তাজউদ্দীন আহমেদ কে বলা হয় বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছের মানুষ, সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু । তাজউদ্দীনের কাছে তাই । তাজউদ্দীনের চেয়ে মনে হয় বঙ্গবন্ধুকে আর কেও বেশি জানত না, এমনকি তার পরিবারের মানুষজনও । তাজউদ্দীনের কাছে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বড় ভাই তার চেয়েও বেশি বন্ধু । হয়ত এ কারণেই তাজউদ্দীন সবসময় খেয়াল রাখতেন বঙ্গবন্ধুর যেন কোন সমস্যা না হয় ।
বঙ্গবন্ধুর একটা বড় সমস্যা ছিল । তিনি মানুষ কে বেশি বিশ্বাস করতেন । তাজউদ্দীন ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন মানুষকে বিশ্বাস করাটাই বঙ্গবন্ধুর কাল হয়ে দাঁড়াবে আর তাই বঙ্গবন্ধুকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন তিনি । কিন্তু তিনিও হেরেছিলেন মীরজাফরদের কাছে । মীরজাফরদের অবিরাম চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন কে ভুল বুঝেছিলেন । মনঃকষ্টে তাজউদ্দীন দূরে সরে যান বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে
না দূরে সরে গেলেও মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরে ঠেলে দিতে পারেননি তিনি । প্রতিনিয়ত ভাবতেন বঙ্গবন্ধুর কথা । তার সমস্যার কথা । বঙ্গবন্ধুর নেয়া সিদ্ধান্তকে পর্যালোচনা করতেন । কিন্তু ভুলগুলো শুধরে দেয়ার সুযোগ পেতেন না ।
তাজউদ্দীন আহমেদ কখনোই ভাবতেন না তিনি বুঙ্গবন্ধুর থেকে দূরে আসেন । তাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমির লেখা থেকে জেনেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাজউদ্দীন ঠিকমত ঘুমাতে পারতেন না । কাছের মানুষদের বার বার একটা কথাই বলতেন
"মুজিব ভাই আমাকে ডাকছেন,মুজিব ভাই আমাকে ডাকছেন, আমাকে ছাড়া উনি থাকতে পারবেন না"
স্রষ্টা হয়ত নিজেও চাননি দুই বন্ধু দূরে দূরে থাকুক । তাজউদ্দীন আহমেদ কেও বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে গেলেন ।
মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন । একটা শার্ট পরে ছুটে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে । নিজের কাপড় নিজেই ধুয়েছেন । নিজেই রান্না করেছেন । বিশ্বাসঘতকদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ তো ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মরতে বসেছিল । তাজউদ্দীন শক্ত হাতে সেসব ষড়যন্ত্র দমন করেছেন । বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে বঙ্গবন্ধুর কাছেই আবার দ্বায়িত্ব ছেড়ে দেন
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন, তাজউদ্দীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কে নিজ হাতে সত্যি করেছেন । অথচ এই মানুষটি কে যথাযথ মূল্য দেয়নি আমাদের তথাকথিত সরকারগুলো ।
মানুষ ভুল করে কিন্তু ইতিহাস কখনো ভুল করে না । ইতিহাস মানুষ কে প্রাপ্য সম্মান দিতে ভুল করে না । আমরা তাজউদ্দীন কে ভুলে গেলেও ইতিহাস ঠিকই মনে রাখবে তাকে
আজ এই মানুষটার জন্মদিন । যার জন্ম না হলে হয়ত এত তাড়াতাড়ি আমরা বাংলাদেশ পেতাম না ।
কপিড ফ্রম- মেঘ রৌদ্দুর