর্তীদের অংশে থাকতে পারবে। এসব নিপীড়িত দেশের নির্যাতিত মুসলমানেরা যারা ইফতারের সময় লাশ সামনে নিয়ে বসে থাকে, চোখের সামনে হাজার হাজার মানুষ মরছে দেখেও নামাজের সময় মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে মসজিদে ছুটে চলে তারাই থাকবে সে পরবর্তীদের অংশে।
এসব মৃত্যু আমাদেরকে ক্ষত বিক্ষত করলেও জানি এরা কচি বয়সে তাদের জন্য সবচেয়ে সুখকর আর নিরাপদ আশ্রয় বেছে নিতে পারছে যা আমরা এত বছরেও পারিনি এবং আদৌ পারব কিনা তাও জানিনা। নিজেকে শান্তনা দেয়ার জন্য এটা বলা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এসব মজলুমদের পাশে থাকেন আর অপারগতার জন্য আমাদের ক্ষমা করেন।