somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠিকানার খোঁজে (২)

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"কি একটা দিন গেলো রে বাবা! উফফ!..."

বলেই রুমে ঢুকে ধপ করে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো ফাহিম, পরনের জামাকাপড়ের তোয়াক্কা না করেই। অয়নও কিছু বললো না, যে পরিমান কষ্ট একদিনের ল্যাবে করতে হয়, এরপর আসলে এরকম নিয়মকানুন মানার কথা বলাটা নিতান্তই নিষ্ঠুরতা। কিন্তু নিজে টা করলো না। টাওয়াল আর জামাকাপড় নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো। বাইরে থেকে এসে গোসল না করে কিছু করার কথা সে ভাবতেই পারে না...

গোসল করে এসেই টেবিলে বসে পড়লো। প্রতিদিনকার মত কিছু রুটিন কাজ সারতে হবে। প্রথমেই বাড়িতে মা কে ফোন দিতে হবে, সেই সুযোগে বাবা আর ছোট বোনটার সাথে কথা যেতে পারে। বাবাকে সবসময় পাওয়া যায় না। বেসরকারী চাকুরীজীবি, প্রতিদিন ঠিক সময়ে বাসায় ফেরাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে মায়ের সাথে কথা বলাটা মিস হয় না ।

সত্যি কথা বলতে প্রতিদিন মায়ের সাথে কথা বলতে তার খারাপই লাগে, বাড়িতে এত আদর যত্নে বড় হয়ে অভ্যস্ত অয়ন আজ হোস্টেলে থাকে। বাড়িতে নিজের যেকোন প্রয়োজন বাবাকে বলার সাথে সাথে মিটিয়ে নেয়া যেত, আর এখানে তার সবকিছুই নিজেকে ঠিক করতে হয়। সবচেয়ে বেশি মিস করে মায়ের হাতে খাওয়াটা। হোস্টেলের খাবার অখাদ্য না হলেও মায়ের সেই ভালবাসার স্বাদ থাকে না বলে খেতে গিয়ে মাঝে মাঝেই গলায় আটকে যায়। চোখে এক-দু ফোঁটা পানি চলে আসে কি না জানা নেই। মনে মনে তখন নিজেকে প্রবোধ দেয়, খুব বেশিদিন বাকি নেই, সামনের মাসেই ছুটিতে বাড়িতে যাবে। এতদিন হয়ে গেলেও নিজেকে এই জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে কষ্টই হয় তার...

-"হ্যালো মা..."
-"কিরে বাবা ভালো আছিস?"
-"হ্যা মা, তুমি কেমন আছো , রাতে খেয়েছো?"
-"এখন কি খাবো রে! মাত্র তো ৯ টা বাজে। তোর বাবা আসলে একসাথে খাবো। তুই খেয়েছিস বাবা?"
-"না , আরেকটু পরে খাবো"
-"দেরি করে খাস নে, শরীর খারাপ করবে। পরে পড়ালেখা ভালোমত করতে পারবি না। আজকে কলেজে সব পড়া পেরেছিস তো? স্যার কিছু বলেনি তো?"

প্রশ্নটা শুনে একটু হেসে দেয় অয়ন। সেই ছোটবেলার মত আজও মা তাকে পড়া পেরেছে কি না জিজ্ঞেস করেন। ক্লাস টু তে একবার পড়া পারেনি দেখে শিক্ষক মেরেছিলো, সেটা বাসায় এসে মা কে বলার পর থেকে প্রতিদিনই এই প্রশ্ন শুনতে হয়।

-"না মা। আজকেও সব পেরেছি। এখানে স্যাররা বকা দেয় না মা। তাঁরা খুব ভালো"
-"হু, আমার ছেলে ভালো হলেই সব ভালো। মন দিয়ে পড়াশুনা করিস বাবা। তোকে নিয়ে আমার আর তোর বাবার অনেক স্বপ্ন। তুই একদিন অনেক বড় হবি, আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবি, তোর বোন টাকে দেখবি । তোদের দুইজনকে সুখে দেখে মরতে চাই রে। পারবি না বাবা?"
-"পারবো, কিন্তু এসব মরার টরার কথা বলবা না তো, ভালো লাগে না"
-(একটু হেসে) "আচ্ছা বলবো না যা"
-"রাখলাম মা, পড়তে বসবো"
-"হ্যা হ্যা পড়তে বসে যা, কিন্তু নাওয়া খাওয়া ভুলিস না যেন। নিজের যত্ন রাখিস "
-"আচ্ছা মা । দোয়া কোরো।"
-"তোর জন্য দোয়া করবো না তো কার জন্য করবো? তোরাই তো আমার সব"

