somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যপোষ্টঃ লাইফপার্টনার হিসেবে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার (Pros and Cons) :D

১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনে বহু জিনিসের Pros and Cons লিখেছি… ওয়াটার ফল মডেল, বিভিন্ন সর্টিং এলগরিদম, সার্চিং এলগরিদম…ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু টপিক দেখেই বুঝতে পারছেন আজ ব্যাপারটা মোটেও আগের গুলার মত নয়। ‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর সাথে আমিও আড়াই বছরের বেশি জড়িয়ে আছি। সেখান থেকে কিছু তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য।

=>১)অস্বাভাবিক দ্রুত রিপ্লাইঃ ছেলেটা প্রোপোজ করবে করবে এমন ভাব ? আপনাকে পটানো চেষ্টা করছে ? ফেসবুকে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে আপনার সাথে ? আচ্ছা … ছেলেটা কি কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ? তাহলে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি আপনি তার প্রেমে না পড়লেও তার টাইপিং স্পীডের প্রেমে যাবেন। আপনার মেসেজ সীন হবার সাথে সাথেই রিপ্লাই এসে যাবে। যদিও বাস্তব এটাই যে এযুগে টাইপিং স্পীড কিংবা ইন্টারনেট স্পীডের মত উপাদানও ভালোবাসার গাড়ত্ত্বের ক্রাইটেরিয়া হতে দাড়িয়েছে… সুতরাং আপনি যদি সেই মাইন্ডেড হন তবে ছেলেটা আপনার জন্য পারফেক্ট। আর অসুবিধেও আছে এক্ষেত্রে … ছেলেটা এট আ টাইমে আপনার মত কয়েকটা মেয়েকে চ্যাটিং এর ক্ষেত্রে হ্যান্ডেল করতে পারবে। বলাই বাহুল্য যে সেটা তার টাইপিং স্পীডের বদৌওলতেই।

=>২) ভালোবাসার ক্ষেত্রে ‘উদারনীতি’ অবলম্বনঃ কম্পিউটার সায়েন্সের একটা স্টুডেন্ট যখন ১৬৫-১৭০ ক্রেডিট পড়ে গ্রাজুয়েশান কম্পলিট করে তখন তাকে কিন্তু প্রচুর নন-ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্ট পড়ে বের হতে হয়। এই ধরুন কেমিস্টি… কিংবা একাউন্টিং, মার্কেটিং বা সোস্যোলজি, ইকোনোমিক্স। সিজিপিএর স্বার্থে বেচারা এক সময় বুঝতে শিখে যে ভালোবাসাকে ভালোবাসার জিনিস গুলার দিকে কেন্দ্রীভূত করে রাখবার মধ্যে কোন কৃতিত্ত্ব নেই, বরং এটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে নন-ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্ট গুলার দিকেও। তাই আপনার পাশাপাশি সে অন্য ‘নন-ডিপার্টমেন্টাল’ কাউকেও সমান ভাবে ভালোবাসতে পারবে। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার সতর্কতা একান্ত কাম্য। কারন ‘ডিপার্টমেন্টাল’ ও ‘নন ডিপার্টমেন্টাল’ একসাথে হ্যান্ডেল করে অভ্যস্ত।

=>৩) আপনার বাবার সামনে প্রথমবার তাকে উপস্থাপনঃ আপনার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার প্রেমিককে যখন প্রথমবার আপনার বাবার সামনে নিবেন, আপনি তার উপরে ভরসা রাখতে পারেন। “চৌধুরী সাহেব… আমরা গরীব হতে পারি, তবে ছোটলোক নই”- ডায়ালগটা দিয়ে ওমর সানী যেভাবে অমর হয়ে গেছেন হয়ত আপনার বয়ফ্রেন্ড সেভাবে অমর হবেন না, তবে গ্যারান্টী দিতে পারিনা উনি সিচুয়েশান খুব ভাল মতই হ্যান্ডেল করতে পারবেন। কেননা ৮ খানা সেমিষ্টার জুড়ে অসংখ্যা ভায়ভা তাকে ফেস করতে হয়েছে… অনেক প্রশ্নই এসেছে যেগুলার প্রস্তুতি তার ছিলনা। কিন্তু সে ব্যাচারা কোন না কোন ভাবে ম্যানেজ করে এসেছে… তাই তার উপরে ভরসা রাখুন, সে আজও পারবে।

