somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদী দখল দেশে দেশে।

১৮ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সভ্যতা গড়ে ওঠে যে নদীকে কেন্দ্র করে বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই সেই নদীর ওপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের কিছু নজির তুলে ধরছি।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লামাথ নদী থেকে বাঁধ সরিয়ে নিলে কী সুবিধা পাওয়া যায় তা নিয়ে সেখানকার পরিবেশবাদীরা একটা জরিপ চালিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে যে এই বাঁধের ফলে কেবল পানি প্রবাহের পরিবর্তনই ঘটেনি। বাঁধের কারণে অনেক বিষাক্ত শৈবাল জন্মাচ্ছে এবং পানিতে থাকা অক্সিজেন দূষিত হচ্ছে-অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর কারণে সেই নদীতে স্যামন মাছ কমে যাচ্ছে। এরপর মাছের সংখ্যা বাঁচাতে বুশ এবং সোয়ার্জনেগার প্রশাসন স্যামন ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছেন যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে জেলেদের এবং কারুক আদিবাসীদের। যাদের জীবিকা ছিল মাছ শিকার। এক সময়কার স্রোতস্বীনি এখন হয়ে উঠেছে মরা স্যামনের স্রোত। অথচ এই নদীই অরিয়ন থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত প্রবাহিত হত যা ছিল স্যামনের প্রধাণ উৎস।

কোলারাডো নদী তার সমৃদ্ধি আর ঐতিহ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকো যাওয়ার পথেই বাধাগ্রস্ত হল। ৭৫ ভাগ পানি ছড়িয়ে পড়লো যুক্তরাষ্ট্রের অনুর্বর ভূমিতে। অতিথি পাখি শূণ্য হল, নদী ভরে গেল বিষাক্ত বীজানুতে। যারা মাছ ধরতো সেই কোপাচা ইন্ডিয়ানরা তাদের দারিদ্রের চিহ্ন স্বরুপ মাছ ধরার নৌকাগুলোকে ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখে। সারা বছর ধরেই প্রায় ৯৫ভাগ পানি পায় যুক্তরাষ্ট্র বাকিটা যায় মেক্সিকোর ভাগ্যে। এই নদীই একমসয় অসংখ্য জীব বৈচিত্রে সমুদ্ধ ছিলো। ৪০০ প্রজাতির উদ্ভিজ আর প্রানীজ নিদর্শন ছিল-ছিল বিশ্বের ক্ষুদ্র প্রজাতির ডলফিন। আজ কিছুই নেই। সমস্ত পানি ব্যবহৃত হয় কর্পোরেট খামারগুলোতে। পুঁজিবাদের প্রয়োজন মেটাতে দিয়ে অসংখ্য নদীর আর কখনোই সমুদ্রে পৌঁছানো হয় না। কারণ অসংখ্য জীবনকে হত্যা করে কোলারাডোর বুকে দাঁড়িয়ে আছে গ্লেন ক্যানিয়ন বাঁধ।

ইতিহাসের নদী টাইগ্রিস। ১৯৮০-১৯৮৪ সালে এই বাঁধ তৈরি করা হয় সানমাটি দ্রবনীয় জিপসাম এবয় এমন সব চুনাপাথর তিয়ে যা পানিতে দ্রবণীয়। নির্মাণের সময়েই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই বাঁধ বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। কারণ এটা ক্রমশ ক্ষয় হচ্ছে এবং এই বাঁধ ঝুঁকিপুর্ণ বেড রকের ওপর তৈরি। যে কোন সময় এই বাঁধের দেয়াল ভেঙ্গে পড়লে ইরাকের তৃতীয় বৃহত্তম শহর মুসলের প্রায় ৭০ ভাগই ধ্বংস হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে টাইগ্রিসের ১৯০ মাইল সংলগ্ন এলাকা। এই বাঁধ নির্মাণের সময় ভিত্তি হিসেবে তরল সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যে কোন সময় ভূমিধ্বস হলেই নির্মূল হবে অসংখ্য জীবন। মাজিত-টাইগ্রিস নদীতে আজো মাছ ধরেন। বলছেন এই নদীতে এখন পানি নাই। খালি প্লাস্টিক আর আবর্জনা-মাছ নেই। ১০ বছর ধরে মাছ ধরে আসা হামজা মাজিদ বলছেন তিনি ব্যবসা করতে চান না, ব্যবসা খারাপ মাছই ধরতে চান। কিন্তু কোথায় পাবেন মাছ। উল্লেখ্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ।

এবার ভারতের পরিকল্পনা দেখুন। রিপোর্টটা এখান থেকে নেয়া গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রসহ বিশাল অংশের নদী প্রবাহকে ভারত নিয়ন্ত্রিত করতে চায়। ভারতের পরিকল্পনা আছে জাতিসংঘের নদী সংক্রান্ত বিষয়ে একটা নীতিমালা প্রস্তাব করার। তারা তাদের সমস্ত নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ ঘটাবে। মরুভুমি প্রবণ এলাকায় পানি পৌঁছাবে। অথচ ১০-২০ ভাগ পানি কমে গেলেই বাংলাদেশ ক্রমশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের ৮০ ভাগ কৃষি ভারত থেকে আসা পানির ওপর নির্ভরশীল। যদিও বাংলাদেশ পানির ওপর নির্ভরশীল একটা দেশ কিন্তু সেই ১৯৭৬ সালের ফারাক্কাই এই বিষয়ে ভারতের মানসিকতাকে পরিষ্কার করে। এখন তাদের পরিকল্পনা আছে আরো ৫৩টি নদীর ওপর বাঁধ দেয়ার। গঙ্গা নিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি থাকলেও বাকি ৫৩টি নদী বিষয়ে কোন আলাপ ভারতের সাথে বাংলাদেশের হয়নি। ৪৪ থেকে ১২৫ বিলিয়ন ডলার খরচের যে পরিকল্পনা ভারত সরকার নিয়েছে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা। এটা করতে ১৪ বছর সময় লাগবে। পরিবেশবাদীরা বলছেন-এতে করে ৩০০০ বর্গ মাইল এলাকা বন্যা কবলিত হবে এবং অন্তত ৩ মিলিয়ন মানুষ ভূমি ছাড়া হবে। ভারতের পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছেন এতে করে ১৩৫০০০ বর্গ মাইল এলাকা কৃষি জমির আওতায় আসবে এবং ৩৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে সুন্দর বনকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিষ্কার পানি দরকার তা আসছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে আট থেকে দশ বছরের মধ্যেই সুন্দরবন তার সব কিছুই হারাতে শুরু করবে।

সময়ের অভাবে অনেক কিছুই লিখা গেলনা। আশা করছি পরবর্তীতে আরো কিছু নদীর ইতিহাস যুক্ত করবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৭
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×