somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রাউড অভ তুরিন অথবা যীশুর কাফন (শেষ পর্ব)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শ্রাউড অভ তুরিন অথবা যীশুর কাফন (প্রথম পর্ব)

শ্রাউড অভ তুরিন অথবা যীশুর কাফন (দ্বিতীয় পর্ব)



চতুর্থ ধর্মযুদ্ধের সময় রবার্ট ডি ক্ল্যারি একজন নাইট হিসাবে কনসষ্ট্যান্টিনোপলে আসেন এবং দীর্ঘ অবরোধের পর পুরো শহর ধ্বংস করে দেন, এমনকি তাদের হাত থেকে খ্রীষ্টান চার্চ ও রক্ষা পায় না। এই বিশৃঙ্খলার ভেতর আলখাল্লাটা আবারো হারিয়ে যায় এবং পরবর্তী দেড়শ বছর কোন খোজ পাওয়া যায় না। এরপর দেড়শ বছর ফ্রান্সের ডি কর্নি পরিবারে আলখাল্লাটা প্রদর্শিত হয়।

কনসষ্ট্যান্টিনোপল থেকে অদৃশ্য হয়ে ফ্রান্স পর্যন্ত আসা নিয়ে নানা মুনির নানা মত কাজ করছে। আলখাল্লাটি যেহেতু দেশ শতাব্দী লোক চক্ষুর আড়ালে ছিল ধারনা করা যায় একটা একই লোক অথবা একই দলের লোকের হাতে সুরক্ষিত ছিল যারা গোপনীয়তা বজায় রাখতে জানত। এবং এদের মাঝে প্রভাবশালী কারো সাথে ডি কার্নি পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিল। এখানেই চলে আসে কিংবদন্তীর রহস্যময় নাইট টেম্পলারদের সম্পর্ক।

নাইট টেম্পলারদের বর্ননা।

উত্থান
প্রথম ক্রুসেডের শেষে ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ক্রিস্টানদের অধিকারে আসে। এরপর প্রচুর ইউরোপীয় তীর্থযাত্রী নিয়মিত এই পবিত্র ভূমিতে গিয়ে উপাসনা করত। শহরটিতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও অবশিষ্ট বহিঃস্থ অংশে তা ছিল না। উপকূল রেখা থেকে পবিত্র ভূমির উদ্দেশ্যে জাফা যাবার পথে প্রচুর তীর্থযাত্রী ডাকাত দলের আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করত। মাঝে মাঝে এই সংখ্যা একবারে একশ ছাড়িয়ে যেত।
কনভেন্ট অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ক্রাইস্ট, পর্তুগাল। ১১৬০ সালে নাইট টেম্পলারদের আশ্রয়স্থলের সম্মানে নির্মিত। পরবর্তিতে নতুন অর্ডার অফ ক্রাইস্টের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১১১৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে দুজন যুদ্ধপ্রবীণ, নাইট Hugues de Payens এবং তার আত্মীয় Godfrey de Saint-Omer, এই তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি যোদ্ধা যাজকসম্প্রদায় গড়ে তোলার প্রস্তাব পেশ করে। জেরুজালেমের তৎকালীন রাজা বাল্ডউইন ২ তাদের এই প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং জেরুজালেমের ক্রিস্টানের অধিকৃত আল আকসা মসজিদের অভ্যন্তরে অবস্থিত টেম্পল মাউন্টে তাদের জন্য একটি সদর দফতরের ব্যবস্থা করে দেয়। টেম্পল মাউন্ট তথা মন্দির পর্বতটির এক অতীন্দ্রিয় বিশেষত্ব ছিল, কারণ বিশ্বাসমতে এটি সোলমনের মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের উপর অবস্থিত ছিল। ক্রুসেডাররা তাই আল আকসা মসজিদকে সোলমনের মন্দির বলে ডাকতো এবং এই স্থানের নাম হতেই নাইট টেম্পলাররা তাদের নামের সোলমনের মন্দির এবং খ্রিস্টের দরিদ্র সহযোগী-সৈনিকবৃন্দ (টেম্পলার নাইট) অংশটি নিয়েছিল। মাত্র নয়জন নাইটের মাধ্যমে গঠিত এই যাজকসম্প্রদায়কে প্রথমত শুধুমাত্র দানের অর্থের উপর নির্ভর করতে হত। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুব খারাপ। তাদের প্রতীকে একই ঘোড়ার উপর দুজন নাইটকে বসে থাকতে দেখা যায় যা তাদের এই দারিদ্র্যের পরিচয় বহন করে।

খুব বেশিদিন নাইট টেম্পলারদেরকে এই হতদরিদ্র অবস্থায় থাকতে হয়নি। অচিরেই তারা একজন প্রভাবশালী ধনী পৃষ্ঠপোষক লাভ করে। তিনি হলেন ক্লেইভক্সের বার্নার্ড যিনি চার্চ গোষ্ঠীতে বিশেষ প্রভাবের অধিকারী ছিলেন এবং নাইট টেম্পলারের প্রতিষ্ঠাতা একজন নাইটের ভাতিজা ছিলেন। তিনি নাইট টেম্পলারদের পক্ষে শক্তিশালী লেখা লিখতে থাকেন এবং বিভিন্ন মহলে তাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বক্তৃতা করতে থাকেন। তার এসব কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতেই ১১২৯ সালে কাউন্সিল অফ ট্রয়েসে খ্রিস্টান চার্চ নাইট টেম্পলারদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। চার্চের এই স্বীকৃতি লাভের কারণে টেম্পলাররা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে খ্রিস্টান দাতব্য কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়। যেসব ব্যক্তি ও ধনী পরিবার পবিত্র ভূমি রক্ষার যুদ্ধে শরীক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত তারা অর্থ, জমি, ব্যবসা এবং মহান রক্ত বহনকারী ছেলেদের সরবরাহ করার মাধ্যমে এই যুদ্ধে অংশ নেয়। টেম্পলারদের পক্ষে আরেকটি প্রধান সমর্থন প্রদর্শিত হয় ১১৩৯ খ্রিস্টাব্দে। এই বছর পোপ ইনোসেন্ট ২ Omne Datum Optimum নামক আজ্ঞাপত্রের মাধ্যমে এই যাজকসম্প্রদায়কে স্থানীয় আইন ও নিয়মনীতি থেকে অব্যাহতি দেয়। এর অর্থ ছিল, নাইট টেম্পলাররা সীমানা নির্বিশেষে যেকোন স্থানে বা দেশে ভ্রমণ করতে পারবে, তাদের কোন কর প্রদান করতে হবেনা এবং একমাত্র পোপের আইন ব্যাতীত অন্য কারো আইন বা শাসনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে তারা বাধ্য থাকবে না।

