somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)

০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সবুজ রংঃ প্রথম ফিতনার সময় রাশিদুন খলিফা আলি ইবনে আবি তালিবের অধীনস্থ এলাকা
লাল রংঃ প্রথম ফিতনার সময় মুয়াবিয়ার অধীনস্থ এলাকা
নীল রংঃ প্রথম ফিতনার সময় আমর ইবনুল আসের অধীনস্থ এলাকা


খোলাফায়ে রাশেদিন সিরিজের এটাই শেষ পর্ব। এই পাঁচটা পর্ব লিখতে গিয়ে আমাকে বেশ কিছু বই পড়তে হয়েছে মুসলিম এবং অমুসলিম স্কলারদের লিখিত। সেখান থেকে যেটুকু আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে এবং যেটুকু হাদীস দ্ধারা প্রমানিত আমি সেটুকু নেবার চেষ্টা করছি। হযরত আলীর খেলাফত কালের পুরাটাই গৃহ যুদ্ধের তিক্ততায় ভরপুর। এখানে আমি ইতিহাসটুকুই তুলে ধরেছি, উনার বা অন্যান্য খলিফাদের মহত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় বইতে অনেক বর্ননা পাবেন, তাই সেদিকে আমি খুব একটা দৃষ্টি দেই নাই। এই লেখা লিখতে গিয়ে আমার অন্তত এইটুকু উপকার হয়েছে ইসলামের অনেক ব্যাপারে আমি ধোয়াশায় আচ্ছন্ন ছিলাম তার কিছুটা হলেও কেটে গেছে। এত যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝ থেকে আমি আমার মত করে সাহাবী বা খোলাফায়ে রাশেদিনদের মহত্ত্বগুলো বিস্তারিত জানতে পেরেছি যা এই নিতান্ত ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ননা দেয়া কোন মতেই সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে আমি আপনাদের অনুরোধ করব এই পোষ্টের নীচে “আল বিদায়া ওয়া নিহানা (১০ খন্ড)”র পি ডি এফ লিঙ্ক দিয়েছি হাদীস গ্রন্থ গুলো সহ। সেগুলো পড়ার মাধ্যমে নিজেকে আলোকিত করুন। এই লেখা লিখতে গিয়ে আমাকে অনেক বারই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে শিয়া মতবাদের দেয়া বিভিন্ন উদ্ধৃতি অন লাইনে দেখে, আশা রাখি সবাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এত দিন সাথে থেকে যারা আমাকে উৎসাহিত করছেন এই সিরিজটি লিখতে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

হযরত উসমান (রাঃ) একদল বিদ্রোহীদের হাতে নৃশংস ভাবে নিহত হন ৬৫৬ সালের ১৭ ই জুন। এরপর অধিকাংশ মদীনাবাসী এবং হাশেমী গোত্রের সমর্থনে হযরত আলী খলিফা নির্বাচিত হন ৬৫৬ সালের ২৩শে জুন। সর্বপ্রথম তার হাতে বাইয়াত গ্রহন করে মালিক আশতার। সবার বাইয়াত গ্রহন করার পর হযরত আলী হযরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) বাইয়াত গ্রহনের প্রয়োজন অনুভব করেন। এখানে যে ব্যাপারটা উল্লেখ্য না করলেই না তা হল প্রথম খলিফা নির্বাচনের সময় এই হযরত তালহা এবং যুবায়ের কিন্তু হযরত আলীর এক নিষ্ঠ সমর্থক ছিল।

কিন্তু সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আলী (রাঃ) এর সময় হযরত তালহা এবং হযরত যুবায়েরও খিলাফতের সব থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আবির্ভুত হন। মহানবীর মৃত্যুর পর আগের তিন খলিফার সময় এই তিন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আলী, হযরত তালহা, হযরত যুবায়ের অনেকটা নিস্ক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। ইতিহাস ঘাটলে আপনি দেখবেন পারস্য বা বাইজান্টাইন বিজয়ে এদের খুব একটা ভুমিকা ছিল না। অথচ মহানবী জীবিত থাকা অবস্থায় ইসলাম প্রসারনে এরা অসাধারন বীরত্ব প্রকাশ করেছিল। যাই হোক হযরত আলী হযরত তালহা এবং যুবায়েরকে মালিক আশতারির মাধ্যমে ডেকে পাঠান। তারা আসলে হযরত আলী সৌজন্যতা প্রকাশ করে বলেন তারা যদি রাজি থাকেন তবে তিনি তাদের যে কারো কাছে খলিফা পদ ছেড়ে দিতে রাজি আছেন।

কিন্তু হযরত তালহা এবং যুবাইর হযরত আলীর এ ডাকে তৎক্ষনাত কোন সাড়া দিলেন না। কিছুক্ষন পর হযরত তালহা বললেন যদি হযরত আলী উসমান হত্যাকারীদের শাস্তি প্রদানে নিশ্চয়তা দেন তবে তিনি বাইয়াত গ্রহনে রাজি আছেন। এতে হযরত আলী রাজী হলে তারা বাইয়াত গ্রহন করে। ওদিকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের (ইনি হযরত উমর (রাঃ) সন্তান) বাইয়াত গ্রহন নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে মালিক আশতারি তরবারি বের করে বললেন “আমি তাকে হত্যা করব”। কিন্তু হযরত আলী তাকে নিবৃত্ত করলেন এবং বললেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের পক্ষ থেকে কোন চক্রান্তের সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর মক্কায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্য রওনা দিলে ফেতনাকারীরা রটিয়ে দেয় তিনি মক্কা যাচ্ছেন হযরত আলী (রাঃ) বিরোধী পক্ষকে সংগঠিত করতে। এ পরিস্থিতিতে হযরত আলী তাকে গ্রেফতারের জন্য লোক পাঠালে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের স্ত্রী তাকে নিশ্চয়তা দেন এমন কিছু ঘটবে না এবং হযরত আলী তাতে নিশ্চিত হন।

