somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্নফাঁস? নকল করার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি চাই!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরীক্ষায় নকল বলতে আসলে কি বোঝায়? কিছু একটা দেখে লেখা? তবে আমি সেটারই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি চাচ্ছি!

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করুন, আমাদের দেশে পরীক্ষাগুলোর ধরণ আসলে কেমন? পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, ছাত্রছাত্রীরা আগে থেকে শিখে যাওয়া বইয়ের লেখাগুলো যে যতটা পারে হুবহু লিখে আসার চেষ্টা করে। এই তো? এতে আসলে লাভ টা কি? আপনি কি নিশ্চিত যা সে লিখেছে সেগুলো বুঝে লিখেছে, ব্যাপারগুলো নিয়ে একটা বার অন্তত চিন্তা করেছে, সেগুলোকে ঘিরে প্রশ্ন জেগেছে তার মনে??

পরীক্ষার জন্য পড়ে, পরীক্ষার পরেই সব মাথা থেকে ফেলে দিলে সেই শেখায় আসলে লাভটা কোথায়? এটাই কি শিক্ষার উদ্দেশ্য? ছাত্রছাত্রীরা নানান বিজ্ঞানী-মনীষীর দেওয়া থিওরি পড়ে, সূত্র পড়ে, থিওরি বা সূত্রে বসিয়ে গানিতিক সমস্যা সমাধানের নিয়ম জানে , করেও ফেলে চোখের নিমেষে অথচ ঘটনা আসলে কি ঘটল এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর চিন্তা কারো নাই। তারা "অংক করতে পারে" এই তো বেশি, আর নাম্বার তো ওদের গণতান্ত্রিক অধিকার, কি বুঝল আর বুঝলো না সেটা দিয়ে আসলে কিছু যায় আসে না, এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই! :p

আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি যদি গনিতের শিক্ষক না হন এবং ৪-৫ বছর চর্চা না থাকে তবে আপনি আপনার জীবনে শেখা সূত্রের ২০-৩০% ও এই মুহূর্তে মনে করতে পারবেন না। আর এত এত পড়া যেগুলো পড়লেন কতটুকু আপনি মনে করতে পারবেন? তাহলে কি লাভ আপনার এই ১৬-২০ বছরের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের? ঠিক এখানেই আমাদের মূল সমস্যা। আমরা উদ্দেশ্য বুঝি না।

আমাদের দেশে শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। ভাল স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে তো জীবন নাকি শেষ! (অনেক ক্ষেত্রেই এখনকার ছেলেমেয়েদের শৈশব বলতে কিছু নেই। তারা হাটতে শেখার আগে স্কুলে যাওয়া শুরু করে, কথা বলতে শেখার আগে ১,২, অ ,আ abc বলে)। ভর্তির পরে শুরু হয় ফার্স্ট হওয়ার প্রতিযোগিতা (ওরা ভাত খায়, তুমি খাও না?)। তাকে ফার্স্ট হতে হবে, বৃত্তি পেতে হবে, গোল্ডেন পেতে হবে, ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল সাবজেক্টে চান্স পেতে হবে, ভাল চাকরি পেতে হবে... ব্লা ব্লা ব্লা... একটা স্টেজ থেকে আরেকটা স্টেজে যাওয়ার পথে এর যে কোন একটাতে গলদ লাগলেই আমরা তাকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বাতিলের খাতায় ফেলে দিব। একে তো লেখাপড়ার সিস্টেমটা ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ করতে পারে না, তার উপর আবার এই ভয়। এর মধ্যে যদি প্রশ্নটশ্ন আগের রাতে পেয়ে টিকে থাকা যায় সেটাই কি তখন মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় না? এটা নিয়েও রাজনীতি করার কিছু নাই। :p

এইসব বিষয়ে কীভাবে কীভাবে যেন স্যার আইজ্যাক আইনস্টাইন আর প্রমথ চৌধুরীকে সবসময় আমার মতের সাথে সহমত প্রদর্শন করতে দেখেছি! আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত উক্তি আমরা কমবেশি সবাই জানি,"Everyone is a genius. But if you judge a fish by its ability to climb a tree, it will live its whole life believing that it is stupid." কিন্তু সবার ভিন্ন ভিন্ন দিকে প্রতিভা থাকলেও পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাওয়ার একটাই মাত্র পদ্ধতি থাকে। আর সেটাও একটা মারাত্মক ভুল এবং জীর্ণ পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু না।

"It is not so very important for a person to learn facts. For that he does not really need a college. He can learn them from books. The value of an education in a liberal arts college is not the learning of many facts but the training of the mind to think something that cannot be learned from textbooks."--1921, on Thomas Edison's opinion that a college education is useless; quoted in Frank, Einstein: His Life and Times, p. 185.

আমার মনে হয় সৃজনশীল পদ্ধতির উদ্দ্যেশ্য এটাই ছিল। ছাত্রছাত্রীরা তথ্য জানবে, প্রশ্ন করতে শিখবে, চিন্তা করতে শিখবে, তথ্যগুলোকে জ্ঞানে পরিণত করে প্রয়োগ করতে পারবে। তবে উদ্দেশ্য যখন প্রতিযোগিতা তখন সেটি কখনই সম্ভব না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও একই মানসিকতা শুরু হয়েছে। আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সেটার সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারছি না। আর তাই এটার অপব্যবহার নিশ্চিত করছে ছাত্রছাত্রীরা। ওরা আগ্রহ নিয়ে জানার জন্য, বোঝার জন্য নেট সারফিং করে না, প্রয়োজন বোধ করে না, তাই ওরা পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার জন্য ফেসবুক ব্রাউজ করে।

আর প্রতিযোগিতা বদলে সহযোগিতার শিক্ষাটাই মনে হয় বেশি কার্যকর। কারণ প্রতিযোগিতায় মাত্র একজনই বিজয়ী হয়, সহযোগিতায় বিজয়টা সবার, গোটা জাতির। উদ্দেশ্যবিচ্যুত প্রতিযোগিতার ফলাফল তো দেখাই যাচ্ছে চোখের সামনে।

পরীক্ষা হোক আনন্দমুখর। সামনে খোলা থাকুক বই(সরাসরি বই বুঝাচ্ছি না। হতে পারে আগে থেকে তৈরি করে আনা নোট বা এই টাইপ কিছু। আর সব ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য না। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা পরীক্ষা করতে গেলে অনেক সময় হয়ত মনে রাখার ব্যাপারটাও একটা "ফ্যাক্ট") । যে প্রশ্নের উত্তর বই থেকেই তুলে দেওয়া যায়, সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিলেই কি আর না দিলেই কি?! এটা নিয়েও রাজনীতি করার কিছু নেই।

শেষ করি আমার খুব প্রিয় একটা কথা দিয়ে,"It’s a journey…No one is ahead of you, or behind you. You are not more ”advanced”, or less enlightened. You are exactly where you need to be. It’s not a contest… It’s LIFE. We are ALL teachers, and we are ALL students." :)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×