somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নেপাল ভ্রমন কাহিনি - পর্ব ৩ পোখারা

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন হয়ে গেল ৩য় পর্ব লিখবো লিখবো করে লেখার সময় ই পাইনা। চাকরী আর এমবিএ নিয়ে জীবন দুর্বিসহ অবস্থা। এর মাঝেই আজকে লিখতে মন করলো, তাই লিখলাম।

প্রথম পর্ব
২য় পর্ব

৩য় পর্ব

খুব সকালে উঠে পড়লাম। সূর্য তখন ওঠেনি। উঠবেই বা কি করে, অন্নপূর্নার পড়শে সুর্যদয় দেখার জন্যেই যে রাত ৪ টায় উঠেছি। ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এর ই মধ্যে ট্যাক্সি ড্রাইভার এসে দরজায় ধাক্কা দিল। ওর সাথেই বেড়িয়ে পড়লাম। একদম ভোর রাতে রওনা দিলাম সারেংকোট। কিছুদুর যাওয়ার পর ই গাড়ি পাহারে উঠতে শুরু করল। উঠছে তো উঠছেই, থামার নাম নেই। ভাবলাম আকাশেই কি পৌছে যাই :D । অনেক্ষন উপরে ওঠার পর গাড়ি থামল। দেখলাম আগে থেকেই বাসে করে করে অনেক ট্যুরিস্ট এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম তাদের সাথে অন্নপূর্নার পেছন থেকে সূর্যাস্থ দেখার জন্যে।



মোটামুটি সবাই জাপানী এবং চীনা নাগরীক। কয়েকজন বাংলাদেশি এবং ভারতীয়দের ও দেখলাম। ধীরে ধীরে ট্যূরিস্ট সমাগম বাড়তে থাকলো, আমিও যায়গা মত দাড়ানোর জন্য লোকেশন খুজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।



এই যায়গাটাতে আবার ১০০ রুপি দিয়ে ঢুকতে হয়। মানে একটু উচু আরকি, ভাল দেখা যায়। আমার ড্রাইভার বলল কোনো দরকার নেই, এখান থেকেই ভাল দেখতে পাব। এবার শুরু হল অপেক্ষার পালা। কখন সূর্য মামা অন্নপূর্নার পেছন থেকে বের হয়ে আসবেন। অপেক্ষার সাথে সাথে রাতে পোখারা উপত্যাকা দেখতে থাকলাম


সারেংকট পাহার থেকে পোখারা

অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে সূর্য মামা দেখা দিল অবশেষে



জীবনে প্রথম পাহারের পেছন থেকে সুর্যদয় দেখলাম। অদ্ভুত অনুভুতি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে আসলে কিছুই করার থাকেনা। মূলত যা দেখতে গিয়েছিলাম, অন্নপুর্নার বরফের চূরা ফিশটেইল, সেটাই দেখতে পারলাম না প্রচন্ড কুয়াশার কারনে। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম কুয়াশা কাটার জন্যে, কিন্তু ওইযে ভাগ্য খারাপ। আমার ডি এস এল আর অনেক্ষন চেষ্টা করল আবছা চুড়াটার ছবি নেয়ার, কিন্তু সেও ব্যর্থ হল :(

বিষন্ন মন নিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে নেমে এলাম পোখারায়। ট্যাক্সি ওয়ালা বলল সকাল ১০ টায় তুলে নেবে সাইট সিইং এর জন্যে। হোটেল এ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল সাড়ে নয়টায় হোটেলের কমপ্লিমেন্টরি ব্রেকফাস্ট করে, বের হয়ে পড়লাম সাইট সিইং এ। প্রথমেই ড্রাইভার নিয়ে গেল বিন্দুবাসিনি মন্দির এ। ট্যুরিস্ট রা সবাই নাকি এখানে আসে, আমি আসলাম





এখানে মুলত যা দেখলাম, বেশিরভাগ ই নারী পূন্যার্থী। মনের ইচ্ছা পুরনের জন্যে মন্দিরে প্রার্থনা করছেন।।

কিচ্ছুক্ষন থেকে নেমে এলাম, পরের গন্তব্য গোরখা মেমরিয়াল মিউজিয়াম।



নেপালি গোরখাদের বিরত্বের অনেক কিছুই রয়েছে এই যাদুঘরে। টিকিট কাটলাম ১০০ রুপি (সার্ক দেশ ভুক্তদের জন্যে) । টিকিট বিক্রেতা মহিলা জিজ্ঞাসা করল আমি আমার ক্যামেরা ব্যাবহার করব কিনা, মনে মনে বললাম আবার জিগায় ;) , তাই ক্যামেরার জন্যে আরো ১০০ রুপি। যাহোক ঢুকলাম, গোরখাদের যুদ্ধের বিরত্বের ছবি, ব্যাবহৃত সামগ্রী দেখার সৌভাগ্য হল


