somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকের জন্য বিজ্ঞাপন

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই রাতে আমরা জোসেফের পাশে ছিলাম, বাদাঘাটের ঘটনা থেকে যে ক'জন ফিরে আসতে পেরেছে জোসেফ তাদের একজন। জোসেফের নির্বিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বারবার জ্বলে উঠছিলাম। এমন কেন হবে? আমাদের জীবন কি এতই সস্তা? উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এসে আমরা কতবার লাশ হয়ে ফিরব? কি জবাব আমরা দেব অনিক, খায়রুলের পিতা মাতার কাছে?

এই লেখা যখন পড়ছেন, ততক্ষণে বাংলাদেশ জেনে গেছে অনেক কিছু। বন্ধু হারানোর কষ্ট, বন্ধুর লাশের বোঝা যাদের বইতে হয়েছে তারা কতটা পাথর, তা বোঝার সামর্থ্য কত জনের আছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কোন সন্দেহ নেই এটা দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্ঘটনার উল্টো পিঠে যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা তা কোথায় ছিল? বিশ্ববিদ্যালয়ের এত কাছে আজ আমরা নিরপদ নই। আমাদের সমস্ত স্বাধীনতা, উচ্ছ্বাস, চিন্তা আজ কতটা বিপন্ন তা এখন পরিষ্কার। জোসেফের সাহসিকতায় হয়ত অনেক কিছুই হয়নি, প্রশ্ন হচ্ছে একজন ছাত্র যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা কী দিতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড, আমাদের প্রান প্রিয় শিক্ষকেরা? সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা যখন প্রানপ্রিয় শিক্ষকদের জানানো হয় তখন তারা বিজয়ের উৎসবের রঙে রঙিন, স্বাধীন দেশের সন্তানেরা যখন বিজয়ের দিনে নিখোঁজ হয় তখন তারা নির্বিকার, ঘটনাস্থলে তারা হাজির হয় রাত দশটার দিকে। ছোটবেলায় শিখেছিলাম শিক্ষকরা পিতৃতুল্য। আমরা যদি তাদের সন্তানের মতই হই তাহলে কিভাবে আমার পিতা আমার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে সিগারেট ফুঁকতে পারেন? কিভাবে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম শিক্ষক প্রশ্ন করেন লাশ ভাসতে কতক্ষণ লাগবে! আমার শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলছি- আপনারা ক্লাস রুমে বসে গম্ভীর মনভোলানো লেকচার দিতে পারেন কিন্তু যখন প্রয়োজন তখন আপনাদের পিতৃত্ববোধ কোথায় থাকে? আপনারা এসে দেখে যান কী শোকের আগুনে জ্বলছে আমাদের চোখ। ঘটনাস্থলে ফায়ার ব্রিগেড আসে রাত সাড়ে আটটায় কিন্তু কি আশ্চর্য তাদের ডুবুরী নেই। তাদের কাজ চলে পুলিশের ধার করা সার্চ লাইট দিয়ে। উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশের ফায়ার ব্রিগেডের পুলিশের ডুবুরী নেই! তাদের কাজ যে কতটা পরিহাসের তা বোঝার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। আন্তরিকতা থাকলে অবশ্যই ডুবুরির খোঁজ পাওয়া যেত। কিন্তু সে আন্তরিকতা কথায় ছিল? আমার মত কেউ হয়ত একদিন এই প্রশাসনের কোন এক পদে আসীন হবে; দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতার যে নজির আমরা দেখলাম তাতে আমার মত উত্তরসূরিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কী আশা করতে পারে?

নিষ্ঠুর কৌতুক আরও আছে, বাদাঘাটের সারি সারি নৌকা কিন্তু দু'ঘণ্টা খুঁজেও একজন মাঝি পাওয়া গেলনা! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাড়া এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোন তৎপরতা পাওয়া গেলনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষক, যার একটি মাত্র ফোনকলে অনেককিছুই হতে পারে, তাকে আমরা পেলাম না। একজন ডুবুরির জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হল পরদিন সকাল পর্যন্ত।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বাদাঘাট বেশ জনপ্রিয়, নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পুলিশের টহল বাহিনী থাকার কথা, কী আশ্চর্য সেই পুলিশ বাহিনীকে আমাদের আনতে হল থানায় ফোন করে। বিশ্বাস করুন এরাই আমাদের রক্ষক, আমাদের জীবন রক্ষার গুরু দায়িত্ব তাদের হাতে।

আমাদের অপেক্ষা বাড়তে লাগল, ডুবুরী নামের আলাদিনের দৈত্য আমাদের মাঝে এল না! আমরা অনিক-কে পেলাম সাড়ে ছ'টায় জেলের জালে। অনিক, আমাদের ক্ষমা করে দিও, তোমার মৃতদেহ একঘণ্টা পড়ে থাকতে দেখে আমরা কিছুই করতে পারি নি, সাদা রঙের আম্বুল্যান্সের সেবকরা তোমাকে সাদা চাদর দেয়নি, আমাদের গায়ের চাদরে তোমাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আমাদের ক্ষমা করে দিও।

ডুবুরিবিহীন উদ্ধার কাজে আমাদের সম্বল মাঝি। সে মাঝির জন্য আমাদের যখন ২০০০ টাকা প্রয়োজন তখন আমাদের সেই শিক্ষক যার উপর আমাদের যাবতীয় দায়িত্ব অর্পিত তিনি বলে উঠেন, “শুধু শুধু একজন অতিরিক্ত মাঝি কী দরকার একজন করছে একজনই করুক।“ স্যার, আমরা এতটাই তুচ্ছ আপনাদের কাছে? এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আপনারা হয়ত অস্বীকার করবেন, কিন্তু আমাদের স্মৃতি তো তা বলবে না। আমরা মনে রাখবো আমাদের পিতার মতো যিনি তার কাছে আমাদের জীবন অর্থহীন।

খায়রুলের মৃতদেহ পাই সাড়ে দশটায়, ততক্ষনে আমরা অনেক নির্মম সত্য দেখে ফেলেছি। আম্বুল্যান্স ছিল, আমরা ছিলাম কিন্তু শিক্ষকের স্পর্শ ছিল না। মৃত খায়রুল-কে শুধু তারা দেখেছে একটা নিথর দেহ হিসেবে। ডুবুরী ততোক্ষণে আমাদের কাছে রুপকথা।

আজকের পর আরও অসংখ্য বিজয় দিবস বাংলাদেশ দেখবে, আরও অনেক উজ্জ্বল হবে দিন, কিন্তু যে শোকের আর্তনাদ আমরা এই দিন বেয়ে বেড়াবো তা কতজন শিক্ষক, পুলিশ,ডুবুরী, ফায়ার ব্রিগেড কর্মী বুঝতে পারবেন। আমাদের কতবার মৃত্যু হলে আপনারা বুঝবেন আমরা ছিলাম?

আমাদের এক বন্ধু তার ফেসবুক একাউনটে একটা নতুন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়েছে। সেই রিকোয়েস্টের উত্তর হয়ত কোনদিন দেয়া হবেনা; নীল রঙের উজ্জ্বল অক্ষরের নাম খায়রুল কবির আমাদের মাঝে কোনদিনই হাজির হবে না।

সবাইকে অনুরধ করছি দয়া করে আপনারা লেখাটি শেয়ার করুন এবং আমাদের পেজ এ এসে আমাদের সাঁথে থাকুন

facebook page link: http://on.fb.me/uERZVh
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৬
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×