somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিংগাপুরে ঈদ - জুরং বার্ড পার্ক

১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ অতি আনন্দের দিন, সবাই মিলে ঈদের নামাজে যাওয়া, আগের রাতের প্রস্তুতি একটু সেমাই ও ভাল নাস্তা, গোসল, আতর, নতুন জামা সকাল বেলা বাচ্চারাও তাড়াতাড়ী উঠে যায়। ঈদ মোবারক বলে সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা দেয়। এবার রমজানের ঈদ করার সৌভাগ্য হলো সিংগাপুরে (২০১২)। আগের রাতে ঘুমাতে বেশ দেরি হলো। তবে সকাল হতেই ছোট ভাই ডেকে দিল আমাদের। যথারীতি রেডি হলাম। ওর বাচ্চাদের জন্য জামা কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম। বেশ খুশি সবাই। উইন উইন সিচুয়েশন। তো পাইও এলাকার মানুষরা অভ্যাসমত ভোর বেলাতেই জেগে গেছে। মালয়ী মুসলিমরা ঝকমকে কাপড় পড়ে নামাজের জন্য চলছে, অনেকে আগে চলে গেছে।

সবার নতুন পোষাক, নতুন টুপি, প্রায় সবাই নিজস্ব গাড়ীতে যাচ্ছে মসজিদে। সব এলাকাতে হয়তো এ রকম ব্যবস্থা নেই। এ এলাকার যারা থাকে তারা মনে হয় একটু অবস্থাপন্ন। বাসা থেকে বেরিয়ে বাস ষ্টেশনে গেলাম। সবাই মিলে চলছি তাই চিন্তা নেই। মহিলাদেরও নামাজের ব্যবস্থা আছে। তাই ভাই এর বউও সাথে আছে। নির্দিষ্ট বাস এসে গেল। বাসের জন্য ষ্টপেজে লাইন দিয়ে যাত্রীরা এতক্ষণ সুন্দরভাবে দাড়িয়ে ছিল। সবাই বাসে উঠছে, কার্ড দেখাচ্ছে ড্রাইভারকে। কেউ কেউ কয়েন ফেলে টিকেট নিচ্ছে। আমার কার্ড নেই কয়েন আছে। ড্রাইভারকে বিশান ইন্টার সেকশন যাব বলাতে টু ডলার বলল, কয়েন ফেলে দিলাম। টিকিট নিলাম। স্থানীয় লোকজন পুরো মাস কিংবা বছরের জন্য কার্ড বানিয়ে নেয় এতে অর্থের অনেক সাশ্রয় হয়।

কিছুদুর গিয়েই বাস ষ্টেশনে নেমে পড়লাম। সামনেই মসজিদ, বেশ বড় এলাকা নিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো। ভেতরে খুতবা চলছে। ওজুর ব্যবস্থা আছে। বাইরে জুতা রাখার ব্যবস্থাও বেশ ভাল।দোতলার একটা অংশে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা। আলাদা সিঁড়ি আছে। মসজিদের ফ্লোর সুন্দর করে কার্পেট বিছানো। অভিজাত্য চোখে পড়ার মত।

ইমাম সাহের আরবী ভাষায় পাশাপাশি মালয়ী ভাষায় বয়ান করছিলেন। নামাজ তখনো শুরু হয়নি। বেশীর ভাগ মালয়ী মুসলমান, অল্প কিছু ভারতীয় কিংবা অন্য এলাকার লোকজন দেখলাম। মুসল্লীরা আন্তরিকই মনে হলো। নামাজ শেষে ঠিক আমাদের মত এ ধরণের কোলাকুলি নেই তবে হাত মেলানো ও হাসি মুখে মোলাকাত সালামাত হরি রারা বলছে। এর অর্থ ঈদ মোবারক জাতীয় কিছু হবে। হারি রায়ার এই ছুটির আমেজ কুয়ালালামপুরে গিয়েও পেয়েছি। নামাজ শেষে বাইরে এলাম। বারান্দায় এল প্যাটানে টেবিল লাগানো আছে। টেবিলে ওয়ান টাইম প্লেট, গ্লাস, চামচ ন্যাপাকিন ইত্যাদি সাজানো। আরো সাঁজানো আছে অনেক ধরণের সস ও আচার জাতীয় খাবার। দুই কর্ণানে দু’জন খাবার ভর্তি কন্টেইনার নিয়ে খাবার পরিবেশন করছে। একটাতে আছে একটু আঠালো ধরণের সাদা ভাত এবং অন্যটাতে ঝোলঝোল সব্জী ও মাংসের কারী।

