somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ পর্যন্ত সূর্য উৎসবে সুন্দরবন : স্বাগত ২০১০

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অফিসে বিরাট হাউকাউ। দল বেধে লোকজন যাচ্ছে সূর্য উৎসবে।

এ আয়োজনটির কথা আমি প্রথম জানতে পারি সম্ভবত ২০০৩ বা ২০০৪ সালের দিকে। সে সময় ভোরের কাগজে কাজ করি। তখন শুনলাম একদল তরুণ থার্টিফার্স্ট বা নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করেছে সেন্ট মার্টিনসে। সে বিষয়ে ফিচার ছাপা হল পত্রিকায়। এ ঘটনার কিছুদিন আগেই পড়েছি হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ। কেমন জানি সে বইটির ঘটনার সঙ্গে বেশ মিল দেখেছিলাম। কিছু সংখ্যক তরুণ-তরুণী নববর্ষ পালন করতে যাচ্ছে যেন প্রাণের তাগিদে। ওই সময়টি ঢাকার গুলশান এলাকা ছিল থার্টি ফার্স্ট নামের এক আতঙ্ক। সে তুলনায় সূর্য উৎসব বিষয়টি মনে হচ্ছিল তারুণ্যের আসল চেহারা। মনের কোথায় যেন একটু আফসেসও লাগল। মনে হল আহ্ আগে জানলে যাওয়া যেত।

এর পর আবারো একই ঘটনা। সূর্য উৎসব হলো, পত্রিকায় ফিচার ছাপা হলো। তারপর আফসোস, আহারে আগে যদি জানতাম...

একবার দেখলাম এরা উৎসব পালন করবে বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তর প্রান্তে, মানে তেতুলিয়া। ওইবার নিজ থেকেই বাদ দিয়েছিলাম। উত্তরবঙ্গের শীত খুবই খতরনাক জিনিস। আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিং শীতকালে গেলে রাতে দাঁত ঠকঠক করে। থাক, আমার তেতুলিয়ার থার্টিফার্স্ট, তারচেয়ে আমার পাড়ায় মনিরদের ছাদে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে বারবিকিউ অনেক ভালো।

এইবারো এরা যাচ্ছে। এবার ঠিক হয়েছে থার্টিফার্স্ট আর নতুন বছরের প্রথম সূর্য দেখা হবে সুন্দরবনে গিয়ে। অফিসের একটি পিসিতে দেখলাম সূর্য উৎসবের পোস্টার ইমেজ আকারে। আমার ধারণা ছিল এবারো উৎসব ওয়ালারা নিউজ পাঠিয়েছে প্রেস রিলিজ যাতে আমরা প্রকাশ করি।

আমাদের ফিচারে তৃষা নামে একজন আছে, ফিচার ফটোগ্রাফার। সে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টের ছবি তুলে অফিসে ফেরার পর আমাকে দেখায়। ছবি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। এবার সে পোস্টারটি আমাকে দেখিয়ে বলছে, বিপুল ভাই, দেখেন তো সব্যদা (পরে জেনেছিলাম ইনি সব্যসাচী হাজরা) কী দারুণ একটা পোস্টার করে দিলো।

আমিও দেখলাম পোস্টারটি যথেষ্ট স্মার্ট। তৃষাকেই জিজ্ঞেস করলাম এ উৎসবের আয়োজক কারা। সে গোল গোল চোখে আমার দিকে বিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে, আপনি জানেন না? আমরাই তো আয়োজন করি! অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে।

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। কারণ দুটি। এক হলো, এই তৃষা মেয়েটি অফিস করে, ছবির অ্যাসাইনমেন্টে বাইরে যায়, সংসার সামলায়, পাঠশালায় ফটোগ্রাফির গ্র্যাজুয়েশন করছে, সেই ক্লাস করে, সেখানকারও অ্যাসাইনমেন্ট থাকে। এতোকিছু করার পর সে আবার সূর্য উৎসব আর্গানাইজ করছে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো যে সূর্য উৎসবের জন্য এতোদিন অপেক্ষা করেছি, সেই উৎসবে আমার পরিচিত লোকজনই এখন অর্গানাইজার। তাও আবার কোথায়? সুন্দরবন।

এর আগেও কয়েকবারই সুন্দরবনে যাবার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল। চাঁদার টাকাও দিয়েছিলাম, পরে ক্যানসেল করি একবার বাবার চোখের অপরেশনের দিনটি একই সময়ে পড়ে যাওয়াতে। আরেকবার ম্যাপ ফটো এজেন্সির ফটোগ্রাফার মাহমুদ বললেন, ‌‌‌'আমি আগামী মাসে সুন্দরবনে যাবো। আপনি যাবেন? থাকতে হবে কিন্তু নদীতে। আর নিজেদের কাজগুলো কিন্তু নিজেদেরই করতে হবে। এসবে যদি অভ্যস্ত হন তবে যেতে পারেন।' আনন্দে লাফ দিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু শেষে উনার সুন্দরবন যাওয়ার দিনক্ষণ বদলে যায়। আর যাওয়া হয়নি।

এবার আর কোনো ঝামেলা এখন পর্যন্ত নেই। ছুটি ম্যানেজ করা যাবে। ৪ দিনের টুর। ফটো তোলা যাবে ইচ্ছে মতো। ঢাকা থেকেই লঞ্চে রওনা হবে দলটি, ফিরবেও লঞ্চে। তার মানে পুরো ভ্রমন হবে বিকট হর্ন বা ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশে। লঞ্চের ছাদে নাচগানেরও ব্যবস্থা থাকবে বলে শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার আকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে বিভিন্ন তারা আর গ্রহ দেখার আয়োজন, আর বিশেষ আকর্ষণ দুই বা সুন্দরবনের ভেতর ট্রেকিং, মানে গাইডেড টুর।

কখনো যেখানে যাইনি, সে সুন্দরবন আমার জন্য কোন কোন ছবি সাজিয়ে বসে আছে জানি না। গিয়ে কী দেখতে পাবো তাও জানি না। নদীর বুকে রাত কাটানো হয়নি কখনো। সে বিষয়টি কেমন রোমাঞ্চকর কে জানে। প্রায় একশ জনের মতো যাচ্ছে। হয়তো নতুন বন্ধু হবে, হয়তো হবে না। লঞ্চে মোবাইল লাইন দিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন কেমন হবে কে জানে। ফেসবুক, সামহয়্যারইন পাওয়া যাবে তো। এমপিথ্রি প্লেয়ার, ব্যটারি কিনে রাখতে হবে। রাতে পড়ার জন্য কোন কোন বই নেব? এমন বই নিতে হবে যেটি আমার মনমতো হবে, কিন্তু বইয়ের ওজন হবে কম। যতো ভাবি, ততো মনে হচ্ছে সব কিছু গুছিয়ে নিতে হবে।

দিন বাকী আছে আর মাত্র ৪টি। এবার কোনো ঝামেলা না হলেই বাঁচি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩৭
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×