somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া জাতি ( মিতান্নী জাতি)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দক্ষিন মেসোপটমিয়ায় সুমেরুয়রা যখন তাদের অস্তিত্ব বাচানোর অন্তিম প্রয়াস চালাচ্ছিল, উত্তর পশ্চিম মেসোপটমিয়ায় প্রায় দেড় হাজার খ্রীষ্টপূঃ তখন ভারতীয় আর্য-সম্ভুত “মিতান্নী” রাজবংশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইউফেট্রেরিস আর টাইগ্রিস নদীর উপরাংশে সিরিয়ার কাছ বরাবর পশ্চিমে মিতান্নী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিল ভারত থেকে আগত আর্যরা।“মিতান্নী” শব্দটা সম্ভবত বৈদিক দেবতা “মিত্র” থেকে উদ্ভূদ।বংশের প্রথম পুরুষের নাম পরাত্তন (খ্রীষ্টপূঃ ১৫৩০)এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম কীর্তি। এই রাজ্যর অভিজাত কূল “মার্য” নামে খ্যাত ছিল। মার্য একটি ভারতীয় আর্য শব্দ যার অর্থ নবীন যোদ্বা। এই শব্দ থেকেই মর্যদা শব্দটি উৎপত্তি। বিভিন্ন প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন থেকে জানা যায় মিতান্নী যোদ্বারা ইন্দ্র, মিত্র, বরুন প্রভৃতি আর্য দেবতাদের উপাসক ছিল।

দেবতা হিসাবে মিত্র পারস্যে বরাবরই পুজিত।। রোম সৈন্যদের মধ্যেও মিত্র বেশ জনপ্রিয় ছিল।দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মিত্র উপাসনা ছিল খ্রীষ্টীয় ধর্ম থেকেও ব্যাপক। পূজো আর্চনা ছাড়া ঘোড়া চালাতে মিত্ররা পছন্দ করত। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত উপাত্ত মতে পৃথিবীর প্রথম ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা মিতান্নী রাজ্যই হয়েছিল।

মৃত্তিকা লিপির নির্দিষ্ট প্রমান থেকে অশ্বপালন পদ্বতি, ঘোড়া সওয়ার বাহিনীর প্রশিক্ষন ব্যাবস্থা, বুনো ঘোড়ার পোষ মানানোর পদ্বতি ইত্যাদি সন্মন্ধ্যে এদের জ্ঞান দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। এ বিষয়ে আধুনিক যে কোন পাঠ্যসূচির সঙ্গে এদের লিখিত অনুষাশন তুলনা করা যায়। ইরাকের কির্কুক শহরের তৈল খনিগুলোর কাছে মিতান্নী রাজ্যের বাইবেলে বর্নিত প্রাচীন “হুরী” নগরীর নুজী আবিস্কৃত হবার সঙ্গে সঙ্গে মেসোপটমিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের অনেক ধ্যান ধারনা পালটে গেল। এখানে পাওয়া পোড়া মাটির ফলকে জানা গেল যে এখানকার রাজন্য বর্গ “সেমিটিক” জাতি ভূক্ত ছিল না। এরা পাহাড় ঘেরা বন (Von) হ্রদের কাছাকাছি কোন স্থান থেকে এসেছিলেন। আকৃতিরদিক থেকে এরা লম্বা চওড়া, কিন্তু ছোট করোটি বিশিষ্ট আর্মেনিয়ানদের মত। মিতান্নী রাজ্যর রাজধানীর নাম ছিল বাসুকান্নী (Washukanni)। এর অবস্থান এখন ও নিশ্চীত ভাবে জানা যায়নি তবে যেটুকু জানা যায় এটি আধুনিক সিরিয়ার টেল-আল-ফাকারিয়াতে অবস্থিত।

