somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্ঞানের সীমা চিরকালই আছে কিন্তু অজ্ঞতার সীমা কোন দিনই ছিল না

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং যেন কি হয়েছে নিজেকে নিজে অসংখ্য প্রশ্ন করি কিন্তু উত্তর পাই না। দিনের বেলায় নানা কোলাহলে নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও রাতের নিকষ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রাতের নিস্তব্ধতাকে শব্দহীন চিৎকার দিয়ে মুখরিত করে তুলি। নিস্তদ্ধতা সেখানে আমার শব্দহীন বাচালতায়। মাঝে মাঝে ভাবি কেন এই সব অর্থহীন শব্দগুচ্ছ এক করে ইথারের মৌনতাকে আরো কিছু ওজনদার করে নুব্জতাকে আরো লজ্জায় ফেলি?

তবে কি আমিও এক নার্সিশাস এর মত? নিজের রূপে নিজে মুগ্ধ? আহ এর থেক লজ্জার আর কি হতে পারে? আমি কি করব! এটা তো আমার দোষনা আমার জন্মের সময় আমার জীনের মাঝে আমার পুর্ব পুরুষদের সঞ্চিত আত্ম অহংকার। আমরা প্রত্যেকেই ইম্পর্ট্যান্ট হতে চাই অন্যে চোখে, অন্যের দ্রষ্টব্য, মনোযোগের পাত্র হতে চাই, তবে এই এইসব আত্ম অহংকারী মানুষ গুলার মাঝেও আবার নানা ভাগ আছে।

আমরা কেউ চাই অগন্য, অচেনা, অজানা মানুশ জন আমাদের দেখুন মানে সাধারন জনগনের চোখ কান মনোযোগের সম্পৃত্ততায় সিক্ত হতে চান। আর এক দল আছে নিজের পরিচিত গন্ডির মাঝে নিজেকে প্রয়োজনীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে, প্রয়োজন না থাকলেও শুধু মাত্র এই ইম্পরট্যান্সি প্রাপ্তির আশায় পয়সা খরচ করে ককটেল পার্টি ডিনারে অথবা কোন আত্মীয় স্বজনের বিবাহ বার্ষিকী মৃত্যু বার্ষিকীতে পরিচিত অপরিচিত বা অর্ধ পরিচিত অপরিচিতকেও নিমন্ত্রন দিয়ে যায় যাতে নিজেকে একটু পরিচিতি করা যায়। তৃতীয় এক দল আছে যারা অনুক্ষন নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে মনি হয়ে থাকতে চায় সেখানে সে বড় নির্মম কাউকে সেখানে প্রবেশাধিকার দেয় না প্রয়োজনের খাতিরে হলেও

এদের বাদেও চতুর্থ একদল মানুষ আছে যারা সাপের মাথার মনির মত বিরল, তারা কোন ইম্পর্ট্যান্সির তোয়াক্কা রাখেন না নিজের কল্পনায় অগনিত মানুষেকে কল্পনায় এনে তাদের মানসিক মধ্যমনি হয়ে থাকেন অথবা অগনিত মানুষ না দেখেও তাদের কল্পনায় সূক্ষ্ম দেহে ওই মানুষটার কল্পনায় বিরাজ করেন। কোনটা ঠিক? কে ঠিক? আমি কেন এত ভাবছি? আধুনিক মানুষ এক স্পর্ধাভোগী প্রানী মুই কি হনু রে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না।

কালকে পত্রিকায় একটা ছোট খবর দেখলাম আগামী ত্রিশ বছরের মাথায় নাকি মানব শিশু আর মাতৃ জঠরে জন্ম নেবে না কি এক টিউবে থাকবে সেখান থেকে প্রয়োজন মাফিক ইনকিউবিটারে মুরগীর ডিম ফুটানোর মত কোন মহিলার বিনা আয়াসে একটা জামা কেনার মত হাতের ঝুড়িতে একটা বাচ্চা নিয়ে বাসায় আসবে। পশ্চিমা অনেক যুক্তির মত এক্ষেত্রেও তাদের যুক্তি আছে হয়ত কষ্টহীন ভোগবাদী পশ্চিমা অর্থের ঝনঝনানির এক ঘেয়ে প্রোমোশন শুনতে শুনতে আমরা ও তা মেনে নেব আমরাও ৩০ না হলেও ৬০ বছরে তাদের ধারা অনুসরন করব। আমার সন্তান দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে কি এক ব্যাথা গলার কাছে আটকে যাচ্ছে।

জ্ঞানের সীমা চিরকালই আছে কিন্তু অজ্ঞতার সীমা কোন দিনই ছিল না। আর এই অজ্ঞতার সীমা ছিল না বলেই এই আপাত জ্ঞানী ভোগবাদীরা এত লাফ ঝাপ দিয়ে নিজেদের অজ্ঞতা কে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে জায়েজ করতে পারছে কিন্তু ক্ষতি যা করার আমাদের মত গরীব দেশগুলোর করছে একদিকে এশিয়া ইউরোপের বনাঞ্চল ধ্বংস করছে জীবিকার তাগিদে অন্যদিকে ইউরোপ আমেরিকায় বনায়ন চলছে বিপরীত মুখী অবস্থান আমাদের কতটুকু শান্তি দিচ্ছে?

