somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লস এঞ্জেলস থেকে রেঞ্চো কোকামাঙ্গা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইউনিয়ন স্টেশন লস এঞ্জেলেস
শীতকালে মাঝে মাঝে লস এঞ্জেলেসে বৃষ্টি হয়, এ সময় বাতাস ও বেশ থাকে আকাশ থাকে মেঘলা। এ রকম এক বিকেলে লস এঞ্জেলেস থেকে রেঞ্চো কোকামাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। দুপুরে হালকা বৃষ্টি হলেও বিকেল বেলা বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। বাসা থেকে হেঁটেই মেট্রো ষ্টেশনে চলে এলাম, দশ মিনিটের রাস্তা গল্প করে হেঁটে হেঁটে এই সময়টা কেটে গেল। মেট্রোতে করে ইউনিয়ন স্টেশনে চলে এলাম। এই স্টেশনটি লস এঞ্জেলেস শহরতলির একটি প্রাণবন্ত প্রতীক। অনেক দূর থেকে এই ল্যান্ডমার্কটি দেখা যায়। বিশাল এলাকা নিয়ে এই স্টেশান এটা শিল্প, সংস্কৃতি, পরিবহন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপস্থিতির দ্বারা অতীতের ঐতিহাসিক কাঠামোকে বর্তমানের সাথে সংযুক্ত করে। বিশাল আকারে পরিকল্পিত, লস অ্যাঞ্জেলেস ইউনিয়ন স্টেশন পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রেলপথ যাত্রী টার্মিনাল। এটাকে প্রায়ই "শেষ মহান ট্রেন স্টেশন" হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখান থেকে মেট্রো লিংক, এমট্রাক, গ্রে হাউন্ড বাস ও বেশ কয়েকটা মেট্রো লাইনের ট্রেন ছাড়ে। এখান থেকে কয়েকটা রুটের মেট্রো বাস চলে। লস এঞ্জেলেস বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য এখনে বাস স্টপেজ আছে। এখান থেকে মেট্রো সাইকেল ভাড়া নেয়া যায়। সুন্দরভাবে পরিকল্পিত এই স্টেশনে ঘুরে ফিরে বেশ সময় কাটানো যায়। বেশ ব্যস্ত এই ষ্টেশনে অনেকগুলো প্লাটফর্ম আছে এসব প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন ছেড়ে যায়।


মেট্রো লিঙ্ক ট্রেন
আমাদেরকে এখান থেকে মেট্রো লিঙ্ক ট্রেন নিয়ে রেঞ্চো কোকামাঙ্গা যেতে হবে। মেশিন থেকে রেঞ্চো কোকামাঙ্গার টিকেট কিনলাম, এই ট্রেনের জন্য নতুন করে টিকেট কিনতে হয়, সাড়ে আট ডলার করে টিকেট। মেট্রো লিংক ট্রেনে লস এঞ্জেলেসের আশেপাশের শহর গুলোতে যাওয়া যায়। আমাদের এই ট্রেনের শেষ স্টেশন সান বার্নাডিনো। টিকেটে ট্রেনের সময় লিখা থাকে একটা ট্রেন মিস হলে প্রায় এক ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টার উপর অপেক্ষা করতে হয় পরের ট্রেনের জন্য। রাত নয়টার পর এই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টিকেটেই প্লাটফর্মের নাম্বার লিখা থাকে আমাদের ট্রেন প্লাটফর্মে চলে এসেছে, তাই দেরি না করে ট্রেনে উঠে বসলাম। সুন্দর দোতালা বগি, নীচের তালায় হুইল চেয়ার, সাইকেল ও স্কুটি রাখার জায়গা আছে। এর পর মাঝে কয়েকটা বসার সিট, এর পর দোতালায় সুন্দর বসার ব্যবস্থা। এর আগে দিনের বেলায় এই