কখন কিভাবে যে কি হয়ে গেল বুঝে উঠার আগেই যেন জীবনের চরম সেই মুহুর্ত টা শেষ হয়ে যায় , ভালো লাগার সেই ঘোর কাটেনা সহজে.. হাজার জায়গায় লক্ষ বার নিজের নাম লিখতে ও যাদের হাত কাপেনা, তাদের ও হাত কেঁপে উঠে বিয়ের রেজিস্টারে সোই করতে.. রুদ্র ঐশী’র ও হাত কাপল, তবে নিল রঙের সেই মোটা খাতায় সোই করা লাগে নি, এই যা সান্তনা.. সাজু মামা কিছুটা বিরক্ত, খুজে খুজে এমন কাজী অফিস ই পেলেন , এবং এমন দিনেই তারা কাজী অফিস এ আসলেন , যেদিন মুল রেজিস্টার বই এর পাতা শেষ, তাই নাম ধাম লিখে সোই করা হল সাদা কাগজে...
রুদ্র ও ঐশী’র অবশ্য এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথা নেই , থাকার কথা ও না, নব্য বিবাহিত এক জোড়া কপত কপতিকে তখন ঘিরে আছে সুন্দর আগামির সপ্ন..
সাজু মামার বিরক্তি চরমে উঠল তখন, যখন কাজী অফিস থেকে বেড়িয়ে দেখলেন বৃষ্টি পড়ছে, রুদ্র এবং ঐশী’র দিকে তাকিয়ে অবশ্য এবার ও তার বিরক্তি চেপেই রাখতে হল, কেননা জীবনের সবচাইতে স্মরণিয় রাত টি যদি হয় বৃষ্টি ভেজা রোমান্টিকতায় পুর্ণ, কোন বোকা কপত কপতি বা তাকে আশির্বাদ হিসেবে নেবেনা! নব দম্পতির মুগ্ধতা, মনে মনে খুণশুটি চলা সেই নিরবতা ততক্ষণে মামা ও মন্দ লাগা আর স্থায়ি হতে দিলনা..
এদেশের সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের কিছু সুবিধা আছে, যতই ঝামেলা থাকুক, তাদের কাছে কোন ঝামেলাই যেন ঝামেলা না.. আর তাইত, এতো ভিড়ের মাঝে ও, এক ফোনেই লঞ্চে ২ টি এসি কেবিনের ব্যাবস্তা করে ফেললেন সাজু মামা..
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে লঞ্চের সিড়ি বেয়ে উঠতে যেয়ে , রুদ্র’র উদ্দেশ্যে মামা যেন খোঁচা দিয়েই বললেন, " বৌ কে রেখে একা দৌড় দিলে কি আর হয়, এখন ত জীবন আর একার নয়"
রুদ্র মনে হয় একটু লজ্জাই পেল, হাত চেঁপে ধরে লঞ্চের সিড়ি বেয়ে হেটে যাওয়া, কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু বিয়ের পর রুদ্র এই প্রথম ঐশী’র হাত ধরল, ঐশী’র মাঝে ও যেনো হঠাৎ করেই মনে হল, এই তো নির্ভরতা, এই তো সেই হাত যে হাত ধরে চোখ বন্ধ করে ও কাটিয়ে দেয়া যায় জনম জনম.. এর আগে ও বহুবার, বহু কারনে ঐশী, রুদ্র’র হাত ধরেছে, কিন্তু কই, এমন অনুভুতি তো আসেনি আগে, ৩ কবুলের কি তবে এতই ক্ষমতা, নিমিষেই অপুর্ণ কে দান করে পুর্ণতা..

মনে যাই থাক, সাজু মামা যখন তাদের দু জন কে কেবিন দেখিয়ে বললেন, "যা এটা তোদের কেবিন, বৃষ্টি তে ভিজে তো যাচ্ছে তাই, আগে ফ্রেশ হ, পরে কথা বলা যাবে"
ঐশী তখন মামার দিকে ফিরে আপত্তি নিয়েই বলল, "তোমারা ডাবল কেবিনে মামা ভগনে থাক, আমি সিঙ্গেল টায় যাই, কি বল রুদ্র??" সাথে রুদ্র কে না টানলে কি আর হয়।
রুদ্র যেন সেখানে শুধুই দর্শক, মামা তাকে ও একটু বাজানোর জন্য বলল,
"কিহে ভাগিনা তুমি কি বল??"
