somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়াস নদীর তীরে (মানা্লী ভ্রমন) পর্ব-১

১১ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বহুদিন ব্লগ লেখা হয়না। দৈনন্দিন জীবনে মেশিন হয়ে যাওয়ার কারনে ব্লগ পরা বা লেখা কোনোটাই হয়ে ওঠে না। তার পরেও নিজের ভ্রমন অভিজ্ঞতা ব্লগেই প্রকাশ করতে আনন্দ বোধ করি।

মূলত যাওয়ার কথা ছিল পশ্চিমবংগের শৈলশহর দার্জিলিঙ্গে। গিন্নিকেও জানালাম আমার ভ্রমনের ইচ্ছার কথা। সে যথারীতি অবিশ্বাস করে আমার কথার কোনো পাত্তা দিলনা। কেন দিলনা এর কারন হল আমি ঠিক যতবার ই ভ্রমন পরিকল্পনা করেছি ততবার ই কোনো না কোনো ভাবে সেই পরিকল্পনা ফ্লপ হয়েছে মানে যাওয়া আর হয়নি। তাই আমি এক প্রকার কুফা হিসেবে পথিকৃত। যাই হোক, আমার ভ্রমন গন্তব্য প্রতিবার ই পরিবর্তন হয় এবং শেষমেষ যাওয়া আর হয়না। তবে এবার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম যেভাবেই হোক যাবো। যথামত আমি আমার পাসপোর্ট নবায়ন এবং গিন্নীর পাসপোর্ট করতে দিলাম। সব ই ঠিক চলছিল হঠাত আমি গন্তব্যস্থল বদলে দার্জিলিং এর যায়গায় মানালি ঠিক করলাম। এতে আমার গিন্নীর সন্দেহ চুড়ান্ত হল এবং সে প্ল্যান ফেইল বলে চুড়ান্ত মতামত দিল :|

তবে এবার যেহেতু যাবই বলে ঠিক করেছি, তাই এবার পিছপা হওয়ার উপায় নাই। ্তাই যতদিন পাসপোর্ট না আসলো, ততদিন মানালী নিয়ে রিসার্চ করা শুরু করলাম। ভ্রমনের পুর্বে ইন্টারনেট রিসার্চ অনেক বেশি কাজে দেয়। এতে অনেক তথ্য পাওয়া যায় ভ্রমনের। আমি যতবারই বাইরে গেছি, এই ইন্টারনেট রিসার্চ এর বদৌলতে। যাহোক, অনেক তথ্যই আমি পেয়েছি যা আমাকে ভারত ভ্রমনে শতভাগ কাজে দিয়েছে। তাছারা ভারত এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি, তাই অনেক কিছুই চেনা জানা ছিল। যে তথ্য আমাকে প্রধনাত সাহাজ্য করলো তা হল আমি যখন যেতে চাচ্ছি তখন মানালীতে পিক সিজন। এই সময়ে হোটেল বুকিং না দিয়ে গেলে হোটেল পেতে সমস্যা হতে পারে। আমি ভাবলাম একা গেলে কোনো মতে হোটেল পেয়ে যেতাম, কিন্তু গিন্নী নিয়ে গেলে রিস্ক নেয়া ঠিক হবেনা। তাই ঠিক করলাম এখান থেকেই হোটেল বুক করে যাব। আমার এক রিলেটিভ ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার হওয়ার সুবাদে তার মাধ্যমেই মানালীতে হোটেল বুক করে ফেললাম। ৩০০০ টাকা করে ২ রাত ৬০০০ টাকা। হোটেল টা একটু এক্সপেন্সিভ হয়ে গেল কারন বুক করে গেলে মোটামুটি ভাল হোটেল ছাড়া বুক করা যায়না। যাহোক এর মধ্যে পাসপোর্ট এসে গেল ২জনের ই । আমি মূলত ২ মাস আগে প্ল্যান করি যাওয়ার, এবারো তাই করেছি। এখন কিভাবে যাব তা নিয়ে চিন্তা অনেক দূর গড়াল। মানে জুন মাসে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার প্ল্যান করেছি। তাই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার দিন থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। এখন বাই রোডে গেলে ঠিক সময়মত কলকাতা পৌছাবো কিনা এই চিন্তা করতে করতে প্ল্যান গিয়ে ঠেকলো বাই এয়ারে। চাকুরিজীবীদের এই একটা সমস্যা, ছুটির সময়ের সীমাবদ্ধতার কারনে ঠিক মত ট্যুর করা যায়না, খরচ বেড়ে যায়। তো যা হোক, এখন যেহেতু বাই এয়ারে যেতে হবে তাই ঢাকা কলকাতা, কলকাতা-দিল্লী এয়ার টিকেট কেটে দিলেন আমার রিলেটিভ। মানুষ এখন কি পরিমান ভারতে যায় তা বিমান বাসের টিকেটের অপ্রাপ্যতাই প্রমান করে। যাত্রার ১ মাস আগে ঢাকা-কলকাতা রূটের সব ফ্লাইটের টিকেট সোল্ড আউট ছিল বিজনেস ক্লাস সহ। ভাগ্যিস ২ মাস আগে টিকেট কেটেছিলাম।

মোটামুটি হোটেল বুকিং, প্লেনের টিকেট সব ই কনফার্ম। এখন মেইন কাজটাই বাকি রয়ে গেছে মানে ভিসা নেয়া। ভারতের ভিসা এখন বেশ সহজলভ্য। রিটার্ন টিকেট দিলেই ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। সেই সুযোগটা নিলাম। ভিসাও দিয়ে দিল ৭ দিন পর। ভিসা নেয়ার সময় এক ডকুমেন্ট ভুল দেয়ার কারনে সারা সপ্তাহ ২ জন মোটামুটি চরম টেনশনে ছিলাম, সে আরেক কাহিনী। যাহোক, ভিসা পেয়ে গেসিলাম। এখন শুধু যাওয়ার পালা।

