somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃহত্তর সিলেটের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা

২৫ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুগল আর্থের সহায়তায় তৈরি

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল ঘটনা জানার পর ২৬ মার্চ থেকেই হবিগঞ্জে প্রতিরোধ দূর্গ তৈরির কাজ শুরু হয়। বিগ্রেডিয়ার চিত্তরঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত নামে অধিক পরিচিত), জেনারেল রব, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীসহ হবিগঞ্জের আমজনতা সিলেটকে মুক্ত করার প্রস্তুতি নিলেন। পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্হান জেনে নিয়ে চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার গিয়ে ক্যাম্প করা হলো। কারণ ওখান থেকে সিলেট আক্রমণ করা সুবিধাজনক।

পাকিস্তানী সৈন্যরা সিলেট থেকে স্হলপথে কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে হলে তাদেরকে মৌলভীবাজার হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে শত্রুদের বেছে নিতে হবে শেরপুর-সাদীপুর সড়ক (বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশ। দু’জায়গাতেই নদী আছে। বর্তমানে ব্রীজ হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় ফেরী ছিল)। তাছাড়া সিলেট যেতে হলে এই সড়কই ব্যবহার করতে হবে।

জেনারেল রব সীমান্তে গিয়ে বিডিআর’এর বাঙ্গালী ছেলেদের একত্রিত করে মৌলভীবাজার পাঠালেন। মানিক চৌধুরী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করলেন। সৈন্য সংখ্যা দাড়ালো ৪৫০ জনে।খবর পাওয়া গেল ২ প্লাটুন পাকিস্তানী সৈন্য শেরপুরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং ১ প্লাটুনেরও বেশী সৈন্য সাদীপুর রক্ষা করছে। ওদের সাথে একজন অফিসার আছে এবং তাদের ফেরী আছে মর্মে জানা গেল।

৪ এপ্রিল শেরপুরের নিকট প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করা হলো পরদিন আক্রমণ করা হবে বলে। গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করলো। রাত ১০টায় কীভাবে শেরপুর-সাদীপুরে আক্রমণ চালানো হবে তা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হলো।

৫ এপ্রিল। সকাল ৫টায় শেরপুরের সামনে আসতেই শত্রুরা গোলাগুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করলো। পাল্টা জবাবও দেয়া হলো। শত্রুরা ৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি মর্টার ও মেশিনগানের সাহায্যে বাংলাদেশী সৈন্যদের ব্যতিব্যস্ত করে তুললো। দু’একটা বাড়ীতে আগুন ধরে গেল। গ্রামবাসীরা পালাতে আরম্ভ করলো। ফেরীর সাহায্যে বাংলাদেশী সৈন্যরা ওপারে পৌঁছে গেল। বেলা ১২ টার দিকে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এবং শেষপর্যন্ত শেরপুর শত্রুমুক্ত হলো।

শেরপুরের পর সাদীপুরে অবস্হানরত পাকিস্তানী সৈন্যরা সিলেট পালিয়ে যায়। ফলে ঐদিন সাদীপুরও শত্রুমুক্ত করা সম্ভব হলো। এই যুদ্ধে পাকিস্তানের ১২ জন মারা যায়। বাংলাদেশের মারা যান ৩ জন। এই ৩ জনের মধ্যে হবিগঞ্জের ছিলেন দু’জন- শহীদ মোঃ মহফিল হোসেনশহীদ মোঃ হাফিজ উদ্দীন। এই দু’জনই বৃহত্তর সিলেটের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। অন্য শহীদের বিষয়ে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। দু’জনকে সমাধিস্হ করা হয় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে। স্হানীয়ভাবে যা জোড়া কবর নামে পরিচিত।


শায়েস্তাগঞ্জে অবস্হিত জোড়া কবর



তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ, দলিলপত্র: নবম খন্ড, সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান, পৃষ্টা: ৩১০-৩১৭, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রকাশকাল: জুন ১৯৮৪

কৈফিয়ত: জোড়া কবরের নামফলকে “বৃহত্তর সিলেট জেলার প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদ্বয়” এই তথ্য দেখার পর আমার আগ্রহ তৈরি হয়। স্হানীয়ভাবে জানা যায় এই মুক্তিযোদ্ধাদ্বয় শহীদ হন শেরপুর-সাদীপুর যুদ্ধে। এরপর মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংগ্রহ করলাম। সেখানে যুদ্ধের বর্ণনা থাকলেও সিআর দত্তের জবানীতে শহীদদের নাম ছিল না। আমি দলিলের বর্ণনার সাথে স্হানীয় সংগৃহীত তথ্য শুধু মিলিয়ে দিয়েছি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে এই দু’জন শহীদের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ হবিগঞ্জের জনগণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সমাধিতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান গভীরভাবে। আগামী ২৬শে মার্চে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ইতিমধ্যে সমাধি সাফসুতরো করে ফেলা হয়েছে। পোস্টের আরেকটি অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। এই শহীদদের কোন ছবি আমি সংগ্রহ করতে পারিনি। স্হানীয় সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফলাফল ইতিবাচক হয়নি।

আরো কিছু তথ্য:

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা

“মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ” ওয়েব পেইজে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতি প্রসঙ্গে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×