somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাভেলগ চীন-২ -জিওজিয়াং কেইভ কুনমিং

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কুনমিং মুলত পাহাড়ি এলাকা, পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তা কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা জিওজিয়াং কেইভ এলাকায় পৌঁছে গেলাম। বিশাল এলাকা, সামনে পার্কিং এর ব্যবস্থা, সুন্দর সাজান বাগান, পাথরের ফলকে রঙিন কালিতে লিখা বেশ কিছু স্তম্ভ, সাজান বাগান, বসার জায়গা এবং সুভেনিরের দোকান আছে। এখানে ফ্রেস হয়ে নিলাম, আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড টিকেট করে আনল। প্রথমে লিফটে করে নিচে নামলাম, দুইটা লিফট বেশ লম্বা লাইন, নিচে লাইফ জ্যাকেট পড়তে হল। এখানে বোটে করে পাহাড়ের খাদে কানালে নৌকাতে বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। জায়গাটা অনেক নিচে তাই বেশ ঠাণ্ডা। অনেকগুলো বোট আছে, সব বোটে একজন চালক বাকী দশজন যাত্রী নিয়ে পনের বিশ মিনিট পানিতে ভেসে বেড়ানো, উপর থেকে নীচে গুহার মধ্যে সূর্যের আলো পড়ছে, প্রাচীন এই পাহাড়ি এলাকায় বহু বছর আগে এসব গুহা আর জলাধার সৃষ্টি হয়েছে, এখন তা পর্যটকদের সামনে নান্দনিকতার সাথে উপস্থাপন করা হচ্ছে।


জিওজিয়াং কেইভের বাহিরে


বোট ভ্রমন শেষে আস্তে আস্তে মূল গুহার প্রবেশ মুখের দিকে রওয়ানা হলাম। এখানে আলো আঁধারীর খেলা। দুইজন মানুষ একসাথে যেতে পারে সেইপথে। পাহাড়ের গুহার ভেতর রেলিং দেয়া পথ, কখন ও উপরের দিকে উঠছে আবার নীচে নামছে। মাঝে মাঝে নিচে প্রপাতের শব্দ, বেশী অন্ধকার জায়গাগুলো রঙিন আলোতে আলোকিত, নির্ভেজাল প্রকৃতির মাঝে কিছু কৃত্রিম আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে ।


জিওজিয়াং কেইভে যাওয়ার আগে বোটে ভ্রমন
প্রথমে দুই পাহাড়ের মাঝের একটু ফাঁকা দিয়ে সূর্যের আলো এসে জায়গাটা ভরিয়ে দিয়েছে। এখানে একটা পাহাড় একটু কেটে রেলিং দেয়া রাস্তা বানান হয়েছে। এর বেশ নীচ দিয়ে পাহাড়ি নালা চলে গেছে। তারপর আবার অন্ধকারে, এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা আছে। পাহাড়ের গুহার মাঝে বড় বড় বো ল্ডারের ফাফে ফাঁকে আলো পড়ে নানা রঙ সৃষ্টি হয়েছে। পথে অনেক সতর্কবানী লিখা বোর্ড আছে। কেবলমাত্র নিদিষ্ট পথ দিয়ে চলাচল করতে হয়, আশেপাশের গুহাগুলোতে ঢোকা নিষেধ। একটু পর আবার দুই পাহাড়ের মাঝের একটু ফাঁকা দিয়ে আলো ঢুকে গুহা আলোকিত করে দিয়েছে।
মাঝে মাঝে পানিরধারা উপর থেকে নীচে শব্দ করে ঝরছে। দুই পাহাড়ের মাঝে যোগাযোগের জন্য পাথরের ব্রিজ বানানো আছে, ব্রিজ পার হয়ে সিঁড়ি দিয়ে ধাপে ধাপে উপরের দিকে পথ চলে গেছে। তারপর আবার নীচের দিকে নেমে গেছে এভাবে উপর নীচ করে গুহাপথ এগিয়ে চলছে। এক জায়গাতে বেশ খোলা চত্তর সেখানে বসার ব্যবস্থা আছে, বাহির থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এসে ঘাম শুকিয়ে দিচ্ছে। দেয়ালে অনেক সুন্দর ও আলোকিত ইনফর্মেশন বোর্ড লাগানো আছে , সেখানে এই আরকিওলজিকাল সাইটের নানা তথ্য দেয়া আছে। গুহার মধ্যে এক জায়গাতে তিনতালা থাক কাটা, সেখানে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। গুহার নানা প্রাণীর কঙ্কাল, পাথর ও এসব সম্পর্কিত তথ্য সুন্দর ভাবে ডিসপ্লে করা। এই জায়গাটা বেশ আলোকিত এবং অনেক মানুষ এখানে এসে নানা তথ্য দেখছে ছবি উঠাচ্ছে। গুহার ভেতরের কিছু ব্রিজ চীন দেশের রঙিন ফানুস ও নানা রকম সোনালি কাপড়ের টুকরা দিয়ে সাজান। এখানে অনেকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে। মনে হতে পারে একটা গুহাতে কিইবা আছে, তবে আসলেই এটাকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুহাপথে চলতে ক্লান্তি লাগলেও একটুও খারাপ লাগে না। গুহার অনেক ভেতরে বেশ বড় একটা জায়গাতে ভিসন শব্দ করে পানির ধারা আছড়ে পড়ছে, এখানে পানির কনাগুলো হালকা সূর্যের আলো আর রঙিন আলোর বন্যায় এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। ক্যামেরার ছবির চেয়ে মনের মাঝে আঁকা ছবিটাই স্মৃতিতে অটুট থাকবে অনেকদিন।


