somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“পাত্রী খোঁজের গাণিতিক তথ্য” এবং khobor24-এর কিছু নির্লজ্জ বেহায়া পুরুষতান্ত্রিক মিথ্যাচার

২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় পেপার-ম্যাগাজিন বিক্রির দোকানে কিছু ম্যাগাজিন দেখতাম। অর্ধনগ্ন দেশী নারী পোজের রঙিন কভার ওয়ালা ম্যাগাজিন। একটার নাম ছিলো অপরাধচক্র। ম্যাগাজিন খুল্লে নিউজপ্রিন্টের পাতায় পাতায় দেশ-বিদেশের অনেক যৌনসুরসুরী মূলক খবর মিলতো।

অনলাইনের এই যুগে এসব ম্যাগাজিন পাওয়া যায় কিনা কে যানে। তবে সমমনা ওয়েবসাইট পাওয়া যায় বৈকি। বিডিনিউজ২৪ বা বাংলানিউজের মত জনপ্রিয় সাইটের আদলে তৈরী হওয়া এসব সাইটের মধ্যে অন্যতম খবর২৪।




চোখের সামনে খবর২৪ এর জন্ম হওয়ায় অনেক কিছু জানি। ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে ছেড়ে দে শয়তান, তোর ঘরে কি মা বোন নেই? নামে। মজার মজার সব ছবি আর কয়েকটা দেশপ্রেমমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে ১৯০০০ মেম্বার পটিয়ে এই গ্রুপটা হঠাৎ করে খবর২৪ এর উদ্ভোদন রিলেটেড কথা বলা শুরু করে। এরপর কাজটা অনেক সহজ। ১৯ হাজার মেম্বারের কাছে খবর২৪ এর লিংক শেয়ার করা আর মাঝে মাঝে সূরসূরিওয়ালা ছবি পোস্টানো।











সম্প্রতি মডেল/অভিনেতাদের ডিভোর্স-পরকীয়া নিয়ে ঢালাও ভাবে বানোয়াট রিপোর্টিং করা শুরু করে খবর২৪। এমনকি কাকে নিয়ে রিপোর্টিং করবে সেই আহবান-ও জানায়!



তো একবার মেহেরজানের অভিনেত্রী শায়না আমিনের একটা ফেইক ন্যুড ফটো ছাপায় দেয় আর বলে "প্রভা,নোভা, চৈতি, তিন্নি এবং শখের পর স্ক্যান্ডালের আচড় লাগলো এবার শায়না আমিনের গায়ে।"। ফটোর নিচে আবার বলছে, "অনেকেই বলে ছবিটা ফেইক, কিন্তু এটা সত্যিকারের ছবি।" ;)


শায়না আমিন

আমি, ব্লগার কাঙাল মামা, দিনে এতগুলা স্ক্যান্ডাল সাইটে ভিজিট করি - এই মেয়ের কথা কোথাও পেলাম না খবর২৪ ছাড়া! এসব নিউজ ওরা বসে বসে বানায় নাকি? কমেন্টে প্রবল আপত্তির মুখে আধানগ্ন ছবিটা সরায় নেয় ওরা।

ওদের খবরের শিরোনাম গুলোর দিকে একবার চোখ বুলাই:

•ছাত্রীকে জোর পূর্বক বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারন!
•নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি রেখা
•আবারো আচঁড় শায়না আমিন, এবার স্ক্যান্ডাল
•সাধারন মেয়ে থেকে আবেদনময় চরিত্রে
•ব্যাপক খোলামেলা হয়ে আইটেম গানে আসছেন পূজা মিশরা
•আবারো ও ঘনিষ্ঠ চুমোদৃশ্যে ক্যামেরাবন্দি ইমরান হাশমি ও তনুশ্রী
•শ্বশুরের পুরুষাঙ্গ কেটে দিলেন পুত্রবধূ !
•রেট বাড়ালেন পপি
•‘বৈরী বাতাস’ এ পতিতা নওশীন
•সালোয়ার কামিজের সৌন্দর্য্য ধর্ষনের উৎসাহের কারন!
•চুমু দেওয়ায় গণপিটুনি
•স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করতে স্বামীর পর্ণোভিডিও তৈরী!
•তিন্নীর লাগামহীন জীবন
•ভারতীয়দের পুরুষাঙ্গ আন্তর্জাতিক কনডমের জন্য ছোট

কি বুঝলেন? হ্যা, এটা একদল চরম মানসিক বিকারগ্রস্তদের দ্বারা চালিত ওয়েবসাইট।

মনগড়া রিপোর্টিং এর সেরা উদাহরন পেলাম গতকাল। জেনে নিন পাত্রী খোজের গাণিতিক সূত্র নামক রিপোর্টে। ‘খোঁজ’ শব্দটির বানান তারা ভুল করেছে, তবে সেটা নিয়ে আসলে কথা বলার কিছু নেই; আছে তাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার নিয়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে ফর্সা মেয়েদের তুলনায় শ্যামলা, উজ্জ্বল শ্যামলা কিম্বা কালো রং এর মেয়েরা স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বেশী ভক্তি করে।

