ব্লগে জয়েন করবার পর খেয়াল করলাম ‘বানান ভুল’ বিষয়টাকে আমি খানিকটা শিল্পের পর্যায়েই নিয়ে গেছি। জানেন… আম্মুর কাছে ছোটবেলায় প্রচুর পিটানি খাইছি এটার জন্য। আর এখন শতকরা ৭০ ভাগ পোষ্টেই বিভিন্ন ব্লগার ভাই বোন আমাকে উপদেশ, হুমকি কিংবা আদর করে ফ্রেন্ডলি ওয়ার্নিং দিয়ে যাচ্ছেন আমাকে বানানের ব্যাপারে সতর্ক হবার ব্যাপারে। ফেসবুকে লিখতাম আগে … সেখানেও এই ভুলটা প্রায়শই হতো। কিন্তু সেখানে আমাকে কেউ ওয়ার্নিং দিলে আমি উত্তর দিতাম জানেন ? ‘আমি যদি লেখক হই তবে পয়সা দিয়ে পার্সোনাল ‘প্রুফ দেখিয়ে’ রেখে দিব … ’। কিন্তু এমন উত্তর কখনো ব্লগে দিতে পারিনা। একটা সত্যি কথা বলতে কি, ব্লগে আসার পর থেকে ব্লগারদের প্রতি আমার রেস্পেক্ট কয়েকশত গুন বেড়ে গেছে। কারন এখানে সবাই লেখক, এখানে সবাই আমার মত তাদের মাথা থেকে প্রতিটা শব্দ নিংড়ে নিংড়ে বের করে আনে, এখানে সবাই ক্রিয়েটিভ। আগে কিছু ব্লগারদের কর্মকান্ড কিংবা লেখনী পড়ে আমার ভীষন রাগ হতো … কিন্তু ঠিক সেরকমই লেখা যদি আজ আমি সামুতে পড়ি খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সত্যি বলতে আমার সহনশীলতাও অনেক অনেক বেড়ে গেছে … উলটা পালটা কোন লেখা পড়লে বারবার মনে হয় সে ও তো আমার মত একজন ব্লগার। আমরা একই কম্যুনিটির মানুষ। সে তার নিজের মতাদর্শ প্রকাশ করতেই পারে… আমারও তো কোন একটা আদর্শ থাকতে পারে যেটা তার কাছে ভালো লাগবে না। তাই আমার ভালো না লাগলে আমি মাউস কিংবা ফোনের ক্রলবার ঘুরিয়ে নিচে চলে যাব। কারন কারো মৌলিক আদর্শগত বিষয়ে তর্ক করতে আমার ভালো লাগে না, তার তাতে ‘বৈরীতা’ ব্যাতিত কোন ভালো ফল পাওয়া যায় বলেও আমার মতে হয়না।
যাই হোক বানান ভুল থেকে বেশ দূরে চলে গেছি … হি হি হি। আমি কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা খারাপ ছাত্র নই (বুকে থাবড়ানি দেওয়ার ইমো )। সেকেন্ডারী ও হায়ার সেকেন্ডারী মিলিয়ে আমি শুধু এইচ.এস.সি র বাংলাতেই এ+ পায়নি (হাউমাউ করে কান্নার ইমো)। কাজেই , নুন্যতম ব্যাকরনটুকু আমার জানা। কিন্তু আমার কিছু ব্যক্তিগত মতাদর্শ আছে। যেমন, যে দু’একটা বাক্যই লিখিনা কেন …আমি সবসমই জোর দিই আমার এক্সপ্রেশানের ব্যাপারে, মানে আমি যতটুকু কল্পনা করছি তার কতটুকু আমি আমার ভাষায় এক্সপ্রেস করে নিজেকে স্যাটিসফাই করতে পারছি। আমার কাছে আমার একটা লেখার স্বার্থকতা এতটুকুই। আমার বন্ধুর সংখ্যা খুবই কম, খুবই লোনলি মানুষ … কিছু বলতে ইচ্ছে হলে আমি সেটা সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে ফেলার চেষ্টা করি। যতক্ষন আমি সেটা না লিখব ততক্ষন আমার ভিতরে কেমন জানি একটা চাপ থাকে, আর লেখা শেষ হলেই সেটা সাথে সাথে পোষ্ট দিয়ে দেই। কেন জানি তর সয় না যে কয়েকবার রিভিশান দিয়ে ভুল গুলো ফাইন্ড আউট করব। আর তাছাড়া আমি কেন জানি নিয়ম কানুনকে খুবই ঘৃণা করি। আমার ব্লগে ঢুকলেই দেখবেন বাদল সরকারের নিয়ম মানা না মানার ব্যাপারে একটা উক্তি লেখা আছে। কেন জানি মনে হয় নিয়ম-কানুন গুলোকে আমার স্বাধীনতা খর্ব করার জন্যই বানানো হয়েছে। তাই অন্যান্য নিয়মের মত ব্যাকরনেও আমার এলার্জি আছে… মাঝেমাঝে মনে হয় এই বানানটা ভুল না ঠিক এটা ভাবতে ভাবতে কেন জানি আমার লেখার ফিলিংটাই হারিয়ে ফেলছি।
কিন্তু আরেকটা মজার কথা এখানে বলি। ব্লগে আমি এত্ত বানান ভুল করি… কিন্তু একাডেমিক লাইফে আমি কতটা একুউরেট এটা আপনাদের কল্পনাতেও আসবে না। আমি খুলে বলছি … আমার সাবজেক্ট কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রোগ্রামিং এর কাজে কিংবা সফটওয়্যার ডেভেলেপমেন্ট এর কাজে আমাকে প্রচুর কোড লিখতে হয়। কোড বলতে আমি বোঝাচ্ছি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজকে। কখনো কখনো একটা প্রোজেক্ট্রে লাইনের সংখ্যা কয়েক হাজার হয়ে যায়। ওতগুলো লাইনের মধ্যে একটা শব্দের বানান ভুল তো দূরে থাক, একটা সেমিকোলন ভুল করলেও আমার চলে না। যদি করি আমাকে Error দেখাবে আর প্রোগ্রামটা রান করবে না। সো এতটাই নির্ভুল হওয়া লাগে !!! এই আকাশ পাতাল তারতম্যের ব্যাপারটা মনে করলে আমারই হাসি পায়।
আমি নিয়মকানুনকে অত্যন্ত ঘেন্না করি… আমারে যদি আপনি কাচা কঞ্চি দিয়া পিটানও আমি তাহলেও এই কথাই বলব। কিন্তু রেস্পন্সিবিলিটি অন্য জিনিস… সামু যখন আমাকে লেখক উপাধি দেয়, সেখানে আমার রেস্পন্সিবিলিটি ও কিছুটা থেকে যায়। মাঝে মাঝেই দেখি কোন কোন ব্লগার ভাই তাদের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেন, কেউ কেউ তাদের লেখা কলামের ছবি দেন… আমি তখন প্রায় নিজেকে আস্ক করি “ক্যান ইউ ইমাজিন ঋকি, তুমি কাদের সাথে আছ ??”। তখন প্রায় খারাপ লাগে নিজের অসতর্কতার জন্য। তবে আমি আশাবাদী যে আপনাদের মত জ্ঞানী গুনী মানুষদের আশে পাশে যখন আছি… বকা, ঝাড়ি খেয়ে হলেও একদিন ঠিক নিজেকে শুধরে নিতে পারব। ইনশাল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