somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর আবেগ প্রবণতা - বিজ্ঞানের চোখে দেখা

১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা কথা প্রায়ই শুনা যায় - আমরা আবেগ প্রবন জাতি। মিডিয়াতে যারা কথাটা বলেন, কিছুটা গর্ব করেই কথাটা বলেন। আমরা আবেগ প্রবন এবং তা নিয়ে আমরা গর্ব করি এ দুটা কথাই বোধকরি সত্যি। তাহলে কি আমাদের আবেগ অন্য জাতির চেয়ে বেশী? মানব সভ্যতার ইভলুসনে আমরা কি কিছুটা উন্নত ধরনের আবেগ অর্জন করেছি, যেখানে অন্যান্য জাতি এখনো কিছুটা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে? এ আলোচোনায় একটা উত্তর বের করার চেষ্টা করবো।

শুরুতে দেখা যাক আবেগ কি। আবেগ হছ্ছে মানুষসহ অন্যান্য প্রানীর কর্ম সম্পাদনের অনুঘটক। মানুষের ক্ষেত্রে আবেগের অবস্হান মস্তিষ্কের আবেগ কেন্দ্র বা Amygdala. আবেগই কর্ম সম্পাদনের জন্য শরিরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নির্দেষ প্রদান করে। আবেগ ছাড়া কোন কাজ করা যায় না। একটা প্রানী যখন আক্রমন করে তখন তা রাগ জনিত আবেগের ফলে আক্রমন করে। আনন্দ জনিত আবেগের ফলে আমাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আবেগ কেন্দ্রে পারসেপশান সঙ্ক্রন্ত স্মৃতি জমা থাকে, কিছু স্মৃতি থাকে আমাদের অতিত অভিজ্ঞতা থেকে আর কিছু স্মৃতি আমরা পাই জন্ম সূত্রে, জিন গত ভাবে। সেনসরি অরগান (চোখ, কান ইত্যাদি) থেকে তথ্য যখন মস্তিষ্কের আবেগ কেন্দ্রে আসে, তখন স্মৃতির সাথে তুলনা করে amygdala ঘটনা সম্পর্কে একটা পারসেপসন ঠিক করে। যেমন সাপের মতো (ধরা যাক খেলনা সাপ) কিছু দেখলে ভিতি জনিত আবেগ তৈরী হয় এবং আমরা লফিয়ে পিছিয়ে যাই। সেনসরি অরগান থেকে তথ্যের একটা ছোট অংশ দ্রুত আবেগ কেন্দ্রে যায়, শুধু পারসেপসান তৈরীতে খুব বেশী তথ্য প্রয়োজন হয় না। আবেগ কেন্দ্র বুদ্ধিবৃত্তিক এনালাইসিস করে না।

মানুষের মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্স (neocortex) বুদ্ধি বৃত্তিক এনালাইসিস করে। সেনসরি অর্গান থেকে পরিপুর্ন তথ্য কিছুটা ধীরে Thalamus ঘুরে নিওকর্টক্সে আসে (আবেগ কেন্দ্রের চেয়ে সাধারনত দিগুন সময় লাগে)। এখানে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত এনালাইসিস হয়। তাই আমরা লাফিয়ে পিছিয়ে যাবার পর বুঝতে পারি সাপটি একটা খেলনা সাপ। prefrontal lobe তখন আবেগকে নিয়ন্ত্রন করে, অর্থাৎ ভয় কমে যায়।

আবেগ কেন্দ্র দ্রুত action এ যায়, কারন এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য কর্যকরী, যদি খেলনা সাপ না হয়ে সত্যি সাপ হয়, আবেগ কেন্দ্রের দ্রুত কাজের জন্য হয়তো আমাদের জীবন বাচতে পারে। নিওকর্টেক্সে বিস্তারিত এনালাইসিস হতে কিছুটা বেশী সময় লাগে, তাই এই জরুরী ব্যবস্থা। পরবর্তিতে অপ্রয়োজনীয় আবেগ prefrontal lobe প্রসমিত করতে পারে।

আবেগ কেন্দ্র মানুষসহ অনেক প্রানীর মস্তিষ্কেই আছে। মানব শিশু জন্মের সময় মস্তিষ্কে প্রায় গঠিত আবেগ কেন্দ্র নিয়ে জন্ম নেয়। তাই শিশুর আনন্দ বেদনার অনুভুতি সহজাত। নিওকর্টেক্স গঠিত হতে কিছুটা সময় নেয়। এটাই বুদ্ধি বৃত্তির জন্ম দেয়। বিবেচনার মধ্যমে আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে শেখায়। মানুষের neocortex অন্যন্য প্রানীর চেয়ে অনেক বেশি সুগঠিত। তাই মানুষ উন্নত প্রানী।

(আমি নিউরো বিজ্ঞানী নই, তাই কিছুটা ধার করা কথা লিখলাম, সূত্র: Emotional Intelligence, Daniel Goleman)

সুতরাং দেখা যাছ্ছে আবেগ প্রবনতা আমাদের বিশেষ কোন অতিরিক্ত গুন নয়। সকল মানুষ এবং অনেক প্রানীতেই আবেগ আছে। তবে আবেগ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা সবার সমান নয়। বুদ্ধি বিবেচনার মাধ্যমে আবেগ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা যাদের কম তাদেরকেই বেশি আবেগ প্রবন মনে হয়। সুতরাং আমরা আবেগ প্রবন এ সত্য কথা গর্ব করে বলার উপাই নাই।

ভালো আবেগ যেমন আছে তেমনি আছে ক্ষতিকর আবেগ। যে মানুষ আনন্দে আপ্লুত হয় খুব সহজে সে সম্ভবত খুব সহজেই দু:খ পায়, রেগে যায় বা হতাস হয়। যুক্তি দিয়ে দেখলে হয়তো দেখা যাবে রেগে যাবার কোন কারন নেই এমন ঘটনার প্রেক্ষিতেও আমরা রাগ করছি। ঘটনার একটা ছোট অংশ আমাদের মেমরীর কোন একটা পারসেপসান এর সাথে মিলে যাচ্ছে এবং রাগ তৈরী করছে। এটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই রাগকে পরে নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন।

আমার অবজারভেসন হছ্ছে অনুন্নত দেশের মানুষ কিছুটা বেশী আবেগ প্রবন, কারন এটাই তাদের উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। আফ্রিকার অনেক জাতি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি আবেগ প্রবন এবং তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী অদক্ষ। আবেগ প্রবনতা সমষ্টিগত সফল্যের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়, কারন বিশৃঙ্খল আবেগের কিছু মানুষ দলবদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারে না বা দলবদ্ধ ভাবে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারে না। জাতীয় উন্নতির জন্য দলবদ্ধ ভাবে দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারা খুবই প্রয়োজন।

এরিস্টোটলের একটা কথা এখানে যোগ করতে ইচ্ছা হছ্ছে, তা হলো - "রেগে যাওয়া খুব সহজ কাজ, যে কেউ তা করতে পারে। কিন্তু সঠিক মানুষের প্রতি, সঠিক পরিমানে, সঠিক সময়ে, সঠিক কারনে এবং সঠিক উপায়ে রাগ করা সহজ কাজ নয়।"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ২:৪৯
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×