নাইট টেম্পলারদের প্রথম সদর দফতর, জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ-এর টেম্প্ল মাউন্ট। ক্রুসেডাররা এই মন্দিরকে সোলমনের মন্দির বলত কারণ প্রাচীন সেই মন্দিরের উপরই এটি নির্মিত হয়েছিল। এই টেম্প্ল শব্দ থেকেই তারা তাদের নামের টেম্পলার অংশটি নিয়েছিল।

পরিষ্কার অভিযান এবং বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পত্তি কারণে এই যাজকসম্প্রদায় খুব দ্রুত বিকশিত হয়। ক্রুসেডের অধিকাংশ যুদ্ধেই তখন টেম্পলার নাইটদেরকে অগ্রসর বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। কারণ যুদ্ধবাজ উঁচুমানের ঘোড়ায় চড়ে তারা সহজেই প্রতিপক্ষ শক্তির সামনের সারির ব্যুহ ভেদ করতে পারতো এবং প্রথম সারির পতন ঘটাতে তারা ছিল পটু। তাদের অন্যতম প্রধান বিজয় ছিল ১১৭৭ খ্রিস্টাব্দের মন্টগিসার্ডের যুদ্ধে। এই যুদ্ধে মাত্র ৫০০ জন টেম্পলার নাইটের সহযোগিতায় খ্রিস্টান বাহিনী মুসলিম সেনানায়ক সালাদিনের ২৬,০০০ সৈন্যের বাহিনীকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।

এই যাজকসম্প্রদায়ের মূল উদ্দেশ্যে সামরিক হলেও খুব কম সংখ্যক নাইটই সামনের কাতারে থেকে যুদ্ধে অংশ নিতো। অবশিষ্ট নাইটরা সমর্থক এবং সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করত। তাদের কাজ ছিল যোদ্ধা টেম্পলারদেরকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সহায়তা করা এবং আর্থিক অবকাঠামো নির্মাণ করে বাহিনীকে সচল রাখা। ব্যক্তিগতভাবে সব নাইট দরিদ্র হলেও দানের বাইরে তাদেরকে প্রভূত অর্থ-সম্পদের নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হয়েছিল। যেকোন মহৎ ব্যক্তি, যে ক্রুসেডে অংশ নিতে ইচ্ছুক ছিল কিন্তু কোন কারণে সরাসরি যুদ্ধে পারঙ্গম ছিলনা, সে তার সকল সম্পত্তি টেম্পলারদের হাতে তুলে দিয়ে এই যাজকসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতো। ইউরোপ এবং আশেপাশের এলাকা জুড়ে এভাবে বিপুল সম্পত্তি জড়ো করার পর টেম্পলাররা পবিত্র ভূমির তীর্থযাত্রীদেরকে ঋণপত্র প্রদান শুরু করে। তীর্থযাত্রীরা পবিত্র ভূমির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার আগে তাদের যাবতীয় অর্থ-সম্পদ স্থানীয় টেম্পলারদের কাছে জমা করতো। স্থানীয় টেম্পলাররা তাকে গুপ্তভাবে সংকেতায়িত একটি দলিল হস্তান্তর করতো যাতে তার জমা করা সম্পদের পরিমাণ লেখা আছে। পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে এই দলিল দেখালেই সেখানকার টেম্পলারদের কাছ থেকে সে তার অর্থ ফেরত পেয়ে যেতো। এই নতুন উদ্ভাবনটিই প্রথম চেক তথা হুণ্ডির ব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই পদ্ধতি তীর্থযাত্রীদেরকে অনেক স্বচ্ছন্দ এবং নিরাপদ করেছিল। কারণ ডাকাতদের হাতে কাগজটি পড়লেও তারা তার মর্ম উদ্ধার করতে না পারায় কোন সম্পত্তি হস্তগত করতে পারতো না। এছাড়া এই কাজ করে টেম্পলারদের আর্থিক অবস্থাও বিশেষ উন্নত হয়েছিল।

এরকম মিশ্র দান এবং ব্যবসায়িক চুক্তির মাধ্যমে টেম্পলাররা সমগ্র খ্রিস্টান রাজত্বে একটি দৃঢ় আর্থিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল। ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যে তারা প্রচুর অর্থ ও জমি লাভ করেছিল। এছাড়া তারা খামার ও আঙুরের ক্ষেত ক্রয় ও চাষাবাদ, চার্চ এবং দুর্গ নির্মাণ, বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন, আমদানি ও রপ্তানী ইত্যাদি নানা ধরণের কাজ করত। তাদের নিজস্ব নৌ বাহিনী ছিল। এমনকি একসময় তারা সমগ্র সাইপ্রাস দ্বীপের মালিকানা অর্জন করেছিল। বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও টেম্পলারদেরকেই পৃথিবীর প্রথম বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