যাই হোক হযরত আলী খেলাফত কালের শুরুই হয়েছিল পূর্ববর্তী খলিফার নিহত হবার মাধ্যমে, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, চক্রান্ত, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে তুলকালাম কান্ডের মধ্য দিয়ে। এই অবস্থায় কিছু কিছু সাহাবী যেমন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ, উসামা ইবনে শুবাহ, আব্দদুল্লাহ ইবনে সালাম কিন্তু হযরত আলীর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেনি। কোন কোন সাহাবী মদীনা ত্যাগ করে মক্কা চলে গিয়েছিল। যে সব সাহাবী বাইয়াত গ্রহন না করে মদীনায় অবস্থান করছিলো তারা সাফ জানিয়ে দিল হযরত আলীর খলিফা হবার ঘটনায় মুসলমানদের মাঝে অনেক রক্তারক্তি ঘটছে সুতারাং তারা নিরপেক্ষ থাকতে চায়। হযরত আলীর হাতে বাইয়াত গ্রহনের পরদিন হযরত তালহা এবং যুবাইর এর সাথে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবী তার সাথে দেখা করে তাকে জানায় হযরত উসমান (রাঃ) হত্যার বিচার অচিরেই করতে হবে না হলে তাদের বাইয়াত অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে। তখন হযরত আলী বলে যে হত্যাকারীরা যথেষ্ট লোকবলের অধিকারী, ফলে এই মুহুর্তে তার পক্ষে হত্যার বিচার করা সম্ভব না। এতে হযরত তালহা এবং যুবাইর সহ অন্যান্য সাহাবীরা মনোক্ষুন্ন হন ( দেখুন আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খঃ ৭, খোলাফায়ে রাশেদীন জীবন ও কর্ম, পৃঃ ৪৯০)।

ওদিকে যারা হযরত উসমান (রাঃ) এর হত্যাকান্ডের সময় নিরব বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চুপ ছিল তারাও এখন বিদ্রোহীদের একচ্ছত্র আধিপত্য মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। খিলাফতের তৃতীয় দিন হযরত আলী বিদ্রোহীদের যার যার এলাকায় চলে যেতে বললেও কিছু বিদ্রোহী মদিনায় থেকে যায় কারন তারা চাচ্ছিল না কোন অবস্থাতেই যেন হযরত আলী হযরত উসমানের হত্যার বিচার করেন। খিলাফতের চতুর্থ দিন হযরত আলী এক লিখিত আদেশের মাধ্যমে সকল গভর্নর, কর্মকর্তা, প্রশাসককে পদচ্যুত করে। অল্প কিছু প্রদেশে এ আদেশ বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা থাকলেও সিরিয়ার মত প্রদেশ যেখানে হযরত মুয়াবিয়া গভর্নর সেখানে এই আদেশ পালনের কোন সুযোগ বাস্তবে ছিলই না। কারন আগেই উল্লেখ্য করছি মুয়াবিয়া ছিল হযরত উসমানের আত্মীয়। ওদিকে সিরিয়ার দামেস্কে্র মসজিদে হযরত উসমান (রাঃ) এর রক্তমাখা জামা এবং হযরত উসমান পত্নী নায়লার কর্তিত আঙ্গুল প্রদর্শিত হচ্ছিল এবং লোকজনের মাঝে ক্রমান্বয়ে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগ্রত হচ্ছিল। হযরত আলী একথা শোনার পর সিরিয়া অভিযানে মনস্থ করলেন।

ওদিকে হযরত তালহা এবং যোবায়ের একথা শোনার পর মক্কায় যাবার অনুমতি চান খলিফা আলীর কাছে হজ্ব পালনের জন্য। সেখানে বস্তুতঃ হযরত উসমানের এর নির্বাচিত গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনে হাযরামীর নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল হযরত উসমান হত্যার বদলা নেবার জন্য। ওখানে হযরত আলী কর্তৃক পদচ্যুত বসরার গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনে আমীর, ইয়েমেনের গভর্নর ইয়ালা ইবনে মুনাব্বর সবাই ছিল এবং প্রতিশোধের জন্য উদগ্রীব ছিল। এবং সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল তাদের নেতৃত্বে আবির্ভুত হয়েছেল মহানবীর প্রিয় স্ত্রী হযরত আয়েশা (রাঃ)। এখানে একটা বড় প্রশ্ন আসে কেন হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?


(সীরাতে ইবনে হিশাম পৃঃ ২৩৮)

এখন যে পেছনের ঘটনাটার কথা বলব সেটি ইসলামি ইতিহাসে ‘নেকলেসের ঘটনা’ নামে পরিচিত। ঘটনাটি বুখারি শরীফে লিপিবদ্ধ রয়েছে। নবী (সাঃ) বিভিন্ন অভিযানের সময় একজন স্ত্রীকে নিয়ে যেতেন লটারি করে বাছাই করে। মুস্তালিক অভিযানের সময় ওঠে স্ত্রী আয়শা (রাঃ) এর নাম। হিজাবের আয়াত এর আগেই চলে আসার কারণে আয়শা (রাঃ)-কে যে উটে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার পিঠে ছিল একটি হাওদা (পর্দা ঘেরা জায়গা যার ভেতরে তিনি বসতেন)। ফিরে আসার সময় মদিনার কাছাকাছি এক জায়গায় কাফেলা থামার পর প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে আয়শা (রাঃ) কাছের ঝোপে গেলেন। যখন তিনি ফিরে এলেন, তখন দেখলেন তাঁর গলায় নবীজীর উপহার দেওয়া ইয়েমেনি নেকলেসটি নেই! তিনি আবার খুঁজতে গেলেন, গিয়ে পেয়ে গেলেন নেকলেসটা। কিন্তু কাফেলার জায়গায় ফিরে আসতেই তিনি দেখলেন কাফেলা নেই! তাঁকে না নিয়েই চলে গেছে! (তিনি খুব হালকা হওয়ায় কেউ বুঝতে পারেনি তিনি যে নেই উটের পিঠে।)

