somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দোখান ও দরবান্দিখান রিসোর্ট

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরবান্দিখান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুর্দিস্থানে একমাত্র সোলেমানিয়া প্রদেশে দুটো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। একটা দোখান ও অন্যটা দরবান্দিখান এলাকায়। লেসার জেব নদীর উপর বাধ দিয়ে দোখান লেকের সৃষ্টি এবং এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যেতো। দিয়ালা নদীর উপর বাধ দিয়ে দরবান্দিখান লেক সৃষ্টি, এই কেন্দ্র দুইশত পঞ্চাশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল। যুদ্ধ ও অবরোধ এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলোকে প্রায় অকেজো করে দেয়। ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে কুর্দিস্থানে বিদ্যুৎ সমস্যা ছিল বড় একটা সমস্যা । শুকনো মওসুমে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার , রাত দিনে ৫/৬ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না। আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপের আগে কুর্দিস্থানের তিনটি প্রদেশ - ইরবিল, ডহুক ও সোলেমানিয়াতে মসুল ও কিরকুক শহর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। দুটি কেন্দ্রই বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ ও মেরামতের অভাবে কোন মতে ধুকে ধুকে টিকে আছে। দুটো মিলিয়েও সোলেমানিয়াকে কয়েক ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ দিতে পারছেনা। অন্য প্রদেশ গুলোর কথা নাই বললাম।
দুটো লেকের দৃশ্যই চমৎকার। দোখান লেক এর আশে পাশে পর্যটকদের জন্য সুন্দর বিনোদন কেন্দ্র বানানো হয়েছে। হোটেল রেষ্টুরেন্ট কটেজ ও নানা রকম চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা আছে দোখান রিসোর্টে । আন্তর্জাতিক অবরোধ এই রিসোর্ট শহরকে বিরান ভূমিতে পরিনত করেছে। সব কিছুই আছে শুধু মানুষের কোলাহলে তা মুখরিত না এবং যতেœর অভাবে মলিন। দোখান লেকের পানিতে নীল আকাশের প্রতিবিম্ব লেকের পানিকে করেছে ঘন নীল, এত নীল পানি সাধারনত দেখা যায় না। লেকের চারধারের পাহাড়ে সুন্দর করে রাস্তা বানানো। পর্যটকদের টেনে আনার সব ব্যবস্থাই আছে। যুদ্ধ যে বিনোদনকে কত দুরে রাখে তা এই রিসোর্ট এ এলে হাড়ে হাড়ে অনুভব করা যায়। বর্তমানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মী ও রিসোর্ট এর দুই একজন কর্মচারী ছাড়া কেউ নেই। তারাও যাই যাই করছে। বেঁচে থাকতে হবে তো। এত কম বেতনে কি চলে।

দোখান লেক
সোলেমানিয়া থেকে ইরবিলের পথে দোখান লেক পার হয়ে যেতাম। ফাঁকা রিসোর্ট এলাকা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যেত। দোখান রিসোর্ট এ সোলেমানিয়া থেকে সরাসরি ভাল রাস্তা রয়েছে তবে কালাদিজা কিংবা রানিয়া হয়ে আসতে হলে পথে ফেরী পার হতে হয় ছোট্ট কিন্তু বেশ খরস্রোতা ছোট জেব নদী। এটা আরো দক্ষিণে গিয়ে টাইগ্রিস নদীর সাথে মিশেছে । ফেরীর অবস্থা বেশ জীর্ণ ও ছোট দুই তিনটা গাড়ী নিয়ে পারাপার হয়। ফেরী ঘাটে তেমন মানুষ নেই।

ফেরী পারাপার
ফেরী ওয়ালা দুই একজন আছে ফল বাদাম ইত্যাদি বিক্রি করছে যদি কখনো কেউ পার হতে আসে। বিদেশী না থাকায় এখন দেশী লোকজনই ভরসা। তবে এক সময় এখানে প্রচুর বিদেশী আসত তা বোঝা যায়। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরী ওপারে চলে আসে তারপর লেককে ঘিরে রাখা পাহাড় কেটে সুন্দর রাস্তা বানানো। চলাচল তেমন নেই তাই ছমছমে পরিবেশ, রাস্তা থেকে নীল লেকের পানি অপূর্ব লাগে। এই লেকে এক সময় স্পীডবোট ও অন্যান্য জলক্রীড়ার ব্যবস্থা ছিল। বোট গুলো এখনো ঘাটে বাধা আছে। লেকের শান্ত পানিতে এখন মাঝে মাঝে বড় বড় মাছ ধরা হয়। মাছগুলো অন্যপাশে দোখান শহর ও রিসোর্ট এলাকায় বিক্রি হয়। সোলেমানিয়াতে থাকার সময় এই দুটো লেকেই বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছিল। দোখান লেক ইরবিলের রাস্তায় বলে আমাদের এ পথে যেতেই হতো।

দোখান লেক
দরবান্দিখান ইরান বর্ডার থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং সোলেমানিয়া থেকে ৬৫ কিলোমিটার উওরে। কালার কিফ্রী শহরে যেতে হলে দরবান্দিখান পার হয়ে যেতে হয়। দরবান্দিখানে আমরা যেতাম বোতলের পানি আনতে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই , লেকের পানিকে জীবানুমুক্ত করে বোতলজাত করার বিশাল এক কারখানা বানানো হয়েছে। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুরঙ্গ পথে দরবান্দিখান যেতে হতো। পাত্থরে পাথার , বিশাল সুরঙ্গের মাঝে রাস্তা। এখানে জনপদ তেমন সংগঠিত নয়। অল্প কিছু লোকজন বাস করে। পানির ফ্যাক্টরীতে কর্মরত লোকজন আশে পাশে থাকে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনমতে টিকে আছে এখানেও মেরামত ও যন্ত্রাংশের সমস্যা। আমরা পিকআপ নিয়ে যেতাম। বারটা বোতলের একটা করে কেইস। আমরা এক মাসের জন্য প্রয়োজনীয় পানি নিয়ে আসতাম এক বোতলের দাম ২ টাকার মত পড়ত মাত্র। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়া যদিও মানা ছিল তবুও বিদেশী হিসেবে আমরা কিছুটা সুয়োগ পেতাম। বিশাল কেন্দ্রটা ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম। এটা ১৯৮৩ সালের দিকে বানানো শুরু করলেও কাজ শেষ হয়ে উৎপাদন করতে করতে ১৯৯০ সাল লেগে যায়। তারপরই শুরু হয় ইরান ইরাক যুদ্ধ। ইরাকের উপর অবরোধ। তারপরও এটা সোলেমানিয়া ও আশেপাশের শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। তবে এখন কোনমতে চলছে। পানির লেয়ার নেমে গেলে উৎপাদন প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। দোখান লেকের আশে পাশে যেমন খোলামেলা এলাকা দরবান্দিখানে তেমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা না গেলেও খাড়া পাত্থরে পাহাড়গুলো দেখতে খারাপ ছিল না। মাঝে মাঝে কালচে ও ধুসর পাথরের ফাঁকে সবুজের ছোয়া অন্যরকম লাগত।

৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×