somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা অপরাধবোধের কথা স্বীকার করি

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা অপরাধবোধের কথা স্বীকার করি। সেই দিনের পর থেকে ঘটনাটা ভুলতে পারতেছি না। লেখালেখি করার একটা সুবিধা আছে। ঘটনা লেখে ফেলার পর একটা শান্তিবোধ কাজ করে - যাহ ঘটনা এখন আমার মাথাতেই শুধু না, পাঠকের মাথায়ও দিয়া দিলাম। এতে ভারটা কিছুটা কমে...

ধোলাইরপাড় দাঁড়ায়ে আছি রিক্সার জন্য। একটু দূরেই দেখি তিন, চারজনের একটা জটলা। কিছু একটা ঝামেলা হচ্ছে। আগায়ে গেলাম। গিয়া দেখি ১০/১২ বছরের একটা ছেলে, হাত পা চরমভাবে ছোটাছুটি করতেছে। কোরবানীর সময় পশু যেমন প্রাণপনে বাঁচতে চায় ঠিক এমন করে। নাহ এমন করেও না, আরো করুণ ভাবে। পশুতে কাঁদে না, ছেলেটা গলা ফাটায়ে চিল্লাইতেছিলো
- আমি যামু না... না... যামু না...।

চিল্লান দিয়া চিত্রা দিয়া বাঁকা হইয়া উঠে। দুইজন লোক তারে ধইরা রাখছে। কনসার্টের সময় মাঝে মাঝে দেখা যায়, শিল্পি ষ্টেজ থেকে জাম্প দিয়া দর্শকদের উপর পড়ে। দর্শকরা তারে হাতে লুইফা নেয়। ছেলেটা ঠিক এমন কইরা হাত পা ছুইড়া শূন্যে উইঠা যাচ্ছে। আবার এই দুইটা লোকের হাতে বন্দি হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না। পাশে দুই, তিন জন দেখি দাঁড়ায়ে মজা দেখতেছি, কিছুই বলতেছে না। এরই মধ্যে ছেলেটারে জোর কইরা ধইরা রিক্সায় উঠানো হইলো। দুইজন লোক রিক্সায় বসছে, তাদের কোলের উপর পোলাটারে শোয়াইলো। পিচ্চি ছেলেটা হাত পা ছুইড়াই যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে এমন ভাবে একটা ডিলকানি দিলো ছেলেটা! মাথাটা গিয়া লাগলো রিক্সার হুডে। প্রচন্ড ব্যথায় ছেলেটা একটু চুপ মাইরা গেলো। এখন গোঙ্গানীর মত শব্দ করতেছে।

আমি এতক্ষণ কাউরে কিছু জিজ্ঞাসা করারও সুযোগ পাচ্ছিলাম না। রিক্সার লোকটারে বললাম
- কী হইছে ভাই! ঘটনা কী??
লোকটা বিরক্ত হয়ে বললো, মাদ্রাসা থেকে পালায়ে আসছে। হাফেজিয়া মাদ্রাসা।
তারপর রাজ্যের বিরক্ত নিয়া বললো
- ও ভাবছিলো ওরে আমি আদর কইরা ঘরে খাইতে দিমু। সাথে সাথে বাসা থেইক্যা বের কইরা আনছি। মাদ্রাসায় নিয়া দিয়া আসতাছি। হুজুররে কমু দরকার হইলে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখেন।

পাশের লোকজন সবাই সম্মতির স্বরে মাথা ঝাকাইলো। একজন বললো
- শয়তান, সব শয়তানের আছড়। হাফেজিয়ার এক ছাত্রর পিছে সাত শো শয়তান লাগে, যেন সে হাফেজ হইতে না পারে।

সকলের সম্মতি নিয়া, ফুলের মত শিশুটারে আমার সামনে দিয়া রিক্সা দিয়া নিয়া গেলো। ছেলেটার হয়ত মাথা হয়ত ফেঁটে গেছে। দুই লোকের কারোই এই দিকে নজর নাই। ব্যথায় নিস্তেজ হয়ে যাওয়াটাই হয়ত তাদের কাছে শয়তান বস মানার লক্ষণ মনে হইছে।

ধর্ম নিয়া ভালো, মন্দ কিছুই বলা যায় না এই দেশে। ধর্ম নিয়া বানায়া বানায়ে যদি ভালো ভালো মিথ্যা গল্পও বলি, মানুষজন তা মুগ্ধ হয়ে শুনবে। এবং এই মিথ্যা গল্প নিয়া কেউ প্রতিবাদ করলে, বিনা চিন্তায় ঘাড় থেকে কল্লা নামায়ে ফেলবে। এতে কারো কোন পাপবোধতো হবেই না, উল্টা শান্তি পাবে যে নাহ বেহেস্তের টিকিট পাইলাম।

আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারলাম না। একটাবারও বলার সাহস পাইলাম না, ভাই আপনি কি আসলেও তার পরিবারের কেউ? নাকি আপনি ছেলে ধরা? একটা বারও বলার সহস পাইলাম না, ভাই ও কেন যাইতে চায় না একটু শুনেন। হয়ত মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে যৌন হয়রানী করতেছে। আজকালতো খুব প্রকাশ পাচ্ছে এইসব জিনিস। নিষ্পাপ শিশুরা এইসব লজ্জায় বলতে পারে না। দেখেন না ভাই, একউ খোঁজ নেন ওর সমস্যাটা কোথায়?

আমি কিছুই বলতে পারলাম না, আমি কিছুই করতে পারলাম না। পশু কোরবানী দেওয়ার সময় মায়া হয়। আর এই ঘটনাটায় আমার কেবলই মনে হয়, আমার সামনে একটা শিশুকে কোরবানী দেওয়া হইলো, হাত পা ছুড়ে ছেলেটা বলতে চাইলো, সেইভ মি...। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। কিচ্ছু না।

কোন দিন যদি পত্রিকায় পড়ি, ঐ কাহিনী করে আসলে ছেলে ধরা তারে নিয়া গেছিলো। পরে ছেলেটারে মাইরা ফালানো হইছে, তখন? :(
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×