ট্রেনে চড়েছিলাম এবারে রাতের ভ্রমণ। সবাই দুটো করে সিট নিয়ে বসেছে, তবে ট্রেন বেশ ফাঁকা, যাত্রী অনেক কম। এই ট্রেনের প্রত্যেক বগিতে ওয়াশরুম আছে, বেশ পরিচ্ছন্ন। আমাদের গন্তব্য নয় স্টেশন পর। স্টেশন আসার আগে লাউড স্পিকারে নাম ঘোষণা করে, বেশিরভাগ যাত্রী এই পথে নিয়মিত চলাচল করে তাই তারা তাদের গন্তব্যে সময় মত নেমে যায়। আমাদের মত ভ্রমণকারীর সংখ্যা তেমন বেশী না, তবে অনেকেই আছে প্রথম এসেছে। ট্রেনের ভেতরে সবাই খুব আসতে কথা বলে, তবে আমাদের পেছনের সিটে এক মহিলা বেশ জোরে ধমকের সুরে কার সাথে যেন কথা বলেই চলছিল। তার সামনের সিটের যাত্রী একটু আসতে কথা বলতে বলায় মহিলা রেগে গিয়ে মোবাইল ফোনের ভলুম কমিয়ে বলল এখন ঠিক আছে কিনা, সামনের যাত্রী আর কোন কথা বলে না, কারণ গায়ে পড়ে এই মহিলা ঝামেলা বাধাতে পারে। সে চুপ করে বসে ছিল, মহিলা বেশ কয়েকবার জোরে জোরে বলে আবার আগের মত কথা চালিয়ে গেল। কয়েক স্টেশন পর যাত্রী নেমে গেল। আমাদের পাশেই একজন রেড ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক বসে ছিল, শান্ত ভঙ্গিতে, আমাকে তার ব্যাগ সরিয়ে বসতে দিল। মোটামুটি ভ্রমণ বেশ আনন্দেরই ছিল। প্রতিটা ষ্টেশনে থামার পর আশেপাশের এলাকার বাড়ি ঘর ও রাস্তা ঘাট দেখতে ভালই লাগে, রাত তেমন না, তবে চারিদিক আলোকিত। এক ঘণ্টা দশ মিনিটের মাথায় আমরা আমাদের গন্তব্য রেঞ্চো কোকামাঙ্গা ষ্টেশনে পৌঁছে গেলাম। আমার ছোটভাই গাড়ি নিয়ে সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। এই ভ্রমনে একটু ও ক্লান্তি লাগেনি বরং আর ও এনার্জি পেয়েছি। গাড়িতে করে আমরা ভিক্টোরিয়া গার্ডেন মলে গেলাম, এই সময়ে হ্যালোইন, ব্লাক ফ্রাই ডে ও থাঙ্কস গিভিং এর সময়। নভেম্বর ডিসেম্বরে পাঁচটার আগে সন্ধ্যা নেমে আসে। ডে লাইট সেভিং টাইম চলছে এখন। ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা আগে করে দেয়া হয়েছে। রাত নয়টা পর্যন্ত মলগুলো খোলা থাকে। এখানে রস’এ সেল চলছে, এই এলাকায় মানুষ অনেক কম হলে ও পার্কিং ভর্তি গাড়ি, মানুষ মনের সুখে কেনাকাটা করছে। আমরা ও ঢুকে গেলাম। কিছু কেনাকাটা সেরে আল ডি তে গেলাম, এখানে খাবার দাবার বেশ ভাল দামে পাওয়া যায়। ডিম দুধ ও অন্যান্য অনেক জিনিসের দাম এখানে কম। কিছু খাবার কেনা হল এখান থেকে। এরপর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। চারিদিক শান্ত, আকাশে চাঁদ উঠেছে হালকা বাতাস বেশ ঠাণ্ডা, রাতে আর ও শীত পড়বে, শহরটার চারদিকে বেশ খাড়া পাহাড়, পাহাড়ের উপর মেঘ জমে বরফ হয়ে গেছে। সমতলে এখানে কখনো বরফ পড়ে না তবে পাহাড়ের চূড়ার দিকে সাদা বরফে ভরে যায়। চাঁদের আলো বরফের উপর পড়ে এক শুভ্র সুন্দর সৃষ্টি করেছে। সুন্দর একটা দিন ও সন্ধ্যা কেটে গেল।


কোকামাঙ্গা পাহাড়ে বরফ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×