পতন
দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ক্রুসেডের ফলাফল পরিবর্তিত হতে শুরু করে। সালাদিনের মত যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতার নেতৃত্বে মুসলিমরা আরও ঐক্যবদ্ধ হয় এবং খ্রিস্টান অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল দেখা দেয়। নাইট টেম্পলাররা মেঝেমধ্যেই অন্য দুটি প্রধান খ্রিস্টান যাজকসম্প্রদায়ের সাথে বিবাদে লিপ্ত হত। অন্য দুটি অর্ডার হল নাইট হসপিটালার এবং টিউটোনীয় নাইট। দেশব্যাপী বিবাদের কারণে খ্রিস্টানরা অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে টেম্পলাররা হেরে যায়। অবশেষে হাটিনের যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম পুনরায় সালাদিনের মুসলিম বাহিনীর দখলে আসে। টেম্পলারদের কোন সাহায্য ছাড়া কুসেডাররা ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে স্বল্প সময়ের জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করে। ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে খোয়ারিজমীয় তুর্কীরা আবার জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং এর পর ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি মুসলিমদের দখলে থাকে। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা অটোমান তুর্কীদের কাছ থেকে জেরুজালেম দখল করে।

টেম্পলাররা তাদের সদর দফতর উত্তরের শহরগুলোতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। প্রথমে ইসরাইলের Acre শহরে সদর দফতর স্থাপন করে। প্রায় এক শতাব্দীকাল এখানে থাকার পর ১২৯১ সালে এই শহরও মুসলিমদের অধিকারে আসে। অগত্যা টেম্পলাররা তাদের শেষ আশ্রয়স্থলে এসে ঠেকে। তাদের শেষ আশ্রয়স্থল ছিল টারটোসা (বর্তমান সিরিয়া) এবং আটলিট। তখন তাদের উপকূলবর্তী সদর দফতর ছিল কেবল একটি, সাইপ্রাসের লিমাসলে।[১৬] এছাড়া টারটোসা সমুদ্রোপকূল থেকে খানিক দূরের আরওয়াদ দ্বীপে তাদের একটি ক্ষুদেকায় সেনানিবাস ছিল। ১৩০০ সালের দিকে তারা মোঙ্গলদের সাথে মিলে কিছু যুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল যা ছিল ফ্রাঙ্কো-মোঙ্গল মৈত্রীর একটি অংশ। এর মধ্যে আরওয়াদ দ্বীপে আগ্রাসী বাহিনী প্রেরণ। ১৩০২ বা ১৩০৩ সালে টেম্পলাররা তাদের এই শেষ আশ্রয়স্থলটিও হারায়। পবিত্র ভূমিতে এটিই ছিল তাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল।

এত ঘটনার পর অবশেষে এই যাজকসম্প্রদায়ের আর্থিক সাহায্য ও পৃষ্ঠোপোষকতা কমে যেতে থাকে। ইউরোপে তারা তাদের জনপ্রিয়তা হারায়। দুই শতাব্দীর কার্যক্রমের মাধ্যমে এক সময় টেম্পলাররা ইউরোপীয়দের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়ালেও সে সময়কার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও জটিল। পুরো খ্রিস্টান রাজত্ব জুড়ে স্থাপনা এবং ভবন নির্মাণের কারণে তারা স্থানীয় পর্যায়েও সর্বত্র উপস্থিত ছিল। সামরিক পতনের পরও তাই তারা অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল কিছু ব্যবসা এবং ব্যাংক ব্যবস্থা যা তারাই প্রতিষ্ঠা করেছিল। অনেকেই তখনও তাদের খামারে কাজ করে জীবীকা অর্জন করত। তখনও তারা কোন স্থানীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলনা, তাদের ছিল একটি সংগঠিত সেনাবাহিনী যা যেকোন সীমান্ত নির্বঘ্নে অতিক্রম করতে পারত যদিও এই সেনাবাহিনীর ছিলনা কোন নির্দিষ্ট যুদ্ধক্ষেত্র। এভাবে অনেক ক্ষেত্রে তারা হয়ে দাড়িয়েছিল এক রাষ্ট্রের ভিতরে আরেক রাষ্ট্র। এভাবে নিজেদের একটি যাজককেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থও হয়তো পরিলক্ষিত হচ্ছিল ঠিক যেমনটি টিউটোনীয় নাইটরা প্রুশিয়ার ক্ষেত্রে করেছিল।

বন্দীদশা ও শাস্তি

১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে নতুন পোপ ক্লিমেন্ট ৫ টেম্পলারদের গ্র্যান্ড মাস্টার Jacques de Molay এবং হসপিটালারদের গ্র্যান্ড মাস্টার Fulk de Villaret উভয়ের কাছেই পত্র পাঠান আর বিষয় ছিল এই দুই যোদ্ধা যাজকসম্প্রদায়ের একীকরণ। কেউই বিষয়টি মেনে নেয়নি। কিন্তু পোপ বারবার তাদের বিশেষ অনুরোধ করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে উভয়কে ফ্রান্সে এসে এ ব্যাপারে আলচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান। de Molay ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে উপস্থিত হলেও de Villaret প্রান্সে পৌঁছাতে কয়েক মাস বিলম্ব করেন। এই সময়ে ক্লিমেন্ট এবং Molay এক বহিষ্কৃত টেম্পলার নাইট কর্তৃক উপস্থাপিত একটি মামলা বিষয়ে আলোচনা করেন। সবাই মোটামুটি একমত হয়েছিলেন যে তার উত্থাপিত তথ্যগুলো মিথ্যা, তথাপি ক্লিমেন্ট ফ্রান্সের তৎকালীন রাজা ফিলিপ ৪-এর কাছে মামলার তদন্তের ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে একটি পত্র লিখেন। কিন্তু নিজস্ব আর্থিক সুবিধার স্বার্থে ফিলিপ টেম্পলারদের এসকল গুজব বিষয়ে তদন্তের কোন চেষ্টা করেননি। টেম্পলারদের কাচে তার অনেক ঋণ ছিল। মূলত ইংরেজদের সাথে তার যুদ্ধের কারণেই তাকে ঋণ নিতে হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন সময় টেম্পলারদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চার্চকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, যাতে তার ঋণের বোঝা নেমে যায়।