রুদ্র’র মাঝে বিব্রত ভাব স্পষ্ট , কি বলে আবার কোন বাঁশ নিজের কাঁধে নিবে কে জানে, তাই ঝামেলা এড়াতে বলল, "আপনারা মামা ভাগনি যা ফিক্সড করবেন, তাহাই আমার জন্য শিরধার্য"
গম্ভির পরিবেশ কে শ্বান্ত করতেই হোক, বা নিজের মনের খুশি আটকাতে না পেরেই হোক, হো হো করে হেসে উঠলেন সাজু মামা, হেসেই বলললেন, "আর ঢং করা লাগবেনা, তোমরা এখন বৈধ স্বামী-স্ত্রী, সুতরাং এক সাথে থাকার অভ্যাস যখন করতেই হবে, আজ থেকে কেন নয়!" কথা শেষ না করে রুদ্র’র দিকে তাকিয়ে বললেন, "বোঝা তো নিয়েই নিয়েছ, এবার বোঝা-টা সামাল দিতে শেখ," কথা টা বলে কাউ কে কিছু বলার সুজগ না দিয়েই তিনি চলে গেলেন তার কেবিনের দিকে, পেছনে তখন ঐশী’র তিব্র প্রতিবাদ, "মামা, আমি বোঝা??? এই কথা তুমি বলতে পারলা??"
রাকিব পাশ থেকে ফোড়ন কাটল, "বোঝাই তো, তবে মিষ্টির বোঝা, যে বোঝা আজীবন বইতে আমি রাজি"
বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি, লঞ্চের শেষ হুইশেলে হল যাত্রা শুরু.....
রুদ্র ঐশী’র মনে ও যেন চলছে আবেগের ঝড়.....
রুদ্র আগেই ফ্রেশ হয়ে নিল, যথারিতি বনেদি বংশের মেয়েদের মতই সময় ক্ষেপণ করে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঐশী এসে দেখল, রাকিব গেটের সামনেই দাড়িয়ে আছে, বৃষ্টির কারনে রেলিং ধরে দাড়াতে না পারলে ও দুধের সাধ ঘোলে মিটাচ্ছে, ভেজার তিব্র ইচ্ছা টা জলানজলি দিতে হল রুদ্রের, কেননা ঐশী যাওয়ার আগেই বলে গেছে, ভেজা জাবেনা..
হালকা প্রতিবাদ করতে চাইলেও, ঐশী কে রাগানোর সাহস কি আর তার আছে.....
রুদ্র কে দেখে ঐশী খোঁচা দিয়েই বলল, " কি ভদ্র লোক?? কি ভাবছ?? আজ রুম সেয়ার করবা কি করে?? "ঐশী জানে রুদ্র তার বেড রুম, আর বেড সেয়ার করতে পারেনা, তাই এই খোঁচা..
রাকিব হেসেই বলল, " কি আর করা, কষ্ট করে ম্যানেজ করে নিতে হবে আর কি"
কথা টা বলতে দেরি, চোখের পলকে কেবিনে ঢুকে ভেতর থেকে দরোজা লক করে দেয় ঐশী, জানালা দিয়ে মুখটা বের করে বলে , " তাহলে যেখানে আরামে ম্যানেজ করতে পারবেন সেখানে যান, আল্লাহ হাফেজ" কথা শেষ করেই জানালা ও বন্ধ করে দিল ভিতর থেকে..
রুদ্র না হেসে পারলনা, শুধু বলল" ওকে, আপনি শ্বান্তিতে ঘুমান, আমি বৃষ্টি তে ভিজি"
কথা শেষ না হতেই যে গতিতে কেবিনের গেট লাগিয়েছিল, তার চেয়ে দ্রুত বেগে কেবিনের গেট খুলে গেল, "বিয়ের রাতে বৌ এর সাথে প্রেম কর, বৃষ্টির সাথে প্রেম করা লাগবেনা, জংলি একটা! "ঐশীর এই রুপ যেন রুদ্র’র কাছে নতুন, এ সম্বোধন ও নতুন, হতেই পারে এ রাত ও যে নতুন...
গেট বন্ধ হল তাদের কেবিনের, কিছুক্ষণ পর কেবিনের বাতি ও নিভে গেল, সাজু মামা জেন এর অপেক্ষা তেই ছিলেন। ঝড়ের প্রকপ যেন আরো বেড়েছে.. এর মাঝেই তিনি বের হয়ে গেলেন অযু করতে, নামাযে দড়াবেন, নফল নামায, এত সুখের ভিড়ে ও কেমন জানি অশান্তি লাগছে, মন কে শান্ত করার একটাই উপায় নামাযে দাড়ানো, সৃষ্টি কর্তার কাছে আত্ব সমর্পণ ই তো শ্রেষ্ট প্রশান্তি ..
অন্যদিকে সেই অন্ধকার কেবিনে তখন সুখ, রুদ্র, লজ্জা, ঐশী, ভয় আর বৃষ্টি সকলে মিলেমিশে একাকার...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



