somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনুর হিজাব পরা ছবি দেখেই কি তথাকথিত প্রগতিশীলরা এতদিন চুপ করে ছিল?!

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেনানিবাসের ভিতরে একজন অনার্স পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে। একজন নারীকে ধর্ষনের পর হত্যা- বিষয়টি বড় খবর। সাথে ঘটনাস্থল যেহেতু দেশের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনিতে আবদ্ধ সেনানিবাসের ভিতরে ঘটেছে তাই খবরটি খুবই গুরুতর ও বিশাল হ্ওয়ার কথা। বলছি সোহাগী জাহান তনুর কথা। তাকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে ২০ মার্চ সন্ধ্যার পর কোন এক সময়। সম্ভবতঃ পরের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ কোন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাবে খবরটি এসেছিল। বিষয়টি নিয়ে লিখার আগে ২১ মার্চ থেকে নিয়ে ২৪ মার্চ তারিখ পর্যন্ত দেশের সবকটি তথাকথিত প্রগতিশীল, নারীবান্ধব, সুশীল, প্রথম সাড়ির পত্রিকা দেখেছি। কোন পত্রিকাতে ২৩ মার্চের আগে কোন নিউজ তেমন আসেনি। ২৪ তারিখও তেমন উল্লেখযোগ্য কোন নিউজ আসেনি। এমনকি তথাকথিত নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, প্রগতিশীল গোষ্টি, ব্যাক্তিত্ব কেউই তেমন কোন প্রতিবাদ, বিবৃতি কিছুই করেনি। বিষয়টি নিয়ে খুবই আশ্চর্য হয়েছি। ঢাকার কাছে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরে একজন ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হলো অথচ তথাকথিত প্রগতিশীল, নারীবান্ধব, সুশীল, মিডিয়া, ব্যাক্তিত্ব, সংগঠন কেউই কোন কথা বলছে না, সংবাদ প্রচার করছে না, প্রতিবাদ-বিবৃতি কিছুই করছে না! অথচ কোন এক অজপাড়া গায়ে মাদ্রাসা বা স্কুলের ছাত্রীকে মাথায় ওড়না পরতে বললে সেটি নারী অধিকার হরণের খবর হয়ে যায়, বিবৃতি, মিছিল, প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, হাইকোর্টে কয়েকটি রিট হয়। পত্রিকাগুলো সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় লিখতে লিখতে ভরে ফেলা হয়। অথচ এখানে সবাই সম্পূর্ণ চুপ! এর বিপরীতে সামাজিক মিডিয়াতে যাদেরকে মৌলবাদী বলে অভিহিত করা হয় তারা বরং বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও লেখালেখি করে যাচ্ছিল।

২০ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত চুপ থেকে ২৪ মার্চ এসে তথাকথিত সুশীলরা কথা বলা শুরু করলো। তনু হত্যার প্রতিবাদে তথাকথিত প্রগতিশীলরা মানববন্ধন করলো, বিবৃতি দিলো এবং তথাকথিত সুশীল মিডিয়াগুলো আজ ২৫ মার্চ সে সব খবর প্রথম পাতা সহ বিভিন্ন পাতায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ ও অনলাইন ভার্সনে কঠিন কঠিন মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করলো। কিন্তু ২০ থেকে ২৩ বা ২৪ মার্চ প্রায় ৪/৫দিন ওরা কেউই কোন কথা বলেনি কেন?! দেশের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় নারীত্বের এতবড় অপমান অথচ তথাকথিত সুশীলরা সবাই নিশ্চুপ! ঘটনা কি?! তারা কি নৈতিকভাবে অধঃপতিত সেনাবাহিনীকে ভয় পাচ্ছিল? সেনানিবাসের ভিতর ঘটনা বলে কি ভয়ে চুপ ছিল? না তা নয়। সেটি হলে ৪/৫দিন পরও প্রতিবাদ জানানো বা খবর প্রকাশ করার কথা নয়।