অক্টোবর ১৩, ১৩০৭ রোজ শুক্রবার বিখ্যাত ফ্রাইডে দ্য থারটিন্থ । রাজা ফিলিপ Jacques de Molay এবং অন্যান্য ফরাসি টেম্পলারদের আটক করার নির্দেশ দেন। তাদেরে বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহীতা এবং উৎপথে চলার অভিযোগ আনা হয়। আটকের পর তাদেরকে বিশ্বাসঘাতকতার মিথ্যা স্বীকৃতি দেয়ার আগ পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। যদিও তাদের স্বীকৃতিগুলো জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছিল, তথাপি তা প্যারিসে প্রভূত গুজবের সৃষ্টি করে। রাজা ফিলিপের আরও জোর জবরদস্তির প্রতি সাড়া দিয়ে পোপ ক্লিমেন্ট একটি আজ্ঞাপত্র ইস্যু করেন যার নাম Pastoralis Praeeminentiae। এই আজ্ঞাপত্রে সকল খ্রিস্টান রাজাকে স্থানীয় টেম্পলারদের আটক করা এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেয়া হয়।

টেম্পলারদেরকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য পোপের কাছে সভা আহ্বানের অনুরোধ জানানো হয়। পোপের ছাড় দেয়ার প্রেক্ষিতে এক সময় অনেক টেম্পলার ইনকুইজিশনের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়। ইনকুইজিশন থেকে বেরিয়ে অনেক টেম্পলারই তাদের পূর্বতন স্বীকৃতি অমূলক বলে প্রত্যাহার করে। অনেকেরই নিজের স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল যা তাদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু ১৩১০ ক্রিস্টাব্দে রাজা ফিলিপ আদালতে পুনরায় আপিল করার এই সুযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর তার নির্দেশে আগের স্বীকৃতির জের ধরেই কয়েক ডজন টেম্পলার নাইটকে প্যারিসের অগ্নিখুটিতে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়।

তার ইচ্ছা বাস্তবায়িত না হলে টেম্পলারদের বিপক্ষে সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে ফিলিপ পোপকে ভয় দেখান। অগত্যা পোপ ক্লিমেন্ট এই যাজকসম্প্রদায়কে চার্চের আওতা বহির্ভুক্ত তথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। টেম্পলারদের যে মিথ্যা স্বীকারোক্তিগুলো ফ্রান্সের জনমনে গুজবের সৃষ্টি করেছিল সেগুলোকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৩১২ সালে কাউন্সিল অফ ভিয়েনে পোপ বেশ কয়েকটি আজ্ঞাপত্র ইস্যু করেন যার মধ্যে ছিল, Vox in excelso যা যাজকসম্প্রদায়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করে এবং Ad providam যা টেম্পলারদের অধিকাংশ সম্পত্তি হসপিটালারদের কাছে হস্তান্তরিত করে।

আগুনে পুড়িয়ে টেম্পলারদের হত্যা



টেম্পলার যাজকসম্প্রদায়ের নেতাদের সম্মান রক্ষার্থে তাদের বয়জ্যেষ্ঠ্য গ্র্যান্ড মাস্টার Jacques de Molay, যিনি স্বীকারোক্তির কারণে নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তার প্রতি যে বিচার করা হয়েছে তাকে অমূলক বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তার সহযোগী নরমান্ডির প্রিসেপটর Geoffrey de Charney-এ একই পথ অনুসরণ করেন এবং নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করতে থাকেন। এই দুজনকেই ধর্মদ্রোহীতা এবং উৎপথে চরার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় এবং নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকার অপরাধে ১৩১৪ সালের মার্চ ১৮ তারিখে প্যারিসে পুড়িয়ে মারা হয়। de Molay মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনমনীয় ছিলেন বলে প্রচলিত মত থেকে জানা যায়। তিনি তাকে খুটির সাথে এমনভাবে বাঁধতে বলেছিলেন যাতে নটর ডেম ক্যাথেড্রাল দেখতে পারেন। এছাড়া মৃত্যুর কলে ঢলে পড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হাত জোড় করে প্রার্থনা করছিলেন। লোকমুথে প্রচলিত আছে, অগ্নিশিখা জ্বলতে থাকা অবস্থায় তিনি বলেছিলেন যে, শীঘ্রই ঈশ্বরের সামনে তার সাথে পোপ ক্লিমেন্ট এবং রাজা ফিলিপের দেখা হবে। এর কয়েক মাস পরেই পোপ ক্লিমেন্ট মারা যান এবং রাজা ফিলিপ সেই বছরের শেষ দিকে এক শিকার অভিযানে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

টেম্পলারদের শেষ কয়েকজন নেতা চলে যাওয়ার পর অধিকাংশ সদস্যদেরই তিনটি পরিণতি হতে দেখা গিয়েছিল। হয় তাদেরকে আটক করে পোপতান্ত্রিক বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়েছে যদিও কারও বিরুদ্ধেই তেমন কোন অপরাধ প্রমাণিত হয়নি, নয়তো অন্যান্য সামরিক যাজকসম্প্রদায় যেমন নাইট হসপিটালারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অথবা পেনশন এবং ভাতা প্রদানের মাধ্যমে শান্তিতে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনেক টেম্পলারই পোপের শাসন বহির্ভুত অঞ্চল যেমন যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন স্কটল্যান্ডে চলে গিয়েছিল। পর্তুগালের টেম্পলাররা কেবল তাদের নাম পরিবর্তন করার মাধ্যমে নতুনভাবে কাজ শুরু করে। তাদের নতুন নাম হয় অর্ডার অফ ক্রাইস্ট।

