somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ ভাবনা : বিতংস -- ওয়াহিদা নূর আফজা

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচলিত অর্থে রিভিউ বলতে যা বুঝায় আমার এই লেখাটি ঠিক সেই কাতারে পড়বে না। আবার কেউ যদি একে বিজ্ঞাপনমূলক ফরমায়েশী লেখার দলে ফেলে দেন তা হলেও আমি আপত্তি করবো। কারো উপন্যাস নিয়ে যখন আলোচনা মূলক কিছু লিখবো তার উদ্দেশ্যে প্রচারণা থাকবে না এমন আশা করা যায় না। তবে এই লেখাটি আমার কাছে মোটেও ফরমায়েশী নয়। বরং ভালো লাগার জায়গা থেকে স্বপ্রণোদিত লেখা।এত কিছু শুরুতে বলে নেয়ার কারণ হলো এই বইটি আমি পুরোটা পড়ি নি। তবে এই উপন্যাস জন্ম নেয়ার সাথে খুব সামান্য জায়গা থেকে হলেও জড়িত ছিলাম বলেই হয়তো এর মধ্যে আমার নিজের অধিকারবোধ কাজ করে অজান্তেই। তাই বই বিষয়ে কিছু বলার চাইতেও বইয়ের সাথে আমার সৌহার্দ্যের গল্পের বয়ানটুকু আগে করে নেই।
বইয়ের লেখিকা ওয়াহিদা নূর আফজা শান্তা আপার সাথে আমার পরিচয় মূলত ক্যাডেট কলেজ ব্লগ সূত্রে। তার কিছু লেখা পড়া তা নিয়ে কথা বলার সূত্র ধরেই কোন কারণে আমার পাঠক সত্তার উপর উনার ব্যাপক আস্থা জন্মে। অথবা বলা যায় ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি আমাকে ফেসবুকে কথা প্রসঙ্গে এই বইটির কথা বলেন। এবং আমি বইটি পড়ে পাঠকের জায়গা থেকে মূল্যায়ন তাকে দিতে পারি কিনা তা জানতে চান। পাঠ্য বই ব্যতীত কোন পড়ার ব্যাপারেই আমার কখনো না ছিলো না। তাই সানন্দের সাথেই রাজি হই। আপা আমাকে অল্প কিছু অংশ পাঠান। সত্যি বলতে দ্বিধা নেই বইটির ব্যাপারে খুব বেশি উচ্চ ধারণা নিয়ে পড়া শুরু করি নি। তাই পড়ার পরে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গৎবাধা অ আ ক খ এর বাইরে কিছু বলতে পারি নি। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমার প্রথম দিককার ফাঁকিবাজি মূল্যায়ন হয়তো লেখিকার চোখ এড়িয়ে যায়। তাই হয়তো তিনি আরো একটু অংশ আমাকে পড়বার সুযোগ করে দেন। উপন্যাস এগুবার সাথে সাথে মনে হয় লেখা গভীর হয়। আর প্রেক্ষাপটের দরুণ আমি বেশ আকৃষ্ট হই। এর পরের বারে নিজেই পরের অংশ গুলো চেয়ে নেই। সময় যতই এগুতে থাকে উপন্যাসটি আমাকে বেশ আকর্ষণ করতে থাকে চুম্বকের মতো। পরের দিকে যা হতো আমি মোটামুটি এক বসায় পড়ে ফেলতাম এবং আমার ভাবনা গুলো সাথে সাথে নোট করে পাঠাতাম। সময়ের সাথে সাথে চরিত্র গুলোকে আমার কাছে খুবই জীবন্ত মনে হয়েছে প্রাণবন্ত বর্ণনা শৈলীর জন্য। উপন্যাসের এক তৃতীয়াংশ পড়ে তার উপরকার লেখনীর দুর্বলতা কিংবা আমার কাছে অস্পষ্টতার বয়ান পেশ করেছি ধাপে ধাপেই। লেখিকা আমার মতামত বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বলেই হয়তো এই উপন্যাসটির প্রতি আমার অধিকার বোধ।
এক তৃ্তীয়াংশ পড়ে কোন উপন্যাসের সামগ্রিক মূল্যায়ন মোটামুটি অসম্ভব। তবে আমার পাঠের নিরিখে আমি যা বলবো এটার এক তৃতীয়াংশ পড়বার পরে এর পরবর্তী ডেভেলাপমেন্ট কী হতে পারে তা আমাকে ভাবিয়েছে বেশ। সেজন্য অবশ্যই লেখিকা প্রশংসার দাবি রাখেন। এবার একটু গোড়ায় ফিরে গিয়ে সমালোচনা করবার চেষ্টা করি। বিতংস নামকরণটি ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে এটা তর্কসাপেক্ষ হয়েছে তবে নামটি যে দাঁত ভাঙা হয়েছে সে ব্যাপারে তর্কের অবকাশ নেই। বিতংস শুনেই যে কেউ ভুরু কুঁচকে তাকাবেন। এর শাব্দিক মানে হলো জাল। গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে একাত্তরের সময় কিশোরী থাকা মফস্বলের এক কিশোরীর চোখ। তার কিশোরী চোখে দেখা হয়েছে একাত্তর পরবর্তী সামজিক বাস্তবতাকে, তার ভার্সিটি লাইফের মাঝ দিয়ে দেখা হয়েছে মধ্য আশি কিংবা এরশাদ পতন সময়কার ছাত্র রাজনীতিকে। আর নব্বই পরবর্তী তার চোখে উঠে এসেছে প্রবাস জীবন (আপাতত হয়তো তাই প্রতীয়মান হয়)।
