somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোমান্টিক ইসলাম!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


----------------
--- আচ্ছা, ইসলামে কি রোমান্টিকতা আছে?
--- এটা কোনও প্রশ্ন হলো? রোমান্টিকতা নেই মানে, আলবৎ আছে।
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)। তার কথা মনে হলেই হৃদয়পটে ভেসে ওঠে আব্বাসী খলীফার দরবার। একজন বৃদ্ধকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে। আর তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলছেন:
-কুরআন কারীম মাখলুক নয়। আমাকে কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ দাও।
.
অথবা হৃদয়পটে ভেসে ওঠে, একজন আলিম মসজিদে বসে হাদীস ও ফিকহের দরস দিচ্ছেন। হাজার হাজার ছাত্র তাদের ঘিরে রেখেছে।
.
এমন একজন মানুষ রোমান্টিকতার ওপরও ক্লাস নিচ্ছেন, ছেলেকে প্রেম নিবেদন শেখাচ্ছেন, ভাবা যায়? বাস্তবে তাই ঘটেছে। একটা বর্ণনায় এমনি একটা ঘটনা পেলাম। মুল ভাব ঠিক রেখে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।
.
ইমাম সাহেবের ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক। একদিন ফাঁক করে পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন। আন্তরিক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন:
--- ওয়ালাদী! তুমি কি সুখী হতে চাও?
--- না‘আম ইয়া আবী!
--- তাহলে তোমাকে তোমার হবু জীবনসঙ্গীনির জন্যে দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।
-কী সেগুলো? কোথায় পাওয়া যাবে?
-তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। কিনতেও হবে না। আমার কাছে, তোমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলো আছে। সবাই ব্যবহার করতে পারে না, এই যা। চলো দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?
-----------
প্রথম ও দ্বিতীয়: নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি-রসিকতা পছন্দ করে। নখরা-ন্যাকা তাদের স্বভাবজাত। তারা ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে।
তুমি একান্তে তোমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে।
যদি এসবে কার্পন্য করো, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে।
-----------
তৃতীয়: নারীরা কঠোর-কর্কশ-রূঢ়-বদমেজাযী-রুক্ষ্ণ স্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তুমি তোমার মধ্যে যদি এমন কিছু থেকে থাকে এখনই ঝেড়ে ফেল।
কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্যে, তাকে আশ্বস্ত করার জন্যে হলেও গুণগুলো অর্জন করো।
-------
চতুর্থ: এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন-সুন্দর-পরিপাটি-গোছালো-সুরুচিপূর্ণ-সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়।
তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই, তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।
--------
পঞ্চম: ঘর হলো নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়। রচনা করে।
তুমি খুবই সাবধান থাকবে! কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেওনা। এমনকি তাকে তার সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।
তুমি তো জানোই, আল্লাহ তা‘আলার কাছে, সবচেয়ে অপছন্দীয় বিষয় কী?
--- তার সাথে কোনও কিছুকে শরীক করা।
--- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী?
--- তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।
----
ষষ্ঠ: নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে-সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে কাছে পেতে চায়। পাশাপাশি তার বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না।
হুশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা। তুমি এ অন্যায় দাবীও করে বসো না:
--- হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।
তুমি এ বিষয়টা এমনকি চিন্তাতেও স্থান দিও না। যদি তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করোও, সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে, কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা-বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে চারিয়ে উঠবে।
------------
সপ্তম: তুমি জান, অনেক শুনেছ, পড়েছ: নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাঁজরের) বাঁকা হাড় থেকে।
এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য। তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছো? সেটার সৌন্দর্যটা কেথায়?
-বক্রতায়।
--- একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রুকে সুন্দর করে তোলে। ভ্রুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না।
যদি তোমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, সাথে সাথেই অস্থির হয়ে, রেগেমেগে তাকে হামলা করে বসো না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেয়ো না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যেতে পারে। আর ভাঙা মানে বোঝোইতো: তালাক।
আবার সে অনবরত ভুল করে যেতে থাকলে, কিছু না বলে, ভেঙে যাওয়ার ভয়ে, লাগামহীন ছেড়েও দিও না। তাহলে তার বক্রতা আরও বেড়ে যাবে। সে নিজের ভেতরে গুটিয়ে যাবে। তোমার প্রতি তার আচরণ উদ্ধত হয়ে যাবে। তোমার কথায় কান দিবে না।
--- আমি তাহলে কী করবো?
--- তুমি মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে।
-----------
অষ্টম: তুমি হাদীসটা পড়ো নি?
-কোনটা আব্বাজান?