যাহোক, চিনন দলিল থেকে জানা গেছে, ১৩১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে টেম্পলার সম্পদ্রায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আগে ১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে পোপ ক্লিমেন্ট তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল ধর্মদ্রোহীতার অভিযোগ থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ প্রথমে নিজ বিচার বুদ্ধি দিয়ে তিনি টেম্পলারদেরকে নির্দোষ বললেও পরে স্বার্থের খাতিরে বা অন্য কোন কারণে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এই চিনন পার্চামেন্ট মূলত টেমস্পলারদের মামলার তথ্যাদিতে পরিপূর্ণ। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে স্ক্রিনিয়াম পাবলিশিং হাউজ, যারা ভ্যাটিকানের হয়ে দলিলপত্র প্রকাশ করে থাকে, টেম্পলারদের মামলা সংশ্লিষ্ট দলিলপত্র প্রকাশ করে যার মধ্যে চিনন পার্চমেন্টও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বর্তমানে রোমান ক্যাথলিক চার্চ স্বীকার করেছে যে, মধ্যযুগে নাইট টেম্পলারদের অবস্থান সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। তারা অন্যায় কিছু করেনি এবং তাদের যাজকসম্প্রদায় সম্পূর্ণ খ্রিস্টান ধর্মীয় আইন মোতাবেকই কাজ করেছিল। পোপ ক্লিমেন্ট তখন সে ধরণের আজ্ঞাপত্র ইস্যু করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাধ্য হওয়ার কারণ ছিল জনসাধারণের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়া গুজবের চাপ এবং প্রভাবশালী রাজা ফিলিপ ৪-এর অসাধারণ প্রভাব।

অবদান

সামরিক অভিযান এবং উন্নত মানের আর্থিক অবকাঠামোর সুবাদে টেম্পলাররা বিপুল সামর্থ অর্জন করেছিল। এই সামর্থের কারণেই তারা পবিত্র ভূমি এবং ইউরোপ জুড়ে প্রচুর ভবন এবং কাঠামো নির্মাণ করতে পেরেছিল। এর মধ্যে অনেকগুলো কাঠামো এখনও বিদ্যমান রয়েছে। অনেকগুলো স্থানই এখনও টেম্পল শব্দটি বহন করে চলেছে যা তাদের টেম্পলার নামের উৎস হিসেবে চিহ্নিত। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনে অবস্থিত টেম্পলারদের কিছু ভূমি পরবর্তিতে আইনজ্ঞদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। আইন এবং টেম্পলারদের স্মৃতি মিলে তাই লন্ডনের এই স্থানগুরোর নাম হয়েছে টেম্পল বার, এবং টেম্পল টিউব স্টেশন।

টেম্পলারদের দ্বারা নির্মিত গঠন এবং কাঠামোসমূহের অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এগুলোতে অনেক সময়ই টেম্পলারদের বৈশেষ্ট্যসূচক প্রতীক এবং চিহ্ন খোদিত দেখা যায়, যেমন একই ঘোড়ায় বসে থাকা দুজন নাইটের ছবি, যা তাদের আদি দারিদ্র্যকে চিত্রায়িত করে। এছাড়া তারা গোলাকার ভবন নির্মাণ করত যা জেরুজালেমের পবিত্র চার্চের আদলকে উপস্থাপন করত।

কিংবদন্তী এবং স্মৃতিচিহ্নসমূহ

গুপ্ত তথ্য এবং রহস্যের কারণে নাইট টেম্পলাররা অনেক কিংবদন্তীর উপদান হয়ে আছে। টেম্পলারদের জীবদ্দশাতেই এ ধরণের কিংবদন্তীর কথা প্রচলিত ছিল যা গুজব বলে আখ্যায়িত হতেও পারে। উনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রিম্যাসন লেখকরা বিভিন্ন নিবন্ধ-প্রবন্ধ এবং কল্পকাহিনীতে এ সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। আধুনিক গল্প, উপন্যাস এবং চলচ্চিত্রেও টেম্পলারদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাসসমূহ। যেমন: ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড, আইভানহো, ন্যাশনাল ট্রেজার, ফুকো'স পেন্ডুলাম, দ্য লাস্ট টেম্পলার এবং দ্য দা ভিঞ্চি কোড।

টেম্পলারদের সম্বন্ধে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পরিচিত কিংবদন্তী হচ্ছে প্রথম দিকে পবিত্র ভূমিতে তাদের কাজ নিয়ে। সে সময় জেরুজালেমের পবিত্র ভূমি রক্ষার্থে তারা কাজ করতেন। কাজকরতে গিয়ে তারা সেখানে পবিত্র কি কি স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সেগুলোর কি করেছিলেন তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন সবাই। অনেকে হলি গ্রেইল এবং আর্ক অফ দ্য কনভেনেন্ট-এর কথা বলেছেন। তারা সেখানকার কিছু পবিত্রতম স্মৃতিচিহ্নের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অনেক চার্চ এখনও প্রচুর স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করে এবং সেগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে, যেমন: এক সাধুর হাড়, একজন পবিত্র মানুষ কর্তৃক পরিধেয় বস্ত্রের একটি খণ্ড বা এক শহীদের মাথার খুলি। টেম্পলাররাও পবিত্র ভূমিতে এই কাজটি করেছিলেন। কিন্তু তারা কি সংরক্ষণ করেছিলেন? দলিল প্রমাণাদির ভিত্তিতেই বলা হয়েছে, তারা সেখানে একটি প্রকৃত ক্রস খুঁজে পেয়েছিলেন। একরের বিশপ সেই ক্রসটি নিয়ে হাটিনের যুদ্ধে যান। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর সালাদিন ঐ স্মৃতিচিহ্ন অধিকার করে নেয়। অবশ্য ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা যখন একর শহরে আত্মসমর্পণ করে তখন এগুলো আবার ক্রুসেডারদের হাতে ফিরে এসেছিল। এছাড়াও বলা হয় টেম্পলাররা চালসেডনের সাধু ইউফেমিয়ার মাথা সংরক্ষণ করতেন। টেম্পলারদের ইনকুইজিশনের সময়েও এই পবিত্র স্মৃতিচিহ্নের কথাগুলো এসেছিল যা তারা গোপনে সংরক্ষণ করত। কয়েকটি মামলার দলিল দস্তাবেজে ঘেটে দেখা গেছে সেখানে এক মাথা ন্যাড়া বিড়ালের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, টেম্পলাররা এই বিড়ালের উপাসনা করে, আবার স্থানে স্থানে বাফোমেঁ (Baphomet) নামক একজনের কথা বলা হয়েছে যার অনুসরণ করার জন্য টেম্পলারদের শাস্তি হয়। বাফোমেঁ ইংরেজি মুহাম্মদ শব্দের বিকৃত ফরাসি উচ্চারণ।