এসব যখন চিন্তা করছি তখন অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশিত তনুর ছবিগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। সামাজিক মিডিয়ায় তনু হত্যার খবরটি প্রকাশ হয়েছে তার স্কার্ফ বা হিজাব সহ ছবি দিয়ে। প্রথম দিকে স্কার্ফ সহ ছবির সাথে শুধু বলা ছিল তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার পিতার পরিচয়ও ছিল। সামান্য ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ব্যস এতটুকুই। কিন্তু ২২/২৩ তারিখের পর সামাজিক মিডিয়াতে আরো বিস্তারিত পরিচয় আসা শুরু করলো। তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী শুধু নয় সে আসলে তথাকথিত প্রগতিশীলদের সাথে উঠা-বসা করতো এবং তাদের থিয়েটার কর্মী ছিল। অর্থাৎ স্কার্ফ পরলেও সে তথাকথিত প্রগতিশীলদের সংগঠনের সাথেই জড়িত ছিল। এ খবরটি জানার পরপরই তথাকথিত সুশীল ব্যাক্তিত্ব, সংগঠন, মিডিয়াগুলো তনুকে নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে।

তার মানে এর আগে স্কার্ফ পরা দেখে তথাকথিত প্রগতিশীলরা কি মনে করেছিল আরে ওতো মৌলবাদী টাইপের, স্কার্ফ পরে, হিজাব করে-ওদেরকে ধর্ষন করেছে তো কি হয়েছে?! হত্যা করেছে ঠিকই আছে! সামান্য ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মেয়ে সেনানিবাসের ভিতর থাকে আবার হিজাবও করে! তাকে হত্যা করা হবে না তো আর কাকে করবে?! এটিই কি ছিল প্রগতিশীলদের মনোভাব?! সে কারণেই কি তারা এতদিন চুপ ছিল?! কিন্তু যখন জানতে পারলো হিজাব করলেও আসলে তনু তাদেরই একজন- এরপরই শুধুমাত্র তারা কথা বলা শুরু করলো?!

এ সন্দেহ হওয়ার কারণ হলো খোদ ঢাকা শহরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের প্রশাসন ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে আসছিল, হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের নিয়মিত হল ও প্রতিষ্ঠান থেকে বহিঃস্কার করছিল এমনকি পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছিল এবং পুলিশ হিজাব পরিহিতা ওসব ছাত্রীদের দিনের পর পর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছিল এবং মাসের পর মাস কারাগারে আটক করে রাখছিল। এত কঠিন নির্যাতন যখন হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের উপর চলছিল তখন কোন সুশীল মিডিয়া, ব্যাক্তিত্ব, সংগঠন সামান্য প্রতিবাদ করেনি বরং মিডিয়াগুলো এমনভাবে খবর প্রকাশ করছিল যেন হিজাব পরিহিতা ওই ছাত্রীরা বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী!

সে ধারাবাহিকতায় ঘটনার পর সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশিত তনুর স্কার্ফ সহ ছবি দেখেই কি তথাকথিত প্রগতিশীলরা চুপ ছিল? এখন কথা বলছে কারণ তারা সবশেষ জানতে পেরেছে তনু প্রগতিশীলদের কথিত থিয়েটারের একজন কর্মী?! তার মানে ৯০% মুসলমানের এদেশে তথাকথিত প্রগতিশীলদের হিজাব, স্কার্ফ, পর্দা করা নারীদের কোন অধিকার থাকতে নেই?! তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিঃস্কার করতে পারবে, পুলিশ-ছাত্রলীগ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করতে পারবে, কারাগারে নিক্ষেপ করতে পারবে, এমনটি ধর্ষনের পর হত্যাও করা যাবে! কিন্তু প্রগতিশীলরা কোন কথা বলবে না যদি মেয়েটি হিজাব পরিহিতা হয়! শুধুমাত্র তখনই বলবে যখন জানতে পারবে হিজাব পরলেও সে তাদেরই একজন! তার আগে যত নির্যাতনই হিজাব পরিহিতাদের উপর আসুক প্রগতিশীলদের বিবেক কোন কথা বলবে না...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×