somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিয়ানমার - দেশ এবং মানুষ

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপরূপ বাগান, মিয়ানমার
মিয়ানমার একুশটা প্রাশাসনিক সাব ডিভিশনে বিভক্ত, সাতটা রিজিওন , সাতটা প্রদেশ, একটা ইউনিয়ন টেরিটোরি এবং ৬টা স্বায়ত্ব শাসিত ডিভিশান । প্রদেশ গুলো হলঃ কাচিন প্রদেশ, কায়াহ প্রদেশ, কায়িন প্রদেশ, চিন প্রদেশ, মন প্রদেশ, রাখাইন প্রদেশ এবং শান প্রদেশ, রিজিওন গুলো হলঃ ইয়াঙ্গুন রিজিওন, মান্দালে, মাগোয়ে, সাগাইং , বাগো ,ইরাওয়াদি এবং তামিন থাই রিজিওন। প্রদেশ গুলো মুলত পাহাড়ি এলাকা, আর রিজিওন গুলো সমতলে। রাজধানী নেপিদ ইউনিয়ন টেরিটোরি। ৬ টা স্বায়ত্ব শাসিত ডিভিশান হলঃ দানু , কোকাং, নাগা, পা ও, পা লাউং এবং ওয়াও স্বায়ত্ব শাসিত ডিভিশান।


১৯৮৯ সালে বার্মার সামরিক সরকার দেশটির নতুন নামকরণ করে "মিয়ানমার" এবং প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম হয় "ইয়াঙ্গুন", নভেম্বর ২০০৫ সালে ইয়াঙ্গুন দেশের রাজধানীর মর্যাদা হারায়। বর্তমানে বার্মা বা মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অত্যন্ত পরিকল্পিত নতুন শহর নেপিদ তে । ২১ অক্টোবর ২০১০ থেকে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত ও নতুন জাতীয় পতাকা প্রবর্তন করা হয়।
বার্মাতে অনেক গোত্রের মানুষ বসবাস করে, প্রায় একশর ও বেশী ভাষায় তারা কথা বলে। এই সব জাতি গোষ্ঠী তিনটা প্রধান গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো হল, মন - খেমার, তিবেত- বারমান এবং থাই- শান গ্রুপ। বার্মিজরা ছাড়াও আরও সাতটা প্রধান গোত্র আছে তারা হল, চিন, কাচিন, ক্যারেন, কায়াহ, মন, আরাকানিজ বা রাখাইন এবং শান। এদের জন্য আলাদা প্রাশাসনিক এলাকা নির্ধারিত আছে।
চিন গোত্রের মানুষেরা বার্মার উত্তর পশ্চিমের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে। তারা তিবেত- বারমান গ্রুপের জাতি। চিনরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা পাহাড় কেটে এবং আগাছা জ্বালিয়ে দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ধান এবং অন্যান্য ফসল চাষ করে। চিন প্রদেশের পাহাড়গুলোতে অনেক ঘন জঙ্গল আছে। সেই সব জঙ্গল এখন চাষের জন্য পরিস্কার করে ফেলা হয়েছে। চিনারা শিকার এবং মাছ ধরাতেও বেশ দক্ষ। চিন দের অনেক ধরনের উৎসব আছে। ঋতু ভেদে নানা উৎসব এবং ফসলের উৎসব এগুলোর মধ্যে প্রধান। চিন পাহাড়ি এলাকায় কিছু কিছু জায়গায় মহিলারা তাদের মুখে উল্কি আঁকে, এর নক্সা তাদের গোত্র ভেদে নানান রকম হয়। চিনরা তামা ও পিতল দিয়ে অলংকার তৈরি করে । তারা বাঁশ কেটে তা দিয়ে মাদুর এবং ঝুরি বানাতে বেশ দক্ষ।


