somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহবুব আলীর 'উড়ান' দর্শন

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমেই বলে নেই আমি ঐরকম পণ্ডিত কোন ব্যক্তি না যে সিনেমা সমালোচনা লিখব। অন্য অনেকের মত আমিও সাধারনত হিন্দি সিনেমা দেখি না।হঠাৎ এই সিনেমা দেখে আমি হতবাক। ইন্ডিয়ান ফিল্ম মেকার রা এইটা বানাইসে?? বিশ্বাস করতে কষ্ট হইল।মুল কথা হইল শাহরুখের ফেচ ফেচ কান্দা দেখতে দেখতে, আর যত সব আজগুবি উদ্ভট কাহিনী নাচা গানা দেখতে দেখতে আমি ধইরাই নিসিলাম যে এই ধরনের সিনেমা ইন্ডিয়ান রা বানাইতে পারবে না কখনো।আমি রোম্যান্টিক কমেডির বিপক্ষে না।কিন্তু রোম্যান্টিক কমেডির নামে ভাঁড়ামো তো সহ্য হয় না।তাই হিন্দি সিনেমা দেখাই বাদ দিয়ে দিসিলাম।তবে ইদানিং দেখতেসি একটা দুইটা ভালো সিনেমা হচ্ছে ইন্ডিয়াতে যেমনটা আমাদের দেশেও হচ্ছে। এরকমই একটা সিনেমা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই।

একদিন এক ছোট ভাই একদিন আমাকে সিনেমাটা দিয়া কইল ‘ভাই দেইখেন। ইটস গুড’ আমিও ভাবলাম, ‘আচ্ছা দেখুম নে’ তারপর দেখতে বসলাম অনুরাগ কাশ্যপ প্রযোজিত,বিক্রমাদিত্য পরিচালিত ‘উড়ান’ বাংলায় এর মানে সম্ভবত ‘উড়াল’। ২০১০ সালে বানানো এই সিনেমা নাকি অনুরাগ কাশ্যপ এর নিজের জীবনের কাহিনী। কেউ যখন নিজের জীবনের কাহিনী নিয়া নাটক সিনেমা বানায় তখন আমার সমালোচনা করার ইচ্ছা আরও প্রবল হইয়া উঠে।এ প্রসঙ্গে রেদওয়ান রনির একটা নাটকের কথা বলতে হয়, ‘উচ্চতর শারীরিক বিজ্ঞান’ এইটা নাকি উনার নিজের জীবন নিয়া বানানো নাটক। উনি নিজেই বানাইসেন এবং নাটকে উনার রোল যে প্লে করছে তাকে মহামানব আকারে দেখাইসেন।কাজেই নাটকটা অ্যাট লিস্ট আমার কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাইসে। কিন্তু আমি উড়ান সিনেমাটা দেইখা টের পাইলাম এর স্ক্রিপ্ট এত শক্তিশালী যে এখানে অনুরাগ তার জীবনের কোন ঘটনা জন সমক্ষে প্রকাশ কইরা কিছু প্রমান করতে চায় নাই। এটা আমার খুব পছন্দ হইসে। নিরপেক্ষ স্বীকারোক্তি। আমিও আকাম করসি , সেও আকাম ই করসে টাইপ।

এবার সিনেমার দিকে একটু নজর দেই

সিনেমাটা কি নিয়া??মুল থিম টা কি??
আমার কাছে মনে হইল, এক স্যাডিস্ট বাপ তার ছেলেদের সাথে কি ধরনের আচরন করে বা করতে পারে এবং তার কোলেটারাল কি কি ড্যামেজ হইতে পারে, এই বিষয়টাই সিনেমার মুল উপজীব্য। যেহেতু সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি কইরা বানানো হইসে সেহেতু ধইরা নিলাম সিনেমার খাতিরে মুল ঘটনা খুব একটা পরিবর্তন করা হয় নাই।আর তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয় বাবার চরিত্রটা টোটালি একজন স্যাডিস্ট, মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন লোকের যে কিনা বিভিন্ন অজুহাতে তার ছেলেদের নির্যাতন করে।যদিও সিনেমায় সে কয়েকটা জায়গায় তার আত্মপক্ষ সমর্থন কইরা কথা বলতে চায়।

সিনেমায় দেখানো হয় এক ছেলে(রোহান) তার বন্ধুদের সাথে লুকিয়ে এডালট সিনেমা দেখতে গিয়ে তার স্যারের হাতে ধরা পড়ে তারপর বোর্ডিং স্কুল থেকে তাকে তার বন্ধু সহ বের করে দেয়া হয়।সে বাসায় ফিরে আসে।এসে দেখে তার রুমে আরেকটা ছেলে থাকে, যে কিনা তার সৎ ভাই অর্জুন। অর্জুনের কথা রোহান কে কখনো তার বাবা বলেনি।এমনকি গত ৮ বছরে সে একবারও রোহান কে তার বোর্ডিং স্কুলে দেখতে যায়নি।বাসায় ফেরার পর রোহান আবিষ্কার করে যে অর্জুন তার বাবাকে স্যার ডাকে। রোহান কেও স্যার ডাকতে বলা হয়। আরও বলা হয় যে এখন থেকে কারো কোন ইচ্ছা থাকতে পারবে না। যা হবে সব ভৈরব সিং মানে তাদের বাবার ইচ্ছায়। রোহান সাহিত্যিক হতে চায়, এটা নিয়ে তার বাবার সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এদিকে রোহানের চাচা থাকে তাদের কাছাকাছি কোন বাসায় যিনি কিনা খুব আদর করেন রোহান আর অর্জুনকে। কয়েক জায়গায় রোহানের পক্ষে তিনি ভৈরব সিং আর সাথে তর্কও করেন।তিনি বলেন যে, ‘রোহান যদি সাহিত্যিক হতে চায় তো হোক না সমস্যা কোথায়??’