ক্রুসেডারদের যুগে টেম্পলারদের সাথে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি জড়িয়ে পড়েছে তা হল হলি গ্রেইল। এমনকি দ্বাদশ শতকেও এ ধরণের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। গ্রেইল রোমান্টিকতা নিয়ে প্রথম গল্প লেখা হয়েছিল ১১৮০ সালে। Chrétien de Troyes কর্তৃক লিখিত এই গল্পের নাম ছিল Le Conte du Graal। de Troyes সেই এলাকারই লোক ছিলেন যেখানে কাউন্সিল অফ ট্রয়েস আনুষ্ঠানিকভাবে টেম্পলার যাজকসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। আর্থারীয় কিংবদন্তীতে গ্রেইল অনুসন্ধানের নায়ক স্যার গালাহাডকে এমন একটি ঢাল বহন করতে দেখা যায় যাতে সেন্ট জর্জের ক্রস খোদিত। এই প্রতীকটি টেম্পলারদেরই অনুরূপ। সে যুগের শিভালরীয় মহাকাব্য Parzival-এ রচয়িতা Wolfram von Eschenbach লিখেছেন, হলি গ্রেইল সম্রাজ্যকে পাহাড়া দিচ্ছে টেম্পলাররা।.[৫৮] এ ধরণের কিংবদন্তীর কারণ হিসেবে বলা যায়, যেহেতু টেম্পলারদের সদর দফতর ছিল জেরুজালেমের টেম্পল মাউন্টে, সেহেতু তারা অবশ্যই সেখানে খননকার্য চালিয়ে হলি গ্রেইল উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করার পর তারা তা গোপন করেছে এবং নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও তাকে রক্ষা করেছে। অবশ্য টেম্পলাররা কখনও হরি গ্রেইল উদ্ধার করেছেন বলে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। তাদের ইনকুইজিশনের সময়কার দলিল দস্তাবেজে গ্রেইল সংশ্লিষ্ট কোন কথাই নেই। অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী মনে করেন হলি গ্রেইলের বিষয়টি একটি কল্পকাহিনী বৈ অন্য কিছু নয়। মধ্য যুগে এটি বিস্তৃতি লাভ করেছে বলে তারা মনে করেন।

টেম্পলারদের সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি বিখ্যাত কিংবদন্তী হচ্ছে তুরিনের অবগুণ্ঠন নিয়ে। ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে Geoffrey de Charney'র নাতির পরিবার প্রথম বারের মত এই অবগুণ্ঠন প্রদর্শন করেছিল। তার এই নাতি ছিলেন টেম্পলারদের শেষ গ্র্যান্ড মাস্টার Jacques de Molay যাকে ১৩১৪ সালে প্যারিসে পুড়িয়ে মারা হয়। এই কৃত্রিমবস্ত্রের কিংবদন্তীটি এখনও প্রভূত বিতর্কের সৃষ্টি করে। কার্বন ডেটিং দ্বারা জানা গেছে এই বস্ত্রটি আনুমানিক ১২৬০ থেকে ১৩৯০ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। এই সময়টি হল টেম্পলারদের রাজত্বের শেষ অর্ধ শতাব্দী।

বাইজানটাইন থেকে তুরিন

সমসাময়িক নথিপত্র কোর্ট অভ ইনকুইজিশনেএর লিপিবদ্ধ বিভিন্ন দলিল থেকে জানতে পারি নাইট টেম্পলাররা এক রহস্যময় প্রতিমার উপাসনা করে যা একটি বোর্ডের ওপর মুদ্রিত ভীষন ফ্যাকাসে এবং বর্নহীন এবং দ্বিধাবিভক্ত শ্মশ্রু। টেম্পলাররা এই প্রতিমাকে “ঈশ্বরের অবগুন্ঠনহীন মুখাবয়ব” বলে উপাসনা করত। বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে উক্ত আলখাল্লা ডি কর্নির পরিবারে যাবার আগে নাইট টেম্পলারদের কাছে ছিল। কিন্তু কনসষ্ট্যান্টিনোপল থেকে সবার নজর এড়িয়ে কিভাবে নাইট টেম্পলাররা এই আলখাল্লা পশ্চিমে নিয়ে এল? এলমার আর. গ্রুবার এই ঐতিহাসিক ধাধার সমাধান দেন।