পেছনে পেছনে সাফওয়ান নামের এক সাহাবী আসছিলেন কাফেলা কিছু ফেলে গেল কিনা দেখার জন্য। তিনি আবিষ্কার করলেন স্বয়ং আয়শা (রাঃ)-কে! আয়শা (রাঃ) ধরেই নিয়েছিলেন কেউ না কেউ তো টের পাবেই তিনি যে নেই, তখন তাঁকে উদ্ধার করতে আসবে, এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছেন ওখানেই। সাফওয়ানের ডাকে ঘুম ভাঙে, তিনি তাঁকে তাঁর উটে উঠতে বলেন এবং বাকি পথ তাঁকে নিয়ে চলেন হেঁটে। অনেকদূর যাবার পর তারা সেনাবাহিনীর সান্নিধ্যে পৌঁছালেন।

বড় কাহিনী সংক্ষেপে বলতে গেলে, গুজব রটিয়ে দেওয়া হলো যে, দীর্ঘ পথ নবীপত্নী আয়শা (রাঃ) এক অনাত্মীয়ের সাথে কী না কী করে এসেছেন! নবী (সাঃ) এর কানে এ গুজব পৌঁছালে তিনি বিশ্বাস না করলেও কষ্ট পেয়েছিলেন। আর যখন আয়শা (রাঃ) এর কানে পৌঁছাল, তখন তাঁর অবস্থা পুরো খারাপ হয়ে গেলো। তিনি নাওয়া খাওয়া ছেড়েই দিলেন, কাঁদতে কাঁদতে জান শেষ। এ পর্যায়ে ইবনে হিশাম রচিত নবী (সাঃ) এর জীবনীগ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি, আলী (রাঃ) তখন নবীজীকে পরামর্শ দিলেন, এসব অপবাদ শোনার চেয়ে তিনি যেন তাঁকে তালাক দিয়ে দেন, অন্য কোনো নারী তিনি পাবেন।

কিন্তু আল্লাহ্‌ তখন ওহী নাজিল করলেন, যা কুরআনের আয়াত হিসেবে এখনো পঠিত হয়ঃ “তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের মানুষ (আয়শা) সম্পর্কে উত্তম ধারণা করোনি এবং বলোনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [সুরা নুর ২৪:১২] এবং আরো কিছু আয়াত। কুরআনের আয়াত দ্বারা অপবাদ মোচনের পর আয়শা (রাঃ) এর সম্মান আরো অনেক বেড়ে গেলো মদিনার মানুষদের মাঝে, কারণ স্বয়ং আল্লাহ্‌ তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন। আর যারা অপবাদ ছড়িয়েছিল তাদের শাস্তি দেওয়া হলো।



কিন্তু আলী (রাঃ) এর সেই ‘পরামর্শ’ আয়শা (রাঃ) মনে রাখেন। অবশ্য আলী (রাঃ) আয়শা (রাঃ)-এর প্রতি কিছুটা বিরূপ ধারণা রাখবারও হালকা কারণ ছিল। তরুণী স্ত্রী আয়শা (রাঃ) নবীর (সাঃ) প্রয়াত স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) সম্পর্কে ঈর্ষা পোষণ করতেন। (বুখারী শরীফ হাদীস ৩৮১৭, ৩৮১৮) এ ব্যাপারটা আলী (রাঃ) হয়তো ঠিক মতো মেনে নিতে পারেননি। কারণ দুর্ভিক্ষের সময় মুহাম্মাদ (সা) শিশু আলী (রাঃ)-কে নিজের পরিবারে নিয়ে মানুষ করেছিলেন, তখন খাদিজা (রাঃ) তাঁর কাছে মায়ের মতোই ছিলেন। তাই এরকম ঈর্ষান্বিত কথা তাঁর কাছে খারাপ লাগবে। শিয়া মতবাদে এই হালকা বিরূপতাকে সরাসরি ‘শত্রুতা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

যাই হোক হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নেতৃত্বে মক্কায় হযরত উসমানের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য সমবেত হওয়া সবাই এটাও ভাল ভাবে জানতেন তারা হযরত আলীর মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখেন না, ওদিকে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার সাথে হযরত তালহা এবং যুবায়ের এর সম্পর্ক অনেকটা অস্পষ্ট ছিল কারন তারা নিজেরাও খলিফার দাবীদার এ অবস্থায় তারা ঠিক করল হযরত আলী এবং হযরত মুয়াবিয়ার কর্তৃত্ত্বাধীন এলাকার বাইরে তৃতীয় কোন স্থানে খিলাফাত অধিষ্ঠিত করবেন এবং সেখান থেকে হযরত আলীর মোকাবেলা করবেন। অবস্থান এবং সুবিধার বিচারে তাদের জন্য ইরাকই ছিল সব চেয়ে ভালো জায়গা। এক্ষেত্রে হযরত আলী কর্তৃক বসরার পদচ্যুত গভর্নর আব্দুল্লাহ ইবনে আমির তাদের সাথে থাকায় ব্যাপারটা প্লাস পয়েন্ট হিসাবে গন্য হল। বসরায় অর্ধেক মানুষ ছিল হযরত আলীর নিযুক্ত গভর্নরের অনুগত বাকী অর্ধেক ছিল তার বিরোধী।

হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নেতৃত্বে মক্কার বাহিনী বসরার নিকটে অবতীর্ন হলে সেখানে হযরত আলীর নিয়োজিত গভর্নর উসমান ইবনে হুনায়ফের বাহিনীর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ন হয় এবং পরাজিত হয়, বসরা হযরত আয়েশা (রাঃ) বাহিনীর ক্ষমতাধীন হয়। এখানে একটা ব্যাপার না উল্লেখ্য করলেই না সেটা হল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) কিন্তু নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে মক্কায় থেকে যায়। আমি পরিসরের কারনে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে যাচ্ছি এবং ঘটনা সংক্ষেপ করছি।

মক্কার লোকজন নিয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) বসরা দখল নিলেন। ওদিকে হযরত আলী এই ঘটনা শুনে সিরিয়া অভিযান বাদ দিয়ে বসরা অভিযান মনস্থ করলেন। এবং তিনি বসরার অদুরে স্থান নিলেন (এর মাঝে অনেক ঘটনা আছে যেমন কুফা এবং অন্যান্য প্রদেশ থেকে কিভাবে উভয় পক্ষের সৈন্য সংগ্রহ হয়েছিল এইসব, কিন্তু স্থানাভাবে আমি সেগুলো বাদ দিয়ে যাচ্ছি) হযরত আলী বসরায় তার চাচা ইবনে আমেরকে দুত হিসাবে পাঠালেন আপষের জন্য। সেখানে হযরত তালহা এবং যুবায়ের পরিস্কার জানালেন যে হযরত উসমান (রাঃ) এর হত্যার বিচার ছাড়া কোন আপোষ নেই।