মুসল্লীদের অনেকেই একটি বাটি নিয়ে লাইনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা বাটিতে এক চাকা ভাত ও বড় এক চামুচ ঝোলসহ কারী দেয়া হচ্ছে। একই নিয়মে আমার বাটিও ভর্তি হয়ে গেল। কারীর চেহারা দেখে ভাবলাম কি জানি খেতে কেমন হয়। নাহ বেশ মজাই লাগলো। হালকা মসলার খাবার। মাংস সেদ্ধ হয়েছে। সব্জীর স্বাদ ভালই এবং বেশ মজার। অবাক হলাম খাবার শেষে। এই এতটুকু খাবারে পেট ভরে গেল। তবে খাবার এখানেই শেষ না চা নাস্তাও আছে। ওয়ান টাইম গ্লাস নিয়ে ফ্লাক্স থেকে হালকা লিকারের চা কিংবা কফি নেয়া যায়। টেবিলে চামচ আছে সুগার কিউব গুলোও সাজিয়ে রাখা। প্রয়োজন অনুযায়ী সবাই নিয়ে নিচ্ছে। আরো আছে মজার মজার কেক। দুই তিন রকমের কেক ও মিষ্টি। সবকিছু একটু একটু টেষ্ট করতেই পেট ভরে গেল। এত মানুষ খাচ্ছে তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে খাবার শেষ হচ্ছে না।
মসজিদ থেকে বাইরে এলাম সকালের এই সময়ে বাস একটু কম ; সামনেই বেশ বড় একটা ষ্টপেজ। বিশান ইন্টার সেকশন। এখানে এমআরটি বাস সব পাওয়া যায়। আমরা সরাসরি বাসায় যাব না তাই ট্যাক্সি নিয়ে সেরাংগুন প্লাজার মোস্তফা শামসুদ্দীন ডিপার্ট মেটাল ষ্টোরের দিকে রওনা হলাম। এখানে ভারতীয় ও বাংলাদেশী অনেক লোকজন থাকে জায়গাটা তুলনামূলক ভাবে একটু অনুন্নত এবং সস্তায় এখানে থাকা খাওয়া যায়। সস্তা বলে অবশ্য খুশি হবার কিছু নেই। একশত ডলারের নীচে হোটেল এখানেও নেই। এখানকার হোটেলগুলো তেমন মান সম্মত নয়। গরীবের জন্য সবকিছুই গরীবি হালচাল।

মোস্তফা মার্কেটে কেনা কাটা করলাম কিছুক্ষণ। বাসার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হলো। ট্যাক্সিতে করেই বাসায় ফেরা। ট্যাক্সিগুলো মিটারে চলে তেমন কোন সমস্যা নেই। দিনটা ছুটির দিন বলে মানুষও তেমন বাইরে নেই। সেরাংগুন এলাকায় অনেক মানুষ। এখানে বড় মসজিদ আছে এবং অনেক মুসল্লী নামাজ পড়তে এসেছে। সিংগাপুরে এখন মুসলমানদের ঈদের ছুটি আছে। এটা আগে ছিল না।বাসায় ফিরে নাস্তা খেলাম। ভাইয়ের দুই মেয়ে চাচ্চুর সাথে বাইরে বেড়াতে যাবে তারা খুব খুশি। দু’জনেই সিংগাপুরে কয়েক বছর ধরে আছে। স্কুলে পড়ে। বুদ্ধিমতি এবং মোটামুটি অনেক কিছুই জানে।