১২০৪ সালের মে মাসে ফ্লান্ডার্সের কাউন্ট নবম বল্ডউইনকে বাইজানটাইনের রোমান সম্রাট হিসাবে অভিষিক্ত করেন। পোপ দ্বিতীয় ইনোসেন্টের নিকট এক খবর নিয়ে যাবার জন্য বল্ডউইন লোম্বার্ডির মাষ্টার অভ দি টেম্পলার কোর্ট জনৈক ব্রাদার রোচ কে নির্বাচিত করেন, যিনি আবার সুযোগ বুজে সম্রাটকে রাজি করান আলখাল্লাটা ভ্যাটিক্যানে পাঠেলে নিশ্চিত পোপের সমর্থন পাওয়া যাবে। স্থানীয় গ্রীক সম্প্রদায়ের রোষের মুখে পড়তে হবে বলে পুরো অভিযান পরিচালিত হয় নিশ্চিদ্র গোপনীয়তার মাঝে।

ব্রাদার রোচের যাত্রাপথে মানে বাইজানটাইন থেকে রোম পর্যন্ত পৌছান আর এক রোমাঞ্চকর গল্প, সেখানে জলদস্যুদের দ্ধারা আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে চক্রান্ত, কাউন্টার চক্রান্তে ভরপুর যার বর্ননা দিতে গেলে পুরো একটা থ্রিলার বই হয়ে যাবে।

১৩০৭ সালে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ ডি বিয়াউ টেম্পলারদের বিভিন্ন অভিযোগে যেমন প্রতিমা পুজা, মুসলমানদের মত ধর্মীয় আচরন, সমকামীতা সহ বিভিন্ন অভিযোগে পুড়িয়ে হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দেন। ১৩১৪ সালে টেম্পলারদের শেষ দুই নেতা টেম্পলারদের গ্রান্ডমাষ্টার জ্যাকুয়াস ডি মোলে এবং মাষ্টার অভ দি নরম্যান্ডি জিওফ্রে ডি কার্নি। আগুনে পুড়ে যাওয়া অবস্থায়ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেনি আলখাল্লাটা কোথায় আছে। এক পর্যায়ে ডি কার্নি পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় চার্চ নেতাদের ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাধ্য হয়ে ডি কার্নি পরিবার দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। মার্গারেটা ডি কার্নি স্যাভয়ের ডিইককে উইল করে আলখাল্লাটা দান করেন। আলখাল্লাটার এরপরের ইতিহাস খুবই পরিস্কার।

১৫০২ সালে আলখাল্লাটা ক্যা বেরীর দুর্গের চ্যাপেলে দেয়া হয়। সেখানে ১৫৩২ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আলখাল্লাটা প্রায় ভস্মীভুত হবার দশা (যা প্রথম পর্বে উল্লেখ্য করছি)। ১৫৭৮ সালে আলখাল্লাটা শেষ পর্যন্ত তুরিনে এসে পৌছে, চার শতাব্দী ধরে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসাবে রক্ষিত হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ ই মার্চ স্যাভয়ের দ্বিতীয় উমবার্টো ইতালির প্রাক্তন রাজা এটা উইল মারফতে হলি সী (ভ্যাটিক্যান) কে দান করে।

আলখাল্লার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ

১৮৯৮ সালে ইতালির পঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসাবে আলখাল্লাটা সর্বসমক্ষ্যে উন্মোচিত করলেশ খের চিত্রগ্রাহক সেকোন্ডো পিয়ো ইতিহাসে সর্বপ্রথম এর ছবি তোলার সুযোগ পান। এতে নেগেটিভের ওপর যীশুর প্রতিকৃতি ফুটে উঠে। এরপর গুইসেপ্প এনরিয়ের ১৯৬১ সালে তোলা সাম্প্রতিক ছবি নিশ্চিত করে ছবিটি অঙ্কিত হয়নি কারন এর কোন আউট লাইন নেই, দেহের ছাপ ক্রমশঃ কাপড়ে মিশে গেছেঃ

১। ছবিটি নিভারন রোমান আইনে শাস্তি প্রদর্শনের সময় অপরাধীর শরীর যেভাবে ছিল সেভাবেই আলখাল্লার ছবিটি আছে।

২। ক্রুশবিদ্ধ শরীরটা যে যীশুর এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে না কারন সে সময় অহরহ ক্রুশবিদ্ধ করে শাস্তি দেয়া হত। এমনকি যীশুর সাথে দুজন কে একই সাথে ক্রুশে ঝোলানো হয়েছিল। যেহেতু প্রথম রোমান সম্রাট কনসষ্ট্যানটাইন ক্রুশে বিদ্ধ করার অমানবিক প্রথা বিলোপ করেন তাই নিশ্চয়ই এই কাপড় ৩৩০ খ্রীষ্টাব্দের আগের।

৩। প্রতিকৃতিতে দৃশ্যমান লোকটার দাড়ি এবং চুলের বিন্যাস মাঝ দিয়ে সিথি রোমান সম্রাজ্যে প্রচলন ছিল না, প্রচলতি ছিল ফিলিস্থিনে, তাই নিশ্চিত ছিল শাস্তি প্রাপ্ত ব্যাক্তি নাজারেথ সম্প্রদায়ের।

৪। গসপেলে বর্নিত ছয়টা নির্দিষ্ট চিহ্নের আলামত পরিস্কার আলখাল্লায় শায়িত লোকটির দেহে বিদ্যমান।

৫। পিঠে ক্ষুদ্র ডাম্বেল আকৃতির চিহ্ন বিদ্যমান, এছাড়া নব্বইটা চাবুকের (ফ্লাগরাম যে চাবুক রোমানরা ব্যাবহার করত) দাগ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

৬। আলখাল্লায় ক্রুশবিদ্ধ ব্যাক্তির কাধের অবস্থা পর্যালোচনা করলে এটা পরিস্কার বোজা যায় কিছু সময়ের জন্য হলেও ক্রুশবিদ্ধ ব্যাক্তি ক্রুশ বহন করছিলো যা গসপেলের বর্ননার সাথে মিলে যায়।

৭। কপালে এবং মাথার পেছনের অনিয়মিত রক্তের ফোটা কন্টক মুকুটের কথা স্মরন করিয়ে দেয়।

