somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

::: ক্যাম্পিং: উয়ারী-বটেশ্বর:::

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্রষ্টব্যঃ প্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা গাঙ্গারিডাই বা গঙ্গাঋদ্ধি বা উয়ারী-বটেশ্বর নিয়ে গত বছর একটা বড় পোষ্ট দিয়েছিলাম। মোটামুটি ভাবে ব্লগের ঐ পোষ্টটাই ঈষৎ পরিবর্তন করে দৈনিক সমকালে ফিচার হিসাবে ছেপে দিয়েছিলাম। তাই কেউ ইচ্ছে করলেএই লিঙ্কে (গাঙ্গারিডাই বা গঙ্গাঋদ্ধির পথে) এবং
এই লিঙ্কে (গ্রামের নাম উয়ারী বটেশ্বর) ক্লিক করে দেখতে পারবেন। সেখানে অনেক বিস্তারিত ছিল।

প্ল্যান ছিল বান্দারবানের গহীনে একটা পুরোদস্তুর এক্সপিডাশান করা। কিন্তু দুঃখজনক কিছু পরিস্থিতিতে প্ল্যান ভেস্তে গেল। ১২দিন ঘরে বসে আন্ডা পাড়তে হবে। মন ভীষন খারাপ ছিল। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলাম। কি মনে করে শেষ মুহুর্তে ঢুকে পড়লাম ভ্রমন বাংলাদেশের ক্যাম্পিং ইভেন্ট ওরফে বার-বি-কিউ দাওয়াতে। উয়ারী বটেশ্বরে।

টাইম দেয়া ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। এক গরু টাইপ সিএনজি করে রওনা হলাম। ব্যাটা আহাম্মকের মতো পান্থপথে ঢুকিয়ে দিয়ে বসে রইলো ঝারা এক ঘন্টা। জিজ্ঞেস করতেই উলটো বলে সন্ধ্যার সময় নাকি পান্থপথই সবচেয়ে খালি থাকে। গ্রীনরোড থেকে সোনার গাঁ মোড় পর্যন্ত ৬বার লালবাত্তি ধরে কোনরকমে বের হলাম, মাঝ রাস্তায় হঠাত করেই বলে ভাইজান একটু বসেন, আমার দ্যাশের বাড়ির লোক একটু কথা কয়ে আসি, ইগনিশানে চাবি লাগিয়ে রেখে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাওয়া, ইঞ্জিন তখনো রানিং। অবশেষে যখন পৌছালাম সায়দাবাদে কিছুতেই কাঙ্খিত বাসস্টপ খুঁজে পাইনা। বাসে উঠতেই ৯টা বেজে গেল।