এ পরিস্থিতি হযরত আলীর দুত তাদের স্মরন করিয়ে দিলেন যে হযরত তালহা এবং যুবাইর উসমান হত্যার বদলা স্বরূপ বসরায় কিছু বিদ্রোহীকে হত্যা করলেও হারকুস নামক এক বিদ্রোহী কে হত্যা করতে গিয়ে হারকুসের অনুগত ছয় হাজার লোকের বাধার সন্মুখীন হয়ে ফিরে আসে, ফলে তাদেরকেও ব্যার্থ হতে হয় হযরত উসমান (রাঃ) হত্যার যথাযথ বিচারে। এ কথা স্মরন করিয়ে ইবনে আমের তাদের অনুরোধ করেন নমনীয় হতে। বাস্তবতা হল হযরত আয়েশা (রাঃ), হযরত তালহা এবং যুবায়ের (রাঃ) এরাও নিজেদের মাঝে যুদ্ধ চাচ্ছিল না এবং আপোষে রাজি হয়।

যখন হযরত আলীর কাছে আপোষের এই সুসংবাদ গেল তখন তিনি তার বাহিনীকে তা অবহিত করেন। বসরার সন্নিকটে “আসরে উবায়দুল্লাহ”র মাঠের এক প্রান্তে হযরত আলীর বাহিনী অন্য প্রান্তে হযরত আয়েশার বাহিনী অবস্থান নিচ্ছিল। এদিকে প্রাথমিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেলে দুষ্কৃতিকারী "ইবনে সাবাহ" এর সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা ধারণা করে বসে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে উসমান হত্যা বিচারে তারাই প্রথম শিকার হবে। তাই ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর আশতার, নাখয়ী ইবনে সাওদা সহ তাদের দলের আরো কয়েকজন আলী ও আয়েশা উভয় শিবিরেই আক্রমণ করে। তৃতীয় পক্ষ আক্রমন করার ফলে দুই পক্ষের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি হয়। তাদের আঁধারে আক্রমণ হলে ভোর হতেই দুই দলের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আর এটাই সর্বপ্রথম মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানের অস্ত্র ধারণ। দুই দলের মধ্যে তুমুলভাবে যুদ্ধ চললেও কোন দলই এই যুদ্ধ চায়নি। বরঞ্চ এটি ছিল তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের ফলে একটি ভুল বোঝাবুঝি। (দেখুন হযরত আলীর জীবন এবং খেলাফত, সাইয়্যিদ আবুল হাসান আল নদভী পৃঃ ১৬৭)।

এই যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই পুনরায় হযরত আলী হযরত তালহা ও জুবায়েরকে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ও যুদ্ধ বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। তারা আলী এর কথা মেনে নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে ফেরত যাওয়ার পথে উভয়ই হত্যার স্বীকার হন। যুবায়ের কে ঘুমন্ত অথবা নামায পড়া অবস্থায় হত্যা করে আমর বিন জুরমূয। আলী (রাঃ) এ খবর জানবার পর বললেন, লোকে যেন আমর ইবনে জুরমুজকে জাহান্নামের সুসংবাদ দেয়। কথিত আছে, আলী (রাঃ) ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই আত্মহত্যা করে ইবনে জুরমুজ। আর তালহা জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে নিহত হয়। এখানেও বিভিন্ন সোর্সে বিভিন্ন উল্লেখ্য আছে অনেকের মতে তাকে মারওয়ান ইবনুল হাকাম তীর মেরেছিল।



এই পরিস্থিতিতে হযরত আয়েশা (রাঃ) উটের পিঠে উঠে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। উটের আরবী প্রতিশব্দ “জামাল” তাই যুদ্ধ “জঙ্গে জামাল” বা “উষ্ট্রের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) কে দেখে তার দল বিপুল বিক্রমে হযরত আলীর দল কে আক্রমন করে। এক পর্যায়ে হযরত আলী বুজতে পারলেন যে, যতক্ষন হযরত আয়েশা (রাঃ) উটের পিঠে থাকবেন ততক্ষন এই যুদ্ধের ফয়সালা হবে না, তাই তিনি নির্দেশ দিলেন হযরত আয়েশাকে বহন করা উটকে ভুলুন্ঠিত করার। ওদিকে হযরত আয়েশার উটকে ঘিরে তার দলের সাহাবীরা বুহ্য তৈরী করল। উভয় পক্ষের মহান সাহাবীদের লাশের পর লাশ পড়তে লাগল। লাশের স্তুপ জমে গেল। এক পর্যায়ে হযরত আলীর পক্ষের সাহাবীরা হযরত আয়েশা (রাঃ) কে বহন করা উটের পায়ে তলোয়ারের আঘাতে ভুলুন্ঠিত করে এবং যুদ্ধের শেষ হয়। এর পর হযরত আয়েশাকে তার ভাই হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের জিম্মায় মক্কায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে হযরত আয়েশা (রাঃ) হজ্ব পালন করে মদিনায় ফেরত যান এবং সারা জীবন সমস্ত রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। এই যুদ্ধে হযরত আয়েশার ত্রিশ হাজার সৈন্যের মাঝে নয় হাজার শহীদ হন এবং হযরত আলীর পক্ষের বিশ হাজার সেনার মধ্যে এক হাজার সত্তর জন শহীদ হন। এটাই প্রথম যুদ্ধ যেখানে মুসলমান মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম গৃহ যুদ্ধ বা ইসলামের প্রথম ফিতনা শুরু হয়। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন, এই যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হিসাবে এই যুদ্ধ মুসলমানদের খিলাফতকে দুর্বল করে দিয়েছিল।



