শুচি সৈয়দ
আমার এক প্রিয় সহকর্মী হঠাৎ সংস্কারবাদী হয়ে গেলেন। দু মাইনাস থিওরির জমজমাট আসরে কলাম লিখে ঝড় তুললেন। তার ই-মেল বক্সে প্রচুর প্রশংসা সূচক বার্তা ভরিয়ে তুলল তাকে। এমনিতে আমি নানা সময়ে নানা প্রতিবেদনের জন্য তাকে ভালো লাগার প্রতিক্রিয়া জানিয়েেিছ এবারে আমার নিশ্চুপতায় একদিন হঠাৎ জানতে চাইলেন, আমার প্রতিক্রিয়া কি? আমি তার লেখার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বললাম, ‘তিনি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন, তাদের ফাঁসিতেও ঝোলানো যেতে পারে কিন্তু এখন সে সময় নয়।’ বলাই বাহুল্য তিনি রুষ্ট হলেন। আমি আমার সহকর্মীর আচরণে আহত বোধ করলাম। ইত্যবসরে দৈবাৎ একই ঘরানার আর এক সহকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় মনোকষ্ট নিয়ে তাকে বললাম, ‘আপনিও ওনার মতো বধযজ্ঞে শামিল হবেন নাকি?’ বলে ঘটনার বর্ণনা করলাম। আমার দ্বিতীয় সহকর্মী শুনে একটু চুপ করে থেকে বললেন, তুমি সেই কবিতাটা তো জানো, ‘তোমাকে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে’Ñ আমি এই কবিতার সুরে বলি, ‘তোমারে বন্দিবে যে, তোমাকে বধিবে সে।’ না, আমি যেমন বন্দনাও করি না, তেমন বধও করব না, তুমি নিশ্চিত থাক।’
সেদিন আমার দ্বিতীয় সহকর্মীর কথায় দুঃখভার লাঘব হয়েছিল। বিচ্ছুর এ সংখ্যায় চাটুকারদের মহিমা বর্ণনা করে ... ‘হইতে সাবধান’ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাঠক অন্তত এদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকবেন। ক্ষমতাকে এদেশে গত সাঁইত্রিশ বছর ভাবা হয়েছে ব্যক্তির পরিবর্তনের হাতিয়ার। ক্ষমতার কুর্সিতে বসে ব্যক্তি তার নিজের ঘনিষ্ঠ আÍীয়-স্বজনদের আখের গুছিয়েছেন। ফলে পিছিয়ে গেছে দেশ-দেশের মঙ্গল। আর সেই পিছিয়ে পড়াকে, অমঙ্গলকে শত গুণে বাড়িয়ে দিতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাটুকাররা হাজির হয়ে গেছে মহাসমারোহে। এবং তারা নাচে-গানে ভরপুর করে ভরিয়ে তুলেছে ক্ষমতাসীনদের। ব্যক্তি বন্দনায় আমরা দেখেছি অন্যসব কিছু লাঞ্ছিত হয়েছে। এমনকি যে ব্যক্তিকে বন্দনা করা হয়েছে সে নিজেও হেসেছে বিদ্রƒপের হাসিÑ কিন্তু চাটুকারের তো সময় নেই সেটা দেখার। চাটুকারিতা কদমবুছি টেলিখিশনের পর্দায় পৌঁছে গেছে। যাকে বলে অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়ার অবস্থা।
চাটুকারদের একটা পরিচয়- পিজিপি অর্থাৎ প্রেজেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি। যে দলই যখন ক্ষমতায় আসুক না কেন, এরা থাকে এগিয়ে সবার আগে। এদের ফটো ভাঙার প্রতিযোগিতা মাথা ভাঙার প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। আÍসমর্থনে এরা বলে থাকে যে, আমি তো বদলাই না, সরকারই বার বার বদলায়! এই বাক্যের আড়ালে এরা যাবতীয় দুর্নীতি এবং দুঃশাসনের জনক হয়ে ওঠে।
সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের ফুল ছিটিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় সচিবালয়ে। মন্ত্রিসভার নবীন সদস্য আশরাফুল ইসলাম বিব্রত হয়েছেন সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের এহেন সংবর্ধনায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাজ ফেলে রেখে সংবর্ধনার আয়োজন কোন কাজের কাজ নয়। এরকম অকাজে আমাদের জাতীয় জীবন থেকে যে কত অসংখ্য কার্যদিবস হারিয়ে যায় সেই ক্ষতির হিসাব করার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী যে পিজিপিদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, সেটা যদি স্মরণে রাখা যায় তাহলে নাম ভাঙিয়ে স্বার্থ হাসিলকারীরা বমাল ধরা পড়বে। এদেশের এক স্বৈরশাসকের চাটুকার মন্ত্রী চাটুকারিতার এক নজির সৃষ্টি করেছিল। সন্দরবনের সমস্ত গাছকে কলম বানিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত নদীর পানিকে কালি বানিয়েও যে নাকি স্বৈরাচারীর প্রশস্তি লিখে শেষ করতে পারত নাÑ এমনই ভয়াবহ কৃতিত্বের অধিকারী সেই স্বৈরাচার। স্বৈরাচারের সঙ্গে সঙ্গে শোচনীয়ভাবে পতিত হয়েছে সেই চাটুকররাওÑ তারা লাঞ্ছিত হয়েছে বস্তুগতভাবে, আমরা অপমানিত হয়েছি অকাজের কাজীদের কাজ দেখে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




