somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়াস নদীর তীরে ( মানালী ভ্রমন) পর্ব-৪- মানালী

১৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
৩য় পর্বের পর



সকালে চোখ খুলে দেখি বিশাল পাহারের ওপরে আমাদের বাস। ঘুম এ আচ্ছন্ন অবস্থায় মনে হল কি ব্যাপার বান্দরবান চলে আসলাম নাকি। পরে অবশ্য আশেপাশের হিন্দি লেখা দেখে ভুল ভাংগলো। হিমাচল প্রদেশে ঢোকার সময় পাহাড়ি রাস্তা গুলো দেখে বান্দরবানের কথাই মনে হওয়ার কথা, কারন বান্দরবানের সাথে এই রাস্তার যথেষ্ট মিল আমি পেয়েছি। গিন্নীর দিকে তাকিয়ে দেখি সে অতি আগ্রহের পাহাড় দেখে যাচ্ছে। আমিও যোগ দিলাম তার সাথে পাহাড় দর্শনে।




আমাদের পৌছানোর কথা ছিল সকাল ৯ টার ভেতরে। কিন্তু বাসের যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে ঘুম থেকে উঠেও আবিষ্কার করলাম মানালি এখনো প্রায় ২৫০ কিমি, তাও পাহাড়ি রাস্তা। এদিকে বাসের যে অবস্থা তাতে বসে থাকাও প্রচন্ড কষ্টের। কিন্তু কিছুই করার নেই। আশেপাশের যাত্রিদের অবশ্য এ নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হলনা। তারা এতেই অভ্যস্থ। হিমাচল প্রদেশে ঢোকার পড়েই দেখি ড্রাইভার পরিবর্তন হয়ে গেছে। যে ড্রাইভার আমাদের দিল্লী থেকে নিয়ে এসেছিল সে নেমে গিয়ে আরেকজন উঠেছে। এতো দুরের পথ বলেই এই ব্যাবস্থা সম্ভবত। বাস সে চালাচ্ছেও প্রায় ভালই গতিতে। এই পাহাড়ি রাস্তায় এতো স্পিডে গাড়ি চালানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এরা দক্ষ চালক বলেই পারছে। বেশ কিছু ছোট শহর সুন্দরনগর, বিলাসপুর, বরমানা ইত্যাদী পার হয়ে বাস এসে থামলো মান্ডিতে একটা ছোট পারিবারিক ঢাবায় সকালের নাস্তার জন্য। ঢাবাটি একজন হাজবেন্ড ও ওয়াইফ মিলে চালায়। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ভাবলাম কিছু খেয়ে নেই। খুব বেশি কিছু নেই, আলুর পরটা সাথে অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় এই পরিমান মাখনের টুকরা। কি আর করা, তাই ২ জনে সাবাড় করে দিলাম। বিল আসলো ৬০ রুপি :||। আমি ভেবেছিলাম ৩০ রুপি হবে। কিছু পরেই বাস ছেরে দিল আর আমরাও ছোট পাহার থেকে বড় পাহাড়ে উঠতে লাগলাম।

দুপুর ২ টা বাজে আমরা কুল্লু পৌছালাম, যেখানে আমাদের মানালী পৌছানোর কথা সকাল ৯ টায়। অসহ্য এই জার্নিতে আমরা ২ জনেই অনেক ক্লান্ত। কুল্লুতে নেমে আমাদের বাস পরিবর্তন করতে হল। আমাদের হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্টের একটা লোকাল বাসে উঠিয়ে দিল।


