৪–৫ আগস্ট : রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোশ খুলে দেওয়া রাত ও দিন
৪ আগস্ট রাত — আশ্বাসের আড়ালে ছদ্ম-অভ্যুত্থানের নীরব নকশা
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কোটা-আন্দোলনের বিশৃঙ্খলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যখন রাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন।
সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান যে আশ্বাস দেন—
“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, সব পরিস্থিতি সামলে দেব”—
তা পরবর্তী ঘটনাক্রমে যেন এক অভিনয়ের প্রথম দৃশ্য হয়ে দাঁড়ায়।
বৈঠক শেষ হতেই বাস্তব চিত্র অন্য পথে মোড় নেয়। রাজধানীর কোন প্রবেশমুখে কতটুকু নিরাপত্তা থাকবে—এসব সিদ্ধান্ত সেনাপ্রধান এককভাবে পাল্টাতে থাকেন এমনভাবে, যা সাধারণ কোনো ‘অপারেশনাল অ্যাডজাস্টমেন্ট’ নয়; বরং মনে হয়—পরিকল্পিত অস্থিতি তৈরির ব্লুপ্রিন্ট।
মাঠের সৈনিকরা বিভ্রান্ত, পুলিশ নির্বিকার। অথচ গণভবনের ভেতরে দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারাও জানেন না, কোন শক্তি নিঃশব্দে নিরাপত্তা বলয় ভেঙে দিচ্ছে।
সেনাপ্রধান তখনও গোপনে এগোচ্ছেন, যেন রাতই তাঁর সবচেয়ে বড় মিত্র।
৫ আগস্ট সকাল — নিরাপত্তা জোরদারের অভিনয়, আর বাস্তবে গণভবনের দরজা খোলা
৫ আগস্ট সকালে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার দৃশ্য দেখানো হলো—যেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই ছদ্মবেশী জঙ্গিগোষ্ঠী সংগঠিত হচ্ছিল, এবং আশ্চর্যজনকভাবে তাদের অগ্রযাত্রার পথে একের পর এক ব্যারিকেড অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল।
সকাল ১০টার দিকে টঙ্গী ব্যারিকেড হঠাৎ খুলে দেওয়া—এটা আর কোনো ভুল ছিল না; এটা ছিল সংকেত।
এক মুহূর্তে পথ পরিষ্কার, আর সেই পথ ধরে উগ্রপন্থীরা নির্বিঘ্নে এগোতে থাকে।
আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যখন বিভিন্ন ইউনিটকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে—রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাঠামো কেউ একজন ইচ্ছাকৃতভাবে ‘স্ট্যান্ডবাই’ করে রেখেছেন।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ কাকলিতে ব্যারিকেড স্থাপন করলে সেনা কর্মকর্তারা তাঁকে থামিয়ে বলেন—
“সরে যান—পরিস্থিতি আমরা সামলাবো।”
আইজিপিও তাঁকে পিছিয়ে আসার নির্দেশ দেন। হারুন সরে যেতেই পুলিশও সরিয়ে দেওয়া হয়। আর ঠিক সেই সময়েই গণভবনের দিকে যাবতীয় নিরাপত্তা বলয় খুলে দেওয়া হলো—
উর্দিপরা কয়েকজনের রহস্যময় নির্দেশে।
মাঠের সৈনিকদের চোখে তখন শুধু বিস্ময়—এটা কি নিরাপত্তা, নাকি নিরাপত্তাহীনতার অনুমোদন?
৫ আগস্ট দুপুর — প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে নেওয়ার মঞ্চস্থ নাটক
এরপর মঞ্চে আসে নাটকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য।
দুপুরে সেনাপ্রধান গণভবনে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন—
“ছাত্র-জনতা ঠিক পাশেই। আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এখনই আপনাকে গণভবন ছাড়তে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেন—
“সব তো শান্ত—এ হঠাৎ কী ঘটলো?”
কিন্তু তখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে—নাটকের পরিচালক ছিলেন অন্য কেউ। প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে গণভবন ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিতে চাইলেও সেই সুযোগও তাঁকে দেওয়া হয়নি—
ঠিক যেন কেউ ভয় পাচ্ছিলেন, তাঁর কণ্ঠস্বর জনগণকে সত্য জানিয়ে দেবে।
৫ আগস্ট বিকেল — দেশত্যাগের চূড়ান্ত দৃশ্য ও পর্দার আড়ালের উদ্দেশ্য
শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন হয়তো গোপালগঞ্জে যাচ্ছেন সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছেই তিনি বুঝলেন—এটা কোনো ‘অস্থায়ী সরিয়ে নেওয়া’ নয়; এটা প্রস্তুত করা ‘অন্য পথ’।
SSF প্রধান জানালেন—
“স্যার, আমরা ভারতে যাচ্ছি।”
সেই মুহূর্তেই স্পষ্ট হয়ে যায়—
**. ৪ আগস্টের আশ্বাস,
**. রাতের নীরব নির্দেশ,
**. ৫ আগস্ট সকালের ব্যারিকেড উন্মুক্ত করা,
**. এবং দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ‘ব্যর্থতার’ নাটক—
সবই ছিল একটি অভ্যন্তরীণ অপারেশনের পরপর সাজানো দৃশ্য[/sb], যার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ্জামান।
সেদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রাণে বেঁচেছিলেন—এটাই ছিল রাষ্ট্রের প্রতি ইতিহাসের শেষ সদয় মুহূর্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