আজ ঈদের দিনে স্থানীয় মুসলমানেরা ট্যাক্সি করে বেড়াতে বের হয়েছে। মালয়ী প্রথায় নামাজের পরে সবাই তাদের বাবা মা, দাদা দাদী ও অন্যান্য আত্মীয়ের বাড়ীতে সেজে গুজে বেড়াতে যায়। ঈদের দিন, তাই যেতে হবে ট্যাক্সিতে। সব ট্যক্সিতে যাত্রী ভরা। খালি ট্যাক্সি রাস্তায় নেই। বাসও তেমন আসছে না। তাছাড়া বাসে করে অপরিচিত কোন জায়গাতে যেতে ইচ্ছা করছিল না। যে কোন দর্শনীয় স্থান বাস ষ্টেশন থেকে একটু দুরেই হয়। তাই ট্যাক্সিতে যাওয়াই ভাল। সাথে বাচ্চা কাচ্চা হলেতো কথাই নেই। জুরং বার্ড পার্কে এই নিয়ে তিনবার যাচ্ছি এবং প্রতিবারেই কিছু না কিছু উন্নতি হয়েছে দেখলাম। সিংগাপুরের উন্নতি এমনি এমনি হয়নি। এরা জানে কিভাবে পর্যটক টানতে হয়। কিভাবে আনন্দ নিয়ে বানিজ্য করতে হয়। আমরা সবাই মিলে ছয় জন এক ট্যাক্সিতে হবে না। দু’টো ট্যাক্সি লাগবে, এমনিতেই ট্যাক্সি নেই এখন লাগবে দু’টো। এ যেন ‘মরার উপর খড়ার ঘা’।

কি আর করা বাস ষ্টপেজে সবাই মিলে চল চল করে হাজির হলাম। ডানে তাকাই, কিছু নাই বামে তাকাই ট্যাক্সি নাই। বাস মাঝে মাঝে থামে তারপার চলে যায় নামে দু’একজন আর আমরা ক’জন। সকাল সকাল যাব বলে তাড়াতাড়ী রওয়ানা দিয়েছি আর এখন দশ মিনিট, পনের মিনিট করে ঘন্টা ছুই ছুই। তো পাইওর বাস ষ্টেশনের আশে পাশের এলাকা আমরা গভীর পর্যবেক্ষণে বাধ্য হচ্ছি। কাজ নেই তাই খই ভাজ কিছু একটাতো করতে হবে। সময় যে কাটে না। মাঝে মাঝে বেঞ্চে বসছি, কখনো একশো গজ হেঁটে সামনের ট্রাই জাংসান দেখছি। সব ফাঁকা, দুরে ট্যাক্সি দেখা যায় কাছে আসলে দেখি প্যাসেঞ্জার আছে।

আসে পাশের বাসা থেকে ৪/৫ টা মালয়ী পরিবার রাস্তায় ট্যাক্সির জন্য এসেছে। একটু পর দু’টো ট্যাক্সি তাদের উঠিয়ে নিল। আমরা হা হয়ে রইলাম, কল দিয়েছিল হয়তো আনে। তো পাইওর ট্রাই জাংশনের পাশেও আরেকটা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, তবে একটু পুরানো (ঙষফ) মনে হলো। রাস্তাটা ওই দিকটা ঢালের মতো, এর উল্টা দিকেই টিলার মতো জায়গায় আরো কনডোমিয়াম ৮/১০ টা সিড়ি বেয়ে রাস্তা থেকে উঠতে হয়। ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর ট্যাক্সি পেলাম। আমি ও ছোট বাচ্চা দু’জন রয়ে গেলাম। রাস্তা চেনে বড় জন তাই তার সাথে বাকী দু’জন চলে গেল। ওরা অপেক্ষা করবে জুরং বার্ড পার্কের গেইটে। না জানি কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাই একটু চিন্তিত ছিলাম। আছ চিন্তার চিন্তার অবসান হলো অবশেষে, ১০ মিনিট পর একটি ট্যাক্সি আমাদের দেখে থামল, উঠে পড়লাম। ড্রাইভার কেন অন্তরঙ্গঁ অন্যরকম বলেই মনে হলো। ইংলিশ তেমন জানে না। জুরং বার্ড পার্কের রাস্তা যেন শেষ হয় না। অবশেষে এসে গেলাম। আমাদের নামতে দেখেই আগের দলের ‘মুখে ছড়ানো হাসি, ঈদের আনন্দ তাই ভালবাসি’ অবস্থা।

