somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুলতান আহমেত মেয়দানী ,ব্লু মস্ক ইস্তাম্বুল-৩

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবার তিন লিরা দিয়ে তাক্সিম যাবার টিকেট কিনলাম। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন চলে এলো। তাক্সিম নেমে অ্যারো মার্ক ফলো করে ফানিকুলারে যাওয়ার প্লাটফর্মে গেলাম। তাক্সিম থেকে ফানিকুলারে টানেল দিয়ে কাবাতাস আস্তে হয়। এখানেও টিকেট করতে হল, অল্প সময়ের মধ্যে টানেল দিয়ে কাবাতাস চলে এলাম।এখানে টি ১ ট্রাম লাইনের ট্রামে উঠে বসলাম। এই ট্রাম গালাতা ব্রিজ পাড় হয়ে বসফরাসের পাশ দিয়ে সুলতান আহমেত স্টেশনে থামে। এখানে নেমে গেলাম, হোটেল এই এলাকাতে। ঠিকানা খুঁজে সন্ধ্যার একটু আগে হোটেলে চলে এলাম। আসার আগেই নেটে হোটেল বুকিং করেছিলাম, আসার পর তেমন সমস্যা হয়নি।
বেশ ঠাণ্ডা এখন, ভাল করে গরম কাপড় পরে নিলাম। মারমারা সাগরের পাশে হোটেল, সাগরের ঠাণ্ডা বাতাস বেশ হু হু করে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার উপর। একটু ফ্রেস হয়ে বাহিরে গেলাম। পাশেই মসজিদ, মাগরেবের আজান হচ্ছিল, জামাতে নামাজ পড়লাম। মসজিদে ১৫/২০ জনের মত মুসল্লি ছিল। বেশ সুন্দর কার্পেট বিছানো পরিচ্ছন্ন মসজিদ। ভেতরে উষ্ণ বাহির থেকে আসার পর বেশ আরাম বোধ কলাম। ইমাম সাহেবের সাথে কথা হল, বাংলাদেশী তিনি পছন্দ করেন তাদের দেশে স্বাগত জানালেন, এশার নামাজের সময় জেনে বিদায় নিলাম।


সুলতান আহমেত, ইস্তাম্বুল




সন্ধ্যা হয়ে গেছে, চারিদিকে আলো জ্বলে উঠেছে, হু হু ঠাণ্ডা বাতাসে হাঁটতে বের হলাম। হোটেলের পাশেই সুলতান আহমেত স্কোয়ার, এই জায়গাটা প্রাচীন কালে হিপ্পোড্রোম হিসেবে পরিচিত ছিল, এটা এখন ইউনেস্কোর তালিকাতে সুলতান আহমেত আর্কিওলজিক্যাল পার্ক হিসেবে পরিচিত। তুর্কীরা এই জায়গাকে সুলতান আহমেত মেয়দানী বলে।এর এক পাশে ব্লু মস্কের দেয়াল। এই দেয়ালের পাশ ঘেঁসে অনেক সুভেনিরের দোকান। প্রথমে উদ্দেশ্যহীন ভাবে মারমারা সাগরের পাড়ের রাস্তায় হেঁটে বেরালাম। বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল তাই আবার ফিরে এলাম। এরপর ব্লু মস্কের ভেতর ঢুকলাম, রাতের বেলাতেও অনেক টুরিস্ট ঘুরে ঘুরে দেখছে। ভাল করে দেখতে হলে সকালে আসতে হবে, সেখান থেকে বের হয়ে কিছু সুভেনির কিনলাম নিজের জন্য। রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে।সুলতান আহমেত স্কয়ার দিয়ে হেঁটে মেইন রোডে চলে আসলাম। এখানেও অনেক দোকান পাট। বেশীরভাগই তুর্কি খাবারের দোকান, সুভেনিরেরও কিছু দোকান আছে এখানে, অনেক রাত পর্যন্ত এসব দোকান খোলা থাকে।ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক পর্যটক আছে, একটা বাংলাদেশী পরিবার ও দেখলাম, এখানে বেড়াতে এসেছে।কে এফ সি , ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিং সবই আছে এখানে। ম্যাকডোনাল্ডসে ঢুকে খাবারের অর্ডার দিলাম, প্যাক করে দিল, হোটেলে গিয়ে খাব।পাশের দোকান থেকে কয়েক বোতল পানি কিনলাম, এখানে দাম একটু কম।হেঁটেই আবার হোটেলে ফিরে এলাম। এরপর ডিনার শেষ করে আগামী দিনের প্রস্তুতি শেষ করে ঘুমিয়ে গেলাম।


হোটেলের ছাদ থেকে মারমারা সাগরের দৃশ্য

হোটেলের আশেপাশের এলাকা- সুলতান আহমেত, ইস্তাম্বুল
পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ইস্তাম্বুলের সকাল দেখতে ছাদে গেলাম। সকালের নাস্তার ব্যবস্থা ছাদে কাঁচে ঘেরা বারান্দাতে, এর বাহিরে খোলা বারান্দাতেও চেয়ার টেবিল লাগানো আছে। বেশ ঠাণ্ডা বাহিরে তাই ভেতরেই বসতে হল। এখানকার প্রায় সব হোটেলেই ছাদে খাবারের ব্যবস্থা আছে। বারান্দা থেকে মারমারা সাগরের দৃশ্য দেখতে অপূর্ব লাগছিল। স্বচ্ছ নীল আকাশ, নীল সাগর, ফ্রেশ ঠাণ্ডা বাতাস সাথে সূর্যের সোনালি আলো, এক অপরূপ মায়াময় সকালের পরিবেশ। নাস্তায় অনেক আইটেম, আসতে আসতে সামনের দৃশ্য দেখে নাস্তা শেষ করলাম। আজ সারাদিনই বাহিরে ঘুরতে হবে। প্রথমে ব্লু মস্ক এবং আশেপাশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থাপনা দেখতে বের হলাম।