সুখ কি শান্তি কি? Russell অনেক আগেই বলে গেছেন “We do not struggle for existence, we struggle for outshine our neighbors” আমাদের আজকালকার প্রার্থনা ও আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, আমাদের আত্মীয় স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী কেউ যেন আমাদের থেকে ভালো না থাকে ভালো থাকার মাপকাঠি হল কার কত আধুনিক আই ফোন, মাইক্রোওয়েভ ভিডিও ক্যামেরা এগুলো। আমার থেকে কারো যেন এগুলা ভালো না থাকে এটাই এখন আমাদের প্রার্থনা হয়ে দাড়িয়েছে। নিজের বন্ধু আত্মীয়স্বজনের এর থেকে ভালো কিছু থাকলেই আশান্তিতে আমরা মরে যাই। বড় দুঃখ।

এই মিথ্যা মরীচিকার পেছনে দৌড়াবার কি শেষ আছে? কোন ধর্মই মানুষ কে লোভী হতে শেখায় না বস্তুবাদী হতে শেখায় না। আমাকে বলুন কোন ধর্ম পরকে হিংষা করতে শেখায় তা সে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, ক্রিচিয়ান, শিখ যাই হোক না কেন। আসলে ধর্মের দোহাই দিয়ে আমরা মানুষ গুলাই নিকৃষ্ট হয়ে গেছি। ভোগ্যপন্যের দৌড়াত্ব যত বেড়েছে শরীর আর মনের শ্রমহ্রাসের যত যন্ত্র আবিস্কৃত হয়েছে মানুষ ততই নিকৃষ্ট হচ্ছে, মানুষ্যত্ব থেকে ততই দূরে যাচ্ছে আর মানুষত্ব থেকে যত দূরে যাচ্ছে তত ধর্মকে কলুষিত করে নিজের অপরাধবোদ কে ধর্মের ঢালের নীচে আশ্রয় দিচ্ছে। নোংরা সব ধর্মের গায়ে লাগছে।

Bertrand Russell তার Conquest of Happiness বইতে লিখেছেন ইংল্যান্ডে Industrial Revolution হবার পর মানুষের উদ্ভাবিত যন্ত্র সাধারন এক ঘেয়ে কাজের ভার নেবে আর মানুষ তত নিজেকে মানবিক কাজে নিয়োজিত করবে “To do the human Things” কিন্তু এখন কি হল? মানুষ তো কায়িক শ্রম বিসর্জন তো দিলই মানুষ জন্মের সব থেকে বড় সার্থকতা নিজের সন্তান এর মুখ নিজ স্ত্রীর গর্ভ থেকে বের হয়ে আসার পর প্রথম দর্শন বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় নাকি আগামী ৩০ বছর সেটাও থাকবে না।

নিজের মস্তিস্ক ও মানুষ আজকে কম্প্যুটার নামক যন্ত্রের কাছে ইজারা দিয়ে দিল। সারা বিশ্ব এখন কম্পুটার সুপার কম্প্যুটারের জয় জয়কার। সেদিন আর বেশী দূরে নাই যেদিন মানুষ বুজতে পারবে আমাদের এই সব আবিস্কার আমাদের উন্নতির দিকে না নিয়ে ব্যাক টু দ্যা ফিউচার এ আমাদের আদিম গুহা মানবের যুগে ফেরত নিচ্ছে। যা কিছু মানুষ নিজে গড়ে তুলছে সাহিত্য চিত্রকলা সঙ্গীত সব আজকে কম্পুটার এর হাতে সপে দিয়ে আমরা আমাদের মেধা মনন কে কি নির্লজতায় অস্বীকার করছি কেউ কি ভাবছ?

সবাই ভাবছে ভবিষ্যত উজ্জ্বল কারন দিন দিন নিত্য হরেক পন্য আবিস্কার আমাদের চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে। মানুষের মানুষ্যত্বের মরন আর্তনাদ কেউ শুনতে পাচ্ছে না।

নিজেকে মাঝে মাঝে বড় অস্থির লাগে নানা জনের কাছে নানা কথা শুনতে চাই হৃদয়ের শান্তি পেতে চাই। সামান্য দুই একটা ব্যাপার দুই একজনের মুখে শুনে এখনো বুকের মাঝে বিধে আছে নিজেকে প্রশান্তি দিতে সেই কথাগুলো মাঝে মাঝে আউড়াই

“কেউ যদি হাজার মানুষ কে কোন যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারে তিনি হলেন বীর কিন্তু মহাবীর হলেন তিনি যিনি নিজেকে নিজে জয় করতে পেরেছেন।”

“একজন মূর্খ, যে নিজেকে জানে যে সে মুর্খ শুধু সেই জানার কারনেই সে জ্ঞানী মানুষ। যে মুর্খ নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে সে অবশ্যই মুর্খ”

“কেউ যদি একশ বছর ভোগ বিলাসের মাঝে জীবন যাপন করে “জীবন কি” এই সত্য একবারো না ভাবে তবে যে মানুষ টা এই ভাবনা নিয়ে দুদন্ড ভেবে কায় ক্লেশে জীবন যাপন করে মারা গেছে তবে প্রথম জনের থেকে দ্বিতীয় জনের জীবন অনেক অনেক দীপ্তমান”

জানি না এগুলো কি ভাবছি গত কয়েকদিন যাবৎ হঠাত হঠাত টাইপ করেও আগোছাল ভাবনা গুলো রেখে যাচ্ছি। রেখে গিয়েও বা কি হবে? নিজেকে কি আমি প্রকাশ করছি? নাকি নিজেকে নিজে করুনা করছি?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×