প্রথম খটকাটা এখানে লাগলো। জেনেভা স্কুল অব বিজনেসের গবেষকরা তাদের দেশে শ্যামলা, উজ্জ্বল শ্যামলা পাইলো কই? ককেশিয়ান আর নিগ্রোদের নিয়ে কথা বলা এক কথা, ফর্সা-শ্যামলা নিয়ে কথা বলা একেবারেই অন্য কথা। ফর্সা-শ্যামলার এই বিষয়টি উপমহাদেশের একচেটিয়া। ইউরোপের গবেষণায় এটা ফিচার্ড অংশ হবার কথা নয়।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে স্বাস্থ্যবতী মেয়েরা শান্ত শিষ্ট ও ধর্য্যশীল হয় আর ক্ষীন স্বাস্থ্যের মেয়েরা খিটখিটে মেজাজের হয়। -ওহ তাইলে তো এখন হইতে চিকন স্বাস্থ্য মোটা ও সুন্দর করিবার আশায় গরুর ট্যাবলেট সেবন শুরু করিতে হইবে, না কি?

জানা গেছে, যে পাত্রীরা তুলনামূলক আলজেবরায় ভালো, তারা সাংসারিক দুঃখ সুখ শেয়ারিং এ ভালো, আর যারা পাটীগণিতে ভালো তারা কিছুটা স্বার্থান্বেষী ধরণের হয়। আর জিওমেট্রিতে ভালো যারা, তাদের লোভ বেশী থাকে।

এই তো তোমাদের গবেষণার আসল পর্যবেক্ষণ পরিলক্ষিত হইল…মেয়েদের পড়ালেখার গন্ডি তাইলে এস, এস, সি পর্যন্তই যথেষ্ট! এর পরের শিক্ষা আসলে মেয়েদের বুদ্ধি, চিন্তা বিকাশে নিতান্তই অর্থহীন, এখানে ইনিয়ে-বিনিয়ে বুঝানো হয়েছে, “ইয়ে মানে, শেষমেশ সংসারই তো করবা, আর ওই মেট্রিকের লেখাপড়া দিয়াই কিন্তু তোমাদের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, এরপর যত পড়ালেখা কর, তোমাদের মানসিক বিকাশ এখানেই স্থগিত থাকতেছে কিন্তু”

মূল গবেষণাটির অ্যাবস্ট্রাক্ট ও আরো কয়েকটি নিউজ ঘাটার বুঝলাম খবর২৪ ছাড়া অন্য কোনো খবরেই এরকম রেসিস্ট কোনো কথা লেখা নেই!

১৯০০০ ফ্যানের কল্যানে লিংকটি ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। অনেককেই দেখলাম সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিছে। মেয়েদের মনের ভেতরেই একটা বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটা মানুষ কালো না সাদা- এইটার জন্য যদি তার মেন্টালিটি ভিন্নতা পায় তার জন্যেও কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দায়ী। কালো মেয়ে স্বামীর বাধ্য হবে, কারন তার একটা দোষ আছে-সে কালো!!

কোনো একটি গর্দভ পুরুষ এই লেখাটি প্রসব করেছে, এবং নিজের পুরুষবাদী ভ্রান্ত ধারণা এখানে ঢোকানোর সময়ে দুর্গন্ধটা লুকোতে পারেনি। একটি গবেষণা সম্পর্কে প্রকাশিত খবরের সাথে নিজের দুর্গন্ধযুক্ত মস্তিষ্কের প্রসব করা কথা মিশিয়ে দেবার সাহস এই লোকের কী করে হয়? গবেষণা জিনিসটা কি ফাজলামি জাতীয় কিছু? একটা পরিসংখ্যানিক গবেষণাকে অপমান করার সাহস এদের কী করে হয়?

খবর২৪ এর মিথ্যাচার নিয়ে পড়লেন। এখন মূল রিপোর্টের প্রধান ফিচার্ড ধারণাগুলো আরেকবার নিশ্চিত হয়ে নিন।

১. বর-কনের বয়সের পার্থক্য পাঁচ বছরের কাছাকাছি হওয়া উচিত।
২. তাদের একইরকম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে উঠে আসা উচিত।
৩. নারীর পুরুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হওয়া উচিত।
৪. পুরুষের চেয়ে নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকা উচিত।
৫. এবং বিয়ে বিষয়টি মূলত পারস্পরিক সহযোগিতার ওপরে সবচাইতে বেশি নির্ভরশীল।

এর বাইরে কালো-ফর্সা, চিকন-মোটা, পাটিগণিত-বীজগণিত বিষয়ক বেহায়া মতবাদগুলো আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে দিন। আর একটা গবেষণার ফলাফল নিয়ে যারা ফাজলামি করতে পারে, তাদের মুখে আমার পক্ষ থেকে কয়েকদলা থুতু নিক্ষেপ করলাম।

//লেখাটির শিরোনাম একটি বড় অংশ বিনা অনুমতিতে ধার করা হয়েছে মুক্তমনা ব্লগের অবর্ণন রাইমসের লেখা থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×