অজানা এক যাত্রী ছাওনিতে বসে আছি ,
অপেক্ষায় আছি বাসের,
বির্স্তিণ ধূ ধূ প্রান্তর,
তার মধ্যে দিয়ে পিচ ঢ়ালা রাস্তা চলে গেছে উত্তর থেকে দক্ষিনে,
আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি, এলাম কিভাবে এখানে ?
সময় চলে যাচ্ছে, দশ, বিশ, ত্রিশ মিনিট ।
দূরে দেখা যাচ্ছে লাল একটা বাস ছুটে আসছে,
হাত নাড়লাম আমি, না থেমে চলে গেল,
আবার ও অপেক্ষা, এবার ছুটে গেল হলুদ বাসটা,
আমাকে না দেখার মত করে বেরিয়ে গেল সবুজ বাসটাও ।
এটা নিয়ে ছ’টা গাড়ী বেরিয়ে গেল,
পশ্চিমের সূর্যের আলোটা এখন সরাসরি চোখে লাগছে,
হাটাহাটি করছি, কি করবো ,মোবাইলটা ঘুমিয়ে আছে,
কোন তথ্য পাওয়ার উপায় নেই ।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ।
কোথাও কোন জনমানব নেই ।
অপেক্ষায় আছি । কি করবো ।
ভয় হচ্ছে, রাতটাও কি কাটবে এভাবে ।
হঠাৎ দূরপ্রান্তে দেখি কে একজন এগিয়ে আসছে,
লোকটা কাছে আসছে, আরো কাছে, সূর্যের আলো তার মুখের উপর,
মাথায় সবুজ পাগড়ী, সাদা পাজামা,পাঞ্জাবী, চেহারায় অপার্থীব সুখের হাসি,
মনে হচ্ছে কত দিনের চেনা কত আপনজন ।
আবার মনে হলো কোন ফকির দরবেশ ।
”দু ঘণ্টাতো পেরিয়ে গেছে, অপেক্ষায় আছো তুমি,
পানি খাবে, আমার কাছে আছে ? সন্দেহের কিছু নেই ।
আমি জানি তোমার পকেটে একটা দশ টাকার নোট ছাড়া
এমন কিছু নেই । মোবাইলটা তোমার বোবা হয়ে গেছে,
ঘড়িটা ভাল করে দেখেছো,
তোমার ঘড়িটা সময়ের সাথে কি মিলছে,
আর নাও টাকাটা তোমার কাছে রাখো,
বিপদে আপদে কাজে লাগবে ।”
এক হাজার টাকার একটা নোট হাতে গুজে দিলো ।
সূর্যটা এখন ডুবে যাবে,
তাকালাম হাতের দিকে, একটা বিশ ।
ফকির লোকটা বললো ,”আরো একটা খবর আছে,
নিজে জেনে নিও, পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো,
প্রয়োজন হলে খেয়ো, আর এখানে কেউ তোমার ইশারায় থামবেনা ।
আরেকটু এগিয়ে যাও, সামনে লোকালয় পাবে ।
আমার তাড়া আছে , অনাহারী এক বাঘ এ পথে আসছে,
তোমার দিকে ।তাকে সরাতে হবে,
তুমি যাও আরো সামনে যাও ।”
লোকটা হন হন করে রাস্তা পেরিয়ে চলে গেলো,
এতক্ষনে আমার মনে হলো আমিতো তার সাথে একটা কথা বলিনি ।
সব কথা সেই বলে গেল ।
আমার চোখের সামনে অস্বাভাবিক দ্রুত সে হারিয়ে গেল ।
হঠাৎ সব কিছু কেমন বদলে গেল ।
চারিদিক সান্নাটা । নিরবতা নেমে এলো ।
মন বলছে, চল, চল, চল ।পালাই এখনই ।
পা বাড়ালাম, চোখের সামনে আবছা হয়ে আসছে সব, সব কিছু ।
গলা শুকিয়ে গেছে । বোতলাটা হাতে আছে । চিন্তা করছি,
পানিটা খাবো ?
কে একজন পানির ছিটা দিলো মুখে, কি ভাই চোট পেয়েছেন বেশী ।
ধরাধরি করে পাশের টং দোকানের টুলের উপর বসালো কয়েকজন ।
ওই পাহাড়ের দিকে কেন গিয়েছিলেন, বাঘে তাড়া করেছিল ?
পাহাড়ে গত দুদিন থেকে একটা বাঘ বেরিয়েছে ।
আমিতো সামনে একটা যাত্রী ছাওনিতে বসেছিলাম । বললাম আমি ।
লোকগুলোর চোখে মুখে বিস্ময়, ফকিরের দেখা পেয়েছিলেন ?
সেতো …… ঐ যে দূরে যে সবুজ মিনারটা দেখছেন,
ওটা তার মাজার ।
আমার চেতনার সবকিছু পাল্টে গেছে,
রাস্তাটা এখন র্পূব পশ্চিম, মোবাইলটা জেগে গেছে ।
সময় আর র্সূয সব ঠিক আছে ।
পকেটে হাত দিলাম, টাকাটার র্স্পশ পেলাম,
ভাই খুব ক্ষুধা পেয়েছে, হাজার টাকার একটা নোট আছে
কিছু খাওয়াবেন ।
খান ভাই, আমার আপত্তি নাই,
বাড়ী যাবেন, বাস ভাড়া ও নিয়েন,
পরে পাঠায় দিয়েন মোবাইলে, দোকানির খুব স্বাভাবিক উচ্চারণ,
পাশের থেকে অন্যজন বলল, টাকাটা একটু দেখান দিকি,
বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি ক্লান্ত ভাবে বললাম ।
দেখেন, বাড়িয়ে দিলাম দোকানির দিকে,
কয়েকটা মুখ ঝুঁকে গেল সেদিকে,
অনুচ্চকণ্ঠে কে বল্লে ২০২০,
মানে এ টাকাটা সামনের বছর বাজারে আসবে ।
তা হলে আমি কোথায় ছিলাম ।