সবাই মিলে কাউন্টারের দিকে চলছি টিকেট কাটার জন্য। শেষ বার এখানে এসেছিলাম ২০০৪ সালে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের খোলা জায়গা এখন বিভিন্ন ধরণের গাছপালা ও ল্যান্ড স্কেনিং এর ফলে ভরে গেছে। পাখিদের সুন্দর সুন্দর পোষ্টার, গাছ পাখি, ঝোপঝাড় নিয়ে বন বন ভাব আনার চেষ্টা এই চরম শহুরে দেশে। তবে আমি বলব তারা সার্থক।

টিকেট কেনার জন্য সুন্দর কিউ আছে। অনেক দর্শনার্থী আস্তে আস্তে লাইনে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশেই স্পেশাল কিছু কাউন্টার আছে। এখানে পাখি রক্ষা সংগঠনের সদস্যপদ নেয়া যায়। নির্দিষ্ট ফি দিলে ছবিসহ সুন্দর লেমিনেটেড কার্ড বানিয়ে দেয়। এদের জন্য স্পেশাল ডিসকাউন্ট এন্ট্রি ফিতে আছে হরেক রকম অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য কিভাবে কার্ড করব জিজ্ঞাসা করায় বলল যে তুমি এ কার্ড যদি চাও করতে পার তবে তুমিতো থাকছ না, তাই কি দরকার কিংবা নেবে কিনা ভেবে দেখো।



এন্ট্রি টিকেট কেনা হলো ছ’জনের দু’একটা হাফ টিকেট হলো সাইজ ও বয়স দেখে। টিকেট দেখিয়ে ভেতরে চলে এলাম। এক সময় মনো রেল ছিল জুরং বার্ড পার্কে। ষ্টেশন ছিল তিন চারটার মত, এখনো সেগুলো দাড়িয়ে আছে। লাইন ও দেখা যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে তবে মনোরেল সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। আগে এই ট্রেনে চড়ে গোটা এলাকা চক্কর দেয়া যেত। সব দেখতে দেখতে ট্রেনে ঘুরে আসা যেত পুরো পার্ক। ভেতরে ঢুকে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। বিভিন্ন জায়গায় নানা রংগের নানা জাতের পাখি রাখা আছে। সুন্দরভাবে বানানো তাদের মুক্ত কিন্তু বদ্ধ আবাস।



এখন মনোরেলের বদলে ট্রামের মত বগি লাগানো গাড়ী চলছে। তার জন্য আলাদা টিকেট এবং আলাদা কাউন্টার। ট্রামে চড়ার জন্য বেশ তাড় অনেক দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় বংশদভুক্ত সিংগাপুরী চটপটে এক ছেলে এর দায়িত্বে। টিকেট কেটে ফেললাম। ঘুরে ঘুরে কিউ চলে গেছে গাড়ি অবদি। ছাদে ফ্যান লাগানো গরমের থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে। সোনালী দিন, সুর্য আকাশে তাপ আলো ছড়াচ্ছে আলো, গরম, ঘাম সবই একই সাথে আছে। ট্রামে এক সময় উঠা হলো, ট্রামে চলছে। ছবির ক্লিক ক্লিক শুরু হলো। আস্তে আস্তে ঘুরতে ঘুরতে তিন চারটা পয়েন্টে থেমে যাত্রী উঠিয়ে ও নামিয়ে গাড়ীটা আবার শুরুর জায়গায় ফেরৎ এলো।



মোটামোটি পুরো পার্ক এলাকা সম্বন্ধে সবাই ধারণা পেয়ে গেল। পৃথিবীর নানা প্রজাতির রং বেরং এর পাখি। নানা সাইজের পাখি, নানা দেশের পাখিকে এক জায়গায় এনে কি অপূর্ব এক দর্শনীয় স্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। দেখতে দেখতে মন ভরে যায় ইচ্ছা করেও মনে হয় খারাপ লাগানো যায় না।



সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কটা ফর্মাল শো থাকে। এগুলোর প্রাগ্রাম ঢোকার সময় জানিয়ে দেয়া হয়। সকালের একটা শো আমরা দেরীতে আসার জন্য মিস করেছি। পরবর্তীতে শো হবে পেলিক্যাল পাখির। হাতে এক ঘন্টা সময় আছে। এই ফাঁকে পিপাসার জন্য সবাই এক বোতল করে ঠান্ডা ড্রিংকস খেয়ে ফেললাম। ভেতরে ফাষ্ট ফুড ড্রিংকস ও আইসক্রিমের দোকান আছে। ফ্রেস ফ্রুট জুসও পাওয়া যায়। আজ ঈদের দিন তাই বাচ্চাদের যা খুশি খাওয়ায় মানা নেই।



ঘন্টা খানেক ঘোরা ঘুরির পর পেলিক্যান শো দেখতে গেলাম। গ্যালারীতে প্রচুর দর্শক, খেলা শুরু হলো। পাখিরা বিভিন্ন দিক থেকে ট্রেইনারের ডাকে উড়ে এসে বসছে ও খেলা দেখাচ্ছে। পাখিদের এ ধরণের খেলা বাচ্চারা ও বড়রা সবাই বেশ মজা পাচ্ছে দেখলাম। দুপুর হয়ে যাচ্ছে হালকা নাস্তা খেলাম দুপুরে। এর পর বার্ড শো, বিশাল গ্যালারী, বহু মানুষ মাইকে ঘোষনা দিচ্ছে ট্রেইনার, পাখিরা কসরত করছে, হাতে এসে বসছে। পাখিদের প্যারেড, এক কথায় অনবদ্য কিছুক্ষণ কেটে গেল।



থাইল্যান্ডেও এখন এ ধরনের বার্ড শো দেখা যায়। এটা ১৯৯৭ সালে সিংগাপুরে প্রথম যখন এসেছিলাম তখন দেখেছি। মোটামুটি একই আছে। তবে তখন আইটেম আরো কিছু বেশী ছিল। শো শেষে আরো কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা ও ছবি তোলা হলো। নতুন একটা শো চালু হয়েছে ঈগল পাখির। ঈগল পাখি লুকিয়ে থাকা খাবার কিভাবে খুজে নেয় এবং কিভাবে অনেক উপর থেকে টার্গেট করে শিকার ধরে তার দৃশ্য। ঘোড়ায় চড়ে ট্রেনার আসে পাখি হাতে বসে ইত্যাদি নানা কসরৎ। দিন শেষের দিকে। যাওয়ার সময় হয়ে এলো। আস্তে আস্তে বের হয়ে এলাম বার্ড পার্ক থেকে। সবাই যেভাবে চলছে আমরাও একটা বাস ষ্টেশনে এলাম। বাস তো আসে না, পরে কথা বলে জানলাম বাসে করে দু ষ্টেশন গেলে এমআরটি ষ্টেশন পাওয়া যাবে। বাসে করে বুনস্লেতে এসে নামলাম। বিশাল বাস ষ্টেশন। বহু বাস এখানে অপেক্ষা করছে। ভেতরে জমজমাট মার্কেট এবং তারপর জুরং ইষ্ট ষ্টেশন।

বহুতল মার্কেট, দৃষ্টিনন্দন, আমাদের খেতে হবে। এখানে সব ফাষ্ট ফুডই আছে। বার্গার কিং এ ঢুকলাম, এটা এখনও টেষ্ট করা হয়নি। বড় ভাতিজি আঙ্গুল দিয়ে সবুজ রঙের স্টিকার দেখালো আরবীতে হালাল লিখা এরা ব্যবসা ভাল বোঝে তাই এত উন্নত। সব ধর্ম বর্ণ যেন একসাথে এখানে আসে ও খায় তাই এই উদ্দ্যোগ। জুরং ইষ্ট ষ্টেশনে ৫/৬ জন বাংলাদেশী ছেলে দেখলাম। তারা সিংগাপুর পোর্টে কাজ করার জন্য এসেছে। সংগ্রাম করে যাচ্ছে এখনো। সবাই মিলে কষ্ট করে থাকে এবং কোম্পানী খাওয়া দেয়। বলল ভালই আছে। তবে চেহারা একটু বিষন্নই মনে হলো। টাকা পয়সা তেমন পায় না বলেই মনে হলো। ওরাও নতুন। অটোমেটিক মেশিনে টিকেট করতে বেশ ঝামেলা পোয়াচ্ছে। ভাল লাগল দেশের মানুষ দেখে। এদের শ্রমের অর্থই তো আমাদের দেশে উন্নতিতে অবদান রাখে বললাম আপনারা ভাল থাকবেন।

