টিনএজ বয়সের ভাল লাগা, কথিত প্রেম এরপর তা ব্যাভিচারে রূপান্তর। ভয়ংকর এক অবস্থা। পেশাগত কারণে এমন এমন ভয়ংকর, অসভ্য কিছু ঘটনা জানার সুযোগ হয় যার আলটিমেইট পরিণতির কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠে। কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা ছাড়া অবাধে তরুণ-তরুণীরা জড়িয়ে পড়ছে ব্যাভিচারে এবং এতে কোন রকম অপরাধবোধ কারো ভিতর কাজ করছে না।
টিনএজ বয়সটিই ভয়ংকর। এই বয়সে যদি অভিভাবকদের কেয়ার থেকে সন্তানরা দূরে থাকে, অভিভাবকরা সন্তানদের চলাফেরা সম্পর্কে সচেতন না থাকে তাহলে অধিকাংশ টিনএজার অনৈতিকতার কবলে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। নৈতিক শিক্ষাবিহীন সমাজে প্রযুক্তি অনৈতিকতার ছোঁয়াকে হাতের কাছে নিয়ে এসেছে। এর পরিণতিতে টিনএজ বয়সে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে সবকিছু হারানোদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে।
বাঁধাহীন ভাবে এই বয়সে অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া কোন সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। সময়ের ব্যবধানে অবস্থা এমন দাঁড়াবে কোন পরিবার আর এসব অসভ্যতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না এবং এসবকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয়া হবে। তাতে পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা যে ধ্বংসের মূখে পড়বে তা বলা বাহুল্য। এ অবস্থায় পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এসব অসভ্যতার পরিণতি নিয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে। কিন্তু সেই ধরনের কিছু কি আছে? নিচের প্রশ্নোত্তরটি দেখুন। প্রশ্নোত্তরটি নেয়া হয়েছে দেশের প্রথম সাড়ির একটি দৈনিক পত্রিকার নারী বিষয়ক সাময়িকির প্রশ্নোত্তর বিভাগ থেকে। উত্তরটি দিয়েছেন সারা যাকের নামের এক কথিত শীর্ষ প্রগতিশীল সুশীল!
প্রশ্ন- আমার বয়স ২৫, বর্তমানে চাকরি করি। আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, তখন আমার সঙ্গে এক মেয়ের পরিচয় হয়। ...একসময় সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হয়ে যাই। কিছুদিন পর তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয় এবং সেটা চলতে থাকে। এর পর থেকে আমার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করে। ওকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি, কিন্তু ও তাতে রাজি হচ্ছে না। বলে এখনো সময় হয়নি বিয়ে করার। আরও পরে বিয়ে করবে। ওর বয়স এখন ১৯। আমি ওকে ত্যাগ করব, না অপেক্ষা করব —কিছুই বুঝতে পারছি না।
উত্তর- সম্পর্ক তো অনেক দিনের। এখন তো বিয়ে হতেই পারে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না মেয়েটি কেন রাজি হচ্ছে না। আপনি স্বাভাবিকভাবে সম্পর্কটা এগিয়ে নিতে চাইছেন, কিন্তু মেয়েটি কেন চাইছে না তা পরিষ্কার নয়। আপনি মেয়েটিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারেন। তার উত্তর আপনার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, আপনি নিজেই পরখ করে দেখুন। তারপর আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
আমাদের সমাজে আধুনিক ও প্রগতিশীল নামধারী কিছু শ্রেণীর মানুষ (আসলে কি মানুষ?) অলরেডি ব্যাভিচারকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে। উপরের প্রশ্নোত্তরটি খেয়াল করুন। ১৫/১৬বছর বয়স থেকে একটি ছেলে ও ১১/১২বছর বয়স থেকে একটি মেয়ে প্রায় ৮/৯ বছর ধরে ব্যাভিচারে লিপ্ত, এরপর একজন বিয়ের কথা চিন্তা করছে কিন্তু অপরজন বিয়েকে এড়িয়ে চলছে। এ অবস্থায় পরামর্শ চাইলে শুরুতেই তাদের কঠিন ভাষায় বলা উচিত ছিল এ ধরনের প্রেম ও ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে তোমরা ঠিক করোনি। টিনএজ বা অন্য কোন বয়সে বিয়ে বহির্ভূত কোন সম্পর্ক, ব্যাভিচার ইত্যাদি তো দূরে, কথিত এসব প্রেম-ভালবাসা থেকেও দূরে থাকবে। তোমরা যা করে যাচ্ছ তা এখনই বন্ধ করো। এরপর অন্য পরামর্শ আসতে পারে।
কিন্তু না, সেই ধরনের কোন পরামর্শ নেই। বরং পরামর্শে বুঝা যাচ্ছে এতদিন যা করেছ তাতে কোন অসুবিধা নেই, চালিয়ে যাও। মেয়েটি বিয়েতে রাজী না হলে কি আর করবে, অন্য কাউকে করে নিবে! কথিত প্রেম, ভালবাসা, অসভ্যতা, ব্যাভিচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে কোন কথাই নেই!
কোন প্রকার বৈধ সম্পর্ক ও দায়িত্ব ছাড়া টিনএজ বয়স থেকে ৮/৯ বছর ধরে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া একটি জুটির পরিণতি যে এই ধরনের হয় এবং এর জন্য যে দায়ী ওই সব কথিত প্রেম ও ব্যাভিচার, তা সারা যাকের ও প্রথম আলো নামের সুশীলরা বলে না কেন? এসব পরিণতির মূল কারণ যা, তার দিকে না যাওয়ার জন্যেই তো যুবক-যুবতীদের প্রথম বলতে হবে। সতর্ক করার পরও ভুল করে যারা সেসব কুকর্মে লিপ্ত হয়ে গিয়েছে তার সমাধান দেখানো যেতে পারে। কিন্তু কথিত প্রেম-ব্যাভিচারের প্রতি আগ্রহী রেখে নষ্ট হয়ে যাওয়া যুবক-যুবতীদের পরামর্শ দিয়ে কি প্রলয় ঠেকানো যাবে? তারা কি সঠিক পথে কখনো আসবে? কেন কথিত সুশীলরা ব্যাভিচার, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কিছু বলে না? তাহলে কি নৈতিক ভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া যৌনতা সর্বস্ব একটি জাতি তৈরি করাই তাদের উদ্দেশ্য?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