somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাইমারী কাব্য!

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যৎকিঞ্চিত জ্ঞান সঞ্চিত হবার পরেই, যখন বাড়ির সবার মনে হলো আমাকে লাইন ধরিয়ে দেয়া যায়। তারা আমাকে স্কুলে পাঠানো শুরু করলেন। কিন্তু সেই বয়সে কেনো জানি না, স্কুল ছিলো আমার কাছে এক বিভীষিকার নাম। কোন ভাবেই, কোন লোভে পরেই স্কুলে যেতে চাইতাম না। কেনো জানি না মনে হতো স্কুল থেকে ফিরে এসে যদি দেখি মা অন্য কোথাও বেড়াতে চলে গেছেন, তখন আমি কি করবো, আমার কি হবে। অতঃপর অন্য সবার সাথে রোজ সকালে, অনেক জোরজারি করে, স্কুলের পথ ধরালেও অর্ধেক পথ থেকে আমি আবার ফিরতি চলে আসতাম, বারোটা অব্ধি লুকিয়ে থাকতাম, আর না হলে শাস্তি যা হয় তা মাথা পেতে অথবা পিঠ পেতে নিয়েও স্কুলে যেতাম না।

আমার স্কুল শুরু হলো ক্লাস থ্রি থেকে, এর আগে যা কয়বার স্কুলে গেলাম, তাকে আর যাই হোক স্কুলে যাওয়া বলা যায় না। ক্লাস থ্রি তে প্রথম একজন ছাত্রী তার নাম রহীমা, এর পরেই আতিক, এর পরেই আমার রোল তিন। কালের অতলে রহীমা যে আজ কই তা আর জানি না। আতিক এক মেয়ের বাপ আমেরিকায়, আর আমি অধম ফ্রান্সে! ক্লাস ফোর এ উঠতেই একেবারে শেষের দিক থেকে হুট করে মন্তর উঠে এলো সামনের দিকে, আমার এক পয়েন্ট কমে চারে গেলাম সব কিছু অদল বদল হতে শুরু করলো। মুসনাজ তার আসন আজীবনের জন্য এক এ নিয়ে এলো। বিমল হয়ে গেলো দুই। বিমল বিয়ে থা করে দোকানে বসে পান বিক্রি করছে আজকাল। আমাদের মন্তর হয়তো নেতা হবে অদূর ভবিষ্যতে, দেশে থাকতেই দেখেছিলাম তার নামে দেয়াল লিখন শুরু হয়ে গেছে। “মন্তর ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই” মুসনাজ সাস্টে ছিলো, শেষ করলো পড়ালেখা, ইদানীং কবি কবি ভাব এসেছে কিছুটা! আর জমেছে জীবনের আক্ষেপ, এখনো সুন্দরী গাঁথুনি মন্ত্র তার শেখা হয়নি! ক্লাস ফাইভে আবার জায়গা দখলের খেলায় তিনে স্থানান্তরিত হলাম। রহীমা টহিমা সবাই খেই হারিয়ে ফেললো! আমাদের আলাউদ্দিন স্যার আমাদের ব্যাচের দিকে তাকিয়ে বললেন মিনিমাম চারটা বৃত্তি তো এই বছর আসছেই। এর আগে আমাদের স্কুলের মিনিমাম এক বৃত্তি পেতো একটা রেকর্ড ছিলো কখনই বৃত্তি হীন থাকেনি। সুতরাং আমরা যারা বৃত্তি পরীক্ষা দেবো, তাদের জন্য আলাদা ক্লাস শুরু হলো, আমরা অতি মন দিয়ে লেখাপড়া করলাম! আর আমি বরাবরের মতো অসুস্থ বিছানা বালিশ ভরসা করে, মাসে গুনে গুনে কদিন স্কুলে যেতাম। এবং পরীক্ষা দিয়ে একেবারে ভরিয়ে দিয়ে আমাদের ব্যাচ শূন্য বৃত্তি নিয়ে প্রাইমারী শেষ করলাম! সবাই হায় হায় করে বলে উঠলো, এটা এরা কি দেখালো, কেমনে দেখালো! এবং আমরা প্রমাণ করে ছাড়লাম, ঘোড়ার ডিম ভিন্ন এই ব্যাচ থেকে আর কিছু আশা করা যায় না!
