somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাজিক ডায়েরী (শেষ পর্ব)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৬ নভেম্বর, ২০১২
গত দুইমাস মান্থলি চেকআপের জন্য আমি একাই এসেছি। আজ বিভু কিছুতেই আমাকে একা ছাড়ল না। ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। আমার সামনের সারিতেই খুবই সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে। শুধু সুন্দরী বললে ভুল হবে, চোখেমুখে একটা অন্যরকম আবেদন আছে। আশেপাশে রোগীর সাথে আসা যেসব ছেলেরা অপেক্ষাকৃত কম দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত, তারা বারবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে। তাদের চোখেমুখে আগ্রহের ছাপ স্পষ্ট। মেয়েরাও না তাকিয়ে থাকতে পারছে না। তাদের দৃষ্টিতেও সমান আগ্রহ, তবে সেটা খানিকটা ঈর্ষামিশ্রিত।
ব্যতিক্রম একমাত্র বিভু। খুবই মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছে। ওকে একটু জ্বালাতে খুব ইচ্ছে হল।
জিজ্ঞেস করলাম, “এ জগতে আসলে তো আমাদের মতই আপনাকেও মশা কামড়ায়, আপনারও ক্ষুধা লাগে। তাহলে এ ব্যাপারে এরকম সাধু সন্ত সেজে থাকার মানে কী?”
“কোন ব্যাপার? বুঝলাম না।”
“পুরো হল মেয়েটাকে হাঁ করে দেখছে। একমাত্র আপনি ছাড়া।”
“ও, এই ব্যাপার! পেট ভরা থাকলে আর অন্য কোন খাবারের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না। তা সে যতই লোভনীয় হোক!”
মুখে বললাম, “খুব্ব্ই স্থুল ছিল উপমাটা!” কিন্তু বুকের ভিতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। ও কী বলতে চায়?
“সত্যি কথা সোজাসাপটা হওয়াই ভাল। বেশি সূক্ষœ হওয়ার দরকার কী?”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। এখনো জানি না, আমার ভিতরে যে বেড়ে উঠছে সে ছেলে না মেয়ে। আমার সিরিয়াল আসতে এখনো দেরি আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরের চারপাশে তাকালাম।
হঠাৎই দেখলাম, কাঁচের দরজার ও পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে আগে কোথায় যেন দেখেছি বলে মনে হল। তার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার ঘাড় এতক্ষণ ওপাশে ফেরানো ছিল, ছেলেটা এ পাশে মুখ ফেরাতেই বুঝলাম- ওটা রাতুলের ছোট ভাই মৃদুল। মেয়েটাকেও এবার চিনলাম। রাতুলের নতুন গার্লফ্রে-। সেই ইরানী মেয়ে। ফেসবুকে দেখেছিলাম। মেয়েটা আসলেই ভীষণ স্নিগ্ধ। মাথায় ঘিয়ে রঙ্রে একটা স্কার্ফ জড়ানো। গায়ে শর্ট বোরখা। কাঁধের ব্যাগটা বোধহয় দেশালের। মৃদুলের সাথে আরো কয়েকজন ছেলে আছে। কয়েকজনকে আমি চিনি। রাতুলের বন্ধু। দেখে মনে হল, সবাই-ই মেয়েটার পরিচিত। হ্যাঁ, রাতুলের জীবনের জন্যে এই মেয়ে সত্যিই ভীষণ মানানসই। কিন্তু ওরা সবাই দল বেঁধে হাসপাতালে কেন? রাতুলের কিছু হয় নি তো?
বিভুকে বলাতে ও রিসেপশন থেকে খোঁজ এনে দিল। রাতুলের ডেঙ্গু হয়েছে। এখানেই একটা কেবিনে ভর্তি আছে। এখন অবস্থা ভালোর দিকে। একবার ভাবলাম, আমার বোধহয় দেখে আসা উচিত। কিন্তু না, সেটা বোধহয় ঠিক হবে না। আমার যাওয়াটা রাতুল ভাল চোখে দেখবে না। যদি স্বাভাবিকভাবে কথা বলি, তাহলে ও ভাববে, নিজের শক্ত-পোক্ত ইমেজের বিজ্ঞাপন দিতে এসেছি। আবার বলা যায় না, ভেবে ফেলতে পারে যে, আমি এখনো ওর আশা ছাড়ি নি। না, সেটা ভাববে না, আমি নিশ্চিত। আমার শুদ্ধতার বাতিক ও জানে। নতুন রিলেশনশিপের পর ওকে আর কোনভাবেই গ্রহণ করা সম্ভব হবে না, এটা তো ওর চেয়ে ভাল করে কেউ জানে না।
যাহোক, মেয়েটাকে দেখে খুব নিশ্চিন্ত লাগল। রাতুলের পরিচিত বলয়ের মধ্যে ও যেভাবে মিশে গেছে, তাতে ওদের সম্পর্কটার মধ্যে অন্য কোন জটিলতা ঢোকার সুযোগ পাবে না। আমি সত্যিই মুক্ত। কোন মানবিকতার দায়ও আমার আর থাকল না। ভীষণ নির্ভার লাগল নিজেকে।
“চেকআপ করাবেন, নাকি আজ বাড়ি যাবেন?” বিভু জানতে চাইল।
“আজ থাক। ওরা কেউ দেখে ফেললে অহেতুক একটা জটিলতা তৈরি হবে। চলেন, চলে যাই।”
বিভু বাধা দিল না।


১২ ডিসেম্বর, ২০১২ (সন্ধ্যাবেলা)
বিভু আর কোনদিন আসবে না। সেটা অবশ্য আমারি ভুলের কারণে। ডায়েরিটা পাশে রেখে চুলাটা সেদিন ওভাবে জ্বালিয়ে রেখে যাওয়াটা ঠিক হয় নি। কিন্তু ঠিক কী করে যে জিনিসটা গিয়ে চুলার ঠিক মাঝখানে পড়ল, সেটা আমি এখনো ভেবে পাই না।
বিভুকে মিস করি, কিন্তু একাকীত্বের অসহায়ত্বটা এখন আর তেমন চেপে ধরে না। ও আমার পুরনো ‘আমি’টাকে জাগিয়ে দিয়ে গেছে। যে কোন কিছুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর মত মনের জোরটা এখন ফিরে পেয়েছি।
আমার কল্পনায় এখন দুটো স্রোত চলে। একটা আমার শরীরে বেড়ে ওঠা সত্তা, আর একটা হল কল্পনার সমস্ত রঙে রাঙানো বিভু। দুজনের কথা ভাবতে গেলেই আমার মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। এক্ষুনি দুজনকে একসাথে দেখতে ইচ্ছা করে। এক্স-রে করে যদি হার্টের ভেতরটা দেখা যেত, তাহলে নিশ্চয়ই দুজনকেই একসাথে দেখতে পেতাম।
টেবিলের উপরে অনেক জিনিসের স্তুপ হয়ে আছে। জিনিসগুলো গোছাতে শুরু করলাম। তখন র‌্যাপিং পেপারে মোড়া সেই গিফট-টা চোখে পড়ল। একটা সিডি। ড্রাইভে ঢোকাতেই বিভুর কণ্ঠস্বরে বেজে উঠল,
“বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,
তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।
সুদূর কোন নদীর ধারে,
গহন কোন বনের ধারে,
গভীর কোন অন্ধকারে,
হতেছ তুমি পার
পরাণসখা বন্ধু হে আমার।”
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×