এই যুদ্ধের পর অন্যতম উল্লেখ্যযোগ্য গঠনা হল হযরত আলী তার সেনাবাহিনী নিয়ে কুফায় চলে যান এবং সেখানেই খিলাফতের রাজধানী ঘোষনা করেন। মদিনা খেলাফতের রাজধানী থেকে তার গুরুত্ব হারায়। উল্লেখ্য এরপর হযরত আলী জীবদ্দশায় আর কোন দিন মদিনা যেতে পারেনি বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িত থাকার কারনে।

এরপর হযরত আলী সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার মুখোমুখি হবার মনস্থ করেন। এখানে হযরত মুয়াবিয়া সন্মন্ধ্যে কারো কোন ভুল ধারনা থাকুক এ আমি চাই না। তিনিও একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। মুলতঃ আমাদের শিয়া গোষ্ঠীর প্রচলিত প্রোপাগান্ডা তাকে নিয়ে অনেকের মনেই বিরূপ ধারনা থাকতে পারে কারন শিয়ারা হযরত আলীর স্বপক্ষে এক তরফা প্রচার চালায়। আবার আমাদের দেশে বিখ্যাত মুসলিম ঔপন্যাসিক মীর মোশারফ হোসেনের “বিষাদ সিন্ধু” পাঠে অনেকেই একে ঐতিহাসিক সত্য বলে ধরে নেয়, কিন্তু শিয়া পরিবারে বেড়ে ওঠা মীর মোশারফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু কোন ঐতিহাসিক গ্রন্থ না এটা স্রেফ ইতিহাসকে কেন্দ্র করে লেখা একটা উপন্যাস মাত্র। যাই হোক হযরত মুয়াবিয়ার সন্মন্ধ্যে অনেক হাদীস আছে তার মাঝ থেকে কয়েকটি উল্লেখ্য করি, কারন আর না হলে হযরত মুয়াবিয়া সন্মন্ধ্যে প্রচলিত ধারনা মতে অনেকেই ভুল ধারনা পোষন করবেনঃ

হজরত উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, 'আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর জন্য জান্নাত অবধারিত'- (সহিহ বোখারি, হা. ২৯২৪)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাল্লাব (রহ.) বলেন, 'হাদিসটিতে হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ)-ই ছিলেন ওই বাহিনীর সিপাহসালার'- (ফাতহুল বারী : ৬/১০২)।

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি উমায়রা (রাঃ) বলেন, 'রাসুল (সা.) মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন'- (তিরমিজি, হা. ৩৮৪২) ।

একবার মুয়াবিয়া (রাঃ) রাসুল (সা.)-এর অজুতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, 'হে মুয়াবিয়া, যদি তোমাকে আমির নিযুক্ত করা হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ করবে।' মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, 'সেদিন থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এ কঠিন দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়বে'- (মুসনাদে আহমাদ হা. ১৬৯৩৩)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, একদিন জিবরাঈল (আ.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, 'হে মুহাম্মদ (সা.), মুয়াবিয়াকে সদুপদেশ দিন, কেননা সে আল্লাহর কিতাবের আমানতদার ও উত্তম আমানতদার'- (আল মুজামুল আওসাত, হা. ৩৯০২) ।



যাহ হোক হযরত আলী (রাঃ) তার বাহিনী নিয়ে সিরিয়া অভিমুখে গমন করেন। মালিক আশতারির নেতৃত্বাধীন হযরত আলীর অগ্রবর্তী দল সিরিয়া সীমান্তের ভেতর সিফফিন নামক স্থানে হযরত মুয়াবিয়ার অগ্রবর্তী বাহিনীর মোকাবেলায় যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ ইতিহাসে “সিফফিনের যুদ্ধ” নামে পরিচিত যুদ্ধের তৃতীয় দিন হযরত আলী এবং হযরত মুয়াবিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে পৌছালে তৃতীয় দিন ফোরাত নদীর তীর দখলের নির্দেশ দিন। কিন্তু তার আগেই মুয়াবিয়া বাহিনী ফোরাত তীর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় হযরত আলীর বাহিনী যুদ্ধ শুরু করলে আমর ইবনুল আস মুয়াবিয়াকে বলেন হযরত আলীর সৈন্যদের পানির অভাবে মারা তার নিজের দলের সৈন্যরাও পছন্দ করছে না অতএব সবাইকে পানি পানের সুযোগ দেয়া হোক। এতে ফোরাত তীরে যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং উভয়পক্ষ পানি পান করে। ওদিকে ইয়েমেন, হিযায এবং ইরান থেকে প্রচুর সৈন্য এসে হযরত আলীর সাথে যোগ দেয় যাতে তার সৈন্য সংখ্যা দাড়ায় ৯০ হাজার এবং মুয়াবিয়ার সৈন্য সংখ্যা দাড়ায় ৮০ হাজার।



এর পর প্রায় মাসখানেক কোন যুদ্ধ হয় না বা হলেও ছোট খাট যুদ্ধ অথবা দ্বন্দ্ব যুদ্ধ ধরনের। অনেক বিশাল ঘটনা। সেগুলোর যদি ভগ্নাংশও টানি এ লেখা আর শেষ করা যাবে না। মুহারম মাসের শেষ দিন সত্যিকার যুদ্ধ শুরু হয়। টানা আট দিন যুদ্ধের পর দেখা যায় হযরত মুয়াবিয়ার আশি হাজার সৈন্যের মাঝে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার সৈন্য মারা গেছে অপর পক্ষে হযরত আলীর পক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার সৈন্য মারা গেছে। মুসলিম ইতিহাসের এ নৃশংসতম যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য শহীদ হয়।

এ যুদ্ধে আলী (রাঃ) এর পক্ষের বয়স্ক সাহাবী আম্মার (রাঃ) মারা যান। তাঁর সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, আম্মার মারা যাবে বিদ্রোহী পক্ষের হাতে। এ জন্য মুয়াবিয়া (রাঃ) অন্যায়ের পক্ষে ও আলী (রাঃ) ন্যায়ের পক্ষে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এটা জানবার পর মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন, হযরত আম্মার (রাঃ) এর হত্যার জন্য দায়ী তাঁরাই যারা (তাদের অন্যায় হত্যা ও কুকর্মের দ্বারা) তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে বের করে নিয়ে এসেছে। আম্মার (রাঃ) ইসলামে সাহাবীদের মাঝে বিশেষ সন্মানের ছিলেন এই জন্য যে তারা বাবা মা ইসলাম গ্রহনের দায়ে কাফিরদের দ্ধারা সর্ব প্রথম শহীদ হন।