জিওজিয়াং কেইভের ভেতরে


গুহার মাঝে আরেক জায়গাতে গুহার বিশাল ছাদে নানা ধরনের ছবি মিউজিকের সাথে প্রজেক্টরে দেখানো হচ্ছে। এখানে প্রাচীন গুহামানবের ক্রম বিবর্তন নানা ধরনের সুন্দর পোস্টারের মাধ্যমে ডিসপ্লে করা আছে। গুহার ভেতরের একটা খোলা জায়গাতে মঞ্চ বানানো আছে। এখানে মাঝে মাঝে চীনের নানা জাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। অনেক দর্শক হয় এসব অনুষ্ঠানে। গুহার ভেতর ঘুরতে ঘুরতে নানা দৃশ্য দেখা হচ্ছে, তবে অবাক লেগেছে প্রায় সব পর্যটকরা চীনদেশের, বিদেশীদের সংখ্যা প্রায় নাই বললেই চলে, সারা চীন থেকে ঝাকে ঝাঁকে মানুষ এসে তাদের নিজেদের দেশের দর্শনীয় স্থান দেখছে।
গুহা থেকে বের হওয়ার পথে খাবারের ও সুভেনিরের দোকান আছে। এখানে বসারও ব্যবস্থা আছে। তারপর পাইপ দিয়ে অনেক কিউ বানানো আছে যাতে বের হওয়ার সময় ভিড় সামলান যায়। গুহার ভেতর তিন ঘণ্টা উপর নীচ করে সবাই মোটামুটি ক্লান্ত। ভেতর একটা বেশ খাড়া জায়গা আছে, সেখানে বয়স্ক মানুষের হাঁটতে বেশ কষ্ট হয়, তাই এখানে পাল্কির মত বাহন আছে, একজন কিংবা দুইজন মিলে কিছু পয়সার বিনিময়ে বাহকেরা মানুষদেরকে জায়গাটা পার করে দিচ্ছে। গুহা ভ্রমন শেষ করে উপরের দিকে উঠছি, বাহিরের একটু দূরে বেশ কিছু সুভেলারসপ আছে এখানে আইসক্রিম , বিস্কিট ও হালকা পানীয় পাওয়া যায়। সবাই এই হালকা ঠাণ্ডায় ঘামছে, আইসক্রিম খাবার আদর্শ সময় এটা, এখান থেকে কেবল কারে করে এক্সিট পয়েন্টে যেতে হবে। কেবল কারে উঠে বসলাম, কার থেকে অনেক নীচের গুহার দৃশ্য দেখা যায়, বেশ রোমাঞ্চকর লাগল কেবল কার ভ্রমন। ল্যান্ডিং স্টেশানের কাছে অটো ক্যামেরা দিয়ে সবার ছবি তোলা হচ্ছে। বের হবার পথে সবাই এই ভ্রমনের স্মৃতি হিসাবে ছবিগুলো কিনে নিচ্ছে, দারুন ব্যবস্থা। বাহিরে এসে ফলের দোকানে গেলাম। নানা জাতের চেনা অচেনা ফলে ভরা বেশ কয়েকটা দোকান আছে। ডাবের পানি খেলাম চীনে এসে, হস্ত শিল্পেরও কয়েকটা দোকান তার পশরা সাজিয়ে বসেছে।
এরপর যেতে হবে স্টোন ফরেস্টে, এখান থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×