somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যান্দামারা পুরুষ

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অহনার বিয়ে ঠিক হয়েছে পারিবারিকভাবে। পাত্রের নাম আশিক। আশিক সব দিক দিয়েই অহনার মানানসই। তবুও বিয়েটা আধুনিক যুগের দুই শিক্ষিত তরুণ তরুণীর। তাই দুই পরিবারই চায় দুজনে একটু নিজেদের চিনুক জানুক। যথাসময়ে যথানিয়মে অহনার সঙ্গে আশিকের দেখা হওয়ার দিন ঠিক হয়। নির্দিষ্ট দিনে অহনা দুরুদুরু হৃদয়ে অপেক্ষা করে। আশিক আসে। জিন্সের প্যাট ও পাঞ্জাবি পরা। একহারা লম্বা গড়ন আর চশমার আড়ালে গভীর দুই চোখ। আশিককে ভালোই লাগে অহনার। যুগের নিয়মে প্রাথমিক জড়তা কাটতেও তেমন সময় লাগে না। কফি শেষ হওয়ার মাঝেই আপনি তুমিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় অজান্তেই।
এখন কোথায় যাবে? অহনা প্রশ্ন করে।
ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। আজ মনে হয় সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখাবে। আমার খুব প্রিয়। চল দেখে আসি। আশিক উত্তর দেয়।
দুজনে রিকশায় রওনা হয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেস অভিমুখে। ঢাকার রাস্তার জঘন্য জ্যাম আজকে খারাপ লাগে না। দুজন টুক টুক করে কথা বলতে থাকে। অবশেষে রিকশা পৌঁছায় গন্তব্যে। আশিক রিকশাওয়ালাকে বিশ টাকার একটা নোট দেয়। ভাড়া যদিও ঠিক করে ওঠেনি,
তবুও এতটুকু পথের ভাড়া বিশ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

এইটা কি দিলেন স্যার। ধূর্ত রিকশাওয়ালা আর্তনাদ করে বলে ওঠে।
কেন? এতটুকু পথের ভাড়া এর চেয়ে বেশি হবার তো কথা না। আশিক বলে।
না স্যার। ভাড়া চল্লিশ টেকা। আমাকে চল্লিশ টেকাই দিতে হবে।
আশিক আর কোনো কথা না বলে রিকশাওয়ালাকে চল্লিশ টাকাই দিয়ে দেয়। অহনা অবাক হয়।
তুমি কিছু না বলে ওই বদমাশ রিকশাওয়ালাকে অন্যায্য ভাড়া দিয়ে দিলে? অহনা জিজ্ঞেস করে।
ওরা গরিব মানুষ। আমাকে অল্প ঠকিয়ে ওরা যদি একটু ভালো থাকে তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। আশিক বলে।
অহনা বিরক্ত হয়। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। সিনেমার টিকিট কাটতে গিয়ে আশিকের চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। ওর অন্যতম প্রিয় ছবি পথের পাঁচালি দেখাবে আজ। অহনা ততটা খুশি নয়। গল্প যতই ভালো হোক, জম্পেস নাচগানবিহীন একটা সাদা কালো ছবি তিন ঘণ্টা যাবৎ দেখা কষ্টকর হওয়ারই কথা। অহনা তবুও মুখে হাসি ধরে রাখে। ছবি শুরু হয়। আশিক সবকিছু ভুলে তন্ময় হয়ে ছবি দেখে। অহনা অবাক হয়ে আশিককে দেখে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ যে ছবি দেখে কাঁদতে পারে এটাই অহনার আগে জানা ছিল না। দুর্গার মৃত্যুদৃশ্যে আশিকের আবেগী কান্না দেখে অহনা অবাক এবং হয়তো একটু বিরক্ত হয়। পুরুষ মানুষ এ রকম হাপুস নয়নে কাঁদছে দেখতে কেমন যেন লাগে।
বাসায় ফেরা মাত্রই ছোট খালা অহনাকে পাকড়াও করে।
কিরে কেমন লাগল? ছোট খালা প্রশ্ন করে।
ভালোই। অহনা ছোট উত্তর দেয়।
এ রকম শুকনো ভাবে বলছিস কেন? তোর যদি পছন্দ না হয় তবে কষ্ট করে হ্যাঁ বলতে হবে না। দুলাভাইকে আমি আগেই বলে রেখেছি। তোর পছন্দের বাইরে কিছুই হবে না। ছোট খালা আশ্বাসের সুরে বলেন।