৮। চিত্রে যেভাবে দেখা যায় হাতের তালুতে কীলক বিদ্ধ করে যীশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আলখাল্লায় ৫৫ থেকে ৬৫ ডিগ্রী কোনে দু হাত প্রসারিত ছিল যা রক্তধারা দেখে হিসাব করা যায়। এবং কীলক আসলে কব্জিতে বিদ্ধ ছিল। ফরাসী বিষেষজ্ঞ চিকিৎসক বার্বেট দেখিয়েছেন চল্লিশ কেজির বেশী ওজনের কাউকে হাতের তালুতে কীলক মারলে হাত ছিড়ে নীচে পরে যাবে। ( চিত্রকররা ব্যাপারটা বোধহয় জানেই না)।



৯। যোহানের গসপেল অনুযায়ী বক্ষপিঞ্জরের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অস্থির মাঝে বর্শা দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল যা দেহের ডান পাশে ৪.৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ রক্তের দাগ প্রমান করে।

১০। উরুতে আর পায়ের ডিমে কোন আঘাতের চিহ্ন নাই যা প্রমান করে গসপেলে বর্নিত পা ভেঙে দেয়া হয়নি, অথচ ক্রুশেবিদ্ধ আসামীর পা ভেঙে দেয়াই ছিল তখনকার প্রথা।

১৯৬৯ সালে তুরিনের কার্ডিনাল প্যালেগ্রিনো এগারোজন বৈজ্ঞানিক সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করে একটি আধুনিক অনুসন্ধানের অনুমতি দেন, সে অনুসন্ধানের ফলাফল এত ব্যাপক যে পরে এত সাথে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাসাও (আমেরিকা) যুক্ত হয়। মজার ব্যাপার হল ১৯৬৯ সালের কমিশন যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তা গোপনীয়তার বেড়াঝালে আটকা থাকে এমনকি কমিশনের সদস্যদের নাম ও প্রকাশ করা হয় নাই। ১৯৭৩ সালে তিন দিনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আলখাল্লাটা পরীক্ষা এবং টেলিভিশনে প্রদর্শনের অনুমতি পাওয়া যায় স্যাভয়ের দ্বিতীয় উমবার্টোর কাছ থেকে (আইনতঃ তখনো তিনি এর মালিক) এবং পোপ ষষ্ঠ পল এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন।

১৯৮৮ সালের রেডিও কার্বন পরীক্ষা

আজকাল যে কোন জৈব পদার্থের বয়স নির্ধারনের জন্য কার্বন-১৪ টেষ্ট করা হয়। জীবিত প্রানী সত্ত্বা বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহন করে, তা নিজের দেহের কাঠামোর সাথে যুক্ত করে। প্রানী সত্ত্বা যখন মারা যায় তখন কার্বন খুব ধীরে ধীরে নিয়মিত মাত্রায় ক্ষয় হতে থাকে ( সব জৈব পদার্থের এই হাফ লাইফ প্রতি ৬০০০ বছরে)। যাই হোক আমি আর C14 এবং C12 অনুপাতিক হার দিয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে কিভাবে কোন কিছুর বয়স নির্ধারন করা হয় সেদিকে যাব না, আসি মুল ব্যাপারে ১৯৮৮ সালে জুরিখ, অক্সফোর্ড, আর টুকসান বিশ্বাবিদ্যালয় অক্টোবরে আলখাল্লাটির কার্বন-১৪ টেষ্টের রেজাল্ট প্রকাশ করে তাতে দেখা যায় কাপড়টি ১২৬০-১৩৯০ সালের মাঝামাঝি।



এখানেই শুরু হয় আর এক নাটক, যে কাপড়ের অস্তিত্ত্ব মধ্যযুগের আগেও নিশ্চিত প্রমান সাপেক্ষে ছিল তা কিভাবে মধ্যযুগের তৈরী হয়। অনুসন্ধান কাজের পরিচালক ডঃ মিখাইল টিটে এই কাজের পরই অজ্ঞাতনামা বন্ধু এবং পৃষ্ঠপোষকের কাছ থেকে এক মিলিয়ন পাউন্ড পায় একটা নতুন অনুষদ খোলার জন্য। পরীক্ষার অব্যহত পরই তুরিনের কার্ডিন্যাল ব্যালিষ্টেরো অবসর নেন এবং এই বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখেন।

এব্যাপারে অনুসন্ধানে নামেন জার্মান ধর্মতত্ত্বের প্রফেসর কারষ্টেন হোলগার প্রায় তিন বছর অনুসন্ধানের পর জানতে পারেন কার্বন-১৪ টেষ্টের জন্য যে কাপড় পাঠানো হয়েছিল তা “ম্যান্ডেলিয়নের” ছিল না ছিল ফ্রান্সে অবস্থিত সেইন্ট ম্যাক্সিমিন ব্যাসিলিকায় রক্ষিত সেইন্ট লুইস ডি আনজুর টুপি থেকে যা ১২৯৬ সাল থেকে সেখানে রক্ষিত আছে। এ থেকে প্রমানিত হয় তুরিনের আলখাল্লার সময়কাল প্রমানে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে; চার্চের আসল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যযুগীয় জালিয়াতি হিসাবে তুরিনের আলখাল্লাকে প্রমান করা কারন যীশু ক্রুশ বিদ্ধ হবার পর বেচে ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন কে ধামাচাপা দেয়া – যে বিষয় আলোচনা উঠলে পুরো খ্রীষ্টান চার্চের ভিত্তিমুল নাড়িয়ে দেবে।

শ্রাউড অভ তুরিন নিয়ে এখনো সমানতালে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা চলছে, যাই চলুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না, আমি শুধু সত্যটা জানতে চাই, কিন্তু সে সত্য যে এত সহসা প্রকাশিত হবে তার আশা দেখি না।

সূত্রঃ প্রথম পর্বর শেষে



সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×