মায়ের শেষ কথাটা শুনে নীরবে ফোন রেখে দেয়। প্রতিদিন প্রায় একই রকম কথাই হয়, কিন্তু তার পরও মায়ের ছেলেমানুষী কথাবার্তা শোনার পর সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এই ভালোলাগার পাশাপাশি বদ্ধ ঘরে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। মায়ের আদরের ছায়া থেকে দূরে থাকতে তার খুবই কষ্ট হয়, কিন্তু কিছু বলে না, এসব তার নিজের মধ্যেই লুকানো থাকে।
রুমের চারপাশের একবার তাকালো,
দেয়ালে শেষ কবে যে রঙ করা হয়েছে তা দেখে আন্দাজ করার উপায় নেই। আসবাব বলতে দুটো করে বিছানা, টেবিল, চেয়ার আর একটা করে নিজস্ব ট্রাঙ্ক, যেখানে জামাকাপড় আর যাবতীয় জিনিসপত্র রাখা থাকে, ও হ্যা, দরজার পাশে একটা আলনাও আছে। ফাহিমের বিছানার পাশে একটা জানালা, কিন্তু সেটা খুললেই পাশের বিল্ডিংয়ের রান্নাঘর পড়ে বলে সারাদিন পর্দা দেয়া থাকে। সুর্যের আলো রুমটাতে প্রবেশ করতে পারে না, সারাদিন লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
পাশের বিছানায় তাকিয়ে দেখে ফাহিম বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওর মাথায় এখন কেউ বাড়ি দিলেও ঘুম ভাঙবে না। হয়তো ১১ টায় নিজে নিজেই উঠে যাবে, এরপর তার যা যা করার সে করা শুরু করবে। অয়নের সাথে তার রুটিন বা কাজ কর্মের খুব একটা মিল না থাকলেও পরীক্ষায় রেজাল্টে খুব বেশি পার্থক্য হয় না।

মোবাইলে এবার ফেইসবুকে লগ ইন করলো। কিছুক্ষন সময় এখানে ব্যয় করা তার কাছে দোষের মনে হয় না। কারন তার প্রায় সারাদিনই যায় পড়াশোনার পিছনে, এর মাঝে বিনোদন বলতে এটাই।
কোন নটিফিকেশন নেই। ইনবক্সে একটা মেসেজ, না দেখেও বলতে পারবে ওটা নীলার। গতরাতে অনেকক্ষন ওর সাথে মানবমনের জটিলতা নিয়ে তর্ক হয়েছিলো, শেষ দিকে অয়ন ঘুম আটকে রাখতে পারেনি দেখে তর্কে ইস্তফা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়, তারই পরিশিষ্ট বোধহয় এখন ইনবক্সে পাওয়া যাবে।
"tui onek shorol chinta koris re... grow up man, the world is a lot bigger than u can even imagine"
মেসেজের বন্যা আশা করেছিলো, সেখানে কেবল এই একটা কথা। অবশ্য নতুন না, "নাদান" উপাধিটা নীলার কাছ থেকেই পাওয়া। আধুনিক চিন্তার অধিকারিণী নীলার মতে জীবনের যেকোন সমস্যা মোকাবেলা করাই বেশি ভালো, সেখানেই জীবনের আসল মজা পাওয়া যায়, অন্যদিকে অয়নের দাবি, যতটুকু কম ঝামেলার মুখোমুখি হওয়া যায়, ততই ভালো। সমস্যা মানেই ঝামেলা, তার মুখোমুখি হবার সাহস করাটা তার কাছে বিলাসীতা, সময় নষ্টের বিলাসীতা...
কোন জবার না দিয়ে লগ আউট করে পড়তে বসে যায়, মাথায় অবশ্য মেসেজের কথাগুলো ছিলো। সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে, এখন যা করা উচিত তাই করতে হবে। পরাশোনা, আর নোট।


টিপিক্যাল একটা দিন চলে গেল, মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেয়া, কলেজে পড়ুয়া সাধারন একটা ছেলের মনে হয় এর থেকে বেশি কিছু আশা করাটা ভুল, আশা কখনো করেওনি অবশ্য...
টায়ার্ড লাগছিলো বলে বেশিক্ষন পড়তে পারলো না, ১১ টায়ই ঘুমিয়ে পড়লো । এবং তার ধারনা ভুল প্রমান করে ফাহিম তখনও গভীর ঘুমে। আজকে রাতে জাগার কোন সম্ভাবনা নেই।

আরেকটা দিন চলে গেলো, বয়ে চলে নদীর স্রোত আর মানুষের জীবন, ক্যালেন্ডার সে পরিবর্তনের সাক্ষী...


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×