২য় বিশ্বযুদ্ধে নেপালী গোরখাদের ব্যাবহৃত রেডিও


গোরখাদের ড্রেস


২য় বিশ্বযুদ্ধে হাস্যোজ্জল গোরখা যোদ্ধা


গোরখাদের ব্যাবহার করা তলোয়ার

কিছুক্ষন দেখার পর বের হয়ে আসলাম। ড্রাইভার কে জিজ্ঞাসা করলাম এবার কোথায়, সে বলল স্বেতী নদিতে নিয়ে যাবে। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম নদিটা হয়ত বড় হবে, পাহারী নদি, কিন্তু দেখার পর যা দেখলাম আপনারাও দেখেন




এই হল স্বেতী নদি /:) । মূলত এটি একটি পানি শোধনাগার। পাহারের এই সরু নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে পোখারায় সরবরাহ করা হয়। এই দেখতে ২০ রুপি টিকিট নিল। এতা আসলে দেখার মত কিছুনা।

যাই হোক, বের হয়ে এলাম, ড্রাইভার এবার নিয়ে গেল আমাকে বালাম ব্রিজে। জীবনে এরকম ব্রীজ টিভিতে বহু দেখেছি, কিন্তু নিজের চোখে প্রথম দেখলাম এবং চড়লাম


বালাম ব্রীজ

এরকম আরো কয়েকটা ব্রিজ আছে পোখারায় এক পাহারের সাথে অন্য পাহারের সংযোগ এর জন্যে।

কিচ্ছুক্ষন হাটাহাটি করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। পরের গন্তব্য ডেভিস ফল। ডেভিস ফল সম্পর্কে হয়ত অনেকেই জানেন, এটা একটা গভির পাহারী ঝর্না। অনেক আগে মি ডেভিস নামক একজন ব্যাক্তি এই পাহারী ঝর্নায় পরে নিহত হন। এর পর থেকেই এর নাম হয়ে যায় ডেভিস ফল।। পোখারা শহরের মধ্যেই এই ঝর্নাটি। এখানেউ টিকিট ২০ রুপি।




ডেভিস ফলস

বের হওয়ার সময় দেখলাম মাউন্ট ফিশটেইল এর চূরার রেপ্লিকা, মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেল :(

ডেভিস ফলস এর সামনেই আরেকটা স্পট মাহিন্দ্রা কেভ। এটা আরেকটি পাহারি ঝর্না । তবে এটা দেখতে পাহারের গভিরে যেতে হয়। টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। মোটামুটি একটা এডভেঞ্চার হয়ে গেল।


মাহিন্দ্রা কেভ এ ঢোকার রাস্তা। চাকতির মত নিচে নেমে গেছে সিড়ি। নিচে নামতে শুরু করলাম।


গুহায় ঢুকে পড়লাম। মনে হচ্ছিল গুপ্তধনের সন্ধানে এসেছি B-) । কিছুক্ষন হেটে পেয়ে গেলাম ঝর্নাটি।



কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। অনেকেই এলো আমি আসার পর। কয়েকজনের ফ্রী ফটোগ্রাফি করে দিয়ে ফিরে চললাম।

হোটেলে ফিরে এলাম। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে বের হয়ে পড়লাম পোখারা শহর দর্শনে। মূলত লেকসাইড এলাকা ঘুরলাম। প্রচুর দোকানপাট, সবই মূলত ট্যুরিস্টদের কেন্দ্র করে। তাই এখানকার জিনিসপত্রের দাম ও মাশআল্লাহ। কিছুক্ষন পর আমার ক্যামেরার ব্যাটারি বাবাজী সিগন্যাল দিতে লাগল। আমিও চার্জার বের করার উদ্যেশ্যে ব্যাগে হাত বোলালাম এবং আবিষ্কার করলাম চার্জার এনেছি কিন্তু ক্যাবল আনিনি দেশ থেকে :(( । মাথায় হাত পড়ল। কিছুক্ষন ভাবলাম, মুখ থেকে হাত সরাতেই একটা ক্যামেরা এক্সেরসরিজ এর দোকান পেয়ে গেলাম। পেয়েও গেলাম নাইকনের ক্যামেরা চার্জার ক্যাবল। জানে পানি আসল :D

ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে যাওয়ায় একটা হোটেল এর ব্যাল্কনিতে গিয়ে বসলাম। অর্ডার দিলাম। ব্যাল্কনি তে বসে পাহার থেকে প্যারাগ্লাইডিং দেখতে লাগলাম



খুব ইচ্ছে হল করার, কিন্তু একা একা যাওয়ায় আর সাহস পেলাম না। বিকেলে ফিওয়া লেকের ধারে ঘরাঘুরি করলাম





সন্ধ্যা হয়ে গেল। আশে পাশের দোকান থেকে নাস্তা করে নিলাম। সন্ধায় ট্যুরিস্ট শপ গুলাতে ঢু মারলাম। একটা শাল কিনলাম, একটা জ্যাকেট কিনলাম ৩০০০ রুপি দিয়ে। সব ই নামিদামি ব্র্যান্ড এর কপি ;) । আগামী কাল চলে যাব তাই ট্যুরিস্ট বাস কাউন্টার থেকে কাঠমান্ডুর টিকেট কেটে নিলাম। সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত বিধায় হোটেলে ডিনার সেরে বিছানায় চলে গেলাম।


চলবে


পরের পর্বে থাকবে নাগরকোটের হিমালয় দর্শন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:০৫
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×