কুল্লু বাস স্ট্যান্ড

কুল্লু পার হয়ে মানালীর পথে আসতেই এর সৌন্দর্য চোখে পড়তে লাগলো। অদ্ভূত সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অপরুপা বিয়াস নদী। পাথুরে এই স্রোতসীনী নদী দেখে আমাদের গত ১৭ ঘন্টার অসহ্য জার্নির কষ্ট ভুলে গেলাম। যদিও এর মধ্যে প্রায় আরো ১ ঘন্টা পাহাড়ি জ্যামে আটকে ছিলাম, তার পরেও আশেপাশের সিনারি চোখ জুড়ানো। প্রায় ২১ ঘন্টার দীর্ঘ জার্নির পর আমরা মানালি মল রোডে এসে পৌছালাম। বাস থেকে নেমে একটা সি এন জি ডাকলাম হোটেলে যাযয়ার জন্য। ভারা শুনে আমি প্রায় অজ্ঞান, অল্প এতোটুকু রাস্তার জন্য ১০০ রুপি ভারা চাইছে। আমি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা ধরেছিলাম। মানালি ট্যুরিস্ট এলাকা হওয়ায় এখানে ট্যাক্সি ভারা মারাত্তক রকমের বেশি। এতো দীর্ঘ জার্নি করে এসে আর কথা বারালাম না, উঠে পড়লাম।





মাত্র সাড়ে ৩ মিনিট লাগলো হোটেলে আসতে। আমাদের হোটেল নাম ছিল সুরিয়া ইন্টারন্যাশনাল। এটা বিয়াস নদীর উলটো দিকে নাজ্ঞার রোডে অবস্থিত। হোটেলে ঢুকে বুকিং কাগজ দেখালাম। ম্যানেজার কিছুক্ষন ঘুড়াঘুরি করে এসে আমাকে একটা বিপদজনক সংবাদ দিল আর তা হল তারা নাকি এই বুকিং সম্পর্কে অবগতই নয় :| আমি পুরোপুরি আকাশ থেকেই পড়লাম। ম্যানেজার অবশ্য আমাকে বসতে বলে অনুরোধ করলো বুকিংটা যার মাধ্যমে করিয়েছি তার সাথে যেনো একটু যোগাযোগ করি। এদিকে আমার সিমটাও এক্টিভ হয়নি, মহা বিপদ। এখন ফোন করি কি করে? হঠাত ভাইবারের কথা মনে আসায় ম্যানেজারের কাছ থেকে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নিয়ে ঢাকায় আমার রিলেটিভকে ফোন দিলাম যিনি আমার হোটেল বুকিং করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঘটনা শুনে সাথে সাথে পদক্ষেপ নিলেন এবং কিছুক্ষন পর ই ম্যানেজার আমাকে ডেকে দু:খ প্রকাশ করল। আসলে ২ মাস আগের বুকিং, ২ পক্ষের কেউ ই বুকিং করার পরে যোগাযোগ রক্ষা করেনি। তাই এই অবস্থা। মোটামুটি সৎবিত ফিরে পেলাম। নাহলে আজকে কিভাবে রুম পেতাম তা ভেবে পেলাম না। মানালীতে অনেক হোটেল থাকলেও এটা হল একদম পিক সিজন। সব হোটেল ই প্যাকড থাকে। অবশ্য আজকের রাত আমাদের অন্য হোটেলে রুমের ব্যাবস্থা করেছিল হোটেল কারন আজকে কোনো রুম ফাকা ছিল না। পাশের হোটেলেই রুমের ব্যাবস্থা করে দিল তারা।


মানালি মল রোড




বিয়াস নদী

ফ্রেশ হয়ে, খানিকটা রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ২ জনে। এখন অবশ্য হেটেই মল রোডে গেলাম। পাহাড়ি রাস্তাতেও খুব সুন্দর ভাবে ফুটপাথ নির্মান করা হয়েছে। পাহারের সাথে বিয়াস নদীর ওপরে ঝুলন্ত ফুটপাথ। মল রোডে এসে একটা মনে পড়ল দুপুরের খাওয়া হয়নি। এদিকে খুব বেশি ভারি খাবারও খেতে ইচ্ছে করছেনা। তাই হালকা কিছু খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মল রোডে প্রচুর রেস্টুরেন্ট আছে। বেশিরভাগ ই পাঞ্জাবী ঢাবা টাইপের। এক যায়গায় দেখলাম মমো বিক্রি করছে। ১ প্লেট মমো নিয়ে নিলাম। দাম পড়ল ৮০ রুপি। মল রোডে খাবারের দাম মাশ আল্লাহ। তাই দাম দেখে কিনবেন। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষন বসে থাকলাম মল রোডে। মল রোডে সব কিছুই রয়েছে। খাওয়ার দোকান, হোটেল, ট্রাভেল এজেন্ট। কিছুক্ষন বসে আমরা মানালী টাউন ভিসিটে বের হলাম।



