somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন ধংসের কোনো প্রকল্প কাম্য নয়

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Sat, 21 Sep, 2013 05:31 PM
সুন্দরবন ধ্বংসের কোনো প্রকল্প কাম্য নয়
সুশান্ত সিনহা

এখানে প্রকাশিত

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা এই ম্যানগ্রোভ বনের সংখ্যা দুনিয়াজোড়া হাতে গোণা। তাইতো প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে আমাদের গর্বের এ বন। প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশেষ এই বন শুধু প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে নয়, এটি দেশের দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ বা ন্যাচারল সেফগার্ড হিসেবে যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। সিডর আইলার মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোনের সঙ্গে লড়াই করে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হয়েই বুক দিয়ে আগলে রেখেছে কোটি কোটি মানুষকে। সেই সাথে সুন্দরবনের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নদী-নালা-খালসহ জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়াসহ প্রাণী সম্পদ আহরণ, বনের মধু, গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিক অর্জন করছে কয়েক লাখ পরিবার, যারা পুরোপুরি এই বনের ওপরেই বেঁচে আছে। আর সুন্দরবনের কাঠের কথা তো বাদই রইলো।

জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভারশীল ম্যানগ্রোভ বনের আর্কষণ বিশ্বজোড়া। ছোট ছোট খালের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর দারুণ এক পর্যটনের প্রাকৃতিক সম্ভার এই সুন্দরবন। এক কথায় সুন্দরবন শুধু সুন্দরই নয়, প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-তাৎপর্যপূর্ণ। সুন্দরবনের অবদান ও গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সেই সোনার ডিম দেয়া হাঁসটি আজ হাঁসফাঁস করছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে নয়। নয়, চোরা শিকারীদের হাতে। খোদ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সুন্দরবন ধবংসের মহা আয়োজন শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের কোল ঘেষে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে নির্মাণ করছে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিশালাকার এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সুন্দরবন ধংসের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তি, উদার গণতান্ত্রিক শক্তি, পরিবেশবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং সর্বস্তরের মানুষের মতামত উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে প্রায় ১৯০০ একর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। যার বড় অংশই কৃষি জমি। প্রশ্ন হলো- দেশে সুন্দরবন একটিই, আমরা চাইলেই বিরল বৈশিষ্টের এই বন সৃষ্টি করতে পারবো না। একবার এই বন ধংস হলে আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। কিন্তু আমরা যে কোনো জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারবো। তা হোক না, কয়লাভিত্তিক-গ্যাস কিংবা তেল চালিত কুইক রেন্টাল।

""সুন্দরবন সংরক্ষিত বন, তাই তার এত কাছে পরিবেশ ধংসকারী কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় না। অথচ বাংলাদেশ সরকার সেসব উপেক্ষা করেই রামপালকে নির্বাচন করেছে। যে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্প করা হচ্ছে, সে দেশেও সংরক্ষিত বনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে এধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পরিবেশ নষ্টকারী কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার নিয়ম নেই। অথচ সেই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এখানে নিয়ম ভেঙে সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে শরিক হয়েছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর আপত্তি তুলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাড়পত্র না দিলেও মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি। বন্ধু দেশের প্রধান বন ধ্বংস করে পাওয়ার উৎপাদনে শক্তি যোগানো... বাহ! কী সুন্দর বন্ধুত্বের নমুনা! মার্কিন সৈন্যারা যেভাবে ইরাকে গুলি করে মানুষ মেরে বলে ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’!

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড আব্দুস সাত্তার মন্ডল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুনসহ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়লা পুড়িয়ে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ৭৯ লাখ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে। কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশের জন্য কতটা আত্মঘাতী তা শিক্ষিত মানুষ মাত্রই জানেন। তার মানে কয়েক কোটি গাছ কাটলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে এই পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড সৃষ্টিকারী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে। এসিড বৃষ্টির জন্য প্রধান হোতা সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে ৫২ হাজার মেট্রিক টন, ৩১ হাজার টন নাইট্রোজেন অক্সাইড, প্রায় ২ হাজার টন বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড, ৪ শ পাউন্ড পারদ, ৬ শ পাউন্ড আর্সেনিক, ৩ শ পাউন্ড সীসাসহ আরও বেশ কিছু ক্ষতিকর পদার্থও উৎপন্ন হবে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর লাখ লাখ টন বিষের প্রভাবে সুন্দরবনের বাতাস ভারি হয়ে উঠবে। দূষিত বাতাস ৬৬ প্রজাতির গাছে ভরা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিনষ্ট করবে। এমনিতেই সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের আগা মরা রোগে প্রতিদিন মরছে হাজার হাজার গাছ। সেখানে নতুন করে বিষ ঢেলে দেয়া হলে পরিবেশের কী অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। গাছের সঙ্গে সঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বনের রাজা বাংলাদেশের গৌরব রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কয়েক প্রজাতির হরিণসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী পশু, ২ শতাধিক পাখি, অর্ধশত প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর উপর। সবুজে ঘেরা সুন্দরবনে নতুন এই উপদ্রবে হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে চিরতরে হারিয়ে যাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। একদিন হয়তো পাঠ্যবই এ পড়ানো হবে এককালে সুন্দরবনে পাওয়া যেত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আর যাদুঘরে গিয়ে চিনতে হবে বনের রাজাকে।

প্রাকৃতিক এই রক্ষাকবচের শুধু বাতাস-পরিবেশ আক্রান্তই হবে না, সুন্দরবনের ভেতরে প্রায় ২ হাজার বর্গকিলোমিটার নদী-খাল-জলাশয়ের পানিও মারাত্মকভাবে দূষিত হবে কয়লার কারণে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। এই কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করে মংলা বন্দর হয়ে নিয়ে যাওয়া হবে আকরাম পয়েন্টে। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে করে নিয়ে আসা হবে পশুর নদী দিয়ে রামপালে। সুন্দরবনের গভীরে আকরাম পয়েন্টে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা উঠানো ও নামানোর সময় কয়লার অসংখ্য টুকরা পানিতে পড়বে। এছাড়া কয়লা চুইয়ে পড়া পানি মিশবে নদীতে। জাহাজের তেলসহ বর্জ্য পড়বে বনের পানিতে। ফলে সুন্দরবনের ভেতরের পানি চরমভাবে দূষিত হবে। আর দূষিত পানিতে মাছসহ কোনো কীট-পতঙ্গ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারবে না। ফলে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছের বংশ ধংস হবে। কাঁকড়ার প্রধান উৎস চিরতরে হারিয়ে যাবে। শুশুক-ডলফিনের মতো প্রায় হারিয়ে যাওয়া প্রাণীরা বিলুপ্ত হবে। মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা হারাবে। জাহাজ চলাচলের কারণে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের খালগুলোতে মৎস্য শিকারে যেতে পারবে না বনজীবীরা।

""

লেখক: সুশান্ত সিনহা, সাংবাদিক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×