somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকের দিন নিয়া মহাত্মা ফরহাদ মজহারের কবিতা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এরশাদের শিক্ষা উপদেষ্টা মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। এ কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সকাল প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর এবং দিপালী সাহাসহ কয়েকজন। নিহতদের কয়েকজনের লাশ গুম করে সরকার।

১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার প্রতিবাদে ফরহাদ মজহারের লেখা দুটি কবিতার একটি :

লাশসকল প্রতিশোধ নেবে

গুম হয়ে যাওয়া লাশসকল প্রতিশোধ নেবে—
বীভত্স কফিনহীন মৃতদেহ রাস্তায় রাস্তায়
মোড়ে মোড়ে
অলিতে গলিতে
অন্ধিতে সন্ধিতে
তোমাদের শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীলতার গালে
থাপ্পড় মেরে
অট্টহাসি হেসে উঠবে।

ভোরবেলা
দাঁতের মাজন হাতে ঢুকবে বাথরুমে—
সেখানে লাশ
তোমাদের প্রাতঃরাশে রুটি-মাখনের মধ্যে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের ভোর সাড়ে সাতটার ডিমের অমলেটে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের পানির গ্লাসে লাশের দুর্গন্ধ
তোমাদের চায়ের কাপে গলিত নষ্ট মৃতদেহের রক্ত;
লাশসকল প্রতিশোধ নেবে
লাশসকল হত্যার বদলা চায়।

রিকশায় তোমাদের পাশে যে বসে থাকবে
দেখবে সে একজন লাশ
টেম্পোবাসে তোমাদের গা ঘেঁষে যে বসে পড়বে
দেখবে সে একজন লাশ
ফুটপাতে তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে হাঁটছে
দেখবে সে একজন লাশ

অলিতে গলিতে
অন্ধিতে সন্ধিতে
চড়াও হয়ে
লাশসকল প্রতিশোধ নেবে।

প্রতিটি লাশের গায়ে ৩৬৫টি গুলির দাগ
(দিনে একবার করে বাংলাদেশকে বছরে ৩৬৫ বার হত্যা করা হয়)
জবাই করে দেওয়ার ফলে অনেক লাশের কণ্ঠনালী ছেঁড়া
অনেকের চোখ হাত পা বাঁধা
অনেককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে—
অনেককে হাড়মাংসসুদ্ধ কিমা বানানো হয়েছে প্রথমে
পরে থেঁতলে থেঁতলে পিণ্ডাকার দলা থেকে
তৈরি করা হয়েছে কাতারবদ্ধ সেনাবাহিনী
ওদের মধ্যে অনেককে দেওয়া হয়েছে মেজর জেনারেল পদ
একজনকে নিয়োগ করা হয়েছে
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে
তাদের সবার চেহারাসুরত বরফের মতোই ঠাণ্ডা ও নিষ্পলক
এই হচ্ছে লাশসকলের সুরতহাল রিপোর্ট

তারা সামরিক কায়দায় উঠে দাঁড়ায়
অভিবাদন দেয়
অভিবাদন নেয়
অভিবাদন গ্রহণ করে
এবং সর্বক্ষণ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের
পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিলকে
মেশিনগান মেরে উড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা আঁটতে থাকে—
তোমরা আতংকিত হলে লাশসকল অট্টহাস্য করে ওঠে
তারা তোমাদের সেনাবাহিনীর মতোই
নিজেদের সেনাবাহিনী গঠন করে নিয়েছে—

কারণ
লাশসকল প্রতিশোধ চায়।

লাশসকল তোমাদের অফিস করিডোরে ফাইলপত্রে
হাজির থাকবে
তারা সংবাদপত্র অফিসে নিখোঁজ সংবাদের রিপোর্টার হয়ে
বসে থাকবে
তারা রেস্তোরাঁয় হোটেলে হোটেলে
মরা মানুষের কঙ্কাল হয়ে ঝুলে থাকবে।

বিকেলে পার্কে সিনেমাহলে ঘরের সামনে
ফুলবাগানে লাশ
লাশসকল অভিনয় জানে
তারা মহিলা সমিতি মঞ্চে অভিনয় করতে চায়
তারা জীবিতদের মতো কথা বলবে
সংলাপ উচ্চারিত হবে নির্ভুল
সর্বত্র
সবখানে
সবজায়গায়
লাশসকল তোমাদের অনুসরণ করবে।

লাশসকল মনে করিয়ে দিতে চায়—
বুট ও খাকির নীচে বাংলাদেশের মৃতদেহ থেকে
পচনের আওয়াজ বেরুচ্ছে
তারা বুঝিয়ে দিতে চায়—
পাছায় রাইফেলের বাঁট মেরে শুয়োরের বাচ্চার মতো
তোমাদের খোঁয়াড়ে রাখা হয়েছে।

রাত্রিবেলা তোমাদের স্ত্রীদের ওপর
তোমাদের মেয়েমানুষদের ওপর
চড়াও হয়ে
লাশসকল ঝুলিয়ে দেবে
তোমরা
নিবীর্য
নপুংসক
লিঙ্গহীন
উত্থানরহিত।

একদিন
জেনারেলদের মাথার খুলি লক্ষ্য করে
সমস্ত লাশ একযোগে
দ্রিম দ্রিম
ক্রাট ক্রাট
সাব-মেশিনগান
৩৬৫ বার
প্রতিদিন একবার করে বাংলাদেশকে হত্যার প্রতিশোধে
লাশসকল অট্টহাস্য করে উঠবে—

লা শ স ক ল প্র তি শো ধ চা য়
গু ম হ য়ে যা ও য়া লা শ স ক ল
প্র তি শো ধ নে বে।

সৌজন্যে: আমার দেশ
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রের অনুপস্থিতি: এক অনালোচিত প্রশ্ন?

লিখেছেন মুনতাসির, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

সত্যজিৎ রায়, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর চলচ্চিত্র, গল্প এবং গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা বাস্তববাদী চরিত্র, সমাজচিত্র, এবং গভীর দার্শনিকতা নিয়ে আলোচিত। তবে তাঁর কাজের মধ্যে একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×