বার্মিজ সম্ভাষণ
তিবেত- বারমান জাতির আরেকটা দল হল বার্মার কাচিনরা । এরা কাচিন প্রদেশে বসবাস করে। কাচিনরা মূলত আত্মার পুজারি তবে এখন তদের মধ্যে খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী আছে। কাচিনদের মধ্যে অনেক ধরেনের নাচ রয়েছে যেখানে ছেলে এবং মেয়ে সবাই মিলে নাচে। কাচিনদের মধ্যে এক ধরনের গণতান্ত্রিক চর্চার প্রচলন আছে। কাচিনরা দেখতে বেশ সুন্দর, কাচিন পুরুষদেরকে তাদের ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি এবং ঢোলা পাজামাতে দেখতে বেশ ভাল লাগে। কাচিন মহিলারা তাদের পোশাকের সাথে অনেক রুপার গয়না পরে এবং তাদেরকে বেশ আকর্ষণীয় লাগে।
কেউ কেউ কারেনদেরকে ইসরাইলের হারিয়ে যাওয়া গোত্র মনে করে। আবার অনেকে মনে করে কারেনরা থাই – শান জাতির মানুষ। তবে তাদের ভাষা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড গবেষণা করে দেখা গেছে যে তারাও তিবেত- বারমান গ্রুপের জাতি। চিন এবং কাচিনদের মত কারেনরা ও আত্মার পূজারী। এখন তাদের মধ্যে অনেকেই খ্রিষ্টান এবং কিছু বৌদ্ধ আছে। কারেনদের জীবনে খ্রিষ্টান ধর্মের অনেক প্রভাব আছে। মিশনারিরা তাদের কাছে খৃস্ট ধর্ম প্রচার করেছিল, তারা তাদের জন্য স্কুল বানিয়েছিল এবং তাদেরকে শিক্ষার আলো দেখিয়েছিল। এর ফলে অনেক কারেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে নতুন নতুন পেশা গ্রহন করেছে। কারেন মহিলারা হাসপাতালের নার্স হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বার্মার অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত কারেনরা ও কৃষির উপর নির্ভরশীল। বনরক্ষী হিসেবেও কারেনদের বেশ সুনাম আছে। তারা বন্য হাতি ধরা এবং তাদেরকে পোষ মানানোর কাজে বেশ দক্ষ। তারা ধীরে ধীরে এবং সহিষ্ণুতার সাথে তাদের পোষ মানায় এই কাজে তারা পশুদের উপর অত্যাচার করে না । কারেনরা বেশ ভাল গান গায় এবং তাদের মধ্যে অনেক ভাল গায়ক আছে। তাদের গানের গলা বেশ সুমধুর। তাদের নিজস্ব নাচ এবং নিজেদের বাদ্যযন্ত্রও আছে।
কায়াহ প্রদেশ কারেনদের প্রদেশের পাশেই। এই প্রদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য বেশ সুন্দর। সুবুজ পাহাড়ি এলাকায় অনেক নয়াভিরাম জলপ্রপাত আছে তাদের প্রদেশে। এক সময় তাদের পোশাকের রঙের কারনে তাদেরকে লাল কারেন জাতি বলা হত । অনেক কায়াহ মহিলা তাদের গলায় রিং লাগিয়ে জিরাফের মত লম্বা গলা বানায়, এটা তাদের একটা ঐতিহ্য। অনেক মহিলা কুড়িটার ও বেশী এধরনের রিং গলায় পরে। শান এবং কারেন গোত্রের মাঝামাঝি অবস্থানের কারনে কায়াহ গোত্রের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিতে এই দুই গোত্রের কিছু ছাপ পাওয়া যায়। কারেনদের মত কায়াহরা আত্মার পূজা ছেড়ে অনেকে খ্রিষ্টান কিংবা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছে। মনরা অনেক বছর আগে বার্মায় এসে বসবাস করছে। যুগ যুগ ধরে বহুবার বার্মিজদের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়েছে তারপরও এই দুই জাতির মধ্যে বেশ মেলামেশা এবং আন্তবিবাহ প্রচলিত রয়েছে। এখন এই দুই জাতিগোষ্ঠীকে আলাদা করা বেশ কঠিন। কিছু কিছু মন একটু টেনে আকর্ষণীয় ভাবে বার্মিজ ভাষা ব্যবহার করে এবং তা শুনে তাদেরকে আলাদা করা যায়।
বার্মার পশ্চিম উপকুলে বসবাসরত আরাকানিদের ইতিহাস মন এবং বার্মিজদের মতই পুরানো। এই অঞ্চল আরাকান ইয়োমা পর্বতমালা দিয়ে মূল বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে আরাকনিরা মন বা বার্মিজদের সাথে তেমন একটা যুদ্ধ করেনি। বার্মার শক্তিশালী শাসকরা সবসময় তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে আরাকানিদেরকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করত। কেবলমাত্র আঠার শতকে বার্মার রাজা বোধাপায়া আরাকানকে বার্মার সাথে একত্রীভূত করতে সমর্থ হয়। আরাকানীদেরকে মঙ্গোলিয়ান এবং আইরিয়ানদের মিশ্রণ জাত মনে করা হয়। তবে এরা তিবেত- বারমান এবং এদের ভাষা বার্মিজ ভাষার কাছাকাছি। আরাকানে ভারত থেকে প্রচুর মানুষ এসে বসতি গেড়েছে। মুঘল আমলে আরাকানের রাজাদের ভারতের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।
ভৌগলিক কারনে আরাকানের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির উপর বাংলার ব্যপক প্রভাব রয়েছে। বিশেষত, পনেরো’শ শতকে বার্মিজ আভা রাজ্যের রাজার আগ্রাসন প্রতিরোধে বাংলার মুঘল শাসকদের ভুমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এই সময় থেকে আরাকানের রাজারা মুসলিম পদবী গ্রহন করেছিলেন। আরকান প্রদেশে বার্মার অন্যান্য প্রদেশের থেকে বেশী মুসলমান বসবাস করে, যদিও আরাকনী বৌদ্ধরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। একসময় আরাকানে কবি আলাওল এবং আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আরাকান রাজসভা আলোকিত করত। ১৮২৬ সালে আরাকান ব্রিটিশদের অধীনে আসার পর ইংরেজি ভাষা গুরুত্ব পায় এবং আরাকানী ভাষা চর্চা কমে যায়। আরাকান রাজ্যে সুন্দর সাগর সৈকত আছে, এসব সৈকত বার্মার জনগণ এবং বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×