somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমৃতা শেরগিল এক নিমফো মহিলা মাষ্টার পেইন্টার

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু কিছু মানুষকে নিয়ে লিখতে বুকের পাটা লাগে, অমৃতা শেরগিল নামক ইন্ডিয়ান আর্টিষ্টও তেমনি একজন। অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম একে নিয়ে পোষ্ট দেয়া ঠিক হবে কিনা? এমনকি এখনো ভাবছি একে নিয়ে লিখব কিনা? কিন্তু এক ভয়াবহ দুর্নিবার আকর্ষনে লেখাটা এগিয়ে যাচ্ছে, আমার মনের একটা অংশ বলছে একে নিয়ে লিখলে এখনো আমাদের সমাজ এক গ্রহন করার উপযোগী হয়ে ওঠে নি, আর একটা অংশ বলছে লিখে ফেল কারন দুনিয়ার লাখ লাখ মানুষ এর পেইন্টিং দেখছে। উইকিতে শেরগিল কে নিয়ে লেখা আছে She has been called "one of the greatest avant-garde women artists of the early 20th century" and a "pioneer" in modern Indian art.


ব্রাইডস টয়লেট

ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল গ্যালারি অভ মর্ডান আর্টসের যে বুকলেট তার প্রচ্ছদে অমৃতা শেরগিলের “ব্রাইডস টয়লেট” পেইন্টিংটি আঁকা। অমৃতা শেরগিল ভারতের সব থেকে এক্সপেনসিভ মহিলা শিল্পী। জীবিত অবস্থায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন, তাও মাত্র ২৫০ রুপিতে কিন্তু কিছুদিন আগে তার একটি পেইন্টিং “ভিলেইজ সীন” বিক্রি হয় ১৬ লাখ ডলারে, এদিক দিয়ে দেখতে গেল অমৃতা আর ভ্যান গঘের মাঝে মারাত্মক মিল, গঘাও জীবিত অবস্থায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন


Amrita Sher-Gil, 'the Indian Frida Kahlo'

ইংরেজীতে “ন্যূড” এবং “নেকেড” শব্দটির অর্থ এক হলেও শিল্প এবং সাহিত্যে এ দুটির শব্দর বিশাল পার্থক্য। চিত্রকলায় ন্যুড এমন একটি নগ্ন দেহ যার মাঝে সেক্স অ্যাপীল থাকে না, চিত্রকলায় দেব দেবী, বা নারী পুরুষদের নগ্নভাবে মাষ্টার পেইন্টাররা ক্যানভাসে যেভাবে উপস্থাপন করেন তাতে যৌনতা থাকে না থাকে এক ধরনের পবিত্রতা সততার প্রতিভু। কিন্তু সাহিত্যে বা চিত্রে নেকেড শব্দটার মানে হল এক ধরনের নগ্নতা বা যৌনতা যা মানুষকে আদিম রিপুতে উদ্দীপ্ত করে। এর মানে হল যে লেখায় বা চিত্রে সেক্সুয়াল এ্যাটিভিটি প্রকাশ পায় সেটা নেকেড লেখা বা নেকেড চিত্র, ন্যুড না।



অমৃতা শেরগিলকে নিয়ে লেখার শুরুতেই নেকেড আর ন্যুডের সংজ্ঞাটা দিলাম এই কারনে যে এই মহিলারা ছবির সাথে ন্যুড শব্দটি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত, এবং ব্যাক্তি জীবনেও ভয়াবহ রকম সেক্স পার্ভার্ট হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই ইন্ডিয়ান হাঙ্গেরিয়ান পেইন্টার। তাকে বলা হয় ইন্ডিয়ার ফ্রিডা কাহলো, ইউনেস্কো ইউনাইটেড নেশনের সাংস্কৃতিক সংগঠন, অমৃতা শের-গিলকে সম্মান জানিয়ে তার জন্মের ১০০ বছর পুর্তিতে, ২০১৩ সালে ঘোষণা করে the international year of Amrita Sher-Gil. এগুলি খুব বিরল সম্মান।