সিরিয়া বাহিনীর প্রচুর রক্তক্ষয় হচ্ছে ও হেরে যাচ্ছে দেখে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর পক্ষের সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাঃ) একটা বুদ্ধি দিলেন। আমর (রাঃ) এর বুদ্ধিতে সিরিয়ার বাহিনী তাদের অস্ত্রের সাথে কুরআনের কপি তুলে ধরে কুরআনের দিকে আহবান করল। ইরাকি সেনারা কুরআনের আহ্বান দেখে না করতে পারেনি। আমর (রাঃ) দূত পাঠালেন আলী (রাঃ) এর কাছে এবং এ আয়াত শুনালেন- “আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে- আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” [সুরা আলে ইমরান ৩:২৩]

আলী (রাঃ) এটা শুনে বললেন, “হ্যাঁ, আমি এর অধিক উপযোগী। আমাদের আর তোমাদের মাঝে আল্লাহ্‌র কিতাব ফয়সালা করবে।” কিন্তু আলী (রাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন, এটা একটা চালাকি। তবে ইরাকিরা বলল, আমাদেরকে কুরআনের আহবান করা হবে আর আমরা না করব সেটা হতে পারে না। আলী (রাঃ) এর সমর্থক ‘কুররা’ (‘কুরআনবিদ’) নামে পরিচিত একদল সাবাঈ গোষ্ঠী (যারা পরে খারেজি নামে পরিচিত হয়) এসে তাঁকে বলল, “আপনি কুরআন এর আহ্বান না মানতে চাইলে, আমরা আপনাকে সেখানে ঠেলে দিব বা একই আচরণ করব যেমন আমরা করেছি উসমানের সাথে। আমরা তাঁকে হত্যা করেছি কারণ সে কুরআন ঠিকমতো মানত না। আপনার ক্ষেত্রেও তাই হবে যদি আপনি মেনে না নেন।”

আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়ে মেনে নিলেন যে, দু’পক্ষের একজন করে বিচারক নিযুক্ত হবে যার বিচার মেনে নেওয়া হবে। আলী (রাঃ) এর পক্ষ থেকে আবু মুসা (রাঃ)-কে নিযুক্ত করা হলো। আর মুয়াবিয়া (রাঃ) এর পক্ষে আমর (রাঃ)। সাত মাস পর এ দুজন মিলিত হলেন বর্তমান জর্ডানে, সেটা ছিল ৬৫৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। আমর (রাঃ) এর যুক্তিতে আবু মুসা (রা) রাজি হলেন যে আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) দুজনেরই উচিৎ ক্ষমতা ত্যাগ করা এবং পরে শুরার পরামর্শে নতুন খলিফা নির্বাচিত হবেন। প্রতিদিন এরকম ‘মিটিং’ হতো।

যেদিন জনগণের সামনে রায় দেওয়া হবে সেদিন প্রথমে আবু মুসা (রাঃ) উঠলেন এবং বললেন, আলী (রাঃ) খেলাফতের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন এবং মুয়াবিয়া (রাঃ))-ও খলিফা হবার দাবিদার নয়। সে মুহূর্তে আগের চুক্তি বাদ দিয়ে আমর (রাঃ) মনে করলেন, এখন দুজনেই যদি না থাকেন তবে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে নেতৃত্বে যেটা এ পরিস্থিতিতে বিপজ্জনক। তাই তিনি বললেন, আলী (রাঃ) এখন আর ক্ষমতার দাবিদার নয় যেমনটা আবু মুসা (রাঃ) রায় দিলেন, কিন্তু আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-কে খলিফা ঘোষণা করছি কারণ তিনি উসমান (রাঃ) এর হত্যার বিচারপ্রার্থী এবং এ পদের জন্য যোগ্য।

কথিত আছে, তখন আবু মুসা (রা) কঠিন ভাষায় সমালোচনা করেন তাঁকে। আমর (রা) মুয়াবিয়া (রা)-কে খেলাফতের মুকুট পরিয়ে দেন। আবু মুসা (রা) লজ্জায় মক্কায় চলে গেলেন। আলী (রা) এ বিচার মেনে নিতে চাইলেন না অবশ্যই। কিন্তু যখন তিনি জানালেন তিনি মানতে চান না, তখন তাঁর পূর্বে সম্মত হওয়া “আমি বিচার মেনে নেব” কথার পরিপন্থী হয়ে গেলেন- এ কারণে তাঁর সমর্থক কমে গেল। তিনি নতুন এক বাহিনী গড়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কেবল মদিনার আনসাররা, ‘কুররা’ অবশিষ্ট কয়েকজন আর নিজের গোত্রের কজন বাদে আর কেউ রইলো না।

এর আগে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায়। ‘কুররা’ (কুরআনবিদ) নামের সে গোত্রের তারা কুরআনের বিচার মেনে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা দুজন ‘মানুষ’ এর করা সালিশ মানতে রাজি না। আলী (রাঃ) কেন মানুষের বিচার মানতে রাজি হলেন, সে কারণে “হুকুমের মালিক কেবল আল্লাহ্‌” বলতে বলতে ১২ হাজার সমর্থক আলী (রাঃ) এর বাহিনী থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এদেরকে খারেজী সন্ত্রাসী বলা হয়। খারেজীরা বিশ্বাস করত তারা ব্যতীত সকলেই ভুল পথে আছে, কেবল তারাই মুসলিম, আর বাকি সবাই কাফির, তারা তাই মুসলিম নিধন করত কুরআনের নাম দিয়েই। বর্তমান জঙ্গি সংগঠনগুলোকে এজন্য ‘স্কলার’গণ খারেজী বলে থাকেন।