এবং অবশেষে নিজেকে অনেক কিছুর সাক্ষী মানলেও, দায় নিজ ঘাড় থেকে সরিয়ে আরেক জনের কাঁধে দিয়ে দেয়ার মতো পিচ্ছিল কাঁধ তখনও আমার ছিলো না।
কি অদ্ভুত সময় পার করেছি আমরা, স্কুলের রাস্তায় এক গাছ ছিলো যে গাছে ডাকিনী, যোগিনী নামের ভুত থাকতো, সেই গাছের আঁশে পাশে এলেই বই খাতা বুকে গুজে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে দৌড় দিতাম সবাই! মাঝে মাঝে এক দুই জন পিছনে পরে গেলে, কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে তাকে আসতে হতো। আর সেই পিছনের দুর্বল দলের প্রতিনিধি আমি সব সময়েরই। ক্লাস ফাইভে উঠেই সিনেমা দেখে এসে আমাদের কাছে গল্প করতো মন্তর! বিমলের গোঁফ গজিয়ে গেছিলো তখনই, ক্লাসে রূপকথার বইয়ের সাপ্লাই দিতো জহুরা, সর্বাঙ্গে সুন্দরী মঞ্জু! তখন মেয়ে বিষয়ক আলাপ আলোচনা থেকে দূরে থাকলেও মাঝে মাঝেই এই সেই আলোচনায় যোগ দিতাম আমরাও! সঙ্গীতা হুট করে অসুস্থ হয়ে একেবারে বিদায় বেলায় চলে গেছিলো তখনই।
সিগারেট খেয়ে ধরা পরলো এক ব্যাচ বেলাল, আফজাল সহ আরো অনেকে। যদিও তারা হর হামেশাই সিগারেট ফুকে আমাদের মুখের দিকে ধোয়া দিতো! আলাউদ্দিন স্যার, আমাদের পাগলা মফিজ স্যার ধরে এমন প্যাঁদানো প্যাদালেন সবার জ্বর চলে আসল পরে! আর আমাদের হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট পরাতে শেখালো বেলাল! তখনকার সময়ে সেই ছিলো স্কুল ক্যাডার, হাফ প্যান্ট পরে স্কুলে গেলে টেনে খুলে ফেলতো! আমরা কালোদিদিমনির কাছে তার নামে বিচার দিলাম। বিচারের নামে হলো প্রহসন, দিদিমনি তাকে সবার সামনে এনে বললেন, তুই কি সবার প্যান্ট খোলার লিজ নিছিস? তুই তো বড়ো হলে অতি বড়ো বদমাস হবি! সেই বদমাসির প্রতিশোধ নিতে, বেলাল ঘোষণা দিলো, এখন থেকে স্কুলে নয়, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে সে টেনে প্যান্ট খুলবে, যারা হাফ প্যান্ট পরে স্কুলে আসবে তাদের! স্কুলের বাইরের মারামারির বিচার স্কুলে খাটে না, সেটা গ্রাম্য পাঞ্চায়েতের বিচার, আর সে হলো গ্রাম্য মেম্বার, বাঘ মেম্বারের নাতী! সেই বেলাল বড়ো হয়ে এতো নিরিবিলি হলো, মাঝে মাঝে বাজারে তার দোকানে বসে আড্ডা দিতে গেলে সে তুমি তুমি করে কথা বলতো। তুমি বলার কারণ জিজ্ঞেস করলাম একদিন, বললো পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে, আমরা কন্টিনিউ করেছি তাই নাকি সন্মান! সন্মান স্বরূপ সে বললো পান খাও দুস্ত! আমি পান খাই না, তাও মুখে নিয়ে জাবর কেটে সন্মান রক্ষা করতাম মাঝে মাঝেই। মাসতুতো ভাই পরশমণির সাথে সারা বছর জুড়েই ঝগড়া করে আড়ি দেয়া থাকতো, কথা বলতাম খুব কম সময়ই। সমাজ্জলের নাম ধরে ডাক দিলেই ছোট ক্লাসের নাজনীন তাকিয়ে থাকতো, তাই টিফিন পিরিয়ডে আমাদের কাজ ছিলো খালী সমাজ্জল সমাজ্জল করে চিৎকার করে যাওয়া! টিফিন পিরিয়ডে এক টাকার মুড়ি চানাচুর আর ইট সুরকি নিয়ে তেঁতুল গাছে ঢিল ছুঁড়া! স্কুলের আঁশে পাশেই ছিলো সব কামারের দোকান। তাদের টিং টাং শব্দ শুনতে শুনতে কান অস্থির হয়ে গেলেও সামনে গিয়ে বসে থাকতাম। এর মাঝে একজন ছিলো খুব বদরাগী, তাই তাকে আরো রাগানর জন্য ব্যাঙ্গানর ছড়া বানানো হলো, নিশি নিশি লাম্বা নোট, নিশির ফিন্দ ফেটি-কোট!
স্কুলের পাশেই কালী মন্দির, আমাদের ইচিং বিচিং খেলার জায়গা। আর একটু সাহসীরা হাফ দেয়ালে উঠে লাফ দিয়ে নিচে পড়তো, আমরা বোকারা অবাক হয়ে দেখতাম, আর ভাবতাম একদিন আমরাও এমন করে লাফ দেবো। স্কুলের শরিকি এক বাথরুম থাকলেও জীবনে সেখানে কেউ যাইনি! স্কুলের পাশের নিরিবিলি রাস্তাতেই আমরা পিঁপিঁ করতাম! ক্লাসের ফাকে ফাকেই দিদিমণি পানি-খাবো, প্রেশাব করবো বলে বের হয়ে যেতাম!
বেশি কিছু তো না, মাত্র ১৭/১৮ বছর আগে গেলেই কি কত অদ্ভুত ছিল আমাদের সময়। আমরা ফার্মের মুরগীর মতো গাড়ী করে স্কুলে যেতাম না। আমাদের স্কুল টিফিন নামে কিছু ছিলো না। মাঝে মাঝে স্কুল ব্যাগ ও থাকতো না। কোন স্কুল ড্রেস থাকতো না, ইচ্ছে মতন হাফ প্যান্ট চেন ছাড়া হলেও মানিয়ে নিয়ে চলে যেতাম স্কুলে! আর এখন কার বাচ্চারা ইয়ে হতে না হতেই ইয়ে টিয়ে সব বুঝে নিয়ে চলে! তাদের প্রাইমারী কাব্য আমার কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগবে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×