=>৪) অফিস শেষে রোমাঞ্চের কথা ভুলে যানঃ যদি আপনার জীবনসংগী কোন সফটওয়্যার ফার্মে জব করে সেক্ষেত্রে তার কিছুটা প্রভাব আপনার দাম্পত্য জীবনেও পড়তে পারে। একটা সফটওয়্যার ডেভেলপ করবার জন্য কি পরিমান কোড লিখতে হয় তার কোন আন্দাজ আছে আপনার ? আসলে ঐ প্রোগ্রামারের নিজেরও আন্দাজ থাকেনা যে সে কত হাজার লাইন লিখে ফেলল। কিন্তু ঝামেলা এখানেই শেষ না … কখনো কখনো সামান্য একটা লাইনে ভুলের জন্য ৫৩৭ লাইনে ভুল দেখায়। এটা খুব সিম্পল প্রব্লেম প্রোগ্রামারদের জন্য। এর চেয়েও খতরনাক খতরনাক প্রব্লেমে তাদের সারাদিন পড়তে হয় এবং সেখান থেকে নিজেদেরকে বেরও করতে হয়। তাই সারাদিনের এমন ঝামেলা শেষ বাসায় ফেরার পর যদি আপনি তাকে রোমান্টিক মুডে আশা করেন তবে সেটা হবে আপনার চরম একটা ভুল। তবে হ্যা … ছুটির দিনটা আপনার হাতে থাকছে, তাতেই পুষিয়ে নিতে পারবেন আশা করি।

=>৫) অলসতা যখন আশীর্বাদঃ আপনার উনি যদি অলস হন তবে তাকে মূল্যায়ন করবার আগে কিছু ব্যাপার শুনে নিন। একবার বিল গেটস খানিকটা এমন বলেছিলেন যে উনি কোন কঠিন কাজ করবার জন্য বেছে নেবেন একজন অলস ব্যাক্তিকে। কারন অলস ব্যাক্তিটাই ঐ কঠিন কাজটা সহজে করবার কোন না কোন একটা উপায় বের করবেই। আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনা বলি… আমি তখন ফার্ষ্ট সেমিস্টারে। প্রোগ্রামিং এ একেবারেই নতুন। আমাকে একটা প্রোগ্রাম করতে হয়েছিল এনক্রিপশানের। আমি প্রায় ২৬ লাইনের মত কোড লিখেছিলেন। অথচ আরেকটু শেখার পর জানতে পেরেছিলাম ঐ ২৬ লাইনের কাজ মাত্র তিনলাইনে করা সম্ভব ছিল !!! তাই কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের কেউ অলস হলেও তাকে মূল্যায়ন করবার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হউন। হ্যা … অবশ্য তাকে দিয়ে যদি আপনি শুক্রবারের বাজার, প্রতিদিন সকালে বাচ্চার স্কুল, রাতে ফেরার সময় আপনার ব্যাক্তিগত আবদার ইত্যাদি দিয়ে মূল্যায়ন করেন তবে আমি চেপে যাচ্ছি। দায়দায়িত্ত্ব আপনার।

=>৬) অন্যান্য টুকিটাকিঃ একজন সিএসই ছাত্রকে আপনি প্রচুর প্রেসারে রাখতে পারবেন… যতটা না আপনার প্রেসার কুকার সহ্য করে ততটা ও ঐ বেচারা সহ্য করেনিবে। তাকে একটা কাজ দিয়েছিলেন ৩ দিনে করবার জন্য ? সে ভুলে গেছে ? আর মাত্র এক ঘন্টা আছে ? বিশ্বাস রাখুন ঐ বেচারার উপর, ঐ তিন দিনের কাজ ও এক ঘন্টাতেই করে দেখাবে। বিশ্বাস না হলে তার অতীত চেক করুন… অনেক এসাইন্মেন্ট, ল্যাব রিপোর্ট, প্রোজেক্ট সে এভাবেই কম্পলিট করেছেন। আপনার লাইফ পার্টনার যদি ওয়েব ডেভেলপার হন তবে তো আর কথাই নেই… রঙ ম্যাচিং এর ক্ষেত্রে তার থাকবে অসাধারন পারদর্শিতা। অনেক ওয়েব সাইট ডিজাইন করে করে অভ্যস্ত সে, সুতরাং শপিং এ গিয়ে কালার নির্বাচনটা তার হাতে ছেড়ে দিতে পারেন নিঃসন্দেহে। তবে হ্যা … যদি আপনার পার্টনার নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর হন তবে ভুলেও পরকীয়ার কথা কল্পনা করবেন না। কারন সারাদিনে হাজার হাজার কানেকশান ট্রেস করে উনি অভ্যস্ত… সেখানে আপনি তার আশেপাশে থেকে কোন নিষিদ্ধ সিস্টেমে কানেকশান স্টাবলিশ করবার চেষ্টা করলে নির্ঘাত ধরা খাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। মেকাপে বেশি সময় নিবেন না… উনি নিজে অলস হলেও প্রোগ্রামের এক্সিকিউটিং টাইমের দিকে বেশ খেয়াল রাখেন। নিজেকে প্রায় ভিন্ন ভাবে তার সামনে উপস্থাপনের চেষটা করুন… কারন ‘method overloading’ এ সে বেশ অভ্যস্ত। আর সর্বোপরি তাকে জুজুর ভয় দেখিয়ে শাসন করবার চেষ্টা করবেন না… অপারেটিং সিষ্টেমের সিডি তার ড্রয়ারেই থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:১৪
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×