এদিকে যাওয়া সংক্রান্ত কাজ গুলো সারতে সারতে যাওয়ার দিন এসে গেল। আমাদের ফ্লাইট ছিল সকাল ৯টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স।বিমানে টিকেট কেটে কিঞ্চিত টেনশনে ছিলাম যে আদৌ আজকে কলকাতা পৌছাতে পারব কিনা। কারন বিমানের রেপুটেশন আমরা সবাই জানি :|| । ওদিকে কলকাতা পৌছেই দুপুর ২টায় দিল্লীর ফ্লাইট, তাই বিমান লেট হলে দিল্লীর ফ্লাইট মিস। যাহোক, আল্লাহর নাম নিয়ে সকাল ৭টায় পৌছে গেলাম হযরত শাহজালাল এয়ারপোর্টে। আমার ধারনা ভূল প্রমান করে বিমান ঠিক সময়ে বোর্ডিং পাস ইস্যূ করছিল। জানে পানি আসল। বোর্ডিং আর ইমিগ্রেশন শেষ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা ২জন।



আমাদের ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতা যাবে। মোটামুটি ঠিক সময়েই ছাড়ল আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। চট্টগ্রামে যাত্রি নামিয়ে ২০ মিনিট পর আবার আকাশে উড়ল বিমান, এবার গন্তব্য কলকাতা :)

কিচ্ছুক্ষন পরেই আমাদের বিমান বালা (মতান্তরে বিমান খালা ;)) খাবারের ট্রলি নিয়ে ঢুকলেন। খাবার পেয়ে মনে হল কলকাতা যাচ্ছি বলেই কলকাতার দাদাদের মত খাবারে কিপটামি করা হয়েছে। স্যান্ডুইচ দেখে বোঝার উপায় নেই এটা পাওরুটি্র ফেলে দেয়া টুকরা না স্যান্ডুইচ। কেক যতটুকু দিয়েছে ততটুকু আমি মোটামুটি ফেলেই দ্লা। অনেক আশা নিয়ে বাদামের প্যাকেট টা খুললাম, প্যাকেটে কাজু বাদামের ছবি দেয়া থাকলেও বের হল বর সাইজের চীনা বাদাম, ধুর শ্লা X(( । যাহোক, কোনো মতে চিবুতে থাকলাম আর আকাশ দেখতে লাগলাম।

মোটামুটি ঠিক সময়ে বিমান কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করল। ইমিগ্রেশনে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করলনা। সব তারাতারি ই সম্পন্ন হল।এদিকে তাকিয়ে দেখি আমা্দের সাথে এসেছেন দুনিয়া কাপানো রন্ধন শিল্পী কেকা ফেরদৌসি। ভদ্রমহিলা বিজনেস ক্লাসে থাকায় এই গরিবের চোখ পরেনি আগে। আমার গিন্নী অবশ্য আগেই তাকে দেখেছিল। মনে মনে ভাবলাম, হায় শেষমেশ কলকাতার দাদাদের কি তিনি নুডুলসের খিচুরি খাওয়াতে এলেন ;)

ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে আমরা ডলার ভাঙ্গানোর বুথ খুজতে বের হলাম। এখানে আমাদের শাহজালাল এয়ারপোর্টের মত ডলার কারবারি নেই যারা ফেরত যাত্রি দেখলেই ভাই,মামা,খালু বানিয়ে ফেলে যাত্রিদের ডলার ভাঙ্গানোর জন্য। ্তবে এয়ারপোর্টে কখনোই ডলার ভাঙ্গানো উচিত নয়। এরা ডাকাতের মত রেট কম দেয়। সেটা অবশ্য আমার আগেই জানা ছিল তাই শুধুমাত্র দিল্লী পর্যন্ত খরচ চালানোর জন্য ১০০ ডলার ভাঙ্গালাম। রেট রিতীমত ভয়াবহ, ১০০ ডলারে রেট দিল ৬১.৩০ + ২৫০ টাকা সার্টিফিকেট ফি, যেখানে কলকাতায় রেট ৬৫.৫০ :( । কিছুই করার নেই। বেটা আবার বলে দাদা ৩০০ ভাঙ্গালে ৬২ করে দিব। মনে মনে যা বললাম যা ব্লগে প্রকাশযোগ্য নয় X( । ডলার ভাঙ্গিয়ে ডোমেস্টিক টার্মিনালে চলে গেলাম জেট এয়ারওয়েজ এর চেক ইন কাউন্টারে। এসে শুনি দিল্লী ফ্লাইট ১ঘন্টা লেট। কি আর করা, বোর্ডিং নিয়ে সিকিউরিটি চেক ইন করে লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে লাগলাম ২জন। এদিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতায়। ফাকা রানওয়েতে মুশলধারে বৃষ্টি দেখতে দেখতে সময় এসে গেল ফ্লাইটের।



কিচ্ছুক্ষন পর ছেরে দিল ফ্লাইট। আমরাও বৃষ্টি কাটিয়ে মেঘের ওপরে উঠে এলাম ১৬০০০ ফুট এবং উপরওয়ালার লীলা দেখতে লাগলাম, ওপরে কিছুই নেই, নিচে তুমুল বৃষ্টি। জেট এয়ারের বিমান বালাকে দেখে আমার বাংলাদেশ বিমানের বিমান খালার কথা মনে পরে গেল, আহারে কতই না পার্থক্য। এদিকে গিন্নী চোখ পাকিয়ে কি যেন বলল ;)


জেট এয়ারের খানা

যথাসময়ে আমাদের ফ্লাইট ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরন করল।

চলবে

২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৩৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×