প্রথমে হাডিম্বা দেবীর টেম্পলে যাব বলে ঠিক করলাম। মহাভারতের রাক্ষসি হিড়িম্বার নামকরনে মন্দীর টি নির্মান করা হয় ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। মহারাজা বাহাদুর সিংহ এই মন্দীরটি নির্মান করেন। মল রোড থেকে ওল্ড মানালীর দিকে হাটা ধরলাম। ট্যাক্সির যে ভারা তাতে হেটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মন্দিরটা বেশ উচুতে। পাহাড়ি শহর হওয়ার কারনে রাস্তাও অনেক উচুতে। উঠছি তো উঠছি, রাস্তাই শেষ হয়না। এতো উচুতে একবার ভাবলাম ট্যাক্সি না নিয়ে ভুল ই করলাম নাকি। অবশেষে ৩ বার রেস্ট নেয়ার পর এসে পৌছালাম হাডিম্বা দেবির মন্দীরে।


হাডিম্বা দেবি টেম্পল

প্রচুর মানুষ লাইন দিয়ে রেখেছে মন্দিরের প্রসাদ নেয়ার জন্য। আমাদের তো আর এসবের ইচ্ছা নেই, তাই বাইরে থেকেই দেখতে লাগলাম। পাহাড়ি বনের মধ্যে মন্দিরটি দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। বেশ কিছু ছবি নিলাম। প্রায় ২০ মিনিট মত থেকে নিচের দিকে রওনা দিলাম। হাডিম্বা মন্দীরে আসার জন্য অনেক উপরে উঠতে হয়, আর এই কারনে নিচের মানালির অপরুপ সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।



বেশ কিছু ছবি নিয়ে নিচে নেমে আসলাম। হাটতে হাটতে আমাদের অবস্থা খুব ই খারাপ। তাই মল রোডে বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। এদিকে মনে পড়ল আগামীকাল রোহতাং পাস যাবো, এর জন্যে গাড়ি ভারা করতে হবে। রোহতাং পাস মানালীর অন্যতম আকর্ষন। উঠে পড়লাম। মল রোডেই হাটতে হাটতে প্রচুর ড্রাইভার পেলাম যারা রোহতাং পাস যাওয়ার অফার করছে। মূলত মল রোডে অবস্থিত মানালি ট্যাক্সি ইউনিয়ন এর সামনেই এদের পাওয়া যায়। আমিও পেয়ে গেলাম একজন কে। ভারা ঠিক হল ৫৫০০ রুপি। রাত ৩ টায় হোটেল থেকে নিয়ে যাবে আমাদের। এখানে গাড়ি ভেদে দামের তারতম্য হতে পারে। বড় গাড়ি হলে ভারাও বেশি। রোহতাং পাস শেয়ারেও যাওয়া যায়। বহু ট্রাভেল এজেন্ট আছে এখানে যারা শেয়ারড ট্যাক্সি চালায় রোহতাং পাসে। আমরা ২ জনে একটু আরাম করে যাওয়ার জন্য ছোট একটা মারুতি আল্টো গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। ড্রাইভার সিলেক্ট করার আগে তার পারমিট চেক করে নেয়া ভাল। রোহতাং পাসে সব গাড়ি যেতে পারেনা। নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি যাদের ওইদিনের পারমিট আছে তারাই যেতে পারবে। পারমিট ডেইলি বেসিস এ অনলাইন এ পাওয়া যায় যা নিজেও করা যায়।


রাতের মানালী

সন্ধ্যা হয়ে এলো। কিছুক্ষন মল রোডে বসে থাকলাম। রাতের খাওয়ার জন্য হালকা কিছু কিনে নিলাম। পরে হোটেলে ফিরে যাই। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম এসে গেল।

চলবে

৫ম পর্ব - রোহতাং পাস
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×