ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার বেদনাদায়ক দুইটা ঘটনা বলি-
ইন্টারে পড়ি। নচিকেতার একটা ক্যাসেট কিনলাম। প্রত্যেকটা গান আহামরি সুন্দর। বন্ধুরে শোনাইলাম। আমারে বল্লো ক্যাসেটটা দে। দিলাম। ক্যাসেট আর ফেরত দেয়না! বল্লাম
- কি রে ক্যাসেট দে
সে বল্লো
- দোস্ত ভাবি শুনতেছে। কয়দিন পরে নে।
আগ্রহ অত্যাধিক থাকায়, দুইদিন পরেই মনে হলো কয়দিন হয়ে গেছে। তার বাসায় গিয়া হাজির হইলাম। ভাবি আমাকে দেখেই বল্লেন
- তোর ক্যাসেটের গানগুলাতো অসাধারণ!
বল্লাম
- ভাবি ক্যাসেট দেন। আমি কয়দিন শুনি।
আমার স্পষ্ট মনে আছে ভাবি বল্লেন
- বেডরুমে আছে, নিয়া নে।
বেডরুমের কোথাও আর ক্যাসেট পাই না! পরে বুদ্ধি করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ের টান দিয়ে দেখি ক্যাসেট টা আছে। ক্যাসেট হাতে নিলাম। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো। যেই পিছনে ফিরলাম, দেখি ভাবি দাঁড়ায়ে আছেন। খুব শিতল গলায় কয়টা কথা বল্লেন। যার সারমর্ম হচ্ছে - পারমিশন ছাড়া আমি কেন বেডরুমের মত সেনসিটিভ জায়গায় ঢুকলাম। আরো কী কী যেন বল্লেন, আমার কান দিয়ে সব কথা গেলো না। কেবল মনে হতে থাকলো - মাটি তুই ফাঁক হ, আমি ঢুকি।
-০-
কারওয়ান বাজার ষ্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সাথে একটা রড সিমেন্টের দোকান আছে। বৃষ্টির দিন। রাস্তায় পানি জমে আছে। ভাবলাম, দোকানের কর্ণারটা দিয়ে ঢুকে জাষ্ট পিলারের পাশ দিয়ে বের হয়ে যাই। তাহলে আর পানিতে পা ভিজবে না। এতে করে দোকানের ভিতর জাষ্ট একটা পা পড়বে। বেশী কিছু না। যেই দোকানের কোনাটায় পাড়া দিয়ে বাইরে গেলাম। বয়ষ্ক ভদ্রলোক ডাক দিলেন। কড়া কণ্ঠের ডাক
- এইযে শুনেন
ভদ্রলোকের বয়স হবে ষাটের বেশী। পাঞ্জাবী পড়া। পাকা দাড়ীতে মুখ ভর্তি। দাড়ির সাইজ বুক পর্যন্ত। নুরানী চেহারা। আমি ঠিক বুঝলাম না তিনি কী বলবেন। খুব বাজে ব্যবহার করে ভদ্রলোক বল্লেন
- দোকানটারে কি রাস্তা মনে হয়! পরিবার থেকে কোন শিক্ষা পান নাই? এত বড় অভদ্র চালচলন...ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভদ্রলোককে খুব বিনয়ের সাথে বল্লাম
- চাচা ভুলটা আমারই। আমি এই জন্য দুঃখিত।
এর পরেও ভদ্রলোক কতগুলা অভদ্র কথা বল্লেন। পরিস্থিতিটা সহজ করার জন্য আমি হাসি দিয়ে বল্লাম
- চাচা বৃষ্টির দিন মনে হয় একই কথা আপনার কয়েকশো জনকে বলতে হয়। তাই না?
ভদ্রলোক মুখটাকে নোংড়াতম করে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আস্তে করে বের হয়ে গেলাম।
-০-
উপরের দুইটা ঘটনায় আমার দোষ ১০০%। এইখানে আত্মপক্ষ সমর্থণের কোনই সুযোগ নাই। এর পর থেকে
- কারো বেডরুমতো দূরের কথা। কারো ড্রয়ির রুমে বসার পরেও সতর্ক থাকি। ভুল কিছু করলাম না তো!
- এক হাটু কাঁদা ভেঙ্গে রাস্তা দিয়েই যাই। শর্টকাট মেরে কোন দোকানের কোনা দিয়ে পার হয়ে যাইনা।
তবে -
একটা কষ্ট কোথায় যেন মনে ঘিন্না পর্যায়ে চলে যায়। কেবল মনে হয়, একটু সুন্দর করে কি কথাগুলা বলা যেতনা?
-০-
আমি যাদের সাথে চলি, যাদের সাথে কাজ করি। তারা বলতে পারবেন আমি কারো ভুল কতটা সুন্দর করে ধরিয়ে দেই আর কতটা নির্মম ভাবে।
কাউকে শিক্ষা দিতে গেলে তার ধরণটা যেন সুন্দর ও মজার হয়। চড় মেরে মৃত্যু থেকে ফিরানোরও মানে হয়না।