না মানে...আশিক ভালোই তবে কেমন যেন। খুবই নরম।
স্টার সিনেপ্লেক্স। সংগৃহীত ছবিবুঝেছি। ম্যান্দামারা পুরুষ। তোকে আর কিছু বলতে হবে না। ম্যান্দামারা পুরুষ আমি দুই চোখে দেখতে পারি না। তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি দেখছি। ছোট খালা বলেন।
অহনাকে আসলেও আর কিছু বলতে হয় না। আশিকের সঙ্গে বিয়েটা ভেঙে যায়।
ছয় মাস পরে আবার অহনার বিয়ের কথাবার্তা চলে। ছেলের নাম সাদমান। আগের মতোই সাদমানের সঙ্গে দেখা করতে যায় অহনা। জিন্স, টিশার্ট আর দামি সানগ্লাসে সাদমানকে দারুণ স্মার্ট লাগে অহনার। খাবারের পর সাদমান বলে চল Avatar মুভি দেখি। অহনা খুশি মনেই রাজি হয়। রিকশায় করে বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সের দিকে রওনা হয়।
এই যা সিগারেট নাই একটাও। সাদমান বলে।
এই যে রিকশাওয়ালা ভাই। একটা দোকানের সামনে একটু দাঁড়াও। সাদমান বলে।
রিকশা থামে। সাদমান সিগারেট কিনতে নেমে যায়। খুচরা টাকা না থাকায় সিগারেট কিনতে অনেক সময় চলে যায়।
আমি কিন্তু সব সময় সিগারেট খাই না। খুব মন ভালো লাগার সময়গুলো আমি সিগারেট খেয়ে সেলিব্রেট করি। তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই সিগারেট খাচ্ছি। হাসিমুখে সাদমান বলে। অহনা একটু বিরক্ত ছিল। সাদমানের কথায় বিরক্তি উধাও। ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মন। রিকশা গন্তব্যে পৌঁছায়। সাদমান বিশ টাকা দেয় রিকশাওয়ালাকে।
স্যার আরও দশটা টেকা দেন। রিকশাওয়ালা বলে।
কেন। ঠিক ভাড়াই তো দিয়েছি। বেশি দেব কেন? সাদমান বলে।
ভাড়া ঠিক দিছেন সেইটা ঠিক আছে। কিন্তু স্যার সিগারেট কিনতে যাইয়া আপনি তো আধা ঘণ্টা নষ্ট করলেন। ওই সময়ে আমি আর একটা খ্যাপ দিতে পারতাম।
যদি জ্যামে আটকাইয়া সময় নষ্ট হইত তাহলেতো টাকা চাইতা না। সাদমান উত্তেজিতভাবে বলে।
স্যার এত কথার দরকার কি। গরিবরে দশ টাকা দিলে আপনার লোকসান হইত না।
না। আমি আর এক টাকাও দেব না।
যান যান। পারেনতো শুধু আমগো লগে। গরিবের টাকা মাইরাইতো আপনার মতো লোকেরা ভদ্রলোক হয়। রিকশাওয়ালা তীব্রভাবে বলে।
হঠাৎ সাদমান উত্তেজিত হয়ে রিকশাওয়ালাকে একটা চড় দেয়। মার্কেটের সিকিউরিটির লোক এসে যাওয়াতে ব্যাপারটা অল্পতেই শেষ হয়। হঠাৎ কেন জানি আশিকের কথা মনে হয় অহনার।
এই সব ছোট লোকদের এইভাবেই শায়েস্তা করতে হয়। সাদমান বলে।
ব্যাপারটা ভালো না লাগলেও সাদমানের বলিষ্ঠ পুরুষালি উপস্থিতি স্বস্তি দেয় অহনাকে। সব বোধ ছাপিয়ে নিরাপত্তাবোধই প্রবল হয়। সাদমানের সঙ্গে ছবিটা দেখতেও খুব ভালো লাগে অহনার।
বাসায় ফিরলে আবার ছোট খালা পাকড়াও করে।
কেমন লাগল?
ভালো। বেশ ভালো। অহনা উত্তর দেয়।
এ আবার ম্যান্দামারা নাতো? ছোট খালা জিজ্ঞেস করেন।
নাহ। পুরাই উল্টা। অহনা হাসতে হাসতে উত্তর দেয়।
যথাসময়ে অহনার বিয়ে হয়ে যায় সাদমানের সঙ্গে।
অনুভূতিপ্রবণ সংবেদনশীল মানুষগুলো সমাজে সব সময়ই ম্যান্দামারা, ভিতু কিংবা মেয়েলি পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ আর আশ্চর্য কি? এ জন্যই কি সমাজে আশিকের মতো মানুষেরা বিলুপ্ত প্রায় হতে চলেছে? মানুষের ভেতরের মানুষটা প্রাচীন গুহামানব থেকে আসলে ঠিক কতটা এগোল জানতে ইচ্ছা করে...।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×