শুরুটা পড়ে চটি গল্প ভাববেন না। আজমত সাহেব খুব সন্তর্পণে স্ত্রী সুলতানার কাঁধে হাত রাখলেন। তাদের এক বছরের ছোট্ট বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে এই ভয়ে কোন শব্দ করা যাবে না। নিঃশব্দে আদর করবেন তার প্রেয়সীকে। প্রেমের বিয়ে তাদের। পাঁচ বছর প্রেমের ফল এই তিন বছরের সংসার। আজও একটুও পুরাতন হয়নি কেউ কারো কাছে। আজও আজমত সাহেবের স্পর্শে সাড়া দিয়ে উঠল তার কোমল ত্বক। আরও কাছে ঘেঁষে এলেন তিনি তার স্বামীর। দুজনের ভারী নিশ্বাস ছাড়া আর কোন শব্দ ছিল না তাদের ঘরে, মায়াময় ভালোবাসার আদরে যখন জড়িয়ে আছে দুটি প্রাণী ঠিক তখনি অন্য একটা শব্দে তাদের বাচ্চাটা জেগে উঠে চিৎকার করে। শব্দটা দরজা ভাঙার। রাজাকার নামক এক প্রজাতির জীব কতগুলো পাক বাহিনী নামক জীবকে নিয়ে এসেছে তাদের বাসায়। অর্ধনগ্ন আজমত সাহেবকে টেনে নামানো হয়
তার ভালোবাসার ওপর থেকে। সুলতানা ভয়ে তার বাচ্চাকে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে। বাচ্চাটাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার কাছ থেকে। ছুঁড়ে ফেলা হয় দেয়ালে, তাতে তার চিৎকার আরও বৃদ্ধি পায়। প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরে ওঠে সে, বেয়নেটের খোঁচায় আস্তে আস্তে সে চিৎকার থামিয়ে দেয়। অনেক ভালো জীব রাজাকার - পাক বাহিনী সুলতানাও কোনদিন তার বাচ্চার চিৎকার এত তাড়াতাড়ি থামাতে পারেনি। তারপর... অকথ্য নির্যাতন চলে আজমতের ওপর,চোখ বাদে তার আর কোন অঙ্গ রেহাই পায়না। তারপর সেই অনাহত চোখ খুন হয়ে যায় নিজে নিজে, যখন তার চোখ জোর করে খোলা রেখে তার ভালোবাসাকে একের পর এক ধর্ষণ করা হয়, নির্মমভাবে।
আপনি ছেলে হয়ে থাকলে আজমত সাহেবের জায়গায় একবার নিজেকে বসান, মেয়ে হলে সুলতানার
জায়গায়। এবার বলেন, আপনার কেমন লাগত যদি আপনার চোখের সামনে আপনার ভালোবাসাকে এভাবে একটু একটু করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হত। আমি অসামাজিক, আমি এই বিচারও মানি না, আমি প্রত্যেক রাজাকারকে এই অনুভূতি উপহার দিতে চাই। সব না হলেও , অন্তত একটা অনুভূতি।আজমত সাহেবের অনাহত চোখের পেছনের শূন্য অনুভূতি। আর হ্যাঁ ভাই, ক্ষুদ্র শাস্তি দিসে - ফাঁসি।
এবার যদি ঘরে ঘরে আগুন জ্বালান জ্বালানোর আগে একবার ভাবেন। ৪২ বছর আগে আপনার বাবা যদি আজমত সাহেব হতেন, আপনি আজ
কী করতেন।
আর কিছু না, শুধু সেই চোখটা...
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