Amrita Sher-Gil portrait

নগ্ন হওয়া নিয়ে বা সেক্সের ব্যাপারে অমৃতার কোন রাখ ঢাক ছিল না, অমৃতা যে কনসেপটিতে বিশ্বাস রাখতেন তা হলো – Naked came I out of my mother’s womb and naked shall I return thither. পুরুষ আকিয়েদের ভীড়ে পৃথিবীতে তিনজন নারী শিল্পীকে ফিমেল আইকন হিসাবে গন্য করা হয় এর একজন আমেরিকার জর্জিয়া ও’কিফ (১৮৮৭-১৯৮৬), মেক্সিকোর ফ্রিদা কাহলো (১৯০৭-১৯৫৪ এবং অমৃতা শেরগিল ( ১৯১৩ – ১৯৪১)।


Amrita as a baby with her parents, 1913

অমৃতা শেরগিলের জন্ম ১৯১৩ সালের ৩০ শে জানুয়ারি হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। এই বছরই এশীয়দের মাঝে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অমৃতার মা ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদী আর বাবা ছিলেন ভারতীয় শিখ। মা মেরি আর বাবা উমরাও সিংয়ের দুই সন্তান অমৃতারা ছিলেন দুই বোন- অমৃতা আর ইন্দিরা, লেখাপড়া করেছেন বিদেশে। জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন ভারতের বাইরে, কিন্তু অমৃতার আঁকা ছবি প্রমাণ করে যে নিজেকে তিনি কতটা ভারতীয় ভাবতেন।


The Sher-gil sisters - Amrita (artist) and Indira 1920s

অমৃতা ৮ বছর বয়সে ছবি আঁকা শুরু করেন। একটু বিদ্রোহী স্বভাবের ছিলেন। কনভেন্ট স্কুলে পড়ার সময় স্কুল থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। কারণ তিনি নিজেকে নিরীশ্বরবাদী ভাবতেন। এরপর তার চলে বোহেমিয়া জীবন। ১৬ বছর বয়সে প্যারিসে চলে যান ও ওইখানে আর্ট নিয়ে পড়াশুনা করেন the Académie de la Grande Chaumière প্রতিষ্ঠানে ও পরে the École des Beaux-Arts-এ।


Sleep

শেরগিলের বিখ্যাত মাষ্টারপীস হল “স্লীপ”। কি আছে এই স্লীপে? শ্বেতশুভ্র বিছানায় একজন নগ্ন যুবতী নারীর ঘুমের দৃশ্য। পৃথিবীতে অসংখ্য ন্যুড ছবি আছে, কিন্তু তারমাঝেও অনন্য একটি হল এটি।শিল্পমান বিচারে যেটি আরেক ফ্রেঞ্চ মাস্টার Amedeo Modigliani’র Red Nude এর সমতুল্য। জর্জিনো, এদুয়ার মনে, তিসিয়ান, বত্তিচেল্লি, রেমব্রান্ট থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত সবার আঁকা ন্যুড চিত্রের মধ্যেও এটি যেন আলাদা।



জর্জিনো তাঁর স্লিপিং ভেনাসে,



এদুয়ার মনের তাঁর অলিম্পিয়া’তে,



বত্তিচেল্লি তাঁর বার্থ অফ ভেনাস,



তিসিয়ান তাঁর রাইজিং ভেনাস,



রেমব্রান্ট এর বাথসেবায়

রেমব্রান্ট তাঁর বাথসেবায় চাতুর্যের সাথে লুকিয়ে রেখেছেন নারীর গোপনাঙ্গ। কিন্তু অমৃতা তাঁর স্লিপে নারীকে এঁকেছেন একদম নিজস্ব স্টাইলে, রাখঢাকহীন অকৃত্রিমভাবে- যেখানে নগ্নতার মাঝে ঘুমের সৌন্দর্য কতটা মোহনীয় ও সুখকর হতে পারে তা অনুভব করা যায়।

ন্যুড পেন্টিং নিয়ে তার সিরিজ আছে Recling Nude (1933), Professional Model (1933), Nude Group ( 1935), Two girls (1939)

এক রোখা ঠোট কাটা অমৃতা কে নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। জীবনের এক পর্যায়ে অবিভক্ত ভারতের লাহোরে কিছুদিন বসবাস করছিলেন, সেখানে তার প্রতিবেশী ছিল আর এক বিখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। এক বিকালে খুশবন্তের স্ত্রী অমৃতার কাছে জানতে চান তাদের বাচ্চাটি দেখতে কেমন হয়েছে?