ব্লু মস্ক
ইস্তাম্বুলে অন্যতমপ্রধান আকর্ষন হল ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ, তুর্কিরা এটাকে সুলতান আহমেত কামি বা মসজিদ বলে। হোটেল থেকে একটু হেঁটে গেলেই এই মসজিদ। এর আসেপাশেই সব দর্শনীয় জায়গা। অটোম্যান সাম্রাজ্যের ১৪ তম সুলতান, প্রথম সুলতান আহমেত এই মসজিদ নির্মানের আদেশ দেন এবং বিখ্যাত তূর্কী স্থপতি মোহাম্মদ আগার তত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৬০৯সাল এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং সাত বছর ধরে এই মসজিদ নির্মান কাজ চলে অবশেষে ১৬১৬ সালে নির্মাণ শেষ হয়। সুলতান রাজকোষের সঞ্চিত অর্থ এই মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করেন।
এই মসজিদ কমপ্লেক্সে সুলতান আহমেত এবং তার ছেলেদের সমাধি, মাদ্রাসা এবং একটা দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। মসজিদে আসার বেশ কয়েকটা গেইট আছে, কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিকের হিপ্পোড্রোমের পাশের গেটে বিশাল লোহার শিকল ঝোলানো আছে এই গেইট দিয়ে শুধুমাত্র সুলতান ঘোড়ায় চড়ে মসজিদের আঙ্গিনায় আসতে পারতেন। এর পরেও অনেক মসজিদ বানানো হয়েছে তবে এর বিশালতা এবং অপরূপ স্থাপত্যের কাছে সেগুলো এখনও ম্লান। অটোম্যান সাম্রাজ্যের শেষ এবং সেরা ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে এখনো টিকে আছে।মসজিদের সামনের এলাকা সুন্দর ভাবে ফুলের বাগান দিয়ে সাজান। পর্যটকে গমগম করছে এলাকাটা। হেঁটে হেঁটে মসজিদের সামনের গেইটের কাছে গেলাম। এখানে বাগানের পাশে বোর্ডে মসজিদের বেশ কিছু তথ্য দেয়া আছে।সুন্দর রাস্তা বানানো আছে মসজিদের মূল দরোজাতে যাবার।সিঁড়ি দিয়ে উপরে মসজিদে ঢুকতে হয়।এখানে আসার পর সামনে বিশাল খোলা চত্বর, এর চারপাশে দেয়াল দেয়া। এখানেও মসজিদ সংক্রান্ত নানা তথ্য এবং মসজিদের নক্সা ডিসপ্লে করা আছে। এখানে জুতা খুলে কিংবা জুতার উপর পলিথিনের ব্যাগ লাগিয়ে লাইন ধরে মূল মসজিদে ঢুকতে হয়।জুতোর জন্য বিনা মূল্যে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া যায়, মসজিদ দেখার জন্য কোন টিকেট লাগে না।পাশে অজুরও ব্যবস্থা আছে।নামাজের সময় ছাড়া অন্য সব সময় এ মসজিদের ভেতর সবাই যেতেপারে।


দূর থেকে ব্লু মস্ক
এই মসজিদে নিয়মিত এখনো নামাজ পড়ছে মানুষজন। মেয়েরাও এখানে নামাজ পড়তে পারে তবে তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। সু খুলে পলিথিন বাগে পা ভরে মসজিদের ভেতরে লাইন দিয়ে ঢুকলাম, অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ঢুকে বাম দিকে একটু উঁচু মেঝেতে কার্পেটবিছানো বিশাল নামাজের জায়গা।এখানে অনেক মানুষ তখন নফল নামাজ আদায় করছিল। মদজিদের ভেতরে বিশাল নামাজের জায়গা, অনেক জানালা আছে এই জানালা গুলোতে রঙ্গিন কাঁচ লাগানো। নাম নীল মসজিদ হলেও এটা নীল রঙের না, অনেক নীল টাইলস দিয়ে ভেতরের দেওয়াল, গম্বুজ এবং পিলার গুলো মোড়ানো।এই নীল রঙ থেকেই লোক মুখে এ মসজিদের নাম নীল মসজিদ।ঝাড়বাতি এবং অসংখ্য বাতির আলোতে মসজিদের ভিতর আলোকিত। ভিতরে আলোর বন্যায় ছবি ভালভাবে তুলতে পারিনি। দেওয়াল পিলার এবং গ্যালারী গুলো আরবী ক্যালিগ্রাফিতে পবিত্র কোরানের আয়াত লিখা আছে। কিছুক্ষণ ভেতরে থেকে বেরোনোর গেট দিয়ে বাহিরে এসেজুতো পড়ে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলাম।আমি যে জায়গা থেকে ছবি তুলেছি সেখান থেকেই মসজিদের ভাল ছবি আসে। মসজিদের পুরো দৃশ্য এখান থেকে সুন্দর ভাবে দেখা যায়।
- ঐতিহাসিক কিছু তথ্য নেট থেকে
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×