এখানে দেখানো হয় যে ভৈরব সিং খুব বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন চিন্তা ভাবনা করেন, তাই তিনি চান না যে ছেলে সাহিত্যিক হয়ে না খেতে পেয়ে মারা পড়ুক।কিন্তু ভৈরব সিং এর এই সব কথা বার্তা এবং আচার আচরন তাকে মানসিক ভাবে সুস্থ প্রমান করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমি আবারও বলব যে আনুরাগ যেহেতু কিছু প্রমান করতে চাননি তাই ভৈরব সিং এর চরিত্র পাশ মার্ক পেয়ে যায়।

এভাবে কাহিনী আগাতে থাকে, কথায় কথায় নির্যাতন অত্যাচার চলতে থাকে রোহান এবং ৬ বছর বয়সী অর্জুনের উপর। এক সময় দিশেহারা হয়ে যায় রোহান।কিন্তু এ থেকে মুক্তির কোন উপায় সে দেখতে পায় না।তার বাবা তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করে দেন। সে ভাবে ইচ্ছা করে ফেল মেরে দিবে তাহলে তো আর তাকে পড়তে হবে না।এদিকে ছোট অর্জুন স্কুলে ঝগড়া করে যার ফলে তার বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়। স্কুলে অর্জুনকে আনতে গিয়ে তার ব্যবসার বেশ বড় একটা ক্ষতি হয়ে যায়। সে রাগ সামলাতে না পেরে অর্জুনকে পেটায়। অর্জুন হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন দুই ভাইয়ের মাঝে সম্পর্ক গাড় হয়।এরপর থেকে রোহান অর্জুনের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে থাকে এবং সে এই কারাগার থেকে মুক্তি চায়।

আদৌ সে ওই কারাগার থেকে মুক্তি পায় কিনা। শেষ পর্যন্ত ভৈরব সিং এর কি হয়। অর্জুন কোথায় যায়। রোহানেরই বা সাহিত্য চর্চার কি হয় সেটা আমি আর বলব না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি আমার মতো যারা হিন্দি সিনেমা দেখা বাদ দিয়ে দিসেন তারা অ্যাট লিস্ট এই সিনেমা ট্রাই করে দেখতে পারেন।

সিনেমার মুলচরিত্রগুলতে অভিনয় যারা করেছেন তাদের সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছেন।বিশেষ করে ভৈরব সিং এর চরিত্রে রনিত রয় ভয়ংকর অভিনয় করেছেন।রোহান চরিত্রে রজত বারমেচা ছিলেন দুর্দান্ত যদিও এটা নাকি তার প্রথম ফিল্ম। এর অর্জুন চরিত্রে সুন্দর অভিনয় করেছে আয়ান বোরাডিয়া।বিশেষ করে তার কান্না চেপে রাখার দৃশ্য গুলো ভুলা কঠিন।
সিনেমার গান গুলো বেশ ভালো।সিনেমাটোগ্রাফি ক্যামেরাওয়ার্ক ইত্যাদিও বেশ ভালো।

এবারে সিনেমার দুর্বল দিক গুলা একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমে যেটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগসে সেটা হল, কোথাও রোহান এবং অর্জুনের মায়ের কথা উল্লেখ নাই।তাদের কি হইসিল? তারা কি মরে গেছে?? নাকি বেঁচে আছে?? এটা কোথাও উল্লেখ করা হয় নাই।যদিও রোহানের ছবির এ্যালবাম দেখার দৃশ্য দেখে ধরে নিতে হয় যে তার মা বেঁচে নেই, কিন্তু অর্জুনের মায়ের কোন উল্লেখই নাই।সত্য ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানাতে গিয়ে আনুরাগ কি কোন কিছু লুকাতে চাইলেন?? এটা উনি চাইতেই পারেন তবে এক আধটু উল্লেখের প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।

আরেকটা জিনিস অদ্ভুত লাগসে, সেটা হল, যে ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দিসে সেই ছেলে কেমনে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে যায়?? আমি ঠিক বুজলাম না। তবে সিনেমার খাতিরে মেনে নিলাম।

সিনেমার সময়কালটাও আমার কাছে ক্লিয়ার না। হয়ত গত শতকের আশি নব্বই দশকের হবে।সেই তুলনায় সিনেমার প্রেজেন্টেশন একটু আধুনিক হয়ে গেছে।

যাইহোক, স্বল্প বাজেটে ভালো সিনেমা বানানো যায় বোঝা যাচ্ছে এবং টুকটাক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও আমি এই সিনেমাকে হিন্দি সিনেমায় একটা নতুন ‘genre’র শুরু হিসাবে ধরে নিলাম।আগে থেকে বলে রাখি যারা স্লো এবং সিরিয়াস টাইপ সিনেমা লাইক করেন না তারা দেখলে আশাহত হবেন অন্যথায় ভালো লাগবে আমি নিশ্চিত।।আই এম ডি বি রেটিং ৮.১ আমি মোটামুটি একমত ৭.৫
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১৯
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×