--- ঐ যে, যার ভাবার্থ হলো:
= নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়।
তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনোক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে:
--- আমি তোমার কাছ থেকে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।
দেখো বাছা! তুমি তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি মনে বিতৃষ্ণা এনো না।
তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, তার জন্যে তুমি জানও লড়িয়ে দিতে পারো।
---------------
নবম: নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। এক সময় এক রকম থাকে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজায ঠিক হওয়া পর্যন্ত।
তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা। তুমিও তোমার রবের গুণে গুণান্বিত হও। রব্বানী হও। তুমি তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে। তোমার আব্দার-আবেগ শমে রেখো। তোমার রবও খুশি হবেন, তোমার রাব্বাহও খুশি হবে, কৃতজ্ঞ হবে।
-----------
দশম: সব সময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে, তার প্রতি অনেক বশি মনোযোগ দিবে, তাকে আপন করে নিবে। তাহলে সে তোমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিশেবে পাবে।
---------------------------------
(কারো কারো মতে ঘটনাটা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের নয়, অন্য কারো)।
.
দ্বিতীয় অঙ্ক:
পটিয়াতে একটা বিখ্যাত গ্রাম আছে। নাম আশিয়া। আমাদের বন্ধু তৈয়বের বাড়ি এই গ্রামে। আমরা মাঝেমধ্যে, বৃহস্পতিবারে ছুটি হলে, দলবেঁধে তার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। খুবই সুন্দর একটা গ্রাম। পটিয়ার মানুষ এমনিতেই বৃক্ষবান্ধব। সবাই গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহী।
.
আশিয়া গ্রামটাও ছায়াঘেরা নিবিড়। স্নিগ্ধ। মনোরম। সেদিন আমরা পৌঁছতে পৌঁছতে রাত হয়ে গেছে। আমজুর হাট নেমে হেঁটে হেঁটেই দীর্ঘ পথ এসেছি। এতগুলো সদ্য কৈশোরের শেষ সীমায় পৌঁছা একদল ছেলে একসাথ হলে, গাড়িতে উঠতে ইচ্ছে করে? গ্রামের পথ তো গাড়িতে চড়ার জন্যে নয়, হাঁটার জন্যে। গ্রামের পথ তো চাঁদনী রাতে অভিসারে বের হওয়ার জন্যে।
.
তৈয়ব আগে থেকেই বলে রেখেছিল, আমাদের জন্যে বিশেষ কিছু একটা অপেক্ষা করছে। বাড়ি গেলাম। চিনিপানা (শরবত) দিল। আরও নানা আয়োজন। দিলদরাজ পরিবার। মুক্তহস্ত। উপুড়হৃদয়। সাথে ছিলাম আমি দুই ফারুক। সাইফুল। মাকসুদ। বিশাল দল।
.
কিছুক্ষণ পর একে একে অনেকে এল। তৈয়ব সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় নাম বললো: বাসর।
-কী নাম বললি?
-বাসর। বাসর।
-যাহ! বাসর কারো নাম হয় নাকি?
তৈয়ব মিটিমিটি হেসে জবাব দিল:
-হয় রে হয়! কিভাবে হয় একটু পরেই টের পাবি।
.
রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকে গেল। অবাক হয়ে দেখলাম আশেপাশের বাড়ি থেকেও মেয়ে-মহিলারা পানের বাটা, তালপাখা নিয়ে একজন-দু’জন করে উঠোনে হাজির হচ্ছে। আমরা তো আগে থেকেই বিশাল বড় উঠোনে শীতল পাটিতে গা এলিয়ে দিয়েছি। আকাশের তারা গুনছি। এলোমেলো গল্প করছি।
.
তৈয়ব কাছে নেই। সে দৌড়াদৌড়ি করছে। উঠোনের একপাশে একটা মঞ্চের মতো কী যেন একটা সাজাচ্ছে। আমরা জিজ্ঞেস করলে বললো, সার্কাসের মঞ্চ সাজাচ্ছি। আমরা জুলজুল চোখে তাকিয়ে আছি। কী হয় কী হয়? আগামীকাল সারাদিন কী করবো তার পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। মাকসুদ সাঁতার জানে না, তাকে সাঁতার শেখাতে হবে। পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে হবে। ক্ষেতে মিষ্টি আলু করা হয়েছে, সেটা তুলে খেতে হবে। আর কত কী!
.
মঞ্চ সাজানো হলো। এবার সবাইকে দেখলাম মঞ্চের চারপাশ ঘিরে বসছে:
-তৈয়ব এবার বল না, কী হচ্ছে?
-বাসর হবে, বাসর।
-সেটা আবার কী?
-এ্যাই ব্যাটা, বাসরও বুঝিস না!
.
ছেলেমেয়ে, কিশোর-কিশোরী, বুড়ো-বুড়ি, জোয়ান-জোয়ানীতে ভরে গেছে বড় উঠোন। মঞ্চটা চারপাশ থেকে পর্দা দিয়ে ঘেরা। তৈয়বের ছোট ভাই একটা বিড়াল নিয়ে এল। বিড়ালের গলায় রশি লাগানো। সাইফুলের হাতে বিড়ালটা দিয়ে ধরে রাখতে বললো। পরে লাগবে। বিড়াল কিছুক্ষণ টানাটানি করে ছুটতে না পেরে, বিকট এক ভেচকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে পালিয়ে গেল।
সবাই বিড়ালের পিছু পিছু ছুটলো। ধর ধর ধর। সাইফুল আর ফারুক অনেক যুদ্ধ করে বেড়ালটাকে বগলদাবা করে নিয়ে এল। মাকসুদটা ভীতুর ডিম। সে এতক্ষণ আগের জায়াগতেই বসে ছিল।
.
শুরু হলো মূল পর্ব। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। বাসর দেখবো। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদেরও আর তর সইছে না। পর্দা উঠলো। অবাক হয়ে দেখলাম তৈয়বের একজন বন্ধুকে বধূবেশে একটা খাটের ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তৈয়ব গিয়ে বেড়ালটাকে মঞ্চের একটা খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে এল।
.
দুলামিঞা এল। আরে সেই বাসরই দেখি দুলা সেজে এসেছে। মৃদু গুঞ্জরণ শুরু হয়েছে। আমরা তো আগে দেখিনি, তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দুলা কাল্পনিক দরজা খুলে বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করেই এক কোনে খুঁটির সাথে বাঁধা বেড়ালটাকে হ্যাঁচকা টানে রশিসহ উঠিয়ে নিয়ে জোরে এক আছাড় মারল। বিড়াল ম্যাঁওওওওওওওও করে দৌড়ে পালাল। ভাগ্যিস মঞ্চের এককোনে একগাদা খড় জড়ো করে রাখা ছিল। বেড়ালটাকে কায়দা করে সেখানেই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। নিখুঁত ব্যবস্থা।
.
আমরা তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার অবস্থা। দুলামিয়ার সেকি ভাব। আস্তে আস্তে খাটের দিকে এগিয়ে গেল। একেবারে অননুকরনীয় ভঙ্গিতে বধূর চিবুক তুলে ধরলো। মাথার ঘোমটা সরিয়ে কপালের চুল ধরে সশব্দে দু‘আটা পড়তেও ভুলল না: আল্লাহুম্মা........।
মাকসুদ বললো:
--- এযে দেখি সত্যিকার বাসর শুরু হলো রে!
সাইফুল টিপ্পনী কেটে বললো:
-তুই মনে হয় আগে থেকেই বাসরের সাথে পরিচিত!
এবার দুজনে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
.
দুলা প্রেম গদগদ কণ্ঠে বললো:
-ওগো! চলো আগে দুই রাকাত নামায পড়ে নি। আমাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্যে, অনাগত সন্তানদের জন্যে কায়মনোবাক্যে দু‘আ করি।
.
আবার দু’জনে খাটে বসলো। নওশা বিবির হাত ধরে আলাপ শুরু করলো। সেকি ডায়লগ! পুরো মজমা হাসতে হাসতে পেটে খিল। এমননি বুধূবেশি সেলিমও হাসি চেপে রাখতে পারছে না। কিন্তু খুরশিদ মানে বাসরের মুখে হাসির লেশমাত্রও নেই। সে যেন সত্যি সত্যি দুলা।
.
এক পর্যায়ে বাসরের অভিনয় এতই পরিণত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, বধূবেশি সেলিম পর্যন্ত তন্ময় হয়ে ঘোরলাগা চোখে, নিষ্পলক তাকিয়ে ‘স্বামীর’ কথায় মাথা নেড়ে সায় দিতে শুরু করলো।
-মিলি! তুমি কিন্তু আমার ওপর রাগ করে থাকতে পারবে না। আমি রাগ করলেও না। আর শোন, আমি পুঁটি মাছের দোপেঁয়াজা খুব পছন্দ করি। কলই ডালের বড়া খেতে পছন্দ করি, তুমি না পারলে শিখে নেবে।
আর তোমার প্রিয় মাছ কোনটা সেটা আমাকে জানিয়ে দিও। বাজারে গেলে নিয়ে অাসব।
.
এভাবে প্রায় আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাসর তার সংলাপ আউড়ে গেল। শেষের দিকে তার বক্তব্যগুলো এত বেশি আবেগঘন হয়ে উঠেছিল যে, এ যে মিথ্যে, এটা যে দুষ্টুমি সেটাই উপস্থিত দর্শকদের কেউ কেউ ভুলে গিয়েছিল। কয়েকজনকে দেখলাম বারবার চোখ মুছছে।
.
শেষ করার একটু আগে, সে যখন বললো:
-মিলি! তুমি যদি পঙ্গুও হয়ে যাও, আমি তোমার সেবা করে বাকী জীবন কাটিয়ে দেব। তুমি অন্ধ হয়ে গেলে আমি তোমার হাতের লাঠি হবো। তুমি বোবা হয়ে গেলে আমি তোমার কথা হয়ে থাকব। তুমি স্মৃতিহীন হলে, আমি তোমার স্মৃতি হয়ে থাকব। তবুও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেব, নাইয়ে দেব। চুল আঁচড়ে দেব। বেনী করে দেব। তোমার সাথে সাপ-লুডু খেলব। রাতের বেলায় তালপাখায় বাতাস করে তোমায় ঘুম পাড়াব। দখিনের জানালা খুলে চাঁদনী রাত কাটাব। তোমার শিয়রে বসে গল্প শোনাব। চুলে বিলি কেটে তোমার মাথাব্যথা ভাল করে দেব। গভীর রাতে কুপি জ্বেলে তোমাকে ‘বাহির’ থেকে ঘুরিয়ে আনব। তোমার পাতের মাছের কাঁটা আমি বেছে দেব। তোমার জন্যে পিতলের তৈরী পানের বাটা এনে দিব। শেষ রাতে শীতল বাতাসের পরশে, কুন্ডুলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকা তোমার গায়ে আলগোছে সুজনি কাঁথা ছড়িয়ে দেব।
= এসব কথা শোনার পর, একটা মেয়েকে দেখলাম আঁচল চাপা হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে, দৌড়ে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে। হয়তো তার কোনও ব্যথার স্মৃতি মনে পড়ে গেছে।
অন্যদের কথা আর কী বলবো, আমাদের পর্যন্ত চোখ ভিজে উঠেছিল। আহা এমন ভালোবাসা যদি আমিও কারো কাছ থেকে পেতাম!
.
বাসর রাতে হয়তো এত কথা হয় না। এত সংলাপ হয় না। এত নাটকীয় কথোপকথন হয় না। কিন্তু এখন অবাক হয়ে ভাবি, ক্লাস টেনে পড়া একটা ছেলে এতটা নিখুঁত করে কিভাবে বাসর কথা শিখল? এত অভিজ্ঞ সংলাপই বা সে কোত্থেকে জোগাড় করলো?
.
পরে তৈয়বের কাছে জেনেছি, সে একটা বইয়ে বাসরের বর্ণনা পড়ার পর থেকেই তার মাথায় এই পোকা ঢুকেছে। প্রথম প্রথম সে একা একাই সংলাপ বলতো। পরে বন্ধুদের সাথে। অল্প ক’দিনেই সে একজন বাসরসংলাপ জিনিয়াসে পরিণত হলো। তার কথার মধ্যে কোনও রকমের অস্বাভাবিকতা ছিল না। শ্রুতিকটু কিছু ছিল না। ছিল নির্মল-নির্দোষ-নিদাঘ কথা। সুখ-দুঃখের বর্ণনা। আবেগমথিত কিছু উচ্চারণ। মনটা যে কারও ভিজে উঠবে।
.
আমরা ভেবেছিলাম নিছক একটা হাসির আয়োজন হবে ব্যাপারটা, সে নিজেই যখন কাঁদতে কাঁদতে সংলাপ বলতে শুরু করলো, বধুবেশি সেলিমের চোখ পর্যন্ত টলোমলো করতে শুরু করে দিয়েছিল।
.
খোরশেদের অভিনয় প্রতিভা দেখে, স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে, বিয়েবাড়িতে তার ডাক পড়তে শুরু হলো। সেও চুটিয়ে বাসর অভিনয় করে যেতে লাগল।
.
কিছুদিন পর, আমরা বাসরকে মাদরাসায়ও দাওয়াত দিয়ে এনেছিলাম। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর। ছুটির আগের রাতে। এবার আমরা আমরাই তার বাসর উপভোগ করলাম। সমস্যা বেঁধেছিল ঠিক শেষমুহূর্তে। যিম্মাদার হুযুর কীভাবে যেন খবর পেয়ে, বেত হাতে তেড়ে এলেন। কী দুলা আর কী বধু! এলোপাথারি সেকি মার! হুযুর পিটাচ্ছেন আর বলছেন:
--- বিয়া গরিবার শখ অইয়ে দে ন!
আয়! তোরারে গম করি বিয়া গরাইর!
(তোদের বিয়ে করার শখ হয়েছে না! আয় তোদেরকে ভাল করে বিয়ে করিয়ে দি)।
মজার বিষয় হলো, হুযুরও হাসছেন। আমরা পিটুনি খাচ্ছি আর ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি করছি। কোন ফাঁকে যেন ‘দুলা-বাসর’ ছিটকে কামরা থেকে বেরিয়ে সোজা আশিয়া চলে গেল।
আহ! সে কী দিন ছিল! মার খাওয়াও ছিল কত আনন্দের। ( আতীক ভাই থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×