somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আ মরি বাংলা ভাষা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ভাষায় আমার ভালোবাসা আছে, তবে আশা নাই। মাত্র হাজার বছর আগেই এই বাংলা ছিলো আজের এই বাংলা থেকে হাজারগুন দূরের অপরিচিত সব শব্দ। তাও তা লেখা হতো নাগরি হরফে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর উদ্ধার করা নেপালের তালপাতায় লেখা চর্যাপদতো তাই বলে!

চর্যাপদের সবচেয়ে বেশী পদ লেখা কবি কাহ্নু পা'কে কজন মনে রেখেছে? এখন যদি বলি একটা সময় বাংলা ভাষা ছিলো এমন-
কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল/ চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল (চর্যাপদের প্রথম পদ), কে বিশ্বাস করবে!

এখন যেমন এই দেশে ৯০% অহংকারী একটা গোষ্ঠি আছে। একটা সময় এমন অহংকারী গোষ্ঠি ছিলো হিন্দু সমাজের ব্রাহ্মণ্যরা। তাদের অত্যাচারে নিরীহ বৌদ্ধরা নেপাল, ভূটান, তিব্বতের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলো। এই বৌদ্ধের ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়া বুদ্ধিরই ফল হলো লিখিত এই চর্যাপদ।

ভাষা হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশ করার কতগুলা আওয়াজ। এই আওয়াজগুলাকে লেখে রাখার জন্যই বর্ণের আবিষ্কার। কোথায় যেন পড়েছিলাম বাংলা বর্ণগুলাও বৃটিশ কোন ইংরেজের তৈরী করে দেওয়া। ডিটেইল কেউ জানলে আমাকে শুধরে দিবেন প্লিজ।

ভাষা বাস্তবতায় খুব ধীরে ধীরে বদলে যায়। ফ্যান, চেয়ার, মোবাইল, কম্পিউটার, পানি, রোযা, খোদা এইসব যে অন্য ভাষা, তা আমাদের মনেই হয় না! তাই ভাষা নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে আমি কখনোই খুব কঠিন অবস্থানে থাকি না। টুকটাক হিন্দি পারলে ভারতীয়দের সাথে হিন্দিতে বলি। চায়নিজ বন্ধুদের সাথে দেখা হলে "নি হাউ মা?" বলি। নিজের ভাষা শুনতে কার না ভালো লাগে? আর নিজের ভাষাই আস্তে আসতে অন্য ভাষায় সমৃদ্ধ হয়। আবার হারিয়ে যায় কিছু শব্দ খুব ধীরে।

একসময় আমাদের বাংলাভাষার আকাশ খোদ রবীন্দ্রনাথও হয়ত হারিয়ে যাবেন, সবচেয়ে বেশী পদ লেখা বৌদ্ধ কবি কাহ্নু পা'র মত। কবিগুরু নিজেই লেখে গেছেন-

আমার কীর্তিরে আমি করি না বিশ্বাস।
জানি, কালসিন্ধু তারে
নিয়ত তরঙ্গঘাতে
দিনে দিনে দিবে লুপ্ত করি।

অবশ্য শেষে বলেছিলেন -
এ বিশ্বেরে ভালোবাসিয়াছি।
এ ভালোবাসাই সত্য, এ জন্মের দান।
বিদায় নেবার কালে
এ সত্য অম্লান হয়ে মৃত্যুরে করিবে অস্বীকার।

অতএব ভালোবাসাটাই থাকবে, যার শক্তিতে মৃত্যুকেও অস্বীকার করা যায়। খটমট লেখা আর বড় না করি, এই লেখার পাঠক থাকার কথা না। শেষ করি চর্যাপদের একটা কবিতা দিয়ে। প্রমের রসালো কবিতা। সেই আমলেও ছিলো ;)

উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।
উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহাডা তোহৌরি।
ণিঅ ঘরনি ণামে সহজ সুন্দারী।।
ণাণা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেলি ডালী।
একেলী সবরী এ বণ হিণ্ডই কর্ণ কুণ্ডলবজ্রধারী।।

(পদ ২৮, অর্থাৎ – উঁচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে। তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জামালিকা। নানা তরু মুকুলিত হলো। তাদের শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত হলো। শবর-শবরীর প্রেমে পাগল হলো। কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও উদ্দাম। শয্যা পাতা হলো। শবর-শবরী প্রেমাবেশে রাত্রিযাপন করলো।)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫১
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×