somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি হিসেবে আত্মজিঞ্জাসা

১৭ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথায় যেন পড়েছিলাম আহমদ ছফা বলেছিলেন, সরলতা কী জিনিস তা পুরোপুরি বুঝতে হলে পাহাড়ি মেয়েদের কাছে যেতে হবে। পাহাড়ে গিয়ে কথাটা হঠাৎ আবারো মনে পড়লো। তবে পাহাড়ি পুরুষদের ক্ষেত্রেও কথাটা অনেকাংশে সত্যি বলে মনে হয়। ছফা তাদের কথা কেন বলেননি জানিনা। নারীর প্রতি পুরুষের স্বভাবসুলভ দুর্বলতা থেকেও হতে পারে! (ছফা শেষপর্যন্ত অকৃতদার ছিলেন একথা মাথায় রেখেই বলছি)
১৪ জুলাই দু’দিনের জন্য হুট করেই গিয়েছিলাম খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়িতে। সাথে আরো তিনজন। তপু, মিরাজ আর এনায়েত। পাহাড়ে এর আগেও অনেকবার গিয়েছি। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি আগেই দেখা হয়েছে। তবে লক্ষীছড়িতে এবারই প্রথম। বড় কথা হলো এবারের অভিজ্ঞতা (উপলব্ধিও বলা যায়) অন্যবারের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
লক্ষীছড়ির রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম পাহাড়ি মানুষগুলো ফিরে ফিরে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। এর অর্থ খুঁজতে গিয়ে মনে হলো শুধু আমরা নতুন বলে নয়, এ তাকানোর মাঝে আারো কিছু বিষয়ও জড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা অবিশ্বাস, কিছুটা ঘৃণাও যে এর সাথে জড়িয়ে নেই তা জোর দিয়ে বলতে পারলাম না। এ বিশ্বাসটা আরো জোরদার হলো যখন বাঙালিদের কাছ থেকে একই প্রশ্ন বার বার শুনতে হলো, ‘আপনার কোন কোম্পানি থেকে এসেছেন?’ তার মানে কি এখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ আসেনা? বাঙালিরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়েই যে পাহাড়িদের মনে অবিশ্বাস ও ঘৃণার সৃষ্টি করেছে, সে হিসাব মেলানোর চেষ্টা করলাম। আমাদের কাছে একজন ব্রিটিশ কিংবা একজন পাকিস্তানি যে অর্থ তৈরি করতো পাহাড়িদের কাছে নিজেকে সেই চরিত্রে আবিস্কার করলাম। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। আর এ বোধ থেকেই কিছু প্রশ্ন মনের মধ্যে বারবার উঁকি দিচ্ছিল।
সংবিধানে আদিবাসী মানুষগুলোকে কেন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে উপজাতি বলা হলো? অব্যাহত দাবি জানিয়ে আসলেও কেন স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও তাদের এ দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে না? প্রায় এক যুগ হয়ে গেলেও কেন শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা? জায়গায় জায়গায় আর্মি ক্যাম্প বসিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হলো কেন? কেন পাহাড়ি এলাকাগুলো এখনো এতটা অবহেলিত? উপজেলা সদরের বাইরে এখনো কেন তথাকথিত সভ্যতার কোনো আলো পৌঁছায়নি? একই রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়েও কেন তারা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হবে? নিজেদের মাতৃভাষায় কেন তারা পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছেনা? এখনো কেন অব্যাহতভাবে চলছে পাহাড়ি উচ্ছেদ অভিযান? কেন পাহাড়িদের দমিয়ে রাখার জন্য বাঙালিদের ‘প্রহসনমূলক পুনর্বাসন’? পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘বাঙালি মুসলিম’ অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার মাস্টারপ্ল্যান কেন নেয়া হলো? এসব কিছুতে বিুব্ধ হয়ে তারা যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে তাদেরকে আসলে কতটা দায়ি করা যাবে? তাহলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ কারা- তারা না আমরা? আমার ছোট মাথায় কোনো সমাধান না পেয়ে প্রশ্নগুলো ঘোরাফেরা করছিল।
আমরা যার কাছে গিয়েছিলাম তার মাধ্যমে জানতে পারলাম উপজেলা সদর হাসপাতালে চারজন এমবিবিএস ডাক্তার ও একজন কনসালটেন্ট থাকলেও বর্তমানে সেখানে মাত্র দু’জন ডাক্তার আছেন। তাও তারা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। এক সপ্তাহ একজন তো পরের সপ্তাহ আরেকজন। অন্যরা চট্টগ্রামে থাকেন । মাসে মাসে শুধু বেতন তুলে নিয়ে যান। আরো জানতে পারলাম লক্ষীছড়ির একমাত্র কলেজটিতে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন! ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কাজই তাকে একা সামলাতে হয়। পড়াশুনার অবস্থা আন্দাজ করতে কষ্ট হলোনা।
চট্টগ্রামে ফিরে আসার আগে এক পাহাড়ি বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ ঘটে। পরিচয় হয় সাগর চাকমার সাথে। তার আতিথিয়তায় আমরা যারপরনাই বিমোহিত। কোন পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও তারা এতটা অতিথিপরায়ন!
শেষ মুহূর্তের এই ঘটনাটা আমাকে আরো অপরাধী করে দেয়। প্রশ্নগুলো আবারো আসতে থাকে একের পর এক- পাহাড়ি-বাঙালি সমস্যার সমাধান হবে কবে? কেন স্বার্থ ছাড়া কোন বাঙালি পাহাড়ে যাবেনা? কবে পাহাড়িরা বাংলাদেশকে তাদের নিজের দেশ বলে মনে করবে? আর কতদিন তারা আমাদের পর ভাববে? আমরা আর কতকাল শোষকের চরিত্র ধারণ করব???
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×