ওদিকে মিসরে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। গভর্নর কায়েসকে প্রতিস্থাপন করা হয় মুহাম্মাদ বিন আবু বকর (রা)-কে দিয়ে। মুয়াবিয়ার অনুগত আমর (রা) মিসর জয় করে নেন, কারণ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর (রাঃ) এর কোনোই সমর্থন ছিল না মিসরে, সর্বসাকুল্যে মাত্র ২০০০ মানুষ তিনি জড়ো করে পেরেছিলেন যারা আবার লড়াই না করেই ভেগে যায়। পরের বছরগুলোতে আলী (রাঃ) এর ইরাকের শহরগুলোতেই মানুষ আলী (রাঃ) এর প্রতি সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে দিতে লাগলো। ক্রমান্বয়ে মুয়াবিয়া (রা) এর বাহিনী অবস্থান নিতে লাগল ইরাকি শহরগুলোতে। অবশ্য হযরত আলী (রাঃ) এর শেষ বছরে, কুফা আর বসরার লোকেরা আবার আলী (রাঃ) এর প্রতি সমর্থন দিতে লাগলো।

কিন্তু আলী (রাঃ) হয়ত জানতেন না তার উপর মরণছোবল আসবে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক থেকে এবং সেটি ছিল তাঁরই এক সময়ের তুমুল সমর্থক ও খলিফা পদে বসানো খারেজী বিদ্রোহীরা।খারেজীরা ইসলামি সাম্রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে দেয়। “আল্লাহ্‌ ছাড়া হুকুম দেওয়ার কেউ নেই” শ্লোগান দিতে দিতে তারা সন্ত্রাস ছড়িয়ে বেড়াতে লাগলো, মানবরচিত কোনো আইন বা সালিশ কিছুই তারা মানবে না। এমনকি আব্দুল্লাহ ইবনে খাব্বাব নামের একজনকে জীবিত জবাই দিয়ে দেবার পর তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে তারা, এরপর পেট ফেড়ে সন্তান বের করে ফেলে। এরকম ঘটনা ঘটতে থাকে রাষ্ট্র জুড়ে।

খাওয়ারিজরা তাদের এক নেতার বাড়ীতে এক হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কুফা ছেড়ে চলে যাবে এবং হযরত আলীর খেলাফতের বাইরে গিয়ে নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করবে, এ পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব কে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এবং মাদায়েনের দিকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। বসরার খাওয়ারিজদের এখবর পাঠানো হয় এবং তারা মাদায়েনের পূর্বে নাহরাওয়ান নামক স্থানে মিলিত হবে। বসরা এবং কুফার মিলিত খাওয়ারিজদের মিলিত সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার হয়।



এদের দমন করতে ৬৫৯ সালে নাহরাওয়ানে যুদ্ধ হয়। হযরত আলীর বাহিনী দেখে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ খারেজী পালিয়ে যায় এবং এক তৃতীয়াংশ থেকে যায় যুদ্ধ করার জন্য। যুদ্ধে আলী (রাঃ) খারেজীদের পরাজিত করেন এবং যুদ্ধ শেষে দেখা গেল মাত্র নয় জন খারেজী জীবিত আছে। বেঁচে যাওয়া খারেজীরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে। আলী (রাঃ) মৃত্যুর ব্যাপারে কথা হলে প্রায়ই বলতেন যে, রাসুল (সা) তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, “এ যুগের হতভাগ্যতম ব্যক্তি হলো তোমার হত্যাকারী। সে তোমার মাথার তালুর আঘাত করবে এবং মাথার রক্তে তোমার দাড়ি ভিজে যাবে।” তাই আলী (রাঃ) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে এরকম পরিস্থিতি না এলে তিনি মরবেন না। কিন্তু তিনি কি জানতেন তাঁর মৃত্যু নিকটেই?

পরাজিত, অপমানিত খারেজীদের মধ্যে (১) আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম আল-মিসরি (২) বারক ইবনে আব্দুল্লাহ তামিমি এবং (৩) আমর ইবনে বকর তামিমি একদিন একত্রিত হলেন। তারা আলোচনা করতে লাগলেন আলী (রা) এর হাতে নিহত হওয়া তাদের খারেজী ভাইদের নিয়ে। তারা বলল, “এরা যখন মারাই গেলো, তখন আমরা বেঁচে থেকে লাভ কী? আমরা যদি এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পথভ্রষ্ট নেতাদের হত্যা করি তবে দেশবাসী এদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে।” তারা যথাক্রমে আলী (রাঃ), মুয়াবিয়া (রাঃ) ও আমর (রাঃ)-কে হত্যার দায়িত্ব নিল। ঠিক হলো, একই দিনে একই সময়ে (ফজরের ওয়াক্তে) তারা তাদের লক্ষ্য পূরণ করবে।



আলী (রাঃ) থাকতেন কুফাতে। সেখানে পৌঁছাল ইবনে মুলজিম। ইহুদী থেকে মুসলিম হওয়া ইবনে মুলজিমের চেহারা ছিল গোধূম বর্ণের, উজ্জ্বল, দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা চুল, কপালে সিজদার চিহ্ন- কে দেখে বলবে সে সন্ত্রাসী? কুফাতে কিছু খারেজীও বসবাস করত। তাদের এক বৈঠকে একদিন কিতাম নামের এক মহিলা হাজির হলো। তার সম্পর্কে বলা হয় “অপ্রতিদ্বন্দ্বী অনিন্দ্য সুন্দরী”। তখন তো মেয়েরা নিয়মিত মসজিদে যেত, সারাক্ষণ মসজিদে ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকত মেয়েটি। তাঁর খারেজী বাবা ও ভাই নাহরাওয়ানের যুদ্ধে আলী (রাঃ) এর বাহিনীর কাছে নিহত হয়। ইবনে মুলজিম তাঁকে দেখতেই প্রেমে পড়ে গেল। সে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি জানত সে খারেজী। তাকে চার শর্তে বিয়ে করতে রাজি হবার কথা বলে- ১) ৩০০০ দিরহাম মোহর, (২) একজন খাদেম (৩) একজন দাসী ও (৪) আলী ইবনে আবু তালিব-কে হত্যা। ইবনে মুলজিম প্রথম তিনটা প্রায় সাথে সাথেই আদায় করে। আর শেষেরটা বিষয়ে জানায়, এ উদ্দেশ্যেই তার এ শহরে আসা। তো, তাদের দুজনের বিয়ে হয়ে গেলো। আল বিদায়া গ্রন্থে বর্ণিত আছে, বাসর রাত্রে মেয়েটি তাকে বলল, তুমি আমাকে রঞ্জিত করলে, এখন যাও অন্যকে (আলীকে রক্তে) রঞ্জিত কর।