সবাই মিলে হেভি খাওয়া হলো। কিছুক্ষণ মার্কেটের চাকচিক্য দেখে জুরং ইষ্ট ষ্টেশনে পৌছে গেলাম। এখান থেকে টিকেট নিলাম তো পাইওর। তিনটা ষ্টেশন পরে ট্রেন চেঞ্জ করে অন্য লাইনের ট্রেনে উঠতে হবে। ভাতিজি সব জানে, আমরাও এর মধ্যে বুঝে গেছি, সব সহজ। ট্রেনে সবাই মগ্ন আইফোন, মোবাইল নিয়ে। কেউ কারো দিকে খেয়াল করছে না। সবাই নিজ নিজ চরকায় সব তেল দিয়ে ফেলছে।

ট্রেন তৃতীয় ষ্টেশনে থামলে আমরা নেমে নতুন প্লাটফম থেকে আমাদের গন্তব্যে যাওয়ার ট্রেনে উঠলাম। প্রায় তেরটা ষ্টেশন ঘুরে তো পাইও। এটা বেশ বড় বাস ও এমআরটি ষ্টেশন। পথে সিংগাপুরের পানির রিজার্ভায়ার দেখলাম। যদি কখনো খাবার পানির সমস্যা হয় তখন এই সব কৃত্রিম জলাধার থেকে পানি নিয়ে দেশবাসীর চাহিদা পূরণ করা হবে।

সিংগাপুরে মালেশিয়ার জহুর বারু থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি শোধন হয়ে আসে। এজন্য দুই সরকারের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি আছে। ট্রেনের চলার পথে অনেক আবাসিক এলাকা, শপিং মল, খেলার মাঠ দেখলাম। মোটমোটি সিংগাপুরের এক দিক দেখতে দেখতে ‘তো পাইও’ পৌছে গেলাম। এর আগে ষ্টেশন থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তা না চেনা থাকায় একটা বাসে ঘুরতে ঘুরতে অনেকক্ষন পর চেনা ষ্টপেজে এসেছিলাম। এবার বাচ্চারা বেশ আত্ম বিশ্বাসের সাথে হেটে হেটে বাসার দিকে রওয়ানা হলো। আরে এতো সহজ রাস্তা, তবে না চিনলে খবর আছে। বাসায় আসার পথে আরো একটা বড় আবাসিক এলাকা পার হতে হয় এটা আরেকটা ব্লক তবে এর নীচে মার্কেট হওয়ায় তেমন ভাল আবাসিক এলাকা ধরা হয় না এটাকে। এখানে কনডোনিয়ামগুলোর দাম তুলনামূলক ভাবে কম।

এখানে বিশাল বাজার এলাকা। তবে রাত হয়ে আসাতে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকান পাট। কিছু দোকান অবশ্য রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানেই কর্ণারে একটা কে এফসির দোকান সারা রাত খোলা, ২৪ ঘন্টা সার্ভিস, মানুষ ও আসছে অনেক রাত অবধি। ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হলো বাসায় ও অনেক আয়োজন করেছে তবে কারোরই খাবার মুড নেই। সবারই ভরপেট। কিছুক্ষণ গল্প গুজব, তারপর ঘুমের আয়োজন ছোট্ট সুন্দর সিংগাপুরের এক অংশে ঘুরে ফিরে আনন্দে সারাদিন কাটিয়ে ঈদ পার করলাম। প্রতিটি মুর্হুত ছিল নতুন নতুন ভাল লাগায় ভরা। প্রবাসে ঈদের দিন কেটে গেল।

দিন যায় রাত আসে, আমার গল্প ফুরালো শেষে।

ছবি নিজ /নেট


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×