উত্তরে অমৃতা বলেন what an ugly little boy! খুশবন্ত সিং এর স্ত্রী তো রেগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন তিনি জানিয়ে দেন তাদের বাড়ীতে কোন দিন অমৃতাকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না। অমৃতাও কম যান না তিনিও সমান তেজে উত্তর দেন I will seduce her husband. বোজেন অবস্থা! একজনের স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে তার স্বামীকে বিছানায় নিয়ে যাবার ভয় যে মেয়ে দেখাতে পারে তার সাথে কি বলার থাকে?

অমৃতার বিখ্যাত ছবি গুলোর মাঝে আছে


স্প্যানিশ গার্ল


হাঙ্গেরিয়ান পীজান্ট


হাঙ্গেরিয়ান জিপসী গার্ল


ব্রক্ষ্মচারী


থ্রি গার্লস

অমৃতার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর দেখা হয় লাহোরে, বলা হয়ে থাকে সেখানে তারা তিন দিন নির্জনে একান্তে ছিলেন। বয়ফ্রেন্ডদের তালিকা ছিল দীর্ঘ। সেখানে নিজের বয় ফ্রেন্ডদের পোট্রেট আঁকা তার ছিল শখ। একজন সাংবাদিক একদিন অমৃতাকে প্রশ্ন করছিলেন কেন তিনি নেহেরুর ছবি আঁকেন নি? উত্তরে লাজুক হেসে অমৃতা বলছিলেন Because he is too good looking! গুড লুকিং পুরুষদের প্রতি অমৃতার ছিল দুর্নিবার আকর্ষন। খুশবন্ত সিং তাকে বলছিলেন নিমফোম্যানিয়াক।

খুশবন্ত সিং তাকে নিয়ে লিখছেন Sher-Gil had many lovers, including, perhaps, India’s future prime minister Jawaharlal Nehru. According to one contemporary, she sometimes entertained up to seven a day, with two-hour intervals in between trysts. The British journalist Malcolm Muggeridge spent a week with her that reportedly reduced him to a “limp rag”. “I could not cope” he later recalled.

অমৃতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক অনেক নারী পুরুষের সঙ্গে ছিল, যেমন the painter Marie Louise Chassany, and some art critics. এমনকি তার ভাইপো শিল্পী ভিবান সুন্দরমের সঙ্গেও। যৌনতার প্রতিমূর্তি হিসাবে তিনি নিজেকে প্রকাশ করতেন। প্রেম প্রণয় ছিল তার জীবনের উৎস। তার পুরুষ বন্ধুও অনেক ছিল। আকবরপুরের নবাব ইউসুফ আলী খানের কাছ থেকে যৌন অসুখ গনোরিয়া উপহার পান তার কিশোরী বয়সে।

তাঁর এক ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরে তার সঙ্গে বিয়ে হয়। নাম ভিক্টর ইভান, ১৯৩৮ সালের ১৬ই জুলাই। তার সেই গর্ভ ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৩৯ সালে গোরখপুর জেলার সারায়া গ্রামে কিছু দিন বিবাহিত জীবন কাটিয়ে লাহোর চলে যান স্বামী স্ত্রী। লাহোর তখন অবিভক্ত ভারতের উজ্জ্বল শহর। সেখানে ১৯৪১ সালে তার একক ছবির প্রদর্শনীর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর দ্বিতীয় গর্ভপাতের সময় স্বামীর হাতেই মারা যান মাত্র ২৮ বছর বয়সে।

প্রশ্ন আসতে পারে আমি এই ধরনের পারভার্ট একজন পেইন্টার কে নিয়ে কেন লিখছি? লিখছি এই কারনে একজন নারী মাষ্টারপেইন্টার হিসাবে তিনি এখন বিশ্ব স্বীকৃত ব্যাক্তি জীবনে যাই থাকুন না কেন। তিনি নিজে তার ছবি সম্পর্কে এত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি বলেন, ‘Europe belongs to Picasso, Matisse and Braque and many others. India belongs only to me.”

কৃতজ্ঞতাঃ বরেন চক্রবর্তীর আইনষ্টাইনের হলুদ বাড়ি ভ্যানগঘের হলুদ ভুবন বই এবং Amrita Sher-Gil , ভারতীয় শিল্পকলার রাজকন্যা অমৃতা শেরগিল
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×