মিতান্নী রাজারা এক সময় আসুরিয়দের রম্য শহর নিনেভ ও রাজধানী আসুর নগরীও দখল করে রেখেছিল। এদের প্রতিবেশী ছিল প্রবল পরাক্রান্ত মিশর, অন্যদিকে সিরিয়া লেবাননে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাইবেলে বর্নিত হিতাইত (Hittite) জাতি। প্রথম প্রথম মিশরের ক্ষমতায় অন্ধ ফারাওরা অন্য কোন দেশি মানুষদের অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। এদের ক্ষমতার দম্ভ এত ছিল যে দেশের সীমান্ত সুরক্ষার ও চিন্তা করত না। পরে মরু দেশের যাযাবর গোষ্ঠি হিকস (Hyksos) দের হঠাৎ আক্রমনে পর্যুদস্ত হয়ে দুশো বছর পরাধীন থাকার পর ফারাও প্রথম আমহোসেপ ১৪৮০ খ্রীষ্টপূঃ শেষমেষ যখন ওদের রাজধানী আভারিস দখল করেন তখন তিনি প্রতিবেশী মিতান্নী রাজ্যর দিকে নজর দেবার সাময় পেলেন।

নিজেদের ইতিহাস পূঙ্খানুপূঙ্ক ভাবে লিখে গেলেও মিতান্নীদের কথা লিখে না জানার কারনে লিপিবদ্ব করে রেখে যেতে পারে নি। সীমা সুরক্ষিত রাখার তাগিদে ফারাও ও মিতান্নীদের মধ্যে অব্যশাম্ভাবী যুদ্ব শুরু হয়ে গেল। কখনো মিতান্নীদের তিরন্দাজ বাহিনী কখনো ফারাওদের রথী বাহিনী একে অপরকে আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। ১৪৫০ খ্রীষ্টাপূঃ ফারাও তৃতীয় থুতমাস মিতান্নী রাজ বংশের ইউফেট্রিস নদীর কিনারা পর্যন্ত দখল করে নেয়। সন্ধির প্রস্তাব আসে মিতান্নীদের কাছ থেকে। প্রস্তাবটি গৃহিত হল। কেননা এশিয়া মাইনর থেকে ততদিনে হিতাইতদের আক্রমন শুরু হয়ে গেছে, যাযাবর হিকসদের মত পাছে এরাও স্বাধীনতা বিপন্ন করে।

ফারাও ও মিতান্নীদের সাথে যে বন্ধুত্ব ছিল তা আমরা জানতে পারি মিতান্নী রাজকুমারী তাদুচেপার সঙ্গে মিশরের ফারাও বিবাহের মাধ্যমে। তাদুচেপাই সম্ভবত পরবর্তী সুন্দরী রাজমহিষী নেফ্রেটেট (খ্রীষ্টপূঃ ১৩৭২ – ১৩৫০)। তুতানাখামেনের কাকীমা ফারাও ইখনাতোনের স্ত্রী। যার মমি এখন ব্রিটিশ যাদুঘরে সংরক্ষিত। এ ছাড়াও মিশরের ফারাও তৃতীয় আমেনহোতেপের সাথে যে মিতান্নী রাজা তুশ্রুতের পত্র বিনিময় ছিল তাও ইতিহাস প্রমানিত।

কিন্তু এত করেও মিতান্নী রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেলনা। ১৩৭০ খ্রীষ্টপূঃ হিতাইত রাজা শূপ্পিলুলিয়াম মিতান্নী রাজ্য আক্রমন করে কর দিতে বাধ্য করেন। এর ঠিক পয়ত্রিশ বছর পর ১৩৩৫ খ্রীষ্টপূঃ হিতাইত ও অসিরীয়দের আক্রমনে মিতান্নীর আর্যরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর মিতান্নী জনবাসী এশিয়া মাইনরের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

সূত্রঃ
http://www.sacred-texts.com/cla/mom/mom04.htm
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Hyksos
তপন চট্টোপাধ্যায়ের একটি নিবন্ধ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৪৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×