somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধ যেন না হয় মরণফাঁদ

১৭ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নদীমাতৃক দেশ হয়েও আজ বাংলাদেশের সর্বত্রই পানির জন্য হাহাকার পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক সময় যে মাঠে দিগন্তজোড়া ফসলের সমারোহ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত আজ সেই মাঠই শুধু ধুধু বালুচর। পরিবেশের ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্যের অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে দেশ আজ প্রচণ্ড অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমাদের চৈতন্যবোধ হয় না। দেশপ্রেমকে আজ আমরা সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি আর টক শোতে আবদ্ধ করে ফেলেছি। তাই তো ১৯৭৬-এ ফারাক্কার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ পরিলক্ষিত হয়েছিল এখন টিপাইমুখের ক্ষেত্রে তা রাজনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে থাকছে।

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি-ভাগীরথী নদীতে ৪০ হাজার কিউসেক পানি ধরে রাখার জন্য ১৯৭৫ সালে ভারত গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। এতে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙ্গার প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য চাষ, বন, নৌ-চলাচল, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানির ব্যবহার ও বিভিন্ন শিল্পের প্রসার দ্রুত হ্রাস পায়। গঙ্গার পানিপ্রবাহ কম হওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর বৃহত্তম ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ সুন্দরবন এখন প্রচণ্ড হুমকির মুখে। পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা ও খুলনার বৃহৎ অংশ আজ মরুভূমি হতে চলেছে।

সর্বজনশ্রদ্ধেয় মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জাতির এই সর্বনাশা বিপদ উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ-আন্দোলনের ডাক দেন। তার সেই প্রতিবাদী কণ্ঠের আহ্বানে বাংলাদেশের সর্বত্রই ফারাক্কার বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। লং মার্চ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের গঙ্গার পানিচুক্তি অনুযায়ী ন্যায্য পানি ভারত এখনো পর্যন্ত আমাদের দেয়নি। গঙ্গা ব্যারেজ ও তিস্তা নদীর গর্জনডোবা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও পরিবেশ যখন হুমকির মুখে ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন করে ভারত বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ (বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার উজানে) নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। জানা যায়, এ বাঁধ নির্মাণের ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় ২৭৫.৫ কিলোমিটার এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে সুরমা-কুশিয়ারার অববাহিকায় পানির পরিমাণ শতকরা ৬০ ভাগ এবং ভরা মৌসুমে শতকরা ১২ ভাগ হ্রাস পাবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের সিলেট, নোয়াখালী, বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে পরিবেশের ভারসাম্য, দেখা দেবে নানা ধরনের বৈরী আবহাওয়া।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিন্ন নদীর উজানে যে কোন ধরনের কাঠামো নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই ভাটিতে বসবাসকারী জনপদের ওপর এর প্রভাব চিন্তা করতে হবে। এ ধরনের কাঠামো হতে হবে উভয় দেশের স্বার্থকে রক্ষা করে। অর্থাৎ তাতে যেন উভয় দেশই উপকৃত হয়। কিন্তু ভারত বরাবরই আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের গর্হিত কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি এবং বলিষ্ঠ গঠনমূলক সমালোচনা বা পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের অভাবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ সঙ্কটে পড়ে যাবে। কারণ দেশের একটা বৃহৎ অংশ পুরোটাই মরুকরণের পথে অগ্রসর হবে।

তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মাওলানা ভাসানীর ফারাক্কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠের বলয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতের এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাই। আর এ ক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের এ বিষয়টা নিয়ে ভারতের সাথে দরকষাকষি করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ভারতকে যেন বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আন্দোলনে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা করতে হবে।

সূত্রঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:২৩
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×