somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের কুখ্যাত কিছু আর্থিক কেলেংকারী

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হলমার্ক নামক এক ভূইফোড় প্রতিষ্ঠান ২০১০ সাল থেকে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক গুলো থেকে ৪ হাজার কোটি লোপাট করে নিয়েছে। যার সাথে জড়িত আছে দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক, এর পরিচালনা পরিষদ এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এমনকি দুইজন উপদেষ্টা এর সাথে জড়িত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যদিও আমাদের অর্থমন্ত্রী এত বিপৃল পরিমান অর্থ লোপাটের জন্য যত না দায়ী ব্যক্তি এবং এদের সাহায্যকারীদের সমালোচনা করছেন, তার চেয়ে বেশী দায়ী করছেন আমাদের মিডিয়াকে। তার ভাষায় এই কেলেংকারী নিয়ে মিডিয়া বেশী মাতামাতি করছে। এই পরিমান অর্থ জালিয়াতি নাকি আমাদের অর্থনীতির জন্য তত সমস্যার সৃষ্টি করবে না। যদি্ও তার এই বক্তব্যের পর তার দলের ভিতর থেকেই তাকে সমালোচনা করা হচ্ছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আর কিছু আর্থিক কেলেংকারী আছে যা সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। সেই সব জঘন্য কেলেংকারীর কয়েকটা আজ এখানে তুলে ধরবো:


ম্যাডফ জালিয়াতি: ২০০৮ সালে এই জালিয়াতির খবর যখন সারা বিশ্ব জানতে পারে তখন সমালোচনার ঝড় উঠে। এই জালিয়াতির হোতা Bernard Madoff এর নাম অনুসারে এই কেলেংকারীকে ম্যাডফ জালিয়াতি (Madoff fraud) নামেই ডাকা হয়। পৃন্জি স্কিমের মাধ্যমে প্রায় ৬৪.৮ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান অর্থ প্রায় ৪৮০০ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়। এমনকি শৃরৃর দিকেই এই জালিয়াতি ধরতে না পারায় The U.S. Securities and Exchange Commission (SEC) কে প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ২০০৯ সালে আদালত তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ১৫০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে।


এনরন কেলেংকারী: এনরন ছিল একটি energy কোম্পানী। এই কোম্পানী তার আর্থিক প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ মনগড়া সব সম্পত্তি দেখিয়ে স্হায়ী সম্পদের পরিমান বাড়িয়ে দেখায়। পরবর্তীতে এটা ধরা পড়লে কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডাররা ২০০১ সালের শেষ দিকে ১১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এমনকি এই কেলেংকারীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তখনকার Big 5 global accounting firms এর একটি Arthur Andersen এর কার্যক্রম সারা পৃথিবীতে বন্ধ করে দেয়া হয়।


পৃন্জি স্কিম: পৃন্জি স্কিম একটি প্রতারণামূলক বিনিয়োগ যেখানে আয় থেকে নয় বরং বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব অথবা অন্য বিনিয়োগকারীদের অর্থ থেকে মৃনাফা পরিশোধ করা হয়। Charles Ponzi নামক এক ব্যক্তি যার নামে এ স্কিমের নাম রাখা হয়, বিশ শতকের শুরুর দিকে এই প্রতারনামুলক ব্যবসা শুরু করে। তিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক মুনাফা (কখনো কখনো তা দ্বিগুন) দেয়ার লোভ দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ অর্থ বিনিয়োগ না করে সংগৃহিত অর্থ থেকেই তিনি মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা দেয়া শুরু করে। যখন প্রচুর বিনিয়োগকারী অর্থ বিনিয়োগ শুরু করে তখন এ জালিয়াতের বিষয়টি কতৃপক্ষের নজরে আসে এবং Charles Ponzi কে ১৯০৮ সালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় প্রত্যেকটি দেশে পৃন্জি স্কিম নিষিদ্ধ।


পারমালাট কেলেংকারী: ইতালিয়ান দুগ্ধজাতক পন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পারমালাট (Parmalat) ইউরোপের সবচেয়ে বড় ডেইরী কোম্পানী হওয়া স্বত্বেও ২০০৩ সালে দেউলিয়া হয়ে যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান সম্পদ কিছু অসাধু কর্মকর্তা লোপাট করে দিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে কোম্পানি ২৭ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়।


বারিংস কেলেংকারী: বারিংস ব্যাংক (Barings Bank) ছিল লন্ডনের সবচেয়ে বড় মার্চেন্ট ব্যাংক। ১৯৯৫ সালে এর সিঙ্গাপুর অফিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা (Nick Leeson) কোম্পাররি অর্থ ফটকামূলক বিনিয়োগ করে ১.৩ বিলিয়ন ডলার কোম্পানিকে ক্ষতির সম্মুখিন করে। যার ফলশ্রতুতে, এই ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকটি সে বছরই বন্ধ হয়ে যায়।


আলভেস ডোস রাইস কেলেংকারী: আলভেস ডোস রাইস (Alves dos Reis) ছিলেন একজন পর্তুগিজ অপরাধী। ১৯২৫ সালে ভুয়া কাগজ পত্র দেখিয়ে তিনি পর্তুগিজের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Banco de Portugal) থেকে ব্যাংক নোট ছাপানোর কাজ পান। পরবর্তীতে আসল নোটের পাশাপাশি তিনি প্রচুর পরিমানে জাল নোট বাজারে ছেড়ে দিন। যার ফলে পর্তুগিজে ভয়াবহ মৃদ্রাস্ফিতি (inflation) দেখা দেয়। দেশটি প্রচন্ডরকম আর্থিক চাপের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল দেশীয় মুদ্রা বাজার থেকে তুলে নেয়। ১৯২৫ সালের ৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় রাইসকে এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।

দেখা যায়, আধুনিক বিশ্বে এ পর্যন্ত যত আর্থিক কেলেংকারী হয়েছে তার প্রায় সবগুলোরই মূল হোতাদের দৃষ্টিন্তমূলক শাস্তি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ হলমার্ক কেলেংকারী নিয়ে মিডিয়াতে কিছুদিন হৈ চৈ হবে। কিছু অতি লোভী ব্যংক কর্মকর্তার শাস্তি হবে। এক সময় আমরা সাধারন জনগন সব ভুলে যাব। যার ফলে, এ কেলেংকারীতে জড়িত মূল হোতারা ঠিকই পার পেয়ে হয়তো নতুন কোন উপায়ে অর্থ লোটপাটে ব্যস্ত হয়ে উঠবে।

তথ্যসূত্র:
১. এখানে ক্লিক করুন
২. এখানে ক্লিক করুন
৩. এখানে ক্লিক করুন
৪. এখানে ক্লিক করুন
৫. এখানে ক্লিক করুন
৬. এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×