১৭ রমজান শুক্রবার ফজরের সময় আলী (রাঃ)-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। একই তারিখে বাকি দুজনকেও হত্যা করা হবে। সহযোগীসহ ইবনে মুলজিম যে দরজা দিয়ে আলী (রা) বের হন, তার কাছে অবস্থান নিলো ফজরের সময়। লোকদের জাগাতে আলী (রাঃ) “নামাজ নামাজ” বলে আহ্বান করতে করতে মসজিদে যেতেন। মসজিদে ঢুকবার সময় সহযোগী আততায়ী তলোয়ার দিয়ে আলী (রাঃ)-কে আঘাত করতে যায়, কিন্তু সেটা প্রাচীরের তাকে লাগে।

এরপর ইবনে মুলজিম আলী (রাঃ) এর মাথার উপর আঘাত করে। তখন মাথা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে দাড়ি ভিজে যেতে থাকে। হত্যা করবার সময় ইবনে মুলজিম বলতে থাকে, “আল্লাহ্‌ ছাড়া হুকুম করবার অধিকার কারো নেই, আলী! তোমারও নেই, তোমার অনুসারীদেরও নেই।” এরপর সে এ আয়াত পাঠ করেঃ “আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।” [সুরা বাকারা ২:২০৭] অর্থাৎ কুরআনের আয়াত দিয়ে সে প্রমাণ করতে চেষ্টা করল যে, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য সে এই হত্যা করবার ঝুঁকি নিয়েছে।



আলী (রাঃ) চিৎকার করার পর লোকজন তাদের ধরে ফেলে। একজন সহযোগী পালিয়ে যায়, একজনকে হত্যা করা হয়। আলী (রাঃ)-কে তাঁর ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ইবনে মুলজিমকে তাঁর সামনে আনা হলে ইবনে মুলজিম তাঁকে জানালো, “আমি ৪০ দিন ধরে এ তরবারি ধার দিয়েছি আর আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করেছি যেন সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক এ তরবারির আঘাতে নিহত হয়।” আলী (রাঃ) বললেন, “আমি দেখছি, এটা দিয়ে তোমাকেই হত্যা করা হবে, তুমিই হবে নিকৃষ্টতম লোক।” তিনি জানালেন তিনি মারা গেলে একে যেন হত্যা করা হয়। আর বেঁচে গেলে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। [তরবারিটি ইবনে মুলজিম ১০০০ দিরহাম দিয়ে কিনেছিল এবং আরো এক হাজার দিরহাম খরচ করে বিষ মিশিয়ে শান দেয় বলে জানায়।]

মানুষ জন জিজ্ঞেস করল, “আপনি মারা গেলে আমরা কি হাসান (রাঃ) এর বাইয়াত নিব?“ জবাবে আলী (রাঃ) বললেন, “আমি আদেশও করছি না, নিষেধও করছি না। তোমরাই ভালো জানো।” তিনি তার তিন ছেলে হাসান (রাঃ), হুসাইন (রাঃ) এবং মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়া (রাঃ)-কে ডেকে কথাবার্তা বলেন যা আল বিদায়া গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে, তাঁর করে যাওয়া অসিওতও। এরপর তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়তে পড়তে ৬৬১ সালের ২৭শে জানুয়ারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর দুই ছেলে তাঁকে গোসল দেন, হাসান (রাঃ) জানাজাতে ইমামতি করেন।

কুফার রাজপ্রাসাদে ৬৩ বছর বয়সী আলী (রাঃ)-কে দাফন করা হয়, কারণ আশঙ্কা ছিল বাইরে দাফন করলে খারেজীরা লাশ তুলে ফেলবে, কবরের অবস্থান গোপন রাখা হয়। শিয়া মতবাদে বিশ্বাস করা হয়, নাজাফে আলী (রাঃ) এর কবর অবস্থিত। তবে সুন্নি মতবাদ অনুযায়ী এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই, বরং বলা হয়, নাজাফের ঐ কবরটা মূলত মুগিরা (রাঃ) এর কবর। অন্য এক বর্ননা মতে তাকে দাফনের উদ্দেশ্যে মদিনা নিয়ে যাবার পথে যে উটের পিঠে তার লাশ ছিল সে উঠটি হারিয়ে যায়, যার কোন বিশ্বাসযোগ্য সুত্র আমি পাইনি বিধায় আমার কাছে এটি অগ্রহনযোগ্য বলেই মনে হয়েছে।

আপনাদের জন্যঃ আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়া নিহানা" (১০ খন্ড) র পিডিএফ ফাইল (বাংলা), এবং সব হাদীস বই সমুহের সংকলন (বাংলা) এখানে দেয়া হল চাইলে ডাউন লোড করে নিতে পারেন

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া অথবা আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১-১০ম খন্ড পিডিএফ

হাদীসের ই-বই সমুহ (এখানে সমস্ত হাদীস সমুহের ই বুক সমুহ পাবেন, অবশ্যই এটা বুক মার্ক করে রাখুন)

আগের পর্ব সমুহঃ খোলাফায়ে রাশেদিনদের ইতিহাস (প্রথম পর্ব)

খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত আবু বকর (রাঃ)

খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)

খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)

নোটঃ এই লেখা গুলো লিখতে গিয়ে আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন ব্যাবহারের থেকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোনের প্রতি বেশী খেয়ালা রেখেছি, তারপরো কোথাও যদি কোন ভুল কারো কাছে পরিলক্ষিত হয় দয়া করে রেফারেন্স সহ জানালে কৃতজ্ঞতার সাথে ঠিক করে দেব। পরিসরের কারনে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে যেতে হয়েছে যা আমার ইচ্ছা কৃত না একান্ত অনিচ্ছাকৃত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×