আধ ফালি চাঁদ আকাশে, আধ ফাঁকা হাইওয়ে, আর তার মাঝে আধা ভাঙ্গা বাসের ইঞ্জিন। গিয়ার ধরে না। বাস ড্রাইভার টিপে টিপে বাস চালাচ্ছে, অজ্ঞাত কোন কারনে দু মাইল পর পর পুলিশ চেকপোষ্ট। পুলিশের দল বাসে উঠে চেক করছে। মনা ভাইএর বিচিত্র উইন্ড চিটারটাতে মনে হয় শ-খানেক পকেট। সেটা ঘেটে ঘুটে তারা একটা সুইস নাইফ পেয়ে আঁতকে উঠলো। সাংঘাতিক মরনাস্ত্র পাওয়া গেছে। পুলিশের দলে একটা উৎসব পড়ে গেল। সাংঘাতিক অস্ত্রধারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এই ছুরি নিয়া কই যাবেন? যতই বলি, এটা সুইস নাইফ-ক্যাম্পিং এ লাগে। ততোই বলে কেন নিয়া যাবেন। খুলে দেখানো হলো এতে ছুরি ছাড়াও, কাঁচি, কর্ক ওপেনার, রেতী, স্ক্রু ড্রাইভার সহ ১৬ রকমের আলাদা ফলা ওরা বিশ্বাস করেনা। ক্যাম্পিং এর ব্যাপারটাই বুঝে না। মনা ভাই ফুটবল ফেডারেশনের প্রথম সারীর রেফারী, শাহরীয়ার ভাই সাংবাদিক, শরীফ ব্যাংকে চাকরী করে, সুমন অনার্সের ছাত্র, আপনারা সবাই আলাদা আলাদা প্রফেশনের লোক এক হইলেন কেন কি উদ্দেশ্যে? পুলিশের ব্রেন বরাবরই ঘুরে ফিরে আগের জায়গায় চলে আসে, বোঝাতে গিয়ে কালঘাম ছুটে গেল।
যাই হোক অনেক ধস্তাধস্তি করে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলাম, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বেলাবো’র মরজাল বাজারে বাস থেকে নামলাম। বটেশ্বরে আমাদের গন্তব্যে যেতে আগে থেকে ঠিক করে রাখা বাহন নছিমন (কোন কোন জায়গায় হেলিকপ্টার বলে) এসে থামলো তখন বাজে রাত ১২টা।
শীতের রাত, প্রায় জনশুন্য গ্রামের বাজার। চারপাশে ফিনফিনে কুয়াশার চাদর পেঁচিয়ে আসছে। এর মাঝে বিচ্ছিরি ভটভট শব্দে শ্যালো ইঞ্জিন লাগানো নছিমনে আমরা ১২জন চড়তে গিয়ে মহাবিপত্তি। ড্রাইভারের পাশে দুজন, ভেতরে ন জন (পার সীটে ৩জন, যদিও ড্রাইভার দাবী করলো এখানে পাঁচজন বসে-শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ জোক মনে হলো) আর বাইরে পাদানীতে একজন দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু শ্যালো ইঞ্জিনটা যথেষ্ঠ শক্তিশালী মনে হলো না যে সবাইকে নিয়ে সে চলবে। অজ্ঞতা তাকে ঠেলে কিছুদুর যেতে ধুঁকতে ধুঁকতে আট মাইল দুরের আড়াই হাজার বছরের পুরোনো উয়ারী-বটেশ্বরের দিকে রওনা হলো, কচ্ছপের গতিতে। কচ্ছপের গতি বলা হয়তো ঠিক না, কারন গল্পে কচ্ছপ একবারও না থেমে টানা পথ চলেছিল, নছিমন বিবি প্রতি ১০ মিনিট পর পর খক খক করে কাশতে কাশতে থেমে যায়, তাকে ঠেলে ঠেলে আবার জিন্দা করা লাগে। রেগে মেগে দুবার তার ইঞ্জিনের বেল্ট ছিড়ে গেল, আর দুবার পুড়ে গেল।
উয়ারী বটেশ্বরে দেড় বছর আগে যেবার এসেছিলাম তখন প্রথম আলো ব্লগের মডারেটর শুভ্র এখানে প্রত্নত্বাত্তিক খননে ব্যাস্ত ছিল। এবারে প্রত্নত্বাত্তিক কাউকে চোখে পড়লো না, জীবনানন্দ দাশের নিকোনো মাঠের মাঝখানে ভুই ফোঁড় একটা গেস্ট হাউজ চোখে পড়লো। কয়েকজন আগে থেকেই উপস্থিত হয়েছে এখানে আর কয়েকজন এসেছে সপরিবারে, তাই গেস্ট হাউজে বুকিং দেয়া ছিল। আমরা বাকীরা উঠোনো টেন্ট পিচ করলাম। চুলোয় গরম গরম মুরগীর বার বি কিউ বসে গেল।
ক্যাম্পিংটা ছিল মুলত গেট টুগেদারের মতো। অনেকেই প্রথমবার ভ্রমণ বাংলাদেশের সাথে, আবার অনেকেই দীর্ঘ বিরতীর পরে ভ্রমন বাংলাদেশের সাথে তাই গরম গরম মুরগীর বার বি কিউ আর পরোটা ভাজার সাথে আড্ডা চললো দীর্ঘক্ষন।
শীতেরর রাত। উয়ারী বটেশ্বর গ্রাম দুটোতে গাছপালার সংখ্যাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী। প্রচন্ড শিশির আর কুয়াশার ফলে রাত ৩টার বেশী আড্ডা দেয়া হলো না। তাঁবুতে ঢুকতে গিয়ে দেখি খকখকে কাশী। সকালে সুর্যদয়ের সময় ওঠার কথা। উঠতে পারলাম না। অনিকেত কথা কম বলে, সেই কাজ পুষিয়ে দেয় দক্ষ হাতে ক্যামেরা দিয়ে। পাশা ভাই, সুমন, অনেক দিন হলো কমিউনিটি ব্লগ ছেড়ে দেয়া প্রিয় ব্লগার নিরব আরো কজন দল বেধে সুর্যদয়ের সময় বেড়িয়ে পড়লো ছবি তুলতে। আমি উঠলাম ৭টার পড়ে। সকালের নরম সূর্যের আলো পরে দুব্বা ঘাসে ভেজা শিশিরে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলাম প্রথম সূর্য কিরনে মিষ্টি আলোয়।
আর বেশী কিছু লিখতে ধৈর্যে কুলাচ্ছে না আমার নিজেরই। কেউ যদি এই পোষ্ট পড়ে তাদের কি পরিমান ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবে ভাবতেই ভয় লাগতেছে। তাই আর কিছু লিখলাম না। ছবি গুলান দেখেন। লেখাটা না পড়লেও চলবে।

টা টা। --------------
ছবিঃ

কিশোরী।



ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের মধ্যখানে নৃত্য শুরু করার প্রস্তুতী নিচ্ছেন একজন স্টাইলিশ পাগল।


কমন কিংফিশার (আমি পাখি চিনিনা। মাছরাঙ্গা সচরাচর চিনি নীল রঙের। এইটা কমলা আর সবুজ, এইটাকে কমন কিংফিশার হিসাবে চিহ্নিত করে দিছেন বিশিষ্ট প্রকৃতিবীদ এবং ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার রোনাল্ড হালদার)।


শীতের সকাল এবং হাট বার।


ব্লগার কামাল ভাই এর (সাদা মনের মানুষ) বাড়িতে।


বাই সাইকেল কন্যা।


এটার নাম চোখ গেলো গো।


ফিঙ্গে



[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/shoummo71_1291028199_8-5211492924_b7de61900e.jpg]
শীত এসে গেছে।


দস্যি ছেলে।


শীতের সকালে গ্রামের বাজারে চিতই পিঠার ওম।


ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে নিশির শিশির।


আধ ফালি চাঁদ, আধ ফাঁকা হাইওয়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাসের আধভাঙ্গা ইঞ্জিন।

বার বি কিউ



পুনশ্চঃ হাই রেজ্যুলেশানে ছবি দেখতে চাইলে ফ্লিকারের এই লিঙ্কটায় ক্লিক মারতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৫০
১৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×