somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

িসয়াদ বস
চিন্তাহীনভাবে বাঁধাধরা কিছু ধারণা যা সর্ব ক্ষেত্রে সঠিক নয়, যেমনঃ পুলিশ মানেই ঘুসখোর নয় রাজনীতিবিদ মানেই ব্যাবসায়ী নয় মন্ত্রী মানেই চোর নয় বিএনপি সমর্থক মানেই রাজাকারের দোসর নয় আওয়ামীলীগ মানেই ভারতের দালাল নয় হিন্দু মানেই এক পা ভারতে নয় দাড়ি টুপি মানেই জ

মা - বাংলা সাহিত্যের কবিদের কবিতায়।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




‘মা’-এক অক্ষরের ছোট এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মমতা আর ভালোবাসা। মায়ের তুলনা শুধুই মা। মা শুধু নিজের সন্তানের মধ্যেই নয়, সবার মাঝেই অকাতরে বিলাতে পারেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মায়ের মতো এতো মধুর ডাক পৃথিবীর কোনো অভিধানে দ্বিতীয়টি আর নেই। ‘‘মা’’ যেন ভালোবাসার এক বিশাল আকাশ, অথৈ সাগর। তাই সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই ‘মা’ সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত প্রেমময়ী এক নাম। যুগে যুগে, দেশে দেশে, কালে কালে এই প্রিয় শব্দটি দোলা দিয়েছে সবার মনের গহীন বনে। এই ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন কবি সাহিত্যিকগণও পিছিয়ে নেই কোন অংশে। কবিদের মনে, কবিদের চোখে এই শব্দটি নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে দোলা দিয়েছে বারবার। মায়ের প্রতি রয়েছে তাদের নিঃস্বার্থ গভীর ভালোবাসা। বলা যায় পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ কবিই ‘মা’ কে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধে বাংলা সাহিত্যের নবীন প্রবীণ বিখ্যাত কবিদের কবিতা নিয়ে ‘‘মা’’ কে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হবে, ইনশাআল্লাহ্।


‘‘মা’’ কে নিয়ে ১৫ শতকের উল্লেখযোগ্য কবি শাহ মুহাম্মদ সগীর তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী কাব্যগ্রন্থ ‘‘ইউসুফ জুলেখায়’’

‘‘বন্দনা’’ পঠে ‘মা’ কে নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছেন-

‘‘পিঁপিড়ার ভয়ে মাও না থুইলা মাটিতে।
কোল দিয়া বুক দিয়া জগতে বিদিত
অশক্য আছিলু মুই দুর্বল ছাবাল।
তান দয়া হন্তে হৈল এ ধড় বিশাল ’’


বাংলা সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মায়ের প্রতি গভীর আবেগ নিয়ে রচনা করেছেন-

আমার মা না হয়ে তুমি আর কারো মা হলে
ভাবছ তোমায় চিনতেম না, যেতেম না ওই কোলে?
মজা আরো হত ভারি
দুই জায়গায় থাকত বাড়ি
আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে তুমি পারের গাঁয়ে।
এই খানেতেই দিনের বেলা
যা কিছু সব হত খেলা,
দিন ফুরোলেই তোমার কাছে পেরিয়ে যেতেম নায়ে।
(অন্য মা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)




বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহের বরপুত্র কাজী নজরুল ইসলাম
তাঁর দরদী কলমে মায়ের প্রতি ভালোবাসার চিত্র অাঁকেন এভাবে-

হেরিলে মায়ের বুক,
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
(মা- কাজী নজরুল ইসলাম)
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আরেক জনপ্রিয় প্রতিভা কবি কাজী কাদের নেওয়াজ ‘মা’ কে নিয়ে অপূর্ব চিত্র তুরে ধরেছেন। যেমন-
মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রি ভুবনে নাই।

… … … …

রোগ বিছানায় শুয়ে শুয়ে
যন্ত্রণাতে মরি,
সান্ত্বনা পাই মায়ের মধুর
নামটি হৃদে স্মরি।


(মা- কাজী কাদের নেওয়াজ)

পল্লী কবি জসীম উদ্দিন তার কবিতায় ‘মা’ কে এভাবে উপস্থাপন করেছেন-

দুঃখের সায়রে মায়ের এক মুখ
রঙিন ঝিনুকে পোরা মুক্তা এতটুকু।
‘মা’ কে নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেনের সহজ উচ্চারণ-
‘‘ স্নেহ বিহবল, করুণা ছলছল
শিয়রে জাগে কার অাঁখিরে।
মিটিল সব ক্ষুধা, সজ্জীবনী সুধা
এনেছে অশরণ লাগিরে।’’


শেখ ফজলল করিম ‘মা’ কে নিয়ে কবিতা লিখেছেন-

‘‘মা যে আমার জুঁই চামেলী
মা যে গোলাপ ফুল,
ইচ্ছে করে মাকে আমি
বানাই কানের দুল।’


‘মা’ কে নিয়ে কবি মোশাররফ হোসেন খান অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন যেমনিভাবে-

রাতের গভীরতা এলে
অাঁধারের প্রগাঢ়তা এলে
রাতের নিস্তব্ধতা নিঃশেষ করেন আমার মা
তারপর খলিয়ে অযু শেষে
প্রত্যয়ী তসবীর অাঁকা জায়নামাজে
বসে যান নূরানী তাসবীহ হাতে ধ্যানমগ্ন এক তাপসী।
জ্বলজবলে আলোক শিখায় মায়ের ধবধবে সফেদ শাড়িকাবৃত
দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়
ছোট ঘরটিতে নেমে এসেছে যেন ধবল জোৎস্না স্নাত
স্বর্গীয় গেলেমান
সারা ঘরটি মুখরিত করে ছেলের কল্যাণ কামনায়
দীর্ঘ মোনাজাতের সমাপ্তি ঘটান আমার মা।

(মাকে- মোশাররফ হোসেন খান)

কবি আবিদ আজাদ ‘মা’ কে নিয়ে লিখেছেন-

‘‘মা এই একটি শব্দ ছাড়া তোমাকে ধারণ করতে পারে
আর কোনো শব্দ নেই মানুষের ভাষার অভিধানে
এই শব্দের মধ্যেই আমার হাসি ও কান্নার নীলিমায় আশ্রয়
এই শব্দের মধ্যেই বারবার ঘূর্ণি তুলে
দাঁড়ায় আমার মুক্তি ও স্বাধীনতা।’

(মা- আবিদ আজাদ)

এ সময়ের ব্যস্ত কবি আব্দুল হালীম খাঁ বলেন-

‘‘মা সে এক চাঁদ যেন হৃদয় আকাশে,
নিশিদিন তার মুখ, দু’টি চোখে ভাসে।
সুখে দুঃখে ‘মা’র কথা মনে শুধু জাগে
মা, কথাটি শুনতেই বড়ো ভালো লাগে।’’

(হৃদয়ের চাঁদ- আব্দুল হালীম খাঁ)

‘মা’ কে নিয়ে কবি মোল্লা মাজেদের কলম গেয়ে যায়-

পৃথিবীর যত সুধা মানিক রতন
সব ভুলি, ভুলি নাতো মায়ের যত্ন
মায়ের পায়ের তলে জান্নাত খানি
সুখের পরশ মাখা অাঁচল খানি।
জান্নাতী সওগাত জানি শুধু মা
ধরনীতে নেই কোনো তার তুলনা,
এমন মায়ের পায়ে রাখলেই ভক্তি
ইহকালে পরকালে তার ভালে মুক্তি।

(মুক্তি- মোল্লা মাজেদ)

‘মা’ কে নিয়ে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্র অন্য রকম অনুভূতি-

মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?

(মাগো ওরা বলে- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্)

মানসুর মুজাম্মিল ‘মা’ কে নিয়ে লিখেন-

‘‘মাকে আমার মনে পড়ে,
মনে পড়ে মাকে,
হিমহিম ভালোবাসা
উম দিয়ে রাখে।
তার সাথে কতোদিন কতো রাত
স্মৃতি হয়ে ভাসে
মনে হয় মা জননী এই চার পাশে।
হাসি খুশি সেই মা যে
কই গেল কই
আকাশের ওই পারে চেয়ে দেখি ওই।’

(মা- মানসুর মুজাম্মিল)

‘মা’ কে নিয়ে এস.এম কাইয়ুম লিখেন-

‘‘আমায় ছেড়ে বল মা আগে
তুই যাবি না দূরে,
যেতে হলে আমি যাবো
সুদূর অচিন পুরে।
তুই ছাড়া মা একলা আমি
থাকবো কেমন করে
তার চে ভালো তোর আগে মা
আমি যাবো দূরে।’’

(আমি যাবো আগে- এস এম কাইয়ুম)

বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি আল মাহমুদ ‘মা’ কে নিয়ে লিখেছেন-

আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
… … … …
বনের কাছে এই মিনতি ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।

(নোলক- আল মাহমুদ)


তরুণ কবি আবিদ আজম মাকে নিয়ে হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি প্রকাশ করেছেন-

প্রশ্ন করি মা’কে-
সবচে’ বেশি ভালোবাসে কাকে?
ভাইয়া-আপু-আমি-টুনু
পুচকে রাজুটাকে।
খুব হেসে কন মা’ যে
এমন কথা সাজে-
তোদের নিয়েই বুকের মাঝে
সুখের বাঁশি বাজে।

(মায়ের সাথে- আবিদ আজম)

এভাবে কবি সাহিত্যিকগণ যুগ যুগ ধরে নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে মা’কে নিয়ে কবিতা রচনা করে ধন্য ও গৌরবান্বিত হয়েছেন এবং নিজেদের সাহিত্য ভান্ডারকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছেন।

সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×