উপন্যাসের ফরম্যাটে অভিনবত্ব হলো আলাদা প্রতিনিধিত্ব তিনটি সময়ের কিছু অংশ শুরুতে অল্প করে দেয়া হয়েছে। যা পাঠককে ক্ষণিকের জন্য হলেও ধাঁধার মাঝে ফেলে দেবে। তিনটি সময়ের কমন প্রজেকশন যে মূলত একটা চরিত্র তা ফুটে উঠে উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। পাঠক হিসাবে আমি প্রথ অংশ টুকুর মাঝ দিয়ে গিয়েছি। একাত্তর পরবর্তী এদেশের সামাজিক জীবনের উপর আলো ফেলে খুব বেশি সাহিত্য কর্ম এদেশে হয় নি। লেখিকা সেই সময়কার ঐতিহাসিক ঘটনা গুলোকে তুলে আনবার চেষ্টা করেছেন মূলত সাধারণ মানুষের জীবন চরিতের মধ্য দিয়ে।
সত্তর দশকের সময়কার ঐতিহাসিক নানা ঘটনা, সামজিক সমস্যা , কষ্ট , সাম্প্রদায়িকতার বিষ, মানুষের অবক্ষয় সবকিছুই অল্প বেশি করে বিস্তার লাভ করেছে এই ভাগে। লেখিকা তার উপন্যাস লেখার মোটিভেশন হিসাবে বেছে নিয়েছেন মূলত আমাদের দেশের নারী পাঠকদের। বই পড়ার অভ্যাস প্রায় হারিয়ে ফেলা পাঠকদের কাছে তার বই পৌঁছবে কিনা সেটা ভবিষ্যতের কাছে তোলা থাক, তবে যদি পৌঁছায় তবে তা নারী পাঠকদের কাছে আবেদন রাখতে পারবে বলে মনে হয়। কারণ গল্প লেখার ধাঁচ খুবই সিনেমাটিক স্টাইলে হৃদয় গ্রাহী করবার চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে যখন কোন বিশেষ পাঠক শ্রেণীর কথা চিন্তা করে উপন্যাস লেখা হয় সেটা অন্যান্য পাঠক শ্রেনীর কাছ থেকে দূরে সরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেটা অল্প বিস্তর এই উপন্যাসের জন্যও সত্যি। তবে অন্যান্য পাঠকরাও উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া থেকে খুব বেশি বঞ্চিত হবে না। উদাহরণ হিসাবে যেমন বলা যায় গল্পের নায়িকা সর্ব গুণে গুণান্বিতা নায়কও তেমন তখন আমার কাছ এই বোধই এসেছে গণমানুষের কথা অনুপস্থিত। এ যেন রাজা রাজরা দের গল্প। তবে এক সময় বোধ করেছি রাজা রাজরা দের গল্প হয়েও তা আসতে আসতে বিস্তার করেছে গণমানুষের মাঝে। কিংবা একটা সময় পড়ে এসে রাজা রাজরা রাও মিশে গেছে গণ মানুষের স্রোতে। বেশ ভালো লাগলেও কিছু কিছু খুঁত চোখে পড়েছিলো। যেমন ইনফরমেশন আর কাহিনীর ব্লেন্ডিং একটু ছাড়াছাড়া মনে হয়েছিলো। মানে কিছু অংশ পড়ে মনে হয়েছে কেবল তথ্য দেয়ার জন্য বলে যাওয়া হচ্ছে । লেখিকা অবশ্য পরে সেটা নিয়ে কাজ করেছেন। উপন্যাসের শক্তির দিক বলতে হবে কাহিনীর বাস্তব মুখীতা। লেখিকা কিছু কিছু জায়গায় লেখার মাঝে ব্যাক্তিগত ভাবে আবেগাক্রান্ত হয়েও সমকালীন বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে পিছু পা হন নি। আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভালো বোধ করেছি সেটা হলো লেখিকার সততা ও পরিশ্রম। তথ্য উপাত্ত গুলোর জন্য তাকে কাজ করতে হয়েছে পড়ালেখা করতে হয়েছে উপন্যাস পড়তে গিয়ে পরতে পরতে তা অনুভব করেছি। তার সাথে রাজনৈতিকভাবে মোটামুটি নির্মোহ থাকবার চেষ্টা করেছেন।
সব মিলিয়ে উপন্যাসের পাঠক হিসাবে এক তৃতীয়াংশ পড়বার পরেও এর শেষ জানবার আগ্রহ থেকে অথবা উপন্যাসের প্রতি নিজের অধিকার বোধ থেকেই বই মেলা থেকে উপন্যাসটি সংগ্রহে রাখছি।
লেখিকা ওয়াহিদা নূর আফজা কে তার দ্বিতীয় উপন্যাসের জন্য অভিনন্দন। তার চমৎকার লেখক জীবন কামনা করি।

বিতংস -- ওয়াহিদা নূর আফজা
প্রাপ্তিস